উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব ৪১

0
398

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৪১
_________________

মাথায় প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখের পাতা দুটো টেনে খোলার মতো কষ্টদায়ক কাজ এই মুহূর্তে আর দ্বিতীয় কোনোটিকে মনে হচ্ছে না। শেষমেশ চোখের পাতা দুটো টেনে খুললো ইরতিজা। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখতে পেল তার সম্মুখ বরাবর দেয়ালে একটা আলোর উৎস জ্বলছে। বাম দিকে তাকালে একটা ছেলে মানুষের অবয়ব দেখতে পেল টলমল নেত্রপট দিয়ে। প্রথমে মনে হলো যে অবয়বটা দেখতে পাচ্ছে ওটা সাজিদের। পরে মনে হলো ওটা ক্যানিয়লের। কিন্তু একটু সময় নিয়ে বুঝতে পারলো ওটা আসলে জোনাস। ইরতিজার মনে পড়ে গেল জ্ঞান হারানোর আগের ঘটনাগুলো। জোনাস গিয়েছিল তার কাছে, সে ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই জোনাস এসে তার মুখ চেপে ধরেছিল। আর তারপরই সে জ্ঞান হারায়। সবটা মনে পড়ে যেতেই ইরতিজা শায়িত অবস্থা থেকে উঠে বসলো দ্রুত। জোনাস অন্যদিকে ফিরে কিছু একটা করছে। ইরতিজা বললো,
“তুমি এখনও এখানে? এত রাতে আমার বাড়িতে আসতে পারো কীভাবে?”

ইরতিজার কণ্ঠ শুনতে পেয়ে জোনাস ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ইরতিজাকে জাগ্রত দেখে মুচকি হেসে বললো,
“জেগেছো তুমি?”

সে এগিয়ে এলো ইরতিজার কাছে। হাতের স্বচ্ছ গ্লাসে কোনো এক পানীয় লক্ষ করা যাচ্ছে। সম্ভবত আঙুরের জুস হবে। সে ইরতিজার কথার প্রত্যুত্তর করলো,
“আমি এখানে নই, তুমি এখানে আছো। ইট’স মাই প্লেস।”

ইরতিজার অন্তঃকরণ সচকিত হলো। দৃষ্টি জোড়া সচকিত হয়ে এদিক-ওদিক তাকালো। কপালে চিন্তিত রেখার সৃষ্টি হয়ে গেল নিমেষহীন। এটা তো জোনাসের রুম। ইরতিজার মনে হয়েছিল সে নিজে কক্ষে আছে। কিন্তু জোনাসের এখানে দেখে তার ভয়ের মাত্রা আরও একগুণ বেড়ে গেল। সেই সাথে রাগ। চিৎকার করে উঠলো ইরতিজা,
“আমাকে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছো তুমি?”

জোনাস একটু হাসলো।
“মাটি থেকে তোমার বারান্দার উচ্চতা একটুখানি হওয়াতে কাজটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। অবশ্য তোমাকে নিয়ে দুই-তিন তলার বারান্দা থেকে নামতে গেলে নামাটা সম্ভব হতো না বোধ হয়। সম্ভব হলেও খুব কঠিন ব্যাপার হতো আমার জন্য।”

ইরতিজার রাগের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সে রাগি নেত্রতে তাকালো জোনাসের দিকে। জোনাস আঙুরের জুস বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“এটা তোমার জন্য।”

ইরতিজা তিক্ত চোখে সুমিষ্ট আঙুর রসের দিকে তাকালো। একটা তেঁতো ভাব তার মুখশ্রীতেও প্রকাশ পেয়েছে। জোনাসের উপর চেঁচিয়ে উঠলো সে,
“তুমি আমাকে এখানে এনেছো কেন? কোন সাহসে এনেছো? কেন আমার বাড়িতে গিয়েছিলে? তুমি কি আমাকে অজ্ঞান করেছো?”

“আমি তোমাকে অজ্ঞান করিনি। তুমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে।”

ইরতিজা আবারও চেঁচিয়ে উঠলো,
“তুমি আমার অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে এখানে এনে একদম ঠিক করোনি। আজ সব লিমিট ক্রস করেছো তুমি। তোমার প্রতি আরও একবার প্রবল ঘৃণা অনুভব করলাম। আমাকে এখানে নিয়ে আসার দুঃসাহস কীভাবে করতে পারলে?”

জোনাস হেসে বললো,
“এটার থেকেও বেশি দুঃসাহস করে ফেলেছি আমি।”

ইরতিজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“মানে? আর কী করেছো?”

জোনাস আর প্রশ্নের উত্তর দিলো না। বললো,
“আমার সাথে সাইকেলে ঘুরবে টিজা? এজন্যই এনেছি তোমাকে। সাইকেলে ঘোরার জন্যই তোমার কাছে গিয়েছিলাম।”

“এতো বড়ো অন্যায় করার পর সাইকেলে ঘোরার কথা বলছো তুমি? কীভাবে ভাবলে এসবের পরেও তোমার সাথে সাইকেলে ঘুরবো? আমি এই মুহূর্তে বাসায় ফিরতে চাই। তোমার পাগলামিপূর্ণ কাজ আমাকে তিক্ত করে তুলছে। আমি ভাবতে পারছি না কেউ আমাকে আমার বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় তুলে এনেছে! তুমি যেটা করেছো এটা শত্রুতাতেই মানায়। এমন কাজ হয় শত্রুদের। যত দিন যাচ্ছে আমরা তত একে অপরের ভালো শত্রু হয়ে উঠছি। তুমি আমাদের মাঝে কোনো বন্ধুত্বের চিহ্নই রাখছো না জন। আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব না থাকুক, একটা দুটো বন্ধুত্বপূর্ণ চিহ্ন অন্তত থাকতে পারতো। কিন্তু তুমি সবকিছু ধুলিস্মাৎ করে দিচ্ছো।”
বলতে বলতে ইরতিজার দু চোখ বেয়ে হঠাৎই আবেগী অশ্রু নামলো। সে আরও বললো,
“আমাদের মাঝে বন্ধুত্বটা না হয় না-ই থাকতো, কিন্তু তোমার আমার শত্রু হয়ে ওঠাটা কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল?”

জোনাস বাকহারা হয়ে চেয়ে রইল স্তব্ধ নয়নে। ইরতিজা বললো,
“আমার কষ্ট হয়, যাকে বন্ধু বলে চিনতাম তার শত্রু রূপ মানতে ভীষণ কষ্ট হয় আমার। প্লিজ! আমার সাথে এখানেই শত্রুতার পরিমাণ স্থিতিশীল রাখো। তুমি ফুফুকে নিয়ে হু’মকি দিচ্ছ আমায়, রাতে গিয়ে তুলে আনছো বাসা থেকে, প্লিজ বন্ধ করো এসব। ইতোমধ্যে তুমি শত্রুর মতো আচরণ করে এক বিষাক্ত কাঁটার জন্ম দিয়েছো আমার জীবনে। দ্বিতীয় কোনো কাঁটার জন্ম দিয়ো না আর। দিলে ওই কাঁটার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাবে আমার জীবন। নিউ ইয়র্ক ফিরে যাও প্লিজ।”

“আমি তোমার জন্য রেডমন্ড এসেছি টিজা।”

“তুমি আমার সাথে শত্রুতা আরও প্রগাঢ় করার জন্য রেডমন্ড এসেছো। কিন্তু আমি তাতে অনিচ্ছুক। আমি চাই একটু শান্তিতে বাঁচতে। আর তুমি আমার জীবনে এক অশান্তির নাম!”

ইরতিজার মুখচ্চারিত বাক্যে জোনাসের হৃদয় সহসা ছিদ্র হলো ধা’রালো ফলার আঘাতে। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললো,
“আমি অশান্তি তোমার জীবনে?”

