এই অবেলায় তুমি পর্ব ১৮

0
1267

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আদিবার সামনে ওর মামা-মামী দাঁড়িয়ে আছে। আদিবা ভয়ে মাহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। মাহি চমকে নিজের হাতের দিকে তাকালো।

আদিবার মামী দৌড়ে গিয়ে আদিবা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
~মা কেমন আছিস? মামার সাথে রাগ করে কেউ বাসা ছেড়ে চলে আসে বুঝি।মামীর কথা একবার ও মনে পরলো না। আমি তকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি।এই কয়টা দিন ঠিক মতো খাবার খেতে পারিনি, ঘুমাকে পারিনি তোর টেনশনে। এত অভিমান তোর।

মাহি রাগে হাতটা মুঠ করে তাকিয়ে আছে। কতটা অভিনয় করতে পারে এই মহিলা। ঠাটিয়ে দুইটা থাপ্পড় মারতে পারলে ও শান্তি পেতো। কিন্তু উনি গুরুজন তাই চাইলেই কিছু করতে পারবে না।

আদিবার অবাক হয়ে ওর মামীর কথাগুলো শুনছে।
ওর মামী আবার ফিসফিস করে বললো, ” চুপচাপ আমার সাথে বাড়ি চল।কোনো তাল বাহানা শুনবো না আমি। ”
আদিবাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো, ” মা চল আমাদের সাথে। তুই বাড়িতে নেই বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।”

আদিবা চোখ তুলে আবিরের আম্মুর দিকে তাকালো। উনি চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন। আনিতা বেগম এগিয়ে আসলেন কিছু বলতে। তখনি দরজা থেকে শুনা গেলো,” আরে এতো তারা কিসের!! এই প্রথম ভাগ্নির শশুর বাড়িতে এসেছেন!! খাওয়া দাওয়া করেন। তারপর না হয় যাওয়ার কথা ভাববেন!!

——

“দেখুন ভাইয়া,আমি আপনাকে এর থেকেও বেশি সুন্দর একটা শো পিস কিনে দেবো। তাও আমাকে বেলকনি থেকে নিচে ফেলবেন না!!….

রুদ্রঃ আজব তো আমি কখন বললাম যে তোমাকে বেলকনি থেকে নিচে ফেলবো।আমি অফিস থেকে এসেছি খুব ক্লান্ত। একটা কাজ করে দিলে কিছু করবো না।
নূরঃ কি কাজ!..?
রুদ্রঃ আমার এখন পায়েস খেতে ইচ্ছে করছে। আমার জন্য পায়েস করে নিয়ে আসো। টাইম দশ মিনিট।
নূরঃ কিইই!! আমি পারবো না। আর মাত্র দশ মিনিটে কিভাবে!? আর আমি তো পায়েস রান্না করতেও পারি না।
রুদ্রঃ দেখো তুমি আমার এতো সুন্দর,গিফট এর শো পিসটা ভেঙে ফেলেছো।আবার আমাকে না বলে আমার রুমে এসেছো।এখন যদি আমার কথা না শুনো তাহলে,…
নূরঃ হি হি হি ভাইয়া আমি তো মজা করে ছিলাম। এখনি যাচ্ছি। দরজাটা খোলে দেন,…

——

সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো। আবির দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে দেখে আবিরের আম্মু মুচকি হাসলেন।[উনি যখন শুনলেন বাসায় আসা পুরুষ আর মহিলাটি আদিবাকে নিতে এসেছে। সাথে সাথে আবিরকে ফোন দিয়ে সব বললেন। আবির বললো ও আসছে ]
আদিবার মামী বললো,” না আজ আর বসা যাবে না। আজ খুব জরুরি একটা কাজ আছে। অন্য কোনো দিন আসলে না হয় বসবো। আপনাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মেয়েকে দেখে রাখার জন্য। চল আদিবা বলে আদিবার হাতটা শক্ত করে ধরলেন।
আদিবার মন চাচ্ছে ওর মামীকে কয়েকটা করা কথা শুনাতে। কিন্তু সে চায় না মানুষের সামনে ওর মামী অপমানিত হোক।

আবির আদিবার সামনে এসে। আসতে করে ওর মামীর হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।

আদিবার মামী কটমট করে আদিবার দিকে তাকালো। তারপর আবার নিজেকে নিজেই বুঝালো এখানে রেগে গেলে চলবে না। শান্ত থেকে আদিবা কে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে নিয়ে এমন হাল করবে আর কোনো দিন বাসা থেকে বের হওয়ার কথাও মুখ দিয়ে বলবে না। শুধু একবার বাসায় নিয়ে যেতে পারলেই হলো।

শালেহা বেগম এসে বললেন,”আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন.. আর ছোটো যা গিয়ে উনাদের জন্য খাবার রেডি কর।”

~না! আমরা এখানে খেতে আসিনি। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিতে এসেছি।চল আদিবা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো আদিবার মামা।

আবিরের আম্মুঃ কিন্তু সে তো এখন আর আপনাদের ঘরের মেয়ে নেই। আদিবা এখন আমাদের বাড়ির বউ!!..

