“আমার ব্লাউজের হুক টা খুলে দাও তো”! কংকা গোসল শেষে ভেজা কাপড় পড়া অবস্থায়, হিমুর কাছে গিয়ে কথাটা বলল। হিমু সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। কংকার দিকে মাথা উঁচু করে এক পলক তাকাতেই লজ্জায় চোখ টা নামিয়ে নিলো। কারন ভেজা কাপড়ে ওর শরীরের সব কিছু বোঝা যাচ্ছিল।
“এইভাবে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো? দাও না খুলে?”
উপায় না দেখে হিমু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হুক খুলে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু পুর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সে কিছুতেই পেরে উঠলো না।
“কি হলো এতোক্ষণ লাগে বুঝি?”
কংকার তাড়া খেয়ে হিমু বাধ্য হয়ে ওর পিঠের দিকে তাকিয়েই হুক টা খুলে দিলো।
“হয়ে গেছে। তুমি এখন ড্রেস চেইন্জ করতে পারো।” কথাটা বলেই হিমু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। আর মনে মনে ভাবলো কংকা হয়তো এখন বাথরুমে গিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করবে। কিন্তু না। সে হিমুর সামনেই ব্লাউজ টা খুলতে লাগলো।
কংকার এমন অস্বাভাবিক আচরনে হিমু লজ্জায় দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বের হয়ে দরজাটা বাহির থেকে লক করে দিলো। তারপর সে মনে মনে কাজের মেয়েকে একশো একটা গালি দিতে লাগলো। কারন সে থাকলে আজ হিমুকে এসব করতে হতোনা। লজ্জায় হিমু মরে যেতে লাগলো।
কংকা হিমুর আশ্রিতা বোন। খুব ছোটবেলাই কংকার বাবা মা মারা যায়। তারপর সে তার দাদা দাদীর কাছে মানুষ হতে থাকে। এক সময় তার দাদা দাদীও মারা যায়। বলা বাহুল্য তার অনেক আত্মীয় স্বজন থাকা সত্ত্বেও কেউ তার দায়িত্ব নিতে রাজী হয়নি। অগ্যতা কিছূদিন সে গ্রাম সম্পর্কে এক দাদীর কাছে থাকে। কংকা হিমুর নানুর বাড়ির এলাকার। এরপর ভাগ্যগুনে হঠাৎ একদিন হিমুর মা’র সাথে তার দেখা হয়ে যায়। হিমুর কোন ভাই বোন ছিলোনা। তাই হিমুর মা কংকার সব কাহিনী শুনে ওকে একেবারে নিয়ে নেয়।
ঐসব ছাড়াও হিমুর মায়ের কংকাকে পছন্দ হওয়ার আরো একটা কারন আছে। কংকা অনেক শান্ত শিষ্ট একটি মেয়ে। আর কিছুটা কম বুদ্ধির অধিকারিণী। ওকে যখন হিমুর মা আশ্রিতা হিসেবে নেয় তখন ওর বয়স ছিলো মাত্র তেরো-চৌদ্দ বছর।
এখন ওর বয়স সতেরো। তবে ওর বুদ্ধি বয়সের সাথে না বেড়ে দিনে দিনে আরো কমে যাচ্ছে। এই কারনে হিমুর মা ওকে একটু বেশিই যত্ন-আত্তি করেন, খেয়াল রাখেন, ভালোবাসেন। সব সময় চোখে চোখে রাখেন। হিমুর থেকে কোন অংশেই ওকে কম ভালোবাসেন না। শুধু তাই নয়। হিমুর বাবার অঢেল সম্পত্তির অর্ধেক তার নামেই উইল করে দিয়েছেন।
হিমু যখন মাস্টার্স করার জন্য লন্ডন যায়, তখন হিমুর মা কংকা কে আশ্রিতা হিসেবে নেন। সেই কারনে হিমু কংকাকে দেখে যেতে পারে নি। তবে হিমুর সাথে ওর মা যতোবার ফোনে কথা বলতেন ততোবার ই কংকার কথা বলতেন। হিমুও বুঝে গিয়েছিলো উনি কংকাকে নিজের মেয়ের যায়গা টায় দিয়ে দিয়েছেন।