“হ্যাঁ। আগে ছিলে না। আগে তুমি এমন একজন ছিলে যার কারণে হাসি ফুঁটতো আমার মুখে। কিন্তু তুমি নিজ কর্মে অশান্তিময় হয়ে উথেকেইছো এখন!”

কথাটা শুনতে খারাপ লাগলো এবং অসহ্য মনে হলো জোনাসের। কষ্ট লাগলো, সাথে রাগ, জেদও হলো। দৃপ্তকণ্ঠে বলে উঠলো,
“হ্যাঁ অশান্তি! এটাই ঠিক আছে। আমি চাই না তুমি শান্তিতে থাকো। যার জন্য সর্বক্ষণ ঘৃণার বিচরণ অন্তরে সেই মানুষটা শান্তিতে থাকুক একদমই চাই না। তার শান্তিময় জীবন আমাকে অশান্তির স্বাদ দেয়। আমার ঘুম কেড়ে নেয়, আমার নিরালা সময়কে করে ছটফটে। আমি চাই তোমার সারাটা জীবন অশান্তিতে কাটুক। অশান্তি খুব করে জ্বালাতন করুক তোমাকে প্ৰতিটা মুহূর্তে!”

কথাগুলো শুনে ইরতিজার এত ঘৃণা লাগলো যে সে শুধু একটা বাক্য ছাড়া আর কিছু উচ্চারণ করতে পারলো না মুখে,
“তুমি ঘৃণারও অযোগ্য জন!”

কথাটা বলে এক মুহূর্ত আর দাঁড়াতে পারলো না। ঘৃণায় বিষাক্ত হয়ে উঠছিল মন। এত বিষের প্রকোপ এই প্রথম অনুভব করলো জীবনে। যে জোনাসের জন্য তার কষ্ট অনুভব হতো এই কি সেই জোনাস? কিছুদিন আগেকার জোনাস আর এখনকার জোনাসের মাঝেও হাজার তফাতের সৃষ্টি হয়েছে। জোনাস এক সময় তার ভালো বন্ধু ছিল এটা মনে করে আর কষ্ট অনুভব হচ্ছে না। কষ্ট উপলব্ধির স্থানটুকুও ঘৃণারা সম্পূর্ণ রূপে দখল করে ফেলেছে। অতীতে থাকা কোনো বন্ধু কি কখনও কোনো বন্ধুকে এমন করে বলতে পারে?

ইরতিজা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো নিচে। জোনাসের হাউজলর্ড আজ বাড়িতে নেই। থাকলে হয়তো সে চিলেকোঠায় হওয়া ঘটনার কিছুটা অংশ হলেও টের পেত। বাইরে অন্ধকার। অনেক দূর থেকে কিছু আলোর রশ্মি ভেসে আসছে। ইরতিজার গায়ে পুরু কোনো শীত পোশাক নেই। একটিমাত্র থাম্পার সোয়েটার, যা শীত উপশম করতে তেমন একটা কার্যকরী নয়। ইরতিজা বাড়িটা থেকে কয়েক পা দূরে হেঁটে আসা মাত্রই জোনাস হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে ইরতিজার একটা হাত ধরে ওকে যেতে বাধা দিলো। আকস্মিক ঘটনায় ইরতিজা ভয়, বিস্ময়ে চমকে উঠলো ভারি। জোনাস বললো,
“তুমি এভাবে চলে যেতে পারবে না। তুমি এভাবে চলে যাবে বলে আমি তোমাকে নিয়ে আসিনি। তুমি আমার সাথে সাইকেলে ঘুরবে না বলে আমি নতুন সাইকেল কিনিনি। আমার সাথে ঘুরবে বলে সাইকেলটা কিনেছি। এখন তোমাকে ঘুরতেই হবে। যেহেতু এটা আমার নিয়ত করা হয়ে গেছে।”

ইরতিজা এক ঝটকায় জোনাসের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এটা এখনও আশা করছো কী করে? লজ্জা করছে না তোমার? তোমার সাইকেলে ঘুরবো আমি? তোমার সাইকেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো আমি।”

