#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
হঠাৎ গাড়ির হর্ন এ হুশ ফিরলো নূরের…
নূরঃ কি হয়েছে?
রুদ্রঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি দেখতে আগের থেকে বেশি সুন্দর হয়ে গেছি নাকি? আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। তাই বলে এভাবে তাকিও না। পরে নজর লেগে যাবে।
নূর ভাবছে সে কখন উনার দিকে তাকালো। সে তো সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবার ভালো করে রুদ্রের দিকে তাকালো,” আপনি স্মার্ট? বলে হাসা শুরু করলো নূর। দেখেন রুদ্র ভাইয়া আমার আর কোনো জোক্স শোনার সময় নেই আমি গেলাম। বলে গাড়ি থেকে নামার সময় বুঝলো ওর হাত রুদ্রের হাতের মুঠোয়।আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবানো।নূর আবার রুদ্রের দিকে তাকালো। সামনের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্র।
নূরঃ ভাইয়া আমি তো চলে এসেছি….
রুদ্রঃ চলে এসেছো!! তাহলে বসে আছো কেনো যাও।
নূরঃ আমার হাত।
রুদ্র এবার নূরের হাত ছেড়ে দিলো।
নূর গাড়ি থেকে বের হতেই একটা ছেলে বলে উঠলো, ” ভাবি কেমন আছেন? ”
নূর চমকে রুদ্রের গাড়ির দিকে তাকালো।
রুদ্র চোখ ছোটো ছোটো করে নূর আর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর ছেলেটাকে কিছু না বলে। ইরিন কে কল দিলো। তারপর হাঁটতে হাঁটতে কলেজের ভেতর চলে গেলো।
রুদ্র চলে গেলো হসপিটালের দিকে। যাওয়ার পথে কাকে যেনো কল দিয়ে বললো নূরের সব ডিটেইলস একটু পর পর ওকে জানাতে।
——
নূর আর ইরিন কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে। ইরিন বারবার কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করতে পারছে না। আসলে কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতেও পারছে না। যদি নূর অন্য কিছু মনে করে!!
নূরঃ কি রে কিছু বলছিস না কেনো? তুই কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?
ইরিনঃ তেমন কিছু না। তোর বাসার সবাই কেমন আছে?
নূরঃ হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
ইরিন আবার ভাবছে নীলের কথা কিভাবে জিজ্ঞেস করবে! ইরিন ভাবলো সে তো শুধু নীল কেমন আছে? সেটাই যানতে চাইবে এতে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। বলতে যাবে সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ ভাই ওদের দিকেই আসছে। আবার চুপ হয়ে গেলো।ক্লাসে গিয়ে না হয় জিজ্ঞেস করবে।
শুভঃ কেমন আছো নূর?
নূর বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করলো না। এই গুন্ডা বেটা কি তাহলে আমার নাম ও যেনে গেছে।ওই দিন তো সাহসী নারী সেজে অনেক কথা শুনিয়ে ছিলাম। উনি তো রেগে থাকার কথা এত শান্ত আছে কিভাবে।উনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি উনি খুব ডেঞ্জারাস লোক।
নূরঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।আমরা দুইজন খুব ভালো আছি। আপনি?
শুভ কিছুটা রেগে বললো,” একদম ভাই বলবে না!!.. আমি তোমার ভাই হই কিভাবে?”
নূরঃ আপনাকে তো সবাই শুভ ভাই বলে।আর আপনি আমার থেকে অনেক! অনেক! অনেক বড় হবেন। আর আমার আম্মু সব সময় বলেন বড় দের সম্মান দিয়ে কথা বলবি।আমার ভুল হয়েছে আমার তো আপনাকে মামা ডাকার দরকার ছিলো। আপনার মতো আমার আম্মুর চাচির ভাবির একটা বোনের দেবর আছে। দেখতে আপনার মতো। সম্পর্কে উনি আমার মামা হবেন। আপনাকে আমার মামা ডাকার দরকার ছিলো।
শুভ বেআক্কেল এর মতো নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু। ওকে ডাইরেক্ট মামা বানিয়ে নিলো।ওর কি তাহলে বয়স বেড়ে গেছে। ওর বয়স ২৯বছর।আজকেই গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখতে হবে নিজেকে।বয়স এত টাই বেড়ে গেছে দেখতে মামা মনে হয়। সে যাকে বউ বানানোর প্লেন করছে সে তাকে মামা বানিয়ে দিলো।
শুভ আর নূরকে কিছু বললো না। এই মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলে না জানি আর কি কি বানিয়ে দেয়। ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। এবার ইরিনকে বললো,” ইরিন তোমার কি মন খারাপ নাকি শরীর ভালো না?”
দুই দিন আগেও যদি এই কথাটা শুভ জিজ্ঞেস করতো। ইরিন হয়তো খুশিতে গদোগদো হয়ে যেতো। কিন্তু আজ খুবি বিরক্ত হলো।(হুহ্ ভাই আমার খুঁজ খবর জেনে তুই কি করবি!!। )
ইরিনঃ শরীর মন দুটোই ভালো আছে মামা।
শুভঃ মামা!!!আমাকে দেখে কি তোমাদের মামা মনে হয়???
কত ফুরফুরে একটা মন নিয়ে আসছিলো বেটা ভালোবাসার কথা বলতে।দিলো তো দুই বান্ধবী মিলে মামা বানিয়ে।
ইরিনঃ আপনি তো বললেন। ভাইয় না ডাকতে। তাহলে কি ডাকবো। আঙ্কেল ডাকা যাবে না। কারন আপনি তো বিয়ে করেননি। তাই মামা খুব সুন্দর একটা নামে ডাকলাম। আপনি তো খুশি হওয়ার কথা। আপনি চাইলে কিন্তু আমি শুভ বলেও ডাকতে পারি।
লাস্টে কি না। হাঁটুর সামান মেয়েদের কাছ থেকে নিজের নাম ধরে ডাক শুনা লাগবে।শুভ কিছু না বলে রেগে চলে গেলো।
নূর আর ইরিন হাসতে হাসতে ক্লাসে চলে গেলো।
——
গেইটের বাহিরে দাড়িয়ে আছে নূর আর ইরিন। তারপর নূর একটা রিক্সা নিয়ে ইরিনকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আর ইরিন হাঁটছে ওর বাসার উদ্দেশ্যে।তখনি হঠাৎ কেউ পিছন থেকে ডেকে উঠলো,
“এই হরিণ ”
সাথে সাথেই থমকে দাড়িয়ে গেলো ইরিন।মুখে ফুটে উঠেছে খুশির হাসি।খুশিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। যেই মেয়ে এই “হরিণ ” ডাক শুনলে রেগে বোম হয়ে যেতো। সেই আজ এই ডাক শুনে এতো খুশি। কিন্তু বলে না বেশি খুশি বেশি সময় থাকে না৷ ইরানের বেলায়ও তাই হলো।
নীল দৌড়ে ইরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর ইরিনের চুলের মধ্যে একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিলো।
বেচারি ইরিন তেলাপোকা খুব ভয় পায়।ভয়ে হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করলো।
ইরিনঃ প্লিজ!! প্লিজ!! নীল ভাইয়া এটা সরান প্লিজ।
নীল হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। পেটে হাতদিয়ে হাসা শুরু করলো। আর ইরিন তো এখনো লাফালাফি করছে।
ইরিন নিজের ঘারের দিকে তাকিয়ে দেখলো তেলাপোকা ঘারে৷ এক চিৎকার দিয়ে গিয়ে নীল কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
নীলের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে গেলো সে।জীবনের এই প্রথম কোনো মেয়ে ওর এতো কাছে এসেছে।লেপ্টে আছে ওর শরীরের সাথে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো নীল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো।রাস্তার মানুষগুলো কেমন যেনো চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। নীল লজ্জা পেয়ে গেলো। ইরিন এখনো ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর তেলাপোকাটা ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।নীল ইরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,” হরিণ ছাড়ো!!”
ইরিনঃ না! না ছাড়বো না। আগে ওটা আমার ঘাড় থেকে ফেলুন।
নীলঃ তোমার ঘাড়ের দিকে তাকাও?
ইরিনঃ প্লিজ! প্লিজ ভাইয়া সরান না এটা!!
ইরিনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারি খুব ভয় পেয়েছে।ভয় পেয়ে যে একজন কে জড়িয়ে ধরে আছে সেই দিকেও খেয়াল নেই।
নীল এবার কিছুটা ধমকের শুরেই বললো,” আমার হাতের দিকে তাকাও!!”
ইরিন নীলের হাতের দিকে তাকিয়ে ভয়ে নীল কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে গেলো।
নীলঃ আরে হরিণ তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো? এটা তো রবার্টের তেলাপোকা।
রবার্টের তেলাপোকা শুনে রেগে ইরিন নীলের দিকে তাকালো।
ইরিন রেগে বলে উঠলো, ” আপনি তো ভাড়ি বেয়াদব একটা ছেলে। আরেকটু হলে আমি ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করতাম।”
নীলঃ তোমরা মেয়েরা তেলাপোকা কে কেনো এতো ভয় পাও আমি বুঝি না।আর তুমি তো একটা নির্লজ্জ মেয়ে। আমি না হয় তেলাপোকা দেখিয়েছি। তাই বলে তুমি রাস্তায় এতো মানুষের সামনে জড়িয়ে ধরবে।আমার বউয়ের আগে তুমি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে।নিশ্চয়ই আমার বউ শুনলে কষ্ট পাবে।[দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো নীল।]
ইরিন লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি ইচ্ছে করে ধরেছে নাকি!! ভয় পেয়েছিলো তাই ধরেছে।তাই বলে নীল ওকে এভাবে বলবে।কিছুটা অভিমান ও হলো।
ইরিনঃ ওই দিনের প্রতিশোধটা নিলেন বুঝি!!?
নীলঃ গুড তুমি তো দেখি আগে আগে সব কিছু বুঝে যাও।
——
পাশের বাসার তামিমের আম্মু রাবেয়া বেগম এসেছে। ড্রয়িং রুমে বসে রুদ্রের আম্মু শাহেলা বেগমের সাথে কথা বলছেন।
রাবেয়া বেগমঃ ভাবি ওই মেয়েটা কে?
