একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১৯

0
753

#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী

|১৯|

টানা দুদিন জ্বর ছিলো শ্রাবণের। আজ গায়ে জ্বর নেই। তাই সকাল সকাল উঠে অফিস চলে গেছে শ্রাবণ। আয়াতের শরীর এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি, গায়ে জ্বর আছে হালকা। তাই শ্রাবণের করা আদেশ শরীর পুরোপুরি ঠিক না হওয়া অব্দি ভার্সিটি যেতে পারবে না ও। তাই আর কি করার বাড়িতেই থেকে গেছে। শানটাও ভার্সিটি চলে গেছে। আয়াতের একা একা এখন বাসায় একটুও ভালো লাগছে না। বিছানা ছেড়ে উঠে নিচে নেমে গেলো। সারাদিন এত শুয়ে বসে থাকতেও ভালো লাগে না। তাই ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো। সানিয়া মেহরাব কিচেনে কি যেন করছে। মিনিট দুই গড়াতেই সানিয়া মেহরাব এক বাটি স্যুপ এনে আয়াতের সামনে দিলো। স্যুপ দেখে আয়াত চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। সানিয়া মেহরাব বললো,
–“নাক মুখ কুঁচকে লাভ নেই, স্যুপ শেষ কর।”

–“আমার স্যুপ খেতে ভালো লাগেনা মা। তার থেকে বরং একটু স্ট্রিট ফুড এনে দিলেও তো পারেন।”

–“আজ সারাদিন তোকে কি কি দিতে হবে সেটা তোর বর বলে দিয়ে গেছে। একটু এদিক ওদিক হলে কি হবে বুঝতেই তো পারছিস।”

–“আমি অসুস্থ না মা। জ্বর ঠিক হয়ে গেছে, শুধু গাঁ টা হালকা গরম। আপনার এবং আপনার ছেলের খাওয়া নিয়ে এরকম অত্যাচারে আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বো, ট্রাস্ট মি।”

করুন চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বললো আয়াত। সানিয়া মেহরাব একগাল হেসে বললো,
–“বুঝেছি বুঝেছি। এবার স্যপুটা খাওয়া শুরু কর, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মা।”

আয়াত চুপচাপ খেতে শুরু করলো। ও জানে না খাইয়ে সানিয়া মেহরাব ছাড়বে না ওকে। স্যুপ শেষ করে আড্ডায় মেতে উঠলো শাশুড়ী-বউমা।

এরমাঝে কেটেছে আরো বেশ কিছুদিন। আয়াতের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আয়াত আর শ্রাবণের সম্পর্ক এখন পুরোপুরি ঠিকঠাক চলছে। কারণে অকারণেই হুটহাট দুজনে একে-অপরের কাছাকাছি আসছে। শ্রাবণ তো যখন ইচ্ছে তখনই ছুঁয়ে দেয় আয়াতকে। আয়াতও এতে আপত্তি জানায় না। আপত্তি জানানোর কি আছে? ওকে ছোঁয়ার সম্পূর্ণ অধিকার তো শ্রাবণের আছে। শ্রাবণ ওর স্বামী। তাই আয়াতের উপর সব থেকে বেশি অধিকার এখন শ্রাবণেরই।

ফারাবীর জন্যও বড্ড মন কেমন করে আয়াতের। ফারাবী নামক মানুষটাকে কখনো ভুলতে পারবে না আয়াত৷ ওর প্রথম আবেগ, ভালোবাসা, কষ্ট, যন্ত্রণা সবকিছু ওই মানুষটাকে ঘিরেই৷ ওই মানুষটাই আয়াতের মনে প্রথম ভালোবাসার বীজ রোপণ করেছিলো। ভালোবাসা কি বুঝিয়েছিলো। ওই মানুষটাকে ওর এ জন্মে ভোলা সম্ভব না। আয়াত কোথায় যেন শুনেছে, ভালোবাসা কখনো শেষ হয়না, নষ্ট হয় না। ভালোবাসা কোনো না কোনোভাবে ঠিকই রয়ে যায়। যেটা আয়াত খুব ভালো করেই বুঝতে পারে। নয়তো আয়াত কি এখনো ফারাবীর জন্য মন খারাপ করে? আয়াত চায়, ও যেমন ভালো আছে সুখে আছে, ফারাবীও যেন সুখে থাকে, ভালো থাকে। ওই মানুষটাকে সুখী দেখতে চায় ও। পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষগুলোর কাতারে ফারাবীকে দেখতে চায় আয়াত। এসব ভেবে চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে নিলো আয়াত।

শ্রাবণ সোফায় বসে অফিসের কাজ করছে। কাল সন্ধ্যা সাতটার ফ্লাইটে এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাচ্ছে শ্রাবণ। লন্ডনের আর. কে. কোম্পানির সাথে মেহরাব কোম্পানির বিগ ডিল হচ্ছে। গত মাসে আর. কে. কোম্পানির ওনার বিডিতে এসেছিলেন মেহরাব কোম্পানির সবকিছু ঘুরেফিরে দেখতে। আর. কে. কোম্পানি মেহরাব কোম্পানির সাথে ডিল করতে রাজি। তাই সেই ডিলে সিগনেচার করতেই শ্রাবণকে যেতে হবে কাল।

আয়াত বিছানা ঠিক করছে। শ্রাবণ একপলক তাকালো আয়াতের দিকে। মেয়েটার মন খারাপ। যখন থেকে শুনেছে শ্রাবণ অফিসের কাজে দেশের বাইরে যাচ্ছে তখন থেকেই মন খারাপ করে আছে। শ্রাবণ ল্যাপটপ বন্ধ করে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো। আয়াতের কাছে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে। আয়াত মৃদু কেঁপে উঠলো।
–“মন খারাপ করে না আয়ু, তোমার মন খারাপ আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়।”

–“মন খারাপ করিনি তো, আমি একদম ঠিক আছি।”

–“তোমার পাসপোর্ট এখনো হাতে পাইনি, নয়তো তোমাকে সাথে করেই নিয়ে যেতাম বিলিভ মি।”

আয়াত পেছন ফিরে শ্রাবণের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। বললো,
–“কষ্ট হচ্ছে আমার। আর এই সাতদিন আপনাকে ছাড়া থাকতেও কষ্ট হবে আমার। কিন্তু আমি এটাও জানি আপনারও কষ্ট হবে। আর আমি এটাও জানি আমার পাসপোর্ট এখনো হাতে না পাওয়ার জন্যই আমাকে নিতে পারছেন না।”

শ্রাবণ আয়াতের গালে হাত রেখে বললো,
–“তাহলে আর মন খারাপ করে থেকো না প্লিজ।”

আয়াত মৃদু হাসলো। শ্রাবণ বললো,
–“চাঁদ দেখবে?”

আয়াত সম্মতি জানাতেই শ্রাবণ আয়াতের হাত ধরেই ব্যালকোনিতে নিয়ে গেলো। আকাশে অর্ধেক চাঁদ উঠেছে। তবুও আশপাশটা চাঁদের আলোয় বেশ ঝলমল করছে। মৃদু বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজনকে। বেশ কিছুক্ষণ দুজনে ব্যলকোনিতে বসে চন্দ্র বিলাশ করলো। আয়াত বললো,
–“এবার রুমে চলুন, ঘুমাবেন না?”

এই বলে আয়াত উঠে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে শ্রাবণও উঠে দাঁড়ালো। আয়াতকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো। আয়াতের ঠোঁটে আলতো ভাবে চুমু খেয়ে বললো,
–“আমার এখন ঘুমানোর মুড নেই। আগামী সাতদিন বউকে কাছে পাবো না সুতরাং আমার বউকে আদর করার মুড আছে এই মূহুর্তে।”

আয়াত শ্রাবণের গলা জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণ আলতো হেসে বিছানার দিকে অগ্রসর হলো।