আদিবা চমকে উঠলো “বউ”

আবিদার মামী এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার রেগে বলে উঠলো, ” ফাজলামো করছেন আমাদের সাথে। আমাদের মেয়ে আমরা ফিরিয়ে নিতে এসেছি। আপনাদের এতো সমস্যা কিসের!!?

শায়েলা বেগমঃ আপনি হয়তো ভালো করে শুনেন নি!! মেঝো কি বলেছে? আদিবা এই বাড়ির বউ। ওকে আপনারে চাইলেই নিয়ে যেতে পারেন না!!

~ বউ মানে!!? আমাদের কে কি আপনাদের বোকা মনে হয়। যা বলবেন বিশ্বাস করে নিবো। তা জামাই কই!!?

আবিরের দিকে ইশারা করে। আবিরের আম্মু বললেন। আমার ছেলে আবির, ইন্সপেক্টর আবির চৌধুরী।

আবির গিয়ে আদিবার মামা কে জড়িয়ে ধরলেন। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,” যদি নিজের ভালো চান!! বেশি কথা না বলে চলে যান। আর যদি বেশি বারাবাড়ি করেন আমি কিন্তু অতীত নাড়া দিতে দু বার ভাববো না!!

ভয়ে আদিবার মামার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে।

আদিবার মামী কিছু বলতে যাবে এমন সময় উনার স্বামী অনাকে বললেন,” শুনছোই তো বিয়ে হয়ে গেছে ঝামেলা করে লাভ কি।ছেলে ভালো আর কি চাই। আমার একটা দরকারি কাজ আছে। অন্য একদিন এসে আবার দেখে যাবো। বলে উনার হাত ধরে বেরিয়ে গেলেন।

উনার হঠাৎ এই আচরনে আদিবা অবাক হয়ে গেলেন। ও অর মামাকে খুব ভালো করে চিনে। ওকে না নিয়ে যাওয়ার মতো লোক না ওর মামা। তাহলে আজ হটাৎ কি হলো।
উনাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবির একটা শয়তানি হাসি দিলো।

আদিবার মামা গেইট থেকে বের হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে,” ঠিক দশ বছর আগে যেটা করে ছিলো। এখন আবার সেটা করবে। রাস্তায় কাটা রাখতে নেই সরিয়ে ফেলতে হয়।”

আবির আদিবার দিকে তাকিয়ে রেগে গেলো। ওই দিন রাতে তো পটাপট ওকে অনেক কিছু বলে দিলো। আর আজকে মামা মামী কে দেখে কিছু বললো না। অন্ততপক্ষে একটা থাপ্পড় তো মারতে পারতো। মামীর গালে।

আবিরঃ আম্মু!! রাতে আব্বু আসলে সবাইকে বলে দিও। আমি কালকেই বিয়ে করতে চাই। বেশি কোনো মানুষ হবে না। পারিবারিক ভাবেই এখন বিয়ে করে রাখবো। পরে তোমার মন চাইলে অনুষ্ঠান করা হবে।

আদিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কথার কোনো দাম নেই। ও তো বললো বিয়ে করবে না। তাও এই লোক বিয়ের কথা বলে দিলো তাও কালকেই!!!

——

পায়েস প্রায় রান্না হয়ে গেছে। সামনে মোবাইল ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রান্না করছে।
আবির নিজের রুমে যাওয়ার সময় রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর কি যেনো করছে। কৌতুহলের বসে রান্নাঘরে গেলো। গিয়ে দেখে নূর খুব মনযোগ দিয়ে রান্না করছে। সামনে মোবাইল ইউটিউবে ভিডিও চলছে কিভাবে পায়েস রান্না করবে।

আবিরঃ কি করতেছিস পেত্নী!!
নূরের আর বুঝতে বাকি নেই রান্না ঘরের দরজায় কে। আজকে আর নূর রেগে গেলো না। খুশি হয়ে বললো,” দেখো ভাইয়া আমি পায়েস রান্না করছি। ”

আবির অবাক হয়ে বললো,”বাব্বাহ্ তুই পায়েস রান্না করছিস। সবার আগে আমাকে দিবি কিন্তু!!

নূর খুশি হয়ে বললো, ” এই নও ভাইয়া। ”

আবির নূরের হাত থেকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাটিটা নিলো।এক চামচ মুখে দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।

নূরঃ কি হয়েছে ভাইয়া!! ভালো হয়নি?

আবিরঃ তোকে কে বলেছে পায়েস বানাতে?

