#ইফ্রিতে_মুসনাত
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
আয়ানা নতুন বাসার সবকিছু গোছগাছ করে শাওয়ার নিয়ে রান্না বসাল। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি তার, রান্না করতে করতে হঠাৎ তার মনে হয় কেউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানা পিছনে ফিরে কিছুই দেখতে পেলনা। সে আবার রান্নায় মন দিল, কিন্তু বার বার তার অনুভব হচ্ছে কেউ তার কাধে ভারী কিছু রেখেছে। তার গালে কারো গরম নিঃশ্বাস লাগছে। আয়ানা রান্না অসমাপ্ত রেখেই রুমে চলে আসল। বুঝতে পারলনা, এত বছর পর তার শরীরে আবার কার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। আয়ানা স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা নিতে চেষ্টা করল। ভাবল, হয়ত নতুন বাসা নেওয়ায় এমন লাগছে। তাছাড়া এই কয়েকদিন সাদের ব্যাপার নিয়ে অনেক বেশী চিন্তিত ছিল। এখনো সে মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা, সে সাদের চোখগুলো চিনতে এতটা ভুল করবে। শুধু চোখ টা নয়, চেহারাটাও সাদের মত। কিন্তু খটকা এটাই, সাদ হলেও সে আয়ানাকে কেন চিনতে পারবেনা? আর সাদ কেন তার সাথে এতদিন কোনো যোগাযোগ রাখবেনা! এসব ভেবে আয়ানার নিজের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। এমনসময় আয়মান শাফি কল দিল আয়ানাকে। আয়ানা রিসিভ করে বলল,
” হ্যা আব্বু, আমি ই তোমাকে কল দিতাম। কিন্তু রান্না বসিয়েছি। ”
” একা একা এতকিছু সামলাতে কষ্ট হয়না তোর?”
” সবকিছু শিখে গেছি আব্বু। এখন আর কষ্ট হয়না।”
” তাও একজন হেল্পার তো রাখতে পারিস। এখন তো আব্বুর থেকে একটা টাকাও নিসনা, নিজের রোজগারেই চলিস।”
” এখানে এসে বুঝেছি সেল্ফ ডিপেন্ড থাকাটা কত জরুরী। মা-ভাই, আপু কেমন আছে? তাই বলো।”
” তোর মায়ের অভিমান কেটে গেছে। এখন তোর জন্য কান্না করে, তোকে নিয়ে খুব চিন্তা করে। এত বছর তো নিজেও খোজ দিসনি, আমাকেও দিতে বারণ করেছিস। নিজের মাকে আর কত কষ্ট দিবি? এবার তো ফিরে আয়।”
” আসব বাবা। যেদিন নিজের স্বামী আর সন্তানকে ফিরে পাব, ওদের নিয়েই তোমাদের কাছে ফিরে আসব। তুমি আমার শ্বশুড়বাড়ীর খোজ খবর নিয়েছো তো?” আয়মান শাফি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” হ্যা, মাঝে একবার দেখা করে এসেছিলাম। তোকে খুব মিস করে, ছেলের শোকে এখনো কাদে। তোর জা জেসমিনের বাচ্চার মাশা আল্লাহ ৩ বছর শেষ হতে চলল। অনেক মিষ্টি করে কথা বলে। জেসমিন তোর কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে। আমি প্রতিউত্তরে তেমন কিছুই বলতে পারিনি।”
” মন খারাপ করোনা আব্বু। আমার জন্য দোয়া করো। নিজের খেয়াল রেখো।”
” তুই ও নিজের খেয়াল রাখিস। আর খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে ফিরে আয় মা। তোকে কতদিন দেখিনা।”
ফোনটা রেখে আয়ানা কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলল। বাবার কন্ঠে ইমোশোনাল কথা গুলো শুনলে ও আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা। ইচ্ছে করে তাদের কাছে চলে যেতে। কিন্তু পারেনা, সে যে নিজেকে নিজে কথা দিয়েছে নিজের স্বামী-সন্তানসহ মা-বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আল্লাহ জানে অপেক্ষার প্রহর আর কত দীর্ঘ হবে। ৫ বছর শুধু শুধু আশায় আশায় কাটল। এরমধ্যে যদি আয়ানার মৃ্ত্যু হয়ে যায় তাহলে তো একটা আফসোস থেকে যাবে।
আয়ানা পরেরদিন অফিস থেকে ফেরার সময় দেখল ছেলেটা হাতে বল নিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানা এগিয়ে আসতেই বলল,
” আন্টি বাটন টা প্রেস করে দিবে। আমি তোমার ফ্লোরেই যাব।”
আয়ানা লিফটে ঢুকে বাটন প্রেস করলে লিফট চলতে শুরু করল। আয়ানা ব্যাগ থেকে চকলেটের বক্সটা বের করে ছেলেটার হাতে দিয়ে বলল,
” এটা তোমার জন্য বাবু।”
” আমার জন্য কেন? আমি তো তোমার কাছে চকলেটস চাইনি। এটা আমি নিতে পারবনা।”
” তুমি আন্টিকে হেল্প করেছো তাই আন্টি তোমাকে ভালোবেসে এটা দিলাম। কেউ ভালোবেসে কিছু দিলে ফিরিয়ে দিতে নেই সোনা।” বলে আয়ানা বাচ্চাটার গাল টেনে দিল। বাচ্চার চোখগুলো বাদামী-নীল বর্ণের, চুলগুলো লাল-কালো সংমিশ্রণের। বিদেশী বাচ্চারা বরাবর এমন হয়না, তাও আয়ানার ধরে নিল বাচ্চাটা হয়ত অন্য কোনো ফরেন কান্ট্রির। লিফট থামলে বাচ্চাটা ছুটে চলে যায়। কিছুটা এগিয়ে থেমে পিছন ফিরে আয়ানাকে দেখল। তারপর আয়ানার কাছে এসে বলল, “আন্টি শুনো”
আয়ানা হাটু গেড়ে বসে বলল, “হ্যা বাবু, বলো।”
ছেলেটা আয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ধন্যবাদ আন্টি। আল্লাহ হাফেজ।”
বলে আবার দৌড় দিল। আয়ানা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। বাচ্চা ছেলেটাকে যত দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। বাচ্চাটার কথা শুনলে তার বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠে। আজ যদি তার বাচ্চাটা তার কাছে থাকত তাহলে হয়ত এত বড় ই হত আর এভাবেই আধো আধো কথা বলত। বাচ্চা দেখলে আয়ানার মাতৃত্ব জেগে উঠে। তাই বাচ্চাটার জন্য চকলেট আনতে ভুলেনি সে।
রাত ১টা বাজে। আয়ানা বাসায় ফেরার জন্য ক্যাবে উঠেছে। আজ ২টো প্রেজেন্টেশন কভার করতে হয়েছে, ক্লায়েন্ট পার্টিকে সব বুঝিয়ে দিতে দিতে ১২টা বেজে গেছে। কাল যেহেতু অফিসে আসবেনা, তাই নিজের কাজগুলো শেষ করে বসকে বুঝিয়ে দিয়ে তবেই বের হয়েছে। ততক্ষণে ১টা বেজে গেছে। ফরেন কান্ট্রিতে এই সময় টা অবশ্য অত বেশী রাত ও নয়। যাই হোক, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটা ক্যাব পেয়েছে আয়ানা। ক্যাবে উঠে ওর চোখ দুটো ক্লান্তিতে বুজে এসেছিল। হঠাৎ ক্যাব থেমে যাওয়ায় ও চোখ খুলল। ক্যাব ড্রাইভার তার হাত টেনে বাহিরে বের করে আনল, তারপর তার কাছে যা আছে তাই দিয়ে দেওয়ার জন্য বলল। আয়ানা নিজের সেইফটির জন্য যা ছিল সব দিয়ে দিল। ড্রাইভার টা সব নিয়ে ক্যাব নিয়ে চলে যায়। আয়ানা থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। নিজের চারিদিকে একবার ভাল করে তাকাল। এই জায়গাটা সম্পূর্ণ নির্জন, কিছু কিছু জায়গায় ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ছে। এটা সম্ভবত সেই জায়গা যেখানে বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচুর মানুষ মেরে গণকবর দিয়েছিল। এই জায়গাটা এখন পরিত্যক্ত, কেউ আসেনা বললেই চলে। এখানে নাকি প্রচুর জ্বীনের উৎপাত। কেউ এর পাশ দিয়ে গেলে কান্নার আর চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়। পরবর্তীতে জায়গাটাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, জায়গাটা একসময় ব্ল্যাকমাজিকের জন্যও সুপরিচিত ছিল। আয়ানার বেশ ভয় ভয় করতে লাগল, চারিদিক থেকে কেমন চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখানে কোনো মানুষ বা ক্যাব পাওয়ার আশা নেই। এখন নিজে নিজে পথ খুজে বের হতে হবে নতুবা সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চারিদিকে যা ঘটছে তাতে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা অসম্ভব। তাই আয়ানা নিজে নিজেই ক্যাব যেদিকে গেছে ওইদিকে চলতে লাগল। কিন্তু কিছুটা আসার পর দেখল এইখানে যে ব্যারিকেড দেওয়া। রাস্তা বন্ধ হলে ক্যাবটা কোথায় গেল! বাপাশ তাকিয়ে দেখে ক্যাবটা উলটে পড়ে আছে, ড্রাইভারের ছিন্নভিন্ন লাশটা সেখানকার ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে আছে। আয়ানা ভয়ে উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করল, কিন্তু যে রাস্তায় যাচ্ছে সেটাই বন্ধ।
কি করবে বুঝতে না পেরে আয়ানা ওখানে দাড়িয়ে পড়ে, মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ছে। কিছুক্ষণ পর দেখল একটা গাড়ি এদিকে আসছে। আয়ানা গাড়ির সামনে গিয়ে স্টপ স্টপ বলে থামাল। তারপর গাড়ির ড্রাইভিং সাইডে গিয়ে তাকে পৌছে দিতে বলল। গাড়ির মালিক তাকে হেল্প করতে রাজি হল।
আয়ানা হাপাতে হাপাতে গাড়ির ভেতরে ঢুকে বসে দেখে এই সেই ছেলেটা যাকে দেখে ও সাদ ভেবেছিল। ছেলেটা এই পরিত্যক্ত জায়গায় এত রাতে কি করছে!
