#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_৫
#ইশরাত_জাহান
অনুপম বাসায় এসেছে সন্ধায়।অনুপমের অফিস বাসার পাশেই।যাতায়াতে সমস্যা হয় না। অফিসের কাছে বাসা নিয়েছিলো সে।বাসায় এসে বাবা মায়ের সাথে আড্ডা জমালো চারজন।প্রিয়তা ঝালমুড়ি সাথে চা বানিয়েছে।সবাই টিভিতে খবরের সাথে উপভোগ করলো।
রাতের খাবার গরম করতে উঠলো প্রিয়তা।এটা দেখে মিসেস পুরোভি বললেন,”কোথায় যাচ্ছিস?”
প্রিয়তা ফুফু আম্মার দিকে তাকিয়ে বললো,”রাত হয়ে যাচ্ছে।খাবারগুলো গরম দিতে যাচ্ছি।”
সোফা থেকে উঠতে উঠতে মিসেস পুরোভি বললেন,”দ্বারা আমিও যাই তোর সাথে।এক জায়গায় বসে থাকতে ভালো লাগে না।”
“আচ্ছা আসো ফুফু আম্মা।”বলেই রান্নাঘরে আসলো প্রিয়তা।
রাতের খাবার সবাই একসাথে করলো।তারপর প্রিয়তা বাসনগুলো গুছিয়ে রাখলো।মিসেস পুরোভি টেবিল গোছালেন।সব কাজ শেষ করে নিজ নিজ ঘরে চলে গেলো।
অনুপম ও প্রিয়তা একসাথে ঘরে ঢুকলো।অফিস থেকে আসা ধরে টিভির ঘরে ছিলো।এসেই ঘর দেখে অবাক।সাথে সাথে বললো,”এটা কার ঘর?”
কপাল কুচকে গেলো প্রিয়তার।বললো,”কেনো আমাদের ঘর।ফুফু আম্মারা এসেছে বলে।তুমিই তো বললে আমাকে এই ঘরে শিফট হতে!”
অনুপম প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,”এটা আমাদের ঘর!দেখে তো মনে হচ্ছে তোর একার ঘর।এতগুলো বই কেনো?”
“আমি বই পড়তে ভালবাসি।কেনো জানোনা তুমি?”
“হ্যা জানি তুই গল্পের বইয়ের পোকা।কিন্তু ঘরটাকে দুজনের ঘরের মতো বানাতে পারতি।নিজের একার ঘর বানালি!”
“হুম,তুমি কি বুঝবে বইপ্রেমীদের ভালোবাসা।ওরা বই ছাড়া থাকতেই পারে না। যাই হোক ঘুমানোর কি ব্যাবস্থা?”
অনুপম আলমারি থেকে কম্বল ও কিছু কাথা বের করলো।ওগুলো নিচে পারতে পারতে বললো,”তুই খাটে ঘুমা।আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।অনেকগুলো লেপ আর কম্বল আছে।অসুবিধা হবে না।”
অনুপমের থেকে জিনিসগুলো নিয়ে প্রিয়তা বললো,”আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।তুমি সকালে অফিস যাবে।ঝামেলা অনেক তোমার।আমি ম্যানেজ করতে পারবো।এছাড়া গ্রামের বাড়িতে আমি এভাবে থেকেছি অনেক।অভ্যাস আছে।তাই দেও আমি ঘুমোই নিচে।”
অনুপম না করলো না আর। প্রিয়তাকে সাহায্য করলো।অনুপমের ঘরের অনেক জিনিসই প্রিয়তা চিনে না।চিনবেই বা কি করে!থেকেছে নাকি যে।অনুপম সবকিছু বলে দিলো কোথায় কি আছে।নাহলে মায়ের সামনে বিপাকে পড়তে হবে।
রাতে সব ঠিক করে অনুপম বিছানায় উঠলো।নিচে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়তা বই নিয়ে বসেছে।বই পড়তে অনুপমও খুব ভালোবাসে।তাই প্রিয়তাকে বললো,”আমাকে একটি বই দে।আমিও গল্প পড়তে ঘুমোই।”
প্রিয়তা মিটমিট হাসলো।একটু আগে তাকে বই পোকা সম্মধন করলো। আর এখন সে নিজেও বই খুঁজছে।প্রিয়তার বইগুলো থেকে একটি বই দিলো অনুপমকে।
দুজনেই বই পড়ে লাইট লাজিয়েই ঘুমালো।প্রিয়তা অন্ধকারে ভয় পায়।তাই লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে।দুইটা বড় কম্বল নিচে পেরে লেপ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রিয়তা।তাই তার অসুবিধা হচ্ছে না।অনুপমের শীত কম লাগে।প্রায় সময় তো সে এসি চালিয়ে রাখে।তাই অনুপমেরও তেমন অসুবিধা নেই।
সকালে উঠে প্রিয়তা নামাজ পড়ে নাস্তা তৈরি করে।মিস্টার অরুণ এসে অনুপমকে ডেকে নিয়ে গেলেন মসজিদে।নামাজ পড়ে রান্নাঘরে এগিয়ে আসলেই মিসেস পুরোভি। প্রিয়তাকে নাস্তা বানাতে দেখে বললেন,”আমার ছেলেকে মজার মজার নাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয় ঠিকমতো তাই না?”
স্মিত হাসলো প্রিয়তা।রান্নায় পারদর্শী সে।মায়ের থেকে সব রান্না শিখে নিয়েছে।অনুপম ও মিস্টার অরুণ বাইরে থেকে একটু হাটাহাটিও করেছে।তারপর বাসায় আসে।বাসায় আসতেই প্রিয়তা গরম গরম আদা চা দেয় তাদের।অনুপমের ভালো লাগে।শীতের সকালে চায়ের মজা আলাদা।
চা পান করতে করতে মিস্টার অরুণ বলেন,”শোন আব্বাজান।আমরা কিছুদিন ঘুরবো।তারপর তোমাদের সাথে করে নিয়ে যাবো বাসায়।এমনিতেও সামনের মাসে ইলেকশন।তোমরা গ্রামে থাকবা। আর তোমাদের বিবাহবার্ষিকী আমাদের বাসায় অনুষ্ঠান করবো।বিয়ে দিলাম কিন্তু ঘরে বউ উঠাইনি।ব্যাপারটা কেমন জানি দেখায়।”
কথাগুলো শুনে অনুপম ও প্রিয়তা একে অপরের দিকে তাকায়। কোথায় তারা বিচ্ছেদ চায়। আর কোথায় পরিবার তাদের মিলন চায়।কি হবে তাদের!এই সম্পর্কের সমাপ্তি কি?ভালোবাসাহীন এই সম্পর্ক কি আদৌ আসল সম্পর্ক?নাকি ভালোবাসাতে পরিপূর্ণ সম্পর্কটি আসল?
কথার উত্তর না দিয়ে চুপ থাকে দুজনে।শুধু লোক দেখানো মুখের হাসি ঝুলিয়ে রাখে মুখে। পুরোভি বেগম বুঝতে পারেন এদের অবস্থা।এদের মধ্যে দূরত্ব কাল থেকে সে দেখেছে।প্রিয়তা একজনকে ভালোবাসতো।এত তারাতারি কি ভুলতে পেরেছে!না পারেনি।মেয়েদের মন মেয়েরাই বুঝে।এখানে তো প্রিয়তা তার এক কলিজার টুকরো।তার ভাইয়ের ছোট কন্যা।তার মতই হয়েছে।মনে মনে কিছু একট ভেবে মন স্থির করলেন মিসেস পুরোভি।
সকালের খাবার খেয়ে দুপুরের জন্য খাবার নিয়ে অফিসে গেলো অনুপম।প্রিয়তা এখন শশুর শাশুড়ির সাথে।বাসায় আসলো রাহেলা বুবু।এসে কাজ করছে পাশাপাশি অনেক গল্প। পুরোভি বেগমও চুপ করে শুনছে।কথার ভিতর রাহেলা বুবু বললেন,”আমি এখন বুঝছি আফামণি এত চুপচাপ কেনো! অসলে ফুফুর ধারা পাইছে।আপনি যেমন শান্ত আবার ভালো। আফামণিও তেমন।আপনার মত হইছে।”বলেই হেসে দিলো।
