#আমি_ফাইসা_গেছি(১৭)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
–বিছানা থেকে নাম।নাম বলছি।
এই বলে তোড়া চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স,চিপসের প্যাকেট সব ছুঁড়ে ফেলে দিলো বাহিরে।তারপর কুশানকেও টেনে রুম থেকে বের করে দিলো।
–কি হয়েছে কি?এই তোড়া?পাগল হয়ে গেলে?
তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে কুশানকে বাহিরে রেখে তাড়াতাড়ি করে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।আর চিৎকার করে করে বলতে লাগলো,
আমি নাকি চিপস আর চকলেটের জন্য কাঁদতেছি।কি রে ভাই আমি কি ছোটো বাচ্চা?যে চিপস আর চকলেট না আনাতে কাঁদবো?সে যে আমার ইমোশন বুঝতেই পারে না?আমার সাথে কখন কি হচ্ছে?কে কি বলছে আমাকে?আমার মন কি জন্য খারাপ সে যে বুঝতেই পারে না?সেই বলদ নাকি আবার আমার ভালোবাসার মানুষ। অনেক ধরনের বলদ দেখেছি আমি কিন্তু এরকম বলদ দেখি নি।থাক!আজ তুই বাহিরেই থাক।সারারাত মশার কামড় খাওয়ার পর যদি একটু বুদ্ধি হয়?মশারাও তোর থেকে অনেক বুদ্ধিমান।
এদিকে কুশান বার বার দরজা ধাক্কাতে লাগলো।আর তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলো।
তোড়া যেনো আজ কুশানের কথা শুনতেই পারছে না।সে চুপচাপ বেডে শুয়ে থাকলো।
হঠাৎ কুশান ইরার রুমের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো।তখন কুশান তাড়াতাড়ি করে চকলেট বক্স,আইস্ক্রিমের বক্স,আর চিপসের প্যাকেট গুলো কুড়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি সুমনের ঘরের দিকে চলে গেলো।কারণ সুমন দরজা খোলা রেখেই ঘুমায়।
ইরা এই রাতের বেলা পানি খাওয়ার জন্য উঠেছে।যখন সে দেখলো বোতলে পানি নেই।সেজন্য বাহিরে এসেছে পানি নেওয়ার জন্য।ইরা দেখতে পেলো না কুশানকে।কুশান তার আগেই সুমনের রুমে ঢুকেছে।
এদিকে সুমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।সে জানেই না তার রুমে কুশান এসেছে।কুশান এবার সুমনের ফোন টা নিয়ে আগে তোড়াকে কল দিলো।
কিন্তু তোড়া রিসিভ করলো না সুমনের কল।তখন কুশান আবার কল দিলো।
তোড়া এবার রিসিভ করলো।
তোড়া হ্যালো বলতেই কুশান বললো,আমার অপরাধ কি তোড়া?কেনো সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিলে এভাবে?আর আমাকে এভাবে কেনো রুম থেকে বের করে দিলে?প্লিজ উত্তর দাও।
কুশান পুরো কথা শেষ না করতেই তোড়া কেটে দিলো কল। কুশান তখন আবার কল দিলো।এবার তোড়া বিরক্ত হয়ে সুমনের নাম্বার টাই ব্লক করে দিলো।
কুশান এবার একদম অস্থির হয়ে গেলো।কারণ সে যে বুঝতেই পারছে না তোড়ার রাগের কারন টা কি?
কুশান রুমের মধ্যে অনবরত পায়চারি করতে লাগলো।সে আর কোনো উপাই খুঁজে পাচ্ছে না।কুশান তখন সিদ্ধান্ত নিলো আবার সে তার রুমের সামনে যাবে।আর আবার তোড়াকে ডাক দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।কুশান চুপি চুপি সুমনের রুম থেকে বের হয়ে আগে চারপাশ দেখে নিলো ভালো করে।যখন সে কাউকে দেখতে পেলো না তখন এক দৌড়ে চলে গেলো তার রুমের সামনে।আর আবার তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলো।
তোড়া যখন দরজা খুলে দিচ্ছিলো না তখন কুশান মিনতি করে বললো,
তোড়া প্লিজ খুলে দাও দরজাটা।বিশ্বাস করো আমি কোনো কথা বলবো না তোমার সাথে। জিজ্ঞেসও করবো না কেনো এভাবে সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিলে।আমি শুধু চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়বো।
কিন্তু তোড়ার কোনো সাড়াশব্দ নাই।
–তোড়া?তোড়া?এই তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?আমি কি আজ বাহিরেই ঘুমাবো?প্লিজ খুলে দাও দরজাটা।
কামিনী ঘুমের ঘোরেই জারিফ চৌধুরীকে বললো,এই দেখো তো একটু।কুশান ডাকছে নাকি আমাকে?