” আপনি সেই ছেলেটা?” ছেলেটা আয়ানার দিকে না তাকিয়ে বলল,
” স্যরি!! বুঝতে পারলামনা।”
আয়ানা বুঝল ছেলেটা তাকে চিনতে পারছেনা।
” আপনি এই জায়গায় গাড়ি নিয়ে আসলেন কেন? এখান থেকে তো বের হওয়ার কোনো পথ নেই। এই রাস্তায় যাবেননা, এখানে ড্রাইভারটার লাশ আছে। আর ব্যারিকেড দেওয়া। গাড়ি ঘুরান।”
ছেলেটা পানির বোতল আয়ানার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” ইউ লুকিং সো ওরিড। টেক ইট।” আয়ানা বোতল নিয়ে ঢকঢক করে অনেকটা পানি খেয়ে নিল। অদ্ভুত ভাবে এই রাস্তায় ড্রাইভারের লাশ বা ব্যারিকেড কিছুই দেওয়া নেই। ছেলেটা ড্রাইভিং করে এখান থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে চলে আসল।
কিছুক্ষণ পর আয়ানাকে তার এ্যাপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিল।
” আপনি সত্যিই সাদ নন?”
” আর ইউ ক্রেজি? বারবার একই প্রশ্ন আমাকে কেন করছেন? সাদ কে? আই এম নট সাদ, মাই নেইম ইজ মুহসীন সামি। প্লীজ গো ইউর হোম।”
আয়ানা ছেলেটার ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল। আসলেই ছেলেটাকে দেখলেই সে বারবার সাদ ভেবে ভুল করে। এতে তো ছেলেটার বিরক্ত হওয়ার কথা ই। আয়ানা ধন্যবাদ বলে লিফটে উঠে নিজের ফ্লোরে চলে এল।
.
মাঝরাতে ওর ঘুম টা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল। তার মনে হল কোনো একটা ছায়া তার মুখের উপর থেকে সরে গেল। কেউ এতক্ষণ তার মুখের উপর ঝুকে তাকে দেখছিল। আয়ানা ল্যাম্প জ্বালিয়ে পানি খেল। এতবছর পর তার কেন আগের মত অনুভূতি হচ্ছে। তবে কি সাদ ফিরে এসেছে?
আয়ানা কয়েকবার সাদের নাম ধরে ডাকল। বিনীতস্বরে বলল,
” সাদ তুমি ফিরে এসেছো? যদি ফিরে এসে থাকো তাহলে কেন এত লুকোচুরি খেলছো। আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় আছি, সামনে এসো আমার।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, দয়া করে এমন করোনা। সামনে এসোনা সাদ।”
বলতে বলতে জানালার পাশে থাকা ফুলের টব টা নিচে পড়ে গেল। আয়ানা ছুটে এসে দেখল জানালাটা হালকা খোলা, ফুলের টবটা মেঝেতে পড়ে আছে। কেউ তো রুমে ছিল, হয়ত সাদ নয়ত অন্য কেউ। কিন্তু এভাবে লুকোচুরি কেন খেলছে আয়ানার সাথে।
দুপুরের দিকে কলিংবেলের আওয়াজে আয়ানার ঘুম ভাঙ্গল। দরজা খুলে দেখল বাচ্চা ছেলেটা ছোট্ট টিফিন বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা সালাম দিয়ে বলল,
” কেমন আছো আন্টি?”