ইরতিজা অন্ধকার পরোয়া করলো না, নিস্তব্ধ শহরে এই মাঝরাতে একাকী চলার ভয়কেও পরোয়া করলো না। সে হনহন করে হেঁটে চলে এলো জোনাসের থেকে অনেক দূরে। আর চলতে চলতেই মিলিয়ে গেল জোনাসের অবলোকন দৃষ্টি হতে অন্ধকারে। জোনাসের বুকে চলছে থমথমে এক অবস্থা। চলছে কিছুক্ষণ পরপর দমকা হাওয়ার তাণ্ডব। ভেঙে যাচ্ছে তার হৃদয়কূল। সেই সাথে ভাঙছে তার এতদিন মনে পুষে রাখা একটা ভ্রান্তি ধারণাও। ইরতিজার মনে আসলে তার জন্য কোনো ভালোবাসার অনুভূতি ছিল না! একটুকুনি অনুভূতিও ছিল না ভালোবাসার!

_______________

সকালের আলো ফুঁটতে না ফুঁটতেই ঘুম ভেঙে গেল ক্যানিয়লের। ঘুমটা ভেঙেছে মূলত কলের শব্দে। কল রিসিভ করে যখন দেখলো আবারও সেই হুমকিমূলক ফোন তখন রাগের বশে আজ একটা আছাড়ই মেরে বসলো মোবাইলটাকে। মোবাইলটা বিক্ষিপ্তভাবে মেঝেতে পড়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ক্যানিয়ল চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে ছিল বেডে। এই হুমকিমূলক কল আর সহ্য করতে পারছে না। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কীভাবে নাইলা সালেমের এই খেলাটা বন্ধ করে দেবে? কঠিন উপায়ও আছে, সহজ উপায়ও আছে। কঠিন উপায়ে কিছু করতে গেলে ড্যাড সহ সবাই নাইলা সালেমের এসব ব্যাপারে জেনে যাবে। সহজ উপায়টা হলো– কোম্পানিটা যদি অতি শীঘ্রই নিজের নামে হয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই নাইলা সালেমের এসব হুমকি-ধামকি বন্ধ হয়ে যাবে। হয়তো কোম্পানিটা ওর নামে হয়ে যাওয়ায় সে রেগে গিয়ে মারাত্মক আক্রমণ করে বসতে পারে। তবে ব্যাপার না, সেগুলো সামলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু রোজ রোজ এই হুমকি শুনে অতিষ্ঠ তো হতে হবে না। ক্যানিয়ল বসে বসে যখন এসব ভাবছিল তখনই মিরান্ডা প্রবেশ করলো রুমে। প্রথমে তার চোখ চলে গেল মেঝেতে পড়ে থাকা মোবাইলটার উপর। এরপর ক্যানিয়লের দিকে। তার মনে হলো মোবাইলটা এরকমভাবে ক্যানিয়লই ফেলেছে মেঝেতে। সে মোবাইলটা তুলে নিলো মেঝে থেকে। ক্যানিয়লের দিকে আসতে আসতে বললো,
“মোবাইল ছুঁড়ে ফেলেছো কেন? গার্লফ্রেন্ডের সাথে মনোমালিন্য না কি?”

ক্যানিয়ল চোখ তুলে তাকালো। মিরান্ডার মুখে ব্যঙ্গ করা হাসি। ক্যানিয়ল শুধালো,
“গার্লফ্রেন্ডের সাথে তো নয়, তবে উডবি ওয়াইফের সাথে মনোমালিন্যর সৃষ্টি হতে পারে এই মুহূর্তে।”