জারিফ চৌধুরী তখন ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো, কামিনী এখন রাত কয় টা বাজে জানো?কুশান কেনো তোমাকে এতো রাতে ডাকতে যাবে?সে মনে হয় এখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
কামিনী সেই কথা শুনে উঠতে ধরলে জারিফ চৌধুরী বললো,তুমি শুয়ে থাকো।দেখছি আমি।এই বলে জারিফ চৌধুরী চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলেন।
জারিফ চৌধুরী দরজা খুলে দেখেন কেউ নাই।তবে তিনি কুশানের ঘরের সামনে আবছা আবছা কিছু দেখতে পেয়ে বললেন, কে রে ওখানে দাঁড়িয়ে ?
অন্ধকারে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না কুশানকে।তবে বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে কুশানের ঘরের দরজার সামনে।
কুশান কোনো উত্তর দিলো না।সে চুপচাপ সরে যেতে লাগলো।
এদিকে জারিফ চৌধুরী অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না দেখে লাইট অন করলেন।কিন্তু ভুলক্রমে তিনি বারান্দার লাইট জ্বালাইছেন।
কুশান জারিফ চৌধুরীকে সুইচ অন করা দেখে আবার সুমনের ঘরের দিকে দৌঁড় দিলো।কারণ তাকে এভাবে ঘরের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আর তোড়াকে ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখলে নতুন আরেক ঝামেলার সৃষ্টি হবে।
জারিফ চৌধুরী সুমনের ঘরের দিকে কাউকে যেতে দেখে চিল্লাতে চিল্লাতে তিনিও সুমনের ঘরে ঢুকে গেলেন।এদিকে কুশান সোজা সুমনের বেলকুনিতে চলে গেছে।
জারিফ চৌধুরীর চিল্লাচিল্লি শুনে কামিনী এক লাফে বেড থেকে নেমে এলেন।আর জোরে জোরে করে জারিফ কে ডাকতে লাগলেন।
জারিফ চৌধুরীর চিৎকার শুনে সুমনও চমকে উঠলো।
–বড় আব্বু?তুমি এ রুমে?
জারিফ চৌধুরী কোনো কথা না বলে শুধু এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলেন।কিন্তু কাউকেই খুঁজে পেলেন না তিনি।
সুমন তখন বললো কি হয়েছে বড় আব্বু?কাকে খুঁজছেন এভাবে?
–কেউ একজন ঢুকেছে তোর রুমে।
সুমন তখন বললো দূর কে ঢুকবে?
–না ঢুকেছে।
সুমন সেই কথা শুনে নিজেও খুঁজতে লাগলো।
এদিকে কামিনীও এসে গেছে সুমনের রুমে।আর জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে?কেনো চিৎকার করলে?
জারিফ চৌধুরী তখন বললো, একজন কে এই দিকে আসতে দেখলাম।
কামিনী তখন বললো, ও মোর আল্লাহ। কাকে দেখলে?নিশ্চয় শত্রু পক্ষের কেউ এসেছে।আমার কুশান ঠিক আছে তো?এই বলে কামিনী কুশানের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিতে লাগলো।
তোড়া ভাবলো কুশান বোধ হয় ধাক্কা দিচ্ছে সেজন্য সে খুললো না দরজা।
জারিফ চৌধুরী কামিনী কে এভাবে দরজা ধাক্কানো দেখে বললো, এই কি করছো?দেখতেই তো পারছো দরজা লাগানো।ওরা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।এই বলে জারিফ চৌধুরী কামিনী কে নিয়ে রুমে চলে গেলেন।
জারিফের চিৎকার শুনে সোনিয়াও জাগা পাইছে।সেও চোখ ডলতে ডলতে এগিয়ে এলো।যখন দেখলো তার ভাই এর রুমে আলো জ্বলছে তখন সোনিয়া সোজা সুমনের রুমে ঢুকলো।আর বললো,ভাইয়া কি হয়েছে?এতো হইচই কেনো?
সুমন কিