ইচ্ছেপূরন
পর্ব-৬
আসার সময় সকালের গাড়ির টিকেট করেছিলো বিভা। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো। আতিক ওদের রিসিভ করতে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু বিভাই মানা করেছে। বিভার আসলে আতিকের চেহারা দেখতে ইচ্ছে করছিলো না। কারন ও জানে আতিককে দেখা মাত্রই ওর ভীষণ রকম রাগ উঠে যাবে। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। শুরুতেই আতিকের সাথে কোনো রকম বিবাদে যেতে চায় না বিভা। কারন ও জানে, আতিক নিজের দোষ তো স্বীকার করবেই না। উল্টো বিভার গায়ে হাত তুলবে। নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য বিভার নামে উল্টাপাল্টা কথা বলবে। তাই আগে প্রমান জোগাড় করতে হবে। এই প্রমান জোগাড় করার আগে আতিককে রাগানো যাবো না। ওকে বুঝতে দেয়া চলবে না যে, ঘটনাটা বিভা জানে।
বাসায় এসে দেখলো সব যেরকম রেখে গিয়েছিল সেরকমই আছে, শুধু জিনিসগুলো তে ধুলোর আস্তর জমেছে। নিজের বেডরুমে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে কেন যেন বমি আসলো বিভার! এই রুমটাতে সে অনেকদিন ছিলো না। আতিক একাই থাকতো শাশুড়ী আসার আগ পর্যন্ত। পরে বাধ্য হয়ে থাকতে হতো বিভার। কিন্তু এখন কি করবে? এখন আতিকের সাথে এই বিছানায় কিভাবে থাকবে? না, না, অসম্ভব… এই এক বিছানায় আতিকের সাথে থাকা কিছুতেই সম্ভব না! বিভা নিজের মনে কথা বলছে আর নিজের মাথা দোলাচ্ছে। কিন্তু কি বলবে আতিককে? অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা পাচ্ছে না বিভা।
“ও বউ, তোমাকে কখন থেকে ডাকছি, তুমি কি ভাবো এতো?”
শাশুড়ির ডাকে সম্বিত ফিরে আসে বিভার।
“জ্বী মা! কিছু বলছিলেন? ”
“এই রকম খাম্বার মতোন দাঁড়ায় আছো কেন? গোসল টোসল দিয়া ভাত লাগাও, খিদা লাগছে আমার।”
“জ্বী,আম্মা! লাগাচ্ছি। আম্মা, আপনি বরং এইবার এই রুমে থাকেন। এই রুমটাতে আলো বাতাস বেশি আসে। আপনার জন্য ভালো হবে।”
“আরে না, বউ। ঐ রুমেই আমি ঠিক আছি। অভ্যাস হয়া গেছে। এখন এইখানে আসলে আবার ঘুম হইবো না। তোমরাই থাকো এই রুমে।”
বিভা আর কথা না বাড়িয়ে গোসলে গেলো। খুব মাথা ঘুরছে আজ। খেয়ে একটা ঘুম দিতে হবে।
*******
কেউ একজন বিভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। আরামে চোখদুটো আরো যেন লেগে আসছে বিভার। কতদিন যে মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না! ছোটবেলায় মা কত আদর করতো বিভাকে। দুপুরের সময়টাতে ও যখন স্কুল থেকে আসতো, ঘুমের সময়টুকু মাকে পাশে বসে থাকতে বলতো। মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতো আর বিভা ঘুমাতো। আর এখন? মায়ের একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করে। একটা ভুল বুজি সবাইকে দূরে ঠেলে দেয়? এলোমেলো বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো আধো ঘুম আধো জাগরনের মধ্যে মাথায় আসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। কেউ একজন ডেকে যাচ্ছে তাকে –
“বিভু, এই বিভু…উঠবে না ঘুম থেকে? সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি। কি ঘুম রে বাবা!”
গলা শুনে ধরমরিয়ে ঘুম থেকে উঠলো বিভা। আতিক এতোক্ষণ বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো? এতো ভালোবাসা ওর জন্য আতিকের? চোখ খুলে সামনে আতিককে দেখতে পেলো বিভা। ওর দিকে তাকিয়ে আছে, চেহারায় হালকা হাসি, মুখে চোখে খুশির আভা ফুটে উঠেছে। হঠাৎ কেন জানেনা বিভার কান্না পেলো খুব। আতিক ওর মাঝে কেন খুশি খুঁজে পায় না? কেন অন্য কারো মাঝে আতিকের খুশি নিহিত? কেন এতো কিছু করার পরও আতিকের মনে ওর জন্য সামান্য অনুভূতির জন্ম হয় না? কেন আতিক পরনারীতে আসক্ত? ভাবতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিলো বিভার। আতিক একটু অবাক হয়ে তাকালো বিভার দিকে-
“কি হয়েছে? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? নাকি কান্না করছো?”
“নাহ, মাথা ব্যাথা করছে খুব। তাই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ”
চোখ মুছে নিলো বিভা। বিছানা থেকে উঠতে যেয়ে মাথাটা ঘুরে উঠলো আচমকা। বমি পেয়ে গেলো। নিজেকে কন্ট্রোল না করে হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিভা আতিকের গা ভাসিয়ে বমি করলো। আতিক দাঁড়িয়ে গেলেও বিভার বমি থেকে বাঁচতে পারলো না। বিভাকে অবাক করে দিয়ে আতিক দূরে না সরে বিভাকে ধরলো দু’হাতে।
“বেশি খারাপ লাগছে? আচ্ছা, করো বমি, যতটুকু আছে করে ফেলো। তাহলে আরাম পাবা।”
আতিকের এই আন্তরিকতা দেখে বিভার আরো বেশি কান্না পেলো। মনে মনে বিভা বলে-
“ইশ! আতিক, এই আন্তরিকতা টুকু যদি সত্যি সত্যি তোমার মনের হতো? এখন তো তোমার মন ভালো, আরেকদিকে সুখ খুঁজে নিয়ে আমাকে দয়া দেখাচ্ছো? দেখাও, সমস্যা নেই! মনে রেখো চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। আমি শুধু আমার সেই একদিনের অপেক্ষা করছি। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাকেও সুযোগ দেবে?”
বিভা জোর করে আতিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
“সরো তুমি। তোমার গায়ের গন্ধে আমার আরো বমি পাচ্ছে। তুমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
আতিক একটু মন খারাপ ভাব করে চলে গেলো। বিভা নিজের আরেকজোড়া কাপড় বের করলো। বিছানার চাদরটা টেনে তুলে নিলো। একদিনে দুটো চাদর তুললো। কিভাবে ধোবে আল্লাহ জানে। আতিক ফ্রেশ হয়ে আসতেই বিভা বাথরুমে ঢুকলো। আবার গোসল দিলো, আতিকের যেটুকু স্পর্শ ওর গায়ে আছে, সেটুকু যেন ডলে ধুয়ে ফেলতে চাইলো! তাতেই বেশিক্ষন ভেজা হয়ে গেলো। প্রচন্ড শীত করছিলো বিভার। মনে হয় জ্বর আসবে? বাথরুম থেকে বের হয়ে বিভা নিজের পার্শটা নিলো। আতিক ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো-
“কোথাও যাচ্ছো নাকি?”
“হুম, শরীর খারাপ লাগছে। একটু ওষুধ কিনে আনি।”
“তুমি থাকো, আমি যাচ্ছি। ”
“আমি যেতে পারবো। তুমি অফিস থেকে এসেছো, রেস্ট নাও। আমি একটু ঘুরে আসি।”
বিভা আতিককে আর কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে বেড়িয়ে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবছিলো প্রমান কোথায় পাবে। নিচে দারোয়ান কে ধরলো-
“ভাই, ঐ দিন যে আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, একটা মেয়ে আসছে বলেছিলেন? মনে আছে?”
“জ্বী,ভাবি, মনে আছে। আপনি তো বলছিলেন যে উনি ভাইজানের বোন?”
“হুম, সেটা ঠিক আছে। আচ্ছা, আপনি কি দেখছিলেন, উনি কখন গেছে?”
“সেইটা তো খেয়াল করি নাই ভাবি। মনে হয় রাইতেই গেছিলো গিয়া।”
“আপনি শিওর?”
“শিওর কেমনে কই? অতো তো খেয়াল করি নাই! নানান কাজে এইদিকে ঐদিকে যাই। গেটের অনেককিছু মিস হয়ে যায়।”
বিভা চুপ করে থাকে। ও বাইরে এসে হাঁটতে হাঁটতে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে আবার বাসায় ফেরত আসে। বিভা যখন সিড়ি বেয়ে উঠছিলো তখন হঠাৎই দারোয়ান ওকে ডাক দিলো-
“ভাবি, আপনে একখান কাজ করতে পারেন?”
“কি কাজ?”
“এই বাসায় বাড়িওয়ালার ফ্লাটের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান আছে। আপনে চাইলে ওনারে রিকোয়েস্ট কইরা দেখতে পারেন যা দেখতে চান।”
বিভার চেহারায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো। আরে তাইতো! এটা আগে কেন মাথায় আসে নাই? সে খুশি হয়ে বললো-
“অনেক ধন্যবাদ, ভাই। আপনাকে আরেকটা রিকোয়েস্ট করি?”
“করেন ভাবি।”
“আপনি এইগুলা আপনার ভাইকে জানায়েন না।”
“আচ্ছা, ভাবি। আপনে কোনো টেনশন নিয়েন না।”
দারোয়ানটাও আতিককে পচ্ছন্দ করে না, এটা জানে বিভা। আতিকের সাথে একদিন কি নিয়ে যেন গন্ডগোল হয়েছিলো। ভাবতে ভাবতেই তিনতলায় উঠে এলো বিভা। বাড়িওয়ালা তিন তলায় থাকে। বিভা একবার উপরে উকি দিয়ে নিজের ফ্লাটের দরজা দেখলো। নাহ, বন্ধই আছে। বেল বাজালো বাড়িওয়ালার বাসার। বাড়িওয়ালার ছেলের বউটা দরজা খুললো-
“জ্বী, বলুন! কিছু দরকার? ”
“ভাবি, একটু ভিতরে আসি?”
মেয়েটা পুরো দরজা মেলে ধরলো-
“আসুন।”
ভেতরে ঢুকে বিভা নিজেই দরজাটা চাপিয়ে দিলো –
“ভাবি, একটা উপকার চাইতে আসলাম। প্লিজ একটু হেল্প করবেন? ”
“জ্বী, বলুন। করার মতো হলে অবশ্যই করবো!”
মেয়েটা ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বললো।
“আপনাদের সিসিটিভি ক্যামেরায় একটা ফুটেজ দেখতে চাই। খুব আর্জেন্ট, আমার জীবন মরন সমস্যা। একটু দেখাবেন ভাবি, প্লিজ!”
“হুম, আসেন। দেখাবো না কেন? আপনি কবে কার ফুটেজ দেখতে চান?”
মেয়েটা বিভাকে ড্রইংরুমে নিয়ে গেলো।
“গত সোমবার, বাইশ তারিখের সন্ধার সময়কার। একটু দেখুন না?”
ক্যামেরার রেকর্ডিং গিয়ে টাইমিং টা সেট করে দিয়ে রেজর্ডিং চালু করে দিলো মেয়েটা। বিভার বুকের ভেতর উত্তেজনায় ড্রাম বাজছে যেন। সত্যি সত্যি আতিককে দেখতে পাবে? নিজের বিশ্বাস কে নিজ চোখে ভাঙতে দেখবে? অস্থির ভাবে পা নাচিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে বিভা। কতো লোকজন উঠছে নামছে। কোথায় আতিক? দেখতে দেখতে হঠাৎ করে থমকে গেলো বিভা। আতিক না? আস্তে আস্তে পা টিপে উঠছে। ওর একটু পিছনে একটা মেয়ে উঠলো। বোরকা পড়া, বেশ ভালো স্বাস্থ্য, চেহারাটাও পরিস্কার, এটা তো কনাপু না? মেয়েটার নজর একবার ক্যামেরার দিকে পরতেই মুখটা লুকিয়ে নিলো। মেয়েটার ঘাড়ে একটা বেশ বড় ব্যাগ আছে। আতিকের মাথায় হয়তো ক্যামেরার ব্যাপারটা ছিলো না। যদি থাকতো তবে ও নিশ্চয়ই সাবধান হতো?বুঝে গেলো বিভা, যেটা দেখতে চাইছিলো সেটা দেখে ফেললো। চোখ থেকে অবিরত জল গড়িয়ে পরছে বিভার। পাশের মেয়েটা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“কি হয়েছে, আপু? এনিথিং সিরিয়াস?”
বিভা মাথা নাড়ে। বুকের মধ্যে চাপ ধরা বেদনা ওকে কথা বলতে দিলো না। তবুও অনেক কষ্টে ও বললো-
“ভাবি, আর একটু কষ্ট করবেন?”
“জ্বী আপু,বলুন।”
“তেয়িশ তারিখ সকাল সাতটার থেকে একটু রেকর্ডিংটা দেখাবেন?”
মেয়েটা আবার রেকর্ডিংটা টা টেনে সকাল সাতটা থেকে চালু করলো। মেয়েটা এবার উঠে গেলো, কিছুক্ষণ পর হাতে একটা ট্রেতে নাস্তা সাজিয়ে নিয়ে আসলো-
“একটু চা খান, আপু। ভালো লাগবে। ”
বিভা একবার ট্রের দিকে তাকিয়ে আবার চোখটা টিভিতে স্থির করলো। বেশ অনেকটা সময় পার হয়েছে, আতিককে দেখতে পাচ্ছে না। তবে কি মেয়েটা রাতেই চলে গেছে সত্যি সত্যি! আরো পনেরো মিনিট ধৈর্য্য ধরে তাকিয়ে থাকলো বিভা। ঠিক পৌনে আটটা বাজে এমন সময় আতিককে নামতে দেখলো বিভা। এবার মেয়েটার কাধের ব্যাগটা আতিকের কাঁধে শোভা পাচ্ছে। বাহ! আতিক সাহেবের কি উন্নতি? কোনোদিন বিভার কাঁধের ভার বহন না করলেন অন্য একজনার ভার ঠিকই বহন করছে? বাহ,খুব ভালো, আতিক! মনে মনে তোমার প্রশংসা না করে পারছি না! বিভার মনটা অদ্ভুত বিতৃষ্ণায় ভরে ওঠে। সেদিন সারারাত বিভাকে ফোনে নানা ধরনের রোমান্টিক কথার অত্যাচার করেছে আতিক। এই তাহলে সেই রোমান্টিক কথার বানের অত্যাচার? বউয়ের সাথে রোমান্টিক কথা বলে আরেকজনের সাথে লীলা খেলা খেলেছে আতিক? বেশ! তবে এটাই তোমার শেষ সুযোগ ছিলো আতিক? তুমি আমারই বিছানায় আরেকজনকে নিয়ে রাত কাটাবে? এতোটা সাহস বেড়েছে তোমার? তুমি ভেবেই নিয়েছো যে,আমি দূর্বল! আমার কোনো আশ্রয় নেই? কোনো সহায় নেই? কিন্তু তুমি এটা কি করে ভুলে গেলে যে, যার কোনো কিছুই থাকে না তার ভয় টাও কাজ করে না! পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভিক মানুষটা হয়ে যায় সে। তখন সেই মুহুর্তে সেই অসহায় মানুষটা সব কিছু করার ক্ষমতা রাখে। বিভার চোখ কেঁদে যাচ্ছে, মন কেঁদে যাচ্ছে, পুরো শরীর জুড়ে ভর করেছে নিস্তব্ধতা।
“এই আপু, কি হয়েছে? আপনি সেই তখন থেকে কেঁদে যাচ্ছেন! ”
বিভা চোখ মুছে-
“কিছু না ভাবি। আপনি কি আমার একটা উপকার করবেন? ”
“জ্বী আপু, বলুন।”
“এই দুই সময়ের এই ভিডিও ক্লীপ দুটো কি আমাকে দেয়া যাবে? আমার খুব দরকার।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। ও বাসায় আসলে আমি ওকে দিয়ে সেভ করিয়ে রাখবো। আপনি কাল কোনো এক সময় এসে নিয়ে যেয়েন?”
বিভা মাথা নাড়ে -“আমি যাই তাহলে?”
“ওমা, যাই কেন? আপনি তো কিছুই খেলেন না?”
“কিছু খাবো না ভাবি। আপনি হয়তো ব্যাপারটা কিছুটা বুঝেছেন, তাই আর কিছু বললাম না।”
“ওটা আপনি না বললেও বুঝেছি। আমরা বাড়িওয়ালা, তাই আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হয়। গতদিন আপনাকে ব্যাপারটা জানানো হলো কিন্তু আপনি কিছু বললেন না। সেদিন যদি আপনি কিছু বলতেন তবে ওনাকে সেদিনই শায়েস্তা করা যেতো।”
বিভা মনে মনে লজ্জায় শেষ হয়ে গেলো। ওই কি পৃথিবীতে একমাত্র বোকা নাকি? সবাই সব কিছু সহজেই বুঝে যাচ্ছে অথচ ওর কিনা বুঝতে এতো সময় লাগে? বিভা ভার মন নিয়ে নিজের ফ্লাটে উঠে এলো। ওর ননদ কনাকে ফোন দিলো আতিকের সামনেই –
“হ্যা, কনাপু, আমরা তো আজ এলাম। না না কোনো সমস্যা হয়নি। আচ্ছা যে কারনে তোমাকে ফোন দেওয়া। কাল কি মাকে দেখতে আসবে? ইনাপু আর দিনাপুকেও আসতে বোলো? আমি কাল রান্না করবো ভালোমন্দ। মা অনেকদিন তোমাদের দেখেন না তো। দেখতে চাইছিলেন? ”
ওপাশ থেকে কনা কি বললো বোঝা গেলো না। বিভা আবার বললো-
” হ্যা, সমস্যা নেই। কাল আতিকও চলে আসবে তাড়াতাড়ি। এতো ভেবো না তো, তোমরা চলে এসো তাহলে? আচ্ছা, রাখলাম।”
বিভা ফোন নামিয়ে রাখে। আতিক উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বিভাকে দেখছে।
“হঠাৎ করে দাওয়াত টাওয়াত? ঘটনা কি?”
“কোনো ঘটনাই না। এমনিতেই ইচ্ছা করলো।”
“তো কয়দিন পর বলতে? তুমি কেবল আজই এলে, এতো অসুস্থ? ”
“বাব্বাহ আমার জন্য এতো চিন্তা? কবে থেকে?”
আতিক একটু থমকে গেলো বিভার কথা শুনে। বিভাকে এবারে একটু অন্য রকম লাগছে। ঠিক ধরতে পারছে না। বাট আগের মতো অতোটা নরম সরম লাগছে না। বিভা কি কিছু বুঝতে পারলো ওর লুকোচুরি? আতিক চিন্তিত হয়ে বসে রইলে। ওদিকে বিভা ওর জন্য সুন্দর বন্দোবস্ত করতে নানা প্লান সাজিয়ে যাচ্ছে। বিভার প্লান কি সাকসেসফুল হবে?
চলবে—–
©Farhana_Yesmin