#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_৭
#ইশরাত_জাহান
অনুপম ও মিস্টার অরুণ বাসায় ফিরলেন।অনুপম গোসল করে নাস্তা করতে বসেছে।সাথে প্রিয়তা ও অনুপমের বাবা মা বসেছে।সবাই মিলে নাস্তা করে।অনুপম অফিসে যাওয়ার সময় প্রিয়তা বলে,”আজ থেকে দুপুরের খাবার বাসায় এসে খেও।অফিস তো কাছে। দেড় ঘন্টার ছুটি পাও।”
অবাক হলো অনুপম।তারপরও বললো,”আচ্ছা ঠিক আছে।”
হাত কচলাতে কচলাতে প্রিয়তা জিজ্ঞাসা করলো,”দুপুরে কি খাবে?”
“মা বাবা যা খেতে চায় তাই রান্না কর।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”বলেই অন্যদিকে প্রিয়তা ফিরবে।ঠিক তখনই অনুপম জিজ্ঞাসা করে,”তোর কিছু লাগবে?”
প্রিয়তা না বোধক মাথা দুলিয়ে বলে,”আপাদত না।তবে গ্রামে যাওয়ার আগে লাগবে।”
“আচ্ছা লিস্ট করে রাখিস।একসাথে কেনাকাটা করবো।তোকে একা যেতে হবে না।”
অবাক হয় প্রিয়তা।আজ তো মনে মনে ভেবেছিলো সে নিজে পরিবর্তন হবে।অনুপম পরিবর্তন হবে এটা ভাবেনি।প্রিয়তা চেষ্টা করবে সম্পর্ক ধরে রাখার।এটা প্রিয়তা মনে মনে স্থির করে রেখেছে।অনুপম অফিসে চলে গেলো। হেটেই যাওয়া আসা তার।যাওয়ার সময় ভাবছে কিভাবে এই অস্বস্তি দূর করবে। প্রিয়তাকে বউয়ের মর্যাদা দিতে হবে।রুহিকে সব বলবে অনুপম।রুহি তো তার জন্য অপেক্ষা করছে।কমিটমেন্ট তো সে রুহিকে দিয়েছে।তাই রুহিকে সব বলে তাদের বিচ্ছেদ দরকার।হালকা খারাপ লাগছে অনুপমের।কিন্তু এটাই তার নিয়তি।নিয়তিকে উপেক্ষা করা যায় না।
প্রিয়তা আজ মনোযোগ দিয়ে হাসের গোস রান্না করছে।অনুপম খেতে ভালোবাসে।প্রিয়তার ভালো লাগে না হাসের গোস।কিন্তু অনুপম নারকেল দিয়ে হাসের গোস খুব ভালোবাসে। বড় এক রাজহাঁস গ্রাম থেকে এনেছে অনুপমের বাবা মা।দুপুরে রান্না করে রাখছে।রাতে ছিট রুটি বানাবে।শীতকালে জয়েন্ট পরিবার মানে ভিন্ন খাবারের চল।তাও আবার যদি হয় গ্রাম্য মন মানসিকতা। মিসেস পুরোভি খুশি হয়েছেন খুব।তার প্রিয়কে একবার কিছু বুঝিয়ে দিলে আর কিছু লাগেই না।নিজের বুদ্ধিতে চলে সে।এই যে বরকে মেনে নিয়েছে।এখন বরের মন যুগিয়ে চলবে।
রাহেলা বুবু নারকেল কুড়িয়ে দিচ্ছে।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে দেখলো।আজ প্রিয়তার মন ফুরফুরে।জিজ্ঞাসা করলো,”আফা আপনার মনডা আজ এত ভালা কেন?”
মাংস কষাতে কষাতে প্রিয়তা বললো,”ফুফু আম্মা মানেই আমার মন ফুরফুরে।তবে রান্নার জন্য এক্সাইটেড আছি।আজ প্রথম হাসের গোস রান্না করবো।তোর ভাইজান খাবে।”
“শুধু ভাইজান খাইবো!কেন তোমার তো শশুর শাশুড়ি আছে।ওনাদের দিবেনা?”
রাহেলা বুবুর কথায় লজ্জা পায় প্রিয়তা। মিসেস পুরোভি বুঝতে পারেন।তিনি প্রিয়তার কাধে হাত দিয়ে বলে,”মেয়েরা রান্না করে সবার জন্য।ভালোবেসে খাওয়ায় সবাইকে।কিন্তু মনের ভিতর খচখচ করে একজনের জন্য।তার কাছে কেমন লাগবে।সে কি ভালোবেসে খাবে কি না।এমনটা প্রথম দিকে হয়।”
স্মিত হাসে প্রিয়তা।রান্নাঘরে ঢুকলেন মিস্টার অরুণ।বললেন,”তুমি বুঝি প্রথম প্রথম রান্নার সময় আমার জন্য এমন ভাবতে?”
“তোমার জন্য ভাবতে আমার বয়ে গেছে।বুড়ো বয়সে বউমার সামনে আদিক্ষেতা।”বলেই সরে গেলেন।
প্রিয়তা মিটিমিটি হাসে।রাহেলা একটু জোরেই হাসে।এদের এই দুষ্টু মিষ্টি যুদ্ধ ভালো লাগে।ঢাকা শহরের অন্যান্য বাড়িও কাজ করে রাহেলা।দেখেছে তাদেরকে ভালো করেই।ওরা মুখে মধু অন্তরে বিষ বেশি রাখে।এখানে এদেরকে সাদা মাটা।ভালোই লাগে তার কাছে।
দুপুরে বাসায় এসে অনুপম।নামাজ পড়েই আসে সে।প্রিয়তা নামাজ পড়ে উঠলো মাত্র।উঠেই দেখে অনুপম এসেছে।হালকা হাসি দিলো দুজনে।তারপর প্রিয়তা বললো,”হাত মুখ ধুয়ে আসো।আমি ভাত বারছি।”
অনুপম হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,”ঠিক আছে।বাবা মাকে ডেকে আন।আমি আসতেছি।”
“আচ্ছা”বলেই চলে গেলো প্রিয়তা।
দুপুরে সবাই একসাথে খাচ্ছে।হাসের গোস দেখে অনুপম খুব খুশি হয়।সাথে সাথে মাকে জড়িয়ে বলে,”কতদিন পর তোমার হাতের হাসের গোস রান্না খাবো।মুখে পানি এসে গেছে।”
মিসেস পুরোভি প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলেন,”আজকের রান্না আমি না।তোমার বউ করেছে আব্বাজান।”
অনুপম তাকালো প্রিয়তার দিকে।বউ কথাটা যেনো আজ নবীন লাগছে তাদের কাছে।অবশ্য সংসার পুরনো হলেও এক হতে যাচ্ছে নতুন ভাবে।প্রিয়তা সবার প্লেটে ভাত দিলো। গোস ছাড়াও কিছু সবজি রান্না করেছে।সবাই মজা করে খেলো। অনুপমকে প্রথমে গোস দেওয়া হয়।সে প্রথম গাল নিতেই প্রিয়তা জিজ্ঞাসা করে,”কেমন হয়েছে?”
অনুপম প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,”অনেক ভালো।একটু ছিট রুটি হলে আরো ভালো লাগতো।”
মিসেস পুরোভি বলেন,”ওটা রাতে করবে।গোস রান্না করতে যে ঝামেলা।তাই আমি বলেছি রাতে ছিট রুটি হবে।”
খুশি হয় অনুপম।সবথেকে বেশি খুশি হয় তাকে কিছু বলা লাগছে না।এমনিতেই প্রিয়তা তার সাথে ফ্রী হচ্ছে।এদিকে প্রিয়তার ক্ষেত্রেও তাই।অনুপম তার সাথে ফ্রী হচ্ছে।এটাই যেনো তার ভালো লাগা।
খাওয়া দাওয়া করে অফিসে চলে যায় অনুপম।প্রিয়তা দুপুরের ঘুম দেয়।
সন্ধায় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে অনুপম।এসে ফ্রেশ হয়ে ডায়নিংয়ে আসে।রান্নাঘরে উকি দেয়।দেখে প্রিয়তা রান্নার কাজ করছে।বাবা মা বাইরে গেছে।তাদের এক কলিগদের বাসায়।অনুপম রান্নাঘরে আসে।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,”কোনো সাহায্য লাগবে?”
প্রিয়তা আটা মাখতে মাখতে বলে,”হয়ে গেছে আমার।সাহায্য লাগবে না।তুমি এখানে বসো।প্রথম রুটি খেয়ে দেখো কেমন হয়?”
অনুপম পাশেই বসে।ফোনে গান চালিয়ে দেয়।রোমান্টিক গান বাজছে ফোনে।গানের কথাগুলোতে মনে মনে লজ্জা পায় প্রিয়তা।অনুপম এতকিছু বুঝে উঠে না।প্রিয়তার বানানো প্রথম রুটি চুলা থেকে নামানোর সাথে সাথে অনুপম নিতে যায়।গরম রুটি ধরতেই ছেক লাগে অনুপমের।সাথে সাথেই বলে,”আউচ।”
প্রিয়তা তাকায় অনুপমের দিকে।বুঝতে পারেনি সামান্য ছেক লেগেছে।ভেবেছে কিছু একটায় বাড়ি খেয়ে ব্যাথা পেয়েছে।সাথে সাথে অনুপমের হাত নিজের কাছে আনলো।জিজ্ঞাসা করে,”কি হয়েছে!খুব লেগেছে?”
অনুপম তাকালো প্রিয়তার দিকে।মেয়েটা তার জন্য কিছুটা হলেও ভাবে।তাহলে সে ভুল কিছু করছে না।ঠিকই আছে তার সিদ্ধান্ত।উত্তর না পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় প্রিয়তা।বলে,”কি হয়েছে বলো?”
হুশ ফিরে অনুপমের।বলে,”তেমন কিছুই না।রুটি নিতে যেয়ে ছেক লাগে সামান্য।”
বিরক্ত হয় এবার প্রিয়তা। হাত ছেড়ে বলে,”এর জন্য এভাবে কেউ চিল্লায়!আমি ভাবছি কি না কি।ধুর,ভয় পাইয়ে দেও তুমি।বাচ্চাদের মত কাজ।”
অনুপম কিছু বলে না।চিৎকার একটু জোরেই দেয়।কি আর করার।ভয় তো পাওয়ার কথাই।যে জোরে চিল্লানি দিলো।
অনুপমের বাবা মা এসেছেন।সবাই একসাথে খাবার খেতে বসে।মজা করে খেয়ে গল্প করেন তারা।মিস্টার অরুণ বলেন,”এক সপ্তাহ পরে গ্রামে যাবো।তোমরাও যাবে সাথে।”
দুজনে একসাথে মিলে বলে,”ঠিক আছে,যাবো।”
রাতের আড্ডা শেষ করে ঘরে আসে অনুপম ও প্রিয়তা।কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনুপম বলে,”তোকে আর নিচে ঘুমাতে হবে না। খাটে অনেক জায়গা।এখানে ঘুমা তুই।”
প্রিয়তা আমতা আমতা করে বলে,”হুম আজ থেকে খাটেই ঘুমাবো।নিচে ঠান্ডা খুব।”
দুজনে অস্বস্তি কাটাতে পারে না।তারপরও চেষ্টা করছে তারা।প্রিয়তা গল্পের বই নিয়ে খাটের এক কোনায় পড়তে থাকে।অনুপম দেখে কিছুক্ষণ।হঠাৎ বলে ওঠে,”একসাথে মিলে গল্পটা পড়লে ভালো হতো।তুই পড় আমি শুনি।”
“ঠিক আছে”বলেই দুজনে সামান্য কাছে আসলো।দুজনের দূরত্ব যেনো মাত্র দশ ইঞ্চি।প্রিয়তা গল্প পড়তে থাকে।অনুপম মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে।কিছু কিছু সময় অনুপম প্রিয়তার দিকে তাকায়।ইচ্ছা করেই তাকায়।খারাপ লাগলেও তাকাতে হবে।দূরত্ব মোচন করতে হবে।
চলবে,