অবশেষে হিমু মাস্টার্স শেষ করে বাসায় ফিরলো। কংকার সাথে তার দেখা মিলল। হিমু তাকে বোন হিসেবে মেনেও নিলো। তবে সামান্য একটা সমস্যা বেধে গেলো। কংকা ঠিকমতো রুম থেকে বের হতোনা। ওর সাথে মিশতো না। কথা বলতো না। হিমু লন্ডন থেকে আসা অবধি এই পনেরো দিনে একবারো সে ভালোমতো হিমুর সাথে কথা বলেনি। যায জন্য সম্পর্ক টা ভাই বোনের মতো না হয়ে সামান্য শিথিল হয়ে গেছে। মূলত এইটাই সমস্যা।
গতকাল হিমুর মায়ের বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে ছিলো। ওখানে কংকাকে নিয়ে গিলে তাকে নানা রকম প্রবলেম ফেইস করতে হতো। এই কারনে উনি কংকাকে হিমুর কাছে রেখে গেছেন। তাতে হিমুর কোনই প্রবলেম বা আপত্তি নেই।
কিন্তু সমস্যা করেছে কাজের মেয়েটা। তার মা চলে যাওয়ার পরে সেও ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেছে। শহুরের এই বাসায় হিমুর মা-বাবা, কাজের মেয়ে আর সে থাকে। তার গ্রামের বাসায় সব আত্মীয় স্বজনে ভর্তি।
দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে হিমু দরজাটা খুলে দিলো। কংকা ওর দিকে কিছুটা রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছে। হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে মনে মনে কিন্তু পারছেনা। কারন ওর বৈশিষ্ট্যই চুপচাপ থাকা। হিমু ওর দিকে একবার তাকাতেই আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। শাড়ি ঠিক মতো পড়তে পারেনি। প্রায় জায়গায় বের হয়ে আছে।
হিমুর মায়ের শাড়ি খুব পছন্দ। তাই কংকাকে সবসময় শাড়ি পড়িয়েই রাখে। হিমু এই কয়দিনে কয়েকবার কংকাকে দেখেছে। তখন সে ঠিকই সাজানো গোছানো অবস্থায় ছিলো। কিন্তু এখন “আঁচল ধরতে শাড়ি খুলে যাচ্ছে” অবস্থা হয়ে গেছে। সে যে তার মায়ের সাজানো গোছানো একটা যান্ত্রিক পুতুলের মতো সেটা হিমুর বুঝতে দেরী হলো না। আর ওর মায়ের বেশি ভালোবাসা, আদর যত্ন পেয়ে পেয়ে যে সে দিনে দিনে আরো বোকা হয়ে যাচ্ছে সেটাও খুব সহজেই অনুমান করতে পারলো।
হিমু রুমে ঢুকে বেডের উপরে বসলো। হুদাই ফোন চাপতে লাগলো। কারন সে কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না। একটু পর কংকা কান্না ধরানো কন্ঠে বলল-
“মা কখন আসবে?” আমায় মার কাছে নিয়ে যেতে পারবে?”
হিমু কিছুটা হাসি হাসি ভাব করে বলল-
“আজকেই আসবে।”
“কখন আসবে?”
হিমু তো জানেনা কখন আসবে। আর আজকেই যে ওর মা আসবে এটাও সে না জেনেই বলেছে। ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। সে এবারো মিথ্যা সাজিয়ে বলল-
“রাতে আসবে”
কংকা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে সোজা ওর রুমে চলে গেলো। হিমু হাফ ছেড়ে বাঁচলো। একটুপর সে শীলাকে কল করলো। শীলা হিমুর গার্লফ্রেন্ড।
“হ্যালো শীলা?”
“এই তুমি গতকাল থেকে কি করছিলে বলোতো? আমায় একবারো নক করনি কেনো? আর আমি যে তোমায় এতোবার করে কল মেসেজ করলাম তার কি কোন উত্তর দিতে হয়না?”
“সরি আমি খুব বিজি ছিলাম।”
“কিসের বিজি ছিলে শুনি?”