আয়ানা সালামের উত্তর নিয়ে বাচ্চাকে ভেতরে আসতে বলল। ছেলেটা ভিতরে আসতে চাইলনা। বলল,
” আন্টি তোমার জন্য রামেন নিয়ে এসেছি। তুমি আমাকে কাল চকোলেটস দিয়েছোনা!” বাচ্চাটার কথা শুনে আয়ানা অবাক। বাচ্চাটার হাত ধরে আয়ানা ভেতরে নিতে এল। তারপর টিফিন বক্স থেকে রামেন বের করতে করতে জিজ্ঞেস করল, খেয়েছো?
” না, পরে খাব।”
” কেন? লাঞ্চ টাইম তো হয়ে গেছে। আচ্ছা আসো, আন্টির সাথে খেয়ে নিবে।”
আয়ানা বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিল। বেশ কয়েকদিনের মধ্যে আয়ানার সাথে বাচ্চাটার অর্থাৎ আয়াশের অনেক ভাব হয়ে যায়। বিকালে ছেলেটা আসে, আয়ানার সাথে খেলে, গল্প করে। আবার ৮টার আগে চলে যায়। আয়ানার ফ্লটের শেষমাথায় থাকে ছেলেটা। এই অবধি ছেলেটার মা-বাবার সাথে দেখা হয়না আয়ানার। ছেলেটাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তেমন কিছুই বলেনা। বলে, ওর মা-বাবা দুজন ই বাসায় আছে। তাকে ওর মা অনেক ভালোবাসে।আয়ানা খেয়াল করে ছেলেটা মাঝে মাঝে বেশ হিংস্র হয়ে উঠে। ওর কথা না মানলে ওর চোখ-মুখ অন্যরকম হয়ে যায়, জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। চোখ দুটো ফ্যাকাশে লাল হয়ে যায়।
আয়ানা বুঝতে পারে, “বাচ্চা ছেলেটার হয়ত স্বভাব এমন। সবসময় কত শান্ত শিষ্ট-নম্র। কিন্তু রাগ উঠলে অন্যরকম হয়ে যায়।”
.
আয়াশ আয়ানার বুকের উপর গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। কত্ত কথা বলতে পারে ছেলেটা। পাকনা পিচ্চি একটা। আয়াশ কে পেলে আয়ানার ভালোই লাগে, মনে হয় যে আয়াশ ই তার ছেলে। এখন আর নিজের ছেলের জন্য আয়ানার খুব বেশী মন খারাপ হয়না। অফিস থেকে এসেই আয়াশের জন্য মজার মজার রান্না করে ওয়েট করে, বিকাল বেলা আয়াশ আসে। প্রতিদিন ই ফেরার সময় আয়াশের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। ছেলেটা ভীষণ মিষ্টিপ্রিয়।
কিন্তু পুতুল দেখলেই ও অন্যরকম হয়ে যায়। পুতুল ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলে।
এমন ভাবনার সময় কলিংবেল বেজে উঠল। আয়ানা আস্তে করে আয়াশ কে শুইয়ে দিয়ে দরজা খুলে দেখে মুহসীন সামি সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
আয়ানা কিছু বলার আগেই উনি বলেন,
” আয়াশ কোথায়?”
উত্তরের অপেক্ষা না করে উনি আয়াশকে উঠিয়ে কোলে করে বেরিয়ে যান।
” আপনি ওর আব্বু?”
” জ্বী, এভাবে ওকে নিজের কাছে রাখাটা উচিত হয়নি আপনার।”
” আব্বু, আমি আন্টির কাছে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।”
” আব্বু তোমার আম্মু চিন্তা করছেনা তোমার জন্য। আম্মুকে ছেড়ে এতক্ষণ কেউ থাকে বলো। চলো, আম্মুর কাছে যাবে।”
” আল্লাহ হাফেজ আন্টি।”
” মিস, আয়ানা আমি চাইনা আমার ছেলে আপনার সাথে মিশুক। এই ব্যাপারটা যদি একটু ভাবেন, তাহলে আমি উপকৃত হই। ধন্যবাদ।”
আয়ানা বিমূঢ় হয়ে ওদের পানে চেয়ে রইল। ছেলেটার মায়ায় পড়ে গিয়েছিল ও। কিন্তু যেহেতু তার মা-বাবা সেটা পছন্দ করেনা, তার আর ছেলেটার সাথে মিশাটা উচিত হবেনা।
সন্তানের ভালোটা মা-বাবা ই ভালো বুঝে। নিজেকে এসব বলে বুঝ দিলেও আয়ানার প্রচন্ড খারাপ লাগে। মনে হল, ওকে নিজের ছেলের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
(চলবে…..)