শাহেলা বেগম কিছু বলার আগেই আনিতা বেগম বলে উঠলেন, ” আমার বোনের মেয়ে ”
রাবেয়া বেগমঃ কই ভাবি আমি যতটুকু জানি আপনার তো কোনো বোন নেই। আপনার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে ছিলেন আপনি।
রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে নূরের মেঝো আম্মু বললেন,” ঠিক বলেছেন ভাবি। আনিতা ভাবির নিজের আপন বোন নেই। তবে দূরসম্পর্কের এক বোনের মেয়ে আদিবা। ভাবছি আমার আবিরের সাথে খুব জলদি বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবে।আপনি তো মেয়েটাকে দেখেছেনি। কতটা লক্ষি একটা মেয়ে।ঠিক এমন একটা মেয়ে খুজতে ছিলাম মনে মনে আল্লাহ মনে হয় আমার ডাক কবুল করেছেন। ”
রাবেয়া বেগম খুবি খুশি হলেন। আসলেই মেয়েটা খুব সুন্দর। আবিরের সাথে খুব মানাবে।শাহেলা বেগম,আনিতা বেগম ও খুব খুশি হলেন।
নূরের মেঝো আম্মু আবার বললেন, “আমার এক ছেলে আদি তার নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে।বউ তো খাট থেকেই নামে না। জিসানের বউ শুভ্রতা খুবি লক্ষি একটা মেয়ে। আবিরের বউ আমি নিজে পছন্দ করেছি। আমি মানুষ চিনতে ভুল করি না।ভাবছি আজকে রাতে পুরুষরা বাসায় আসলে এই বিষয় কথা বলব।কি বলেন বড় ভাবি?
শায়েলা বেগমঃ আমার ও আদিবা কে খুব পছন্দ হয়েছে।সুন্দর, শিক্ষিত,ভদ্র সব দিক দিয়েই আবিরের জন্য একদম ঠিক আছে। আমিও রাতে কথা বলে দেখবো। কিন্তু মেঝো আবিরের নিজের ও পছন্দ অপছন্দ বেপার আছে!!..
~আমি জানি আমার আবির আমার কথা ফেলবে না।
দরজায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো নূর।খুব খুশি হয়েছে সে যাক আদিবা আপুর জীবনটা খুবই বিষাদ আর কষ্টে দিয়ে ঘেরা।একটু সুখের ছোঁয়া পেতে যাচ্ছে। মেঝো আম্মুর মতো শাশুড়ী হয় না।মাটির মানুষ বলা যায়। আবির ভাইয়ার মতো বুঝদার স্বামী পাওয়া ভাগ্যের বেপার। এই খুশির খবর কি আমি এখন দিবো নাকি রাতের জন্য আপুর সারপ্রাইজ হিসেবে থাকবে।এটা সেটা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে গেলো নূর।
——-
রাতে শুয়ে শুয়ে একটা উপন্যাসের বই পড়ছে মাহি।সে এখনো বিয়ের সম্পর্কে কিছুই জানেনা। নূর ও কাউকে কিছু বলেনি। এটা সবার জন্য সারপ্রাইজ ।এমন সময় ওর মোবাইল বেজে উঠলো।
~হ্যালো…
ওপাস থেকে একটা পুরুষের কন্ঠ ভেসে এলো।
~আপনি একটু আপনার রুমের বারান্দায় আসবেন মাহি।
কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হলো না মাহির। মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো “ফায়াজ”
~বাহ্ আমার কন্ঠটা দেখি মনে গেঁথে নিয়েছেন মিস মাহি!!..
মাহি বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। হঠাৎ ফায়াজের ফোন কেমন যেনো সব কিছু এলোমেলো করে দিলো।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে উঠলো, ” নাম্বার কোথায় পেয়েছেন? ”
~আপনি এতো বেশি কথা কেনো বলেন মাহি!! বারান্দায় আসুন…
~আজব তো আপনি নাম্বার কোথায় পেলেন আগে সেটা বলুন? আর আপনি ভাবলেন কিভাবে আপনি বলবেন আর আমি দৌড়ে বারান্দায় চলে যাবো।
~আমি জানি আপনি আসবেন…
~আপনি এখন কোথায়?
~বারান্দায় আসুন বুঝতে পারবেন।…
মাহি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু কোথায় উনাকে তো দেখা যাচ্ছে না। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো।রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে। গাঁয়ে টি-শার্ট আর টাউজার।
“আপনি এখানে কেনো?”
~কেনো এখানে আসা কি নিষেধ নাকি?.
~সব সময় বেশি বুঝেন কেনো!! ওখানে না দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় তো আসতে পারতেন।
~কাল তো রুদ্রের বন্ধু তাই বাসায় গিয়েছি।বন্ধুর বাসায় তো আর প্রতি দিন আসা যাবে না। আপনি চাইলে আজকে শশুর বাড়ি ভেবে আসতে পারি!!…
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।