মিরান্ডা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। হাসি হাসি মুখেই সে দাঁতে দাঁত চাপলো রাগে। হাতে থাকা ক্যানিয়লের মোবাইলটা তীব্র আক্রোশে ছুঁড়ে মারলো সামনের দেয়ালে। মোবাইলটা দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে উচ্চ ধ্বনিতে শব্দ তৈরি করলো। ক্যানিয়ল ব্যাপারটাতে নির্বিকার। মিরান্ডা রাগে ফুঁসছে। রাগান্বিত ভারী শ্বাস পড়ছে তার। ক্যানিয়ল ভাবলেশহীন উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমাকে বিয়ে করবো না।”

মিরান্ডা চকিতে ক্যানিয়লের দিকে তাকিয়ে তেজস্বী কণ্ঠে জানালো,
“কিন্তু আমি অনেক আগে থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া, আমি তোমাকে বিয়ে করবো।”

ক্যানিয়ল আর কানে তুললো না মিরান্ডার কথা। নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে গেল ওয়াশরুমের দিকে।
ফ্রেশ হয়ে যখন বের হলো তখন মিরান্ডা নেই আর বাড়িতে, চলে গেছে। ক্যানিয়ল ঠান্ডা মাথায় রেডি হয়ে বের হলো বাড়ি থেকে। তার গন্তব্য এখন ইউনিভার্সিটি।
ইউনিভার্সিটি গিয়ে সে খোঁজ করলো ইরতিজার। মেয়েটা গতকাল ভীষণ লজ্জা পেয়েছিল। আজও কি তার লজ্জা কাটেনি? দেখতে পাচ্ছে না কোথাও। লজ্জায় কোথায় মুখ লুকিয়ে রেখেছে? ইরতিজাকে যখন এদিক-ওদিক খুঁজছিল তখন লেকচারার স্টিভেন কোত্থেকে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“টিজাকে খুঁজছো?”

“না, আমি কাউকেই খুঁজছি না।”

“তাই?”

“হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কি ওকে দেখেছো কোথাও?”

“লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম একটা প্রয়োজনে। সেখানে গিয়ে টিজার মতো একটা মেয়েকে বসা দেখেছিলাম। যদিও আমি শিওর না ওটা টিজা কি না, তবুও তুমি একবার গিয়ে দেখে আসতে পারো। হয়তো তুমি ওকে খুঁজছো না। তারপরও একবার গিয়ে দেখে আসতে পারো।”
বলে ঠাট্টা করে হাসলো স্টিভেন। এরপর চলে যেতে উদ্যত হলেই ক্যানিয়ল বললো,
“আমি ওকেই খুঁজছিলাম মি. স্টিভেন।”

“জানি আমি।”

স্টিভেন চলে গেল।
স্টিভেনের বলা ঠিকানায় এসে দেখা মিললো ইরতিজার। লাইব্রেরির এক কোণে চুপচাপ মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। ইরতিজাকে এরকম বসে থাকতে দেখে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগলো ক্যানিয়লের কাছে। এসে ইরতিজার সামনে বসে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে তোমার?”

ইরতিজা তাকালো, আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে মনমরা কণ্ঠে উত্তর দিলো,
“কিছু হয়নি।”

“তোমার উত্তরকে মিথ্যা স্বরূপ ধরা হয়েছে।”

ইরতিজা ক্লান্ত ভঙ্গিতে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। এর মধ্যে হঠাৎই শোনা গেল একজন তৃতীয় ব্যক্তির কণ্ঠ,
“আমি নিজেই আমার সাইকেল ভাঙচুর করেছি টিজা। তোমার আর প্রয়োজন পড়বে না ওটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার।”

কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে তাকাতেই কিছুটা দূরে জোনাসকে দাঁড়ানো দেখা গেল। জোনাসের এমন মানেহীন কথা শুনে অবাক হয়েছে ক্যানিয়ল। অবাক হওয়ার প্রতিফলন তার আননে ছায়া ফেলেছে। জিজ্ঞেস করলো,
“কীসের সাইকেল?”

জোনাস স্পষ্ট উত্তর দিলো,
“যেটায় করে গত মাঝরাতে আমার আর টিজার ঘোরার কথা ছিল।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here