হিমু এবার কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। কারন সে যদি কংকার ঐ ঘটনা গুলো বলে তাহলে নির্ঘাত ব্রেকাপ হয়ে যাবে। সে একটু ভেবে আমতা আমতা করে বলল-
“বাসার সবাই বিয়ে খেতে গেছে। কাজের মেয়েটাও নাই। একাই রান্না করে খেতে হচ্ছে। এতোবড় বাড়ির সব কিছু আমায় সামলাতে হচ্ছে, তুমিই বলো সময় পাবো কেমনে?”
মনে মনে হিমু নিজেকে গালি দিতে লাগলো। কারন সে খুব জরুরী দরকার ছাড়া মিথ্যা কথা বলে না। যদি সে ওর মা কে জোর করতো কংকাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাহলে কি এই দিন দেখতে হতো?
হিমুকে চুপ থাকতে দেখে শিলা বলল-
“মেসেজ দিয়ে একবার জানাতে পারতে!”
“হ্যা তা পারতাম। কিন্তু আমি ভাবছিলাম যে একদম ফ্রী হয়ে তোমায় নক দিবো।”
“হুম ভালোই করেছো। তাহলে এখন কথা বলো”
“ওহ্, আই এম এক্সট্রেমলী সরি ইয়ার। আমি লাঞ্চ টা সেরে নিয়েই তোমায় কল করছি কেমন?”
“ওকে”
হিমু লাইন কেটে কিচেনে গেলো। সে সকালে উঠেই রান্না করে নিয়েছিল। এখন জাস্ট খাওয়ার পালা। আপনারা ভাবছেন কংকা রান্না করলেই তো পারতো তাইনা?
আসলে কংকাকে হিমুর মা নিজের হাতটাও ধুইতে দেন না। তার কাছ থেকে কোন কাজের আশা করা কি ঠিক? তার উপরে আবার তার মাথায় গন্ডগোল।
হিমু খাবার প্লেটে বেড়ে কয়েকবার কংকাকে ডাকলো। কিন্তু ওর কোন সারা শব্দ পেলো না। হিমু ভাবলো হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ও ওর রুমে সোফায় বসে ভাত খাচ্ছিল আর ল্যাপটপে মুভি দেখছিলো। এমন সময় কংকা দ্রুত গতিতে ওর পাশে এসে বসলো। তারপর কোন কথা না বলেই হিমুর প্লেট থেকে খেতে লাগলো। এমন কান্ড দেখে হিমু পুরাই হতভম্ব হয়ে গেল। সে খাওয়া বাদ দিয়ে চুপচাপ কংকার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো।
“তুমি খাচ্ছো না কেনো?”
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে তাই!”
“না….তাহলে আমিও আর খাবোনা!”
হিমু একটু ভেবে বলল-
“তুমি বুঝি মার সাথে এমন করেও খাও?”
“হু”
হিমু কিছুক্ষণ পর আবার খাওয়া শুরু করলো। জীবনে প্রথমবার এমন করে খেতে ভালোই লাগছে তার।
খাওয়া শেষে হিমু মুভি দেখছে। আর কংকা ওর পাশে বসে কিছুক্ষণ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকছে আর কিছুক্ষণ হিমুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকছে। হিমু পুরাই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। সে বুঝতে পারছেনা কংকা কেনো ওর রুমে চলে যাচ্ছেনা, আর ওকেও কিছু বলছেনা।
একটু পর হিমুই নিজ থেকে জিজ্ঞেস করলো-
“কংকোনা? তুমি কিছু বলবে?”
কংকার পুরো নাম কংকোনা। সবাই আদর করে কংকা বলে ডাকে। কিন্ত হিমু কংকোনা বলেই ডাকে।
“আমি মার সাথে একটু কথা বলবো!”
হিমু কংকার কথা শুনে মৃদু হেসে বলল-
“এইটাই তুমি আমায় বলতে পারছোনা? এইটা বলার জন্য সেই তখন থেকে বসে আছো?”