হালকা হাসলো মিসেস পুরোভি।বললো,”তোমার আফার জীবনও আমার জীবনের সাথে মিলে গেছে।কোনো না কোনো ভাবে।”বলেই স্মিত হাসলো।
রাহেলা বুবু বুঝলো না তেমন।প্রিয়তা পাশেই ছিলো।সে তার মায়ের থেকে শুনেছে।তার ফুফু আম্মার একটি অতীত আছে।বুঝতে পারলো প্রিয়তা ফুফু আম্মা কেনো বলেছে এই কথা।কষ্ট পেলো প্রিয়তা মনে মনে। যত যাই হোক।আপাদত কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।অনুপমের সাথে বিচ্ছেদ হলেও এই সম্পর্কগুলো মজবুত রাখতে হবে।বাবা তার বোনকে দূরে রাখেনি।সে কিভাবে এক বিচ্ছেদের দ্বারা আরেক সম্পর্কের দূরত্ব করবে!
মিসেস পুরোভিকে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ফুফা আব্বা আছে কি না।লোকটির বয়স অনেক।শুনে ফেললে সমস্যা আছে।না ফুফা আব্বা নেই সেখানে।হাফ ছাড়লো প্রিয়তা।
রান্নাঘরের আড়ালে দাড়িয়ে শেষ কথাটি শুনতে পায় মিস্টার অরুণ।দাড়ায় না সেখানে। সেও গিয়েছিলো আড্ডা দিতে।কিন্তু স্ত্রীর মুখে এমন বাক্য শুনে ঘরে ফিরে এসেছেন।স্ত্রীর মনে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি।ভেবেই চোখ থেকে পানি পড়লো তার।পুরুষ মানুষ কাদলে মানায় না।কিন্তু পুরুষ কি মানুষ না?কেনো কাদবে না সে?আড়ালে হোক কান্না করা তো সবারই উচিত।
রান্নাবান্না শেষ করে দুপুরে খেয়ে নিলো সবাই।মিসেস পুরোভির কথায় প্রিয়তা কল করে অনুপমকে।অনুপম কল রিসিভ করে বললো,”হেলো!”
“দুপুরে খেয়েছো তুমি?”হালকা ইতস্তত করে বললো প্রিয়তা।
গিন্নি গিন্নি লাগলো অনুপমের কাছে।বুঝতে পারলো মা বাবার জন্য জিজ্ঞাসা করা।বললো,”হ্যা মাত্র খেয়েছি। তোরা খেয়েছিস?”
“হ্যা খেয়েছি।রাতে কি খাবে?”
“বাবা আর আমি দুজনে ঝাল ঝাল শুটকি ভর্তা আর চিতই পিঠা ভালোবাসি।সবকিছু কেনা আছে।বানাতে পারবি?”
“খুব ভালো পারবো।গ্রামের মেয়ে আমি।শহরে এসেছি বলে কি ঐতিহ্য ভুলবো নাকি?তাড়াতাড়ি চলে আসো।আমি পিঠা আর শুটকি ভর্তা করছি।”বলেই কল কেটে দিলো।
পাশে দাড়িয়ে ছিলো মিসেস পুরোভি।বুঝলো ছেলে তার বাবার ভালোবাসার খাবার বানাতে চায়।মিসেস পুরোভি বললো,”শোন মা ভর্তা আমি বানাবো।উনি আমার হাতের ভর্তা খুব ভালোবাসে।তুই পিঠা বানা।দুই মা মেয়ে মিলে রান্না করবো।”
প্রিয়তা হাসলো।প্রিয়তা জানে ফুফু আম্মা তার ফুফা আব্বার মায়াজালে ফেঁসে গেছে।ভালোবাসে তার ফুফা আব্বাকে।কিন্তু মুখ ফুটে বলে না।
চলবে,