ঘুম থেকে উঠে সময় দেখে লাফিয়ে উঠলো আয়াত৷ সাড়ে আটটা বাজে৷ শ্রাবণের অফিস আধঘন্টা বাদে। আর ও এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আয়াত শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণেরও ঘুম ভাঙেনি আজ। খালি গায়ে গভীর ঘুমে মগ্ন সে। শ্রাবণের বুকের লোমগুলো আয়াতের ভীষণ পছন্দের। ইচ্ছে করলো লোমগুলো ছুঁইয়ে দিতে। আয়াত কালবিলম্ব না করে শ্রাবণের বুকে হাত ছুঁইয়ে দিলো। শ্রাবণ নড়েচড়ে আবার শুয়ে পড়লো। আয়াত বেশ কয়েকবার ডাকলো শ্রাবণকে। শ্রাবণ চোখ পিটপিট করে তাকাতেই আয়াত বললো,
–“আজ অফিসের তাড়া নেই? এখনো উঠছেন না যে?”

শ্রাবণ ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললো,
–“অফিস যাবো না আজ, একেবারে সন্ধ্যায় বের হবো।”

–“আচ্ছা তাহলে ঘুমান।”

কথাটা বলে আয়াত চলে যেতে নিলেই শ্রাবণ ওর হাত ধরে হ্যাচকা টেনে নিজের বুকের উপর ফেললো। আয়াত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
–“ছাড়ুন, ফ্রেশ হবো তো। আবার ভার্সিটি যেতে হবে।”

–“তোমার বিয়ে করা বর আজকে বাসায় থাকবে সারাদিন আর তুমি ভার্সিটি যাবে? এটা হচ্ছে না বিয়ে করা বউ।”

–“ভার্সিটি না গেলাম ফ্রেশ হতে হবে তো।”

–“ফ্রেশ হতে হবে না। একেবারে একসাথে শাওয়ার নিয়ে নিবো।”

কথাটা বলেই শ্রাবণ আয়াতকে নিচে ফেলে দিয়ে ওর উপরে উঠে গেলো। আয়াত শ্রাবণের বুকের উপর দুহাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বললো,
–“সকাল সকাল আবার শুরু করিয়েন না প্লিজ।”

শ্রাবণ দুষ্টু হেসে বললো,
–“সাতদিন বউয়ের থেকে দূরে থাকবো। তাই আজ সারাদিন তো বউকে আদর করা ফর‍য হয়ে গেছে আমার জন্য।”

কথাটা বলেই আয়াতের গলায় মুখ গুজলো। শ্রাবণের স্পর্শ পেয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বেঁকে উঠলো আয়াত।

শ্রাবণ অফিসের কাজে দেশের বাইরে গেছে আজ দুদিন। রুমে আসলেই আয়াতের রুমটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে৷ ঘরে ঢুকতে ইচ্ছেই করে না৷ মানুষটার মায়ায় কিভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে আয়াত সেটাই ভাবছে। ফোনের রিংটোনে আয়াতের ঘোর ভাঙে৷ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো শ্রাবণের ফোন৷ অজান্তেই ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠলো আয়াতের। খুশি মনে ফোন রিসিভ করতেই শ্রাবণের মুখখানা ভেসে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে। শ্রাবণ ক্লান্ত স্বরে বললো,
–“বিয়ে করা বউ, আই মিস ইউ সো মাচ।”

আয়াত মলিন মুখে বললো,
–“আরলি ব্যাক করুন, তাহলে আর মিস করতে হবে না।”

–“আসবো তো। আরো কিছু কাজ আছে, আই হোপ দু/তিন দিনে হয়ে যাবে৷ তারপরই ফিরে আসবো।”

এভাবেই বেশ কিছু সময় কথা চললো দুজনের মাঝে। রাফিয়া রুমে আসায় আয়াত বললো,
–“রাফু এসেছে, পরে কথা বলছি?”

শ্রাবণ সম্মতি জানাতেই আয়াত লাইন কেটে দিলো। অতঃপর বেশ জমিয়ে গল্প চললো দুই বোনের। আবারো ফোনের রিংটোন বাজতেই আয়াত ফোন হাতে তুলে নিলো। ইরার ফোন। এবারেও হাসি ফুটলো আয়াতের ঠোঁটের কোনে। খুশি মনে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইরা যা বললো তা শুনে আয়াতের হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো আয়াত৷ রাফিয়া এক-হাতে আয়াতকে আগলে নিয়ে অন্যহাতে আয়াতের ফোন তুলে কানে নিলো। রাফিয়া ইরার সাথে দু মিনিট কথা বলে রেখে দিলো। আয়াত রাফিয়াকে জাপ্টে ধরে কাঁদছে। আয়াতের কান্নার শব্দ পেয়ে সানিয়া মেহরাব আর শান দৌড়ে এলো। সানিয়া মেহরাব আয়াতের পাশে বসে আয়াতকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলো,
–“আয়ু? এই আয়ু কাঁদছিস কেন এভাবে? কি হয়েছে?”

আয়াত কিছু না বলে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। শান এবার প্রশ্ন করলো রাফিয়াকে। রাফিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
–“ফা্ ফারাবী ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।”

শান আয়াতকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
–“আয়ু ভাবী, এভাবে কান্না করার কি আছে? আল্লাহ’র কাছে দোয়া করো, উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।”

শানের কথার পিঠে রাফিয়া বললো,
–“স্ সুস্থ হবে না, স্পট ডেথ।”

রাফিয়ার মুখে আবারো ফারাবীর মৃত্যুর খবর শুনে কেঁদে উঠলো আয়াত। শান চমকে তাকালো। সানিয়া মেহরাব প্রশ্ন করলো,
–“ফারাবী কে?”

রাফিয়া কিছু বলে উঠার আগেই শান বললো,
–“আয়ু ভাবীর বন্ধু।”

সানিয়া মেহরাব ফারাবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে শান জানায় বছর খানেক হবে বিয়ে করেছে ফারাবী। সানিয়া মেহরাব দুঃখ প্রকাশ করেন ফারাবীর এমন অকাল মৃত্যুতে। সাথে রাইতার কথা ভেবেও ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে উনার। সানিয়া মেহরাব আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“কাঁদিস না মা, পৃথিবীতে আজীবন থাকার জন্য কেউ আসে না। সবাইকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ফারাবীর আয়ুকাল এই পর্যন্তই ছিলো।”

আয়াত পাথরের মূর্তির মতো চুপচাপ বসে আছে। চোখের পলকও পড়ছে খুব কম। একধ্যানে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি পরছে। সানিয়া মেহরাব শানকে বললো,
–“আমি শ্রাবণকে জানাচ্ছি, তুই আয়াতকে নিয়ে যা।”

–“আমি কথা বলছি ভাইয়ার সাথে। তুমি আয়ু ভাবীকে একটু দেখো।”

কথাটা বলেই শান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। শান ঘর থেকে বেরিয়ে শ্রাবণকে ফোন করে সত্যিটাই বললো। সবশুনে শ্রাবণ বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো। তারপর নিরবতা ভেঙে বললো,
–“সাবধানে যাস।”

–“আয়ু ভাবী এই মূহুর্তে একটা ট্রমার মধ্যে আছে ভাইয়া।”

–“বুঝতে পারছি আমি, এই সময়ে আমার ওর পাশে থাকা উচিত ছিলো। কিন্ত পারছি না আমি। তুই আয়ুর দিকে একটু খেয়াল রাখিস, আমি দেখছি কাজ সেরে কালকের মধ্যে আসতে পারছি কিনা।”

–“আচ্ছা, তাহলে রওয়ানা দিচ্ছি আমরা।”

–“হ্যাঁ, সাবধানে যাস।”

মাত্রই ফারাবীদের বাসার সামনে এসে পৌঁছালো আয়াত। সাথে ইরা শান আয়াশ আছে। সারা পথিমধ্যে আয়াত একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ ছিলো একেবারে। আয়াত যত বাড়ির দিকে এগোচ্ছে ওর মনে হচ্ছে কেউ একজন ওর কলিজাটা চেঁপে ধরে রেখেছে। কষ্ট হচ্ছে আয়াতের ভীষণ, দম বন্ধ হওয়ার মতো কষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো ড্রয়িংরুমে সাদা কাফনে মোড়ানো অবস্থায় খাঁটিয়াতে শুইয়ে রাখা হয়েছে ফারাবীকে। পাশেই ফারাবী মা ফ্লোরে বসে পাগলের মতো আহাজারি করছে। একপাশে রাইতাকেও দেখা যাচ্ছে। মেয়েটাও পাগলের মতো কাঁদছে। ফারাবীর মা রাইতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“তোর জন্য আজ আমার ছেলের এই অবস্থা। সেদিন যদি তুই ছলচাতুরী করে আমার ছেলেটাকে বিয়ে না করতি তাহলে আজ আমার ফারাবী বেঁচে থাকতো। কি লাভ হলো তোর? পেলি ফারাবীর ভালোবাসা? পেলি না তো, উলটো আমার ছেলেটাকে কেড়ে নিলি।”

এরকম হাজারো প্রলাপ করে চলছে ফারাবীর মা। আয়াত সেদিকে এগোতে গেলে শান পাশ থেকে দুহাতে আয়াতের বাহু ধরে। আয়াত চোখের ইশারায় বললো,
–“ঠিক আছি আমি।”

শান হাত সরিয়ে নিলো। আয়াত গুটিগুটি পায়ে ফারাবীর লাশের পাশে গিয়ে বসলো। একধ্যানে তাকিয়ে রইলো ফারাবীর মুখটার দিকে৷ ফারাবীর মা আয়াতকে দেখে ওর কাছে এসে আয়াতের হাত দুটো ধরে বললো,
–“আয়াত তুমি এসেছো? আমার ফারাবীকে উঠতে বলো না, তুমি ডাকলে ও সাড়া দিবে৷ আমার ফারাবীটা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে জানো তো? তোমার ডাকে সাড়া না দিয়ে ও থাকতেই পারবে না। ডাকো না একবার ওকে। আমার ছেলেটা যে আমাদের উপর অভিমান করেই চলে গেলো। তোমাকে নিজের করে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা নিয়েই আমার ছেলেটা যে পরপারে পাড়ি জমালো। ডাকো না ওকে। ও উঠবে। ওকে বলো না ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমরা।”

কথাগুলো বলতে বলতেই জ্ঞান হারালো ফারাবীর মা। আয়াত তখনো একধ্যানে ফারাবীর দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটা ওর হওয়ার কথা ছিলো, হয়নি। ফারাবীকে এভাবে দেখে ওর কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে ও। কিন্তু ওর গলা দিয়ে যেন আওয়াজ বের হচ্ছে না। ইরা গিয়ে আয়াতের কাঁধে হাত রাখতেই আয়াত বললো,
–“ইরু? ফারাবী কথা বলছে না কেন? ও শুয়ে আছে কেন এভাবে? আমি আসলে তো ও সবসময় খুশি হতো ইরু, তাহলে ফারাবী আজ চোখ মেলে দেখছে না কেন আমাকে?”

–“আয়ু শান্ত হো, ফারাবী আর নেই মানতে হবে এটা।”

ইরার কথায় আয়াত ফারাবীর গাল স্পর্শ করতে গেলেই শান আর আয়াশ আয়াতকে টেনে দূরে সরিয়ে আনে। আয়াত এবার চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। এ মানুষটাকে স্পর্শ করার অধিকারও ওর নেই। কিন্তু আয়াতের যে এই মূহুর্তে ফারাবীকে জাপ্টে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে৷ বুকটা ঝলসে যাচ্ছে আয়াতের। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আয়াতও সেন্সলেস হয়ে পড়লো।

চলবে~

|এটা গল্প, সুতরাং গল্পের মতোই দেখবেন আশা করছি। বাস্তবতার সাথে মেলাতে যাবেন না। আমি যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম সেভাবেই লিখেছি। আশা করছি সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here