কংকা কোন কথা বলল না। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। হিমু ওর মায়ের কাছে কয়েক বার কল করলো। কিন্তু ওর মা একবারো রিসিভ করলো না। মনে হয় বিয়ে বাড়িতে খুব ব্যস্ত।
ওর মা ফোন রিসিভ করছেনা দেখে কংকা রাগে হির হির করে চলে যেতে লাগলো। ও মাথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে রেখেছিলো। আর অমনি মাথা থেকে আঁচল টা পরে গেলো। হিমু দেখলো ওর চুলগুলো প্রায় সবই ভেজা। ভালোভাবে মাথা মুছেনি। চুল থেকে টপ টপ করে পানিও পরছে। হিমু কিছু বলার আগেই কংকা রুমে থেকে চলে গেলো।
রাত তখন নয়টার কাছাকাছি। হিমু শিলার সাথে কথা বলা শেষে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য কিচেনে গেলো। বিকেল থেকে এই পর্যন্ত একবারো কংকা রুম থেকে বের হয়নি। হিমু ভাবলো কংকা হয়তো রাগ করে আছে। তাই সে ওর খাবার প্লেট হাতে করে নিয়ে ওর রুমে গেলো। গিয়ে দেখে কংকা ঘুমে বিভোর।
হিমু প্লেট টা রেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো। ওর চুল গুলো এখনো ভেজাই আছে। চুল থেকে টপ টপ করে ফ্লোরে পানি পরছে। হিমু কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে ওর শরীর পুরে যাচ্ছে । হিমু ওর কপালে হাত রাখতেই কংকা ওর হাতটা আলতো করে চেপে ধরলো। সাথে সাথে হিমুর শরীর একবার কেঁপে উঠল। এ কেমন স্পর্শ!!! হিমুর মনে হলো এমন স্পর্শ সে জীবনে এই প্রথমবার পেলো।
কংকার ঘুম ভেঙে যাওয়ার ভয়ে হিমু ওর হাতটা ছেড়ে নিচ্ছে না। চুপচাপ ওর পাশে বসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে জিরো লাইট দেওয়া আছে। খোলা জানালা দিয়ে এক ফালি চাঁদের আলো ওর মুখের উপর এসে পরেছে। ওকে দেখতে ঠিক পূর্ণিমার চাঁদের মতোই লাগছে। হিমু ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলতে পারছেনা।
কতক্ষন এভাবে তাকিয়ে ছিলো সে জানেনা। কংকা এমনিতেই অনেক সুন্দরী। অসম্ভব সুন্দরী। কিন্তু হিমুর কাছে আজ তাকে পরিপূর্ণ সুন্দর লাগছে। কি কারনে লাগছে সে সেটা নিজেও জানেনা।
মধ্যরাতে কংকার ঘুম ভাঙলো। সে ঘুম থেকে উঠেই হিমু কে দেখে কিছুটা হবাক হলো। তারপর খেয়াল করলো সে হিমুর একটা হাত চেপে ধরে আছে। সাথে সাথে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল-
“মা এসেছে?”
হিমু থতমত হয়ে গেলো। একটুপর বলল-
“না আসেনি। তুমি রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলে, আমায় বললেই তো খাবার প্লেটে তুলে দিতাম। আমি তো জানি না তুমি কখন খাও কখন ঘুমাও। খাবার নিয়ে এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।”
কংকা রুমে লাইট দিয়ে হিমুর পাশে এসে বসলো। তারপর হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“কালকে তুমি আমায় মার কাছে নিয়ে যেতে পারবে?”
হিমু কি উত্তর দেবে তাই ভাবছে। একটু পর বলল-
“তোমার চুল গুলো এখনো ভেজাই আছে। আমি কি মুছে দিবো?”
কংকা কোন উত্তর দিলোনা। একটুপর হিমু কংকার আঁচল দিয়ে চুল গুলো মুছে দিতে লাগলো।
“কি হলো উত্তর দাও?”
হিমু ওর কাছে যেনো বাধা পড়ে গেছে। ও কষ্ট পায় এমন সত্য বলতেও সে এখন নারাজ। তাই ধীর গলায় বলল-
“হুম নিয়ে যাবো।”
একটুপর কংকা না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো। হিমুরও আর খাওয়া হলো না। সেও না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো।
সকালবেলা দরজা নক করার শব্দে হিমুর ঘুম ভেঙে গেলো। দরজা খুলতেই সে দেখলো শিলা রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আশ্রিতা?
পর্ব এক
সাড়া পেলে নেক্স দিব