আরশিকথা -১৪

0
920

আরশিকথা -১৪

আপনি এখানে সারারাত ছিলেন? – প্রভা জানতে চাইলো।
শুভ্র হাই তুললো।
এখন চলে যান। প্লিজ। আপনি তো সব শেষ করেই গিয়েছিলেন। ইভেন দেশে ফেরার পরেও আপনার মধ্যে আমি কোনো অনুভূতি দেখিনি৷ আজ এমন করে আমাকে বিব্রত করছেন কেন?

শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে প্রভাকে বলল, চলো কোথাও বসে কথা বলি।

প্রভা নিজেই অন্যপাশের দরজা খুলে উঠে বসল।

শুভ্র ড্রাইভিং সিটে বসে বলল থ্যাংকস, এবারে অন্তত নিজে এসেছ প্রভা।

আপনার কি মনে হয় না, আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণটা খুব সিলি ছিল!

শুভ্র বলল, দূরে গেলেই কি ছেড়ে যাওয়া হয় প্রভা!

প্রভা কিছু বলল না উত্তরে।

একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে শুভ্র থামল।

প্রভা, ওই মুহুর্তে হয়তো আমার মাথা কাজ করছিল না। মনে হচ্ছিল, আমি না থাকলে হয়তো দীপ্র তোমাকে…

প্লিজ, স্টপ ইট! এই ননসেন্স কথাগুলো আমি আর শুনতে চাই না। আমি বাসায় যাব। – প্রভা আনরেস্ট হয়ে গেল।

শুভ্র একটা সিগারেট ঠোঁটে দিতেই, প্রভা টেনে ফেলে দিলো

শুভ্র ভুরু নাচিয়ে বলল, ওকে! নো স্মোকিং জোন!

তারপর অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথাই বলল না।

শুভ্র নিরবতা ভেঙে বলল, প্রভা, তুমি আমাকেই ভালোবাসো। আমার জায়গায় এই পৃথিবীর কোনো ছেলেই আসতে পারবে না।

প্রভা একটু সময় চুপ করে বলল, একদম ঠিক, আপনার জায়গায় অন্য কেউ আসতে পারবে না, তবে নতুন জায়গা তৈরি হবে। আর এটাও সত্যি আমি আপনাকে ভালোবাসতাম, কিন্তু আমার জীবনে আমি আপনাকে চাই না। একদমই চাই না।

শুভ্র সহসা প্রভার হাতটা চেপে ধরলো, কারো সাধ্য থাকলে তাকে নিয়ে যেতে বলো তোমাকে। কেউ পারবে না।

প্রভা হাত ছাড়িয়ে নিতে গেল কিন্তু শুভ্র এত জোরে ধরেছে, যে ছাড়াতে পারল না।

ছাড়ুন, আর আমার অফিস আছে, আমি এখন ফিরব।

কিছু সময় পরে শুভ্র বলল, জুবায়ের ভালো ছেলে। ওকে আর জড়ানোর দরকার নেই। আজই ওকে না করে দেবে।

প্রভা একটু হাসল। শুভ্র বলল, যেটা বললাম, সেটা মাথায় রেখো। আমি কিন্তু তোমাকে বিয়ে করতে দিব না। বিয়ের আসরে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব। আমি সব পারি। আর আমি গেলে তুমিও না এসে পারবে না। এসব নাটকের কোনো প্রয়োজন নেই। আজই তুমি না করবে। আর আমি ফিরে গিয়েই আমার আম্মাকে পাঠাব তোমাদের বাসায়।

প্রভা উত্তর দিলো না।

শুভ্র প্রভাকে ওর বাসার সামনে দিয়ে এলো।

★★★

সারাদিনে ঢাকায় শুভ্রর কিছু কাজ ছিল। তারপরই ঢাকা থেকে ফিরে যাবে। ফিরতে রাত হয়ে রাতে রুমে ঢুকে দেখল দীপ্র মুভি দেখছে।

দীপ্র, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

বল!

আচ্ছা তুই প্রভাকে প্রপোজ করেছিলি?

সেভাবে না, ও কখনো আমাকে সেভাবে দেখেই নি। ওর সম্ভবত কারো সাথে একটা সম্পর্ক ছিল, সেটাও আমাকে বলেনি।

কেমন বন্ধু তোর, তুই জানতেও চাস নি!

একজন যদি তার একান্ত ব্যক্তিগত কথা না বলে, তাকে জোর করা খুবই উইয়ার্ড। তুই প্রভার কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?

কারণ ওর যার সাথে সম্পর্ক ছিল, সে কে জানিস?

দীপ্র একটু অবাক হয়ে তাকাল, ভাইয়া প্রভার বয়ফ্রেন্ডকে চেনে!

তুই কখনো বলিস নাই তো তুই প্রভার বিষয়ে এত ইন্টারেস্টেড!

ইন্টারেস্টেড না দীপ্র, প্রভার সাথে প্রেমটা ছিল আমার!

দীপ্র হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল, মানে?

মানে তোকে বলে নি কারণ আমি নিষেধ করেছিলাম। সম্পর্কটা আজকের নয়, আমরা যখন প্রথম গেলাম ওখানে, তোর মনে আছে, ও নোট নিতে এলো৷ ওর বন্ধুদের না দেওয়ার অজুহাতে?

দীপ্র মনে করে বলল, হ্যা!

ও আসতো ঠিক তখনি, যখন আমি যেতাম!আর তোর মাঝে মাঝেই কিছু নোট মিসিং হয়ে যেত, যেটা প্রভা তোকে দিতো।

হ্যা। তোর নোটগুলো আমি সরিয়ে ফেলতাম দীপ্র!

দীপ্র আপসেট হয়ে বলল, তাহলে তোরা দুজনই আমাকে বোকা বানিয়েছিস, এতগুলো বছর ধরে?

শুভ্র বলল, না, আমরা একত্রে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন একদিন তুই জানালি, যে প্রভাকে তুই পছন্দ করিস। আমি তোকে জানাতে পারলাম না। কিছু না বুঝতে পেরে তোদের মাঝ থেকে নিজেই সরে গেলাম।
কিন্তু আমি একটা ভুল করেছিলাম, প্রভাকে এক মুহুর্তের জন্যও মন থেকে সরাতে পারিনি।

দীপ্র একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, তাহলে? আজ এতদিন পরে এসব কথা তুলে কি লাভ!

লাভ হচ্ছে, এখন মাকে বলতে হবে, প্রভার বাসায় কথা বলতে। আমি আর পারছি না দীপ্র! প্রভাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না।

দীপ্র বলল, এটা এখন আর সম্ভব না৷

অবশ্যই সম্ভব!

দীপ্র বলল, মনে হচ্ছে না। প্রভার এনগেজমেন্ট শুক্রবারে, জুবায়েরের সাথে। ঘন্টাখানেক আগেই জানিয়েছে আমাকে।

চলবে

শানজানা আলম

নতুন ই বুক “আজ ভেজাব চোখ সমুদ্র জলে ” পড়ুন বইটই থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here