নূরঃ রুদ্র ভাইয়া।

আবির এবার একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ” বাহ্ খুব মজা হয়েছে নূর। আজ তো রুদ্র তোর হাত শুদ্ধ খেয়ে ফেলতে চাইবে। এতো মজা করে কিভাবে রান্না করলি বইন!!?
নূরঃ ধন্যবাদ ভাইয়া.. বলে খুশিতে রুদ্রের জন্য নিয়ে উপরে গেলো।

নূরঃ রুদ্র ভাইয়া আসবো!
রুদ্রঃ হুম আসো..
নূরঃ এই নেন ভাইয়া..
রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো একদম ঠিক টাইমে এসেছো, বলে এক চামচ মুখে দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো এটা কি তুমি বানিয়েছো!!?
নূরঃ জ্বি ভাইয়া! কেমন হয়েছে?
রুদ্রঃ হুম ভালো। খুব ভালো হয়েছে। কে দেখিয়ে দিয়েছে?
নূরঃ ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রান্না করছি ভাইয়া..
রুদ্র আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে বাটিটা নূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ” কাল কেই যেনো আমি আরেকটা সুন্দর শো পিস আমার রুমে দেখি!!”…

——

মাহি রুহির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো রুহি খুব সুন্দর করে সাজগোজ করছে। হয়তো এখন বাহিরে যাবে।মাহির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো। নিজের কাজ শেষ করে শান্তির একটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

ঘর থেকে বের হতে গিয়ে আচমকাই সাবান পানিতে পিছলে পড়লো।রুহির মনে হলো এই বুঝি ওর কোমর একবারে গেলো। তিন তিন বার একি জায়গায় ব্যথা পেলো।রুহি ব্যথায় ছটফট করতে লাগলো।সে বুঝতে পারছে না একটু আগেও তো দরজায় পানি ছিলো না। এখন কে সাবান পানি রাখলো।উঠতে চেষ্টা করেও পারছে না। তখনি মনে হলো এটা নূরের কাজ নয়তো। ও আর আদি ঘুরতে যাবে তাই নূর আবার ওর সাথে এমন করলো। রাগা চোক মুখ লাল হয়ে উঠলো। ছাড়বে না ও নূরকে!!..

———

সন্ধ্যা থেকে বসে বসে পড়েই যাচ্ছে নূর।আজ ভয়েও রুদ্রের রুমের সামনে যায় নি। বেচারা পায়েস খেতে চেয়েছে নূর ওকে স্পেশাল পায়েস খাইয়েছে। চিনির জায়গায় লবন দিয়ে পায়েস বানিয়েছে। ও বুঝে পাচ্ছে না রুদ্র এই পায়েস কিভাবে খেলো। যেখানে ও মুখেও নিতে পারেনি!! নিশ্চয়ই সাদা হনুমানের মাথায় সমস্যা আছে না না মাথায় না!! মুখে সমস্যা আছে! না হলে এতো লবন দেওয়া পায়েস কিভাবে খেলো আর আবির ভাই ও ওকে একবার বললো না! মন খারাপ করে আবার পড়ায় মন দিলো।কিন্তু না পড়তে আর ভালো লাগছে না। বাসার সবাই আদিবা আপুর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। এদিকে ও নিজে রুমে বসে পড়ছে। বাহিরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। যদি রুদ্র ভাই সামনে পরে সেই ভয়ে।এরি মধ্যে মাহি আসলো নূরের রুমে।

মাহিঃ সবাই ছাঁদে তুই রুমে বসে বসে পড়তেছোস। এত পড়লে শহিদ হয়ে যাবি।

নূরঃ আপু একটু এইটা বুঝাই দাও না..
মাহি অনেক সুন্দর করে নূরকে বুঝালো তারপর বললো, এটা লিখে দেখা।

নূর অঙ্কটা করে মাহিকে দিলো। মাহি অবাক হয়ে খাতার দিকে একবার আরেক বার নূরের দিকে তাকিয়ে ঠাস ঠাস খাতা দিয়ে ওর মাথায় তবলা বাজিয়ে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

———

আদিবা এশার নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে বলছে,”আল্লাহ মানুষটা একদম আমার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে দিনদিন।আমি একদম ডুবে যাচ্ছি তার মায়ায়।যতই মুখ দিয়ে বলি আপনাকে বিয়ে করবো না। কিন্তু যখন প্রথম শুনে ছিলাম আমার প্রিয় মানুষটির সাথেই আমার বিয়ের কথা চলছে।কি যে খুশি হয়ে ছিলাম। যখন মনে হলো ওরা আমাকে দয়া করছে। আমার পরিবার নেই , এই নিয়ে কখনো আবির আপসোস করবে। তখনি সিদ্ধান্ত নেই আমি ওর আপসোস এর কারন হবো না। আর আমি আমার মামা কেউ খুব ভালো করে চিনি।উনি নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছুই করতে পারে!!। আল্লাহ আমার আর আবিরের মাঝে যেনো কেউ না আসতে পারে।তুমি তো জানো আমি ঠিক কতটা উনাকে ভালোবাসি।আদিবা কথাগুলো বলছে আর চোখ থেকে টপরপ করে পানি পরছে।

——

মাহি আর আদিবা ছাঁদে বসে আছে।
মাহি বলে উঠলো, ” আজকের রাতের আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?
আদিবাঃ হুম.. তার চেয়ে বেশি আমার এই জান্সটার মন সুন্দর। আচ্ছা মাহি একটা কথা বলি!?

মাহিঃ একটা কেনো দশটা বল।

আদিবাঃ তুই কি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসিস!!?

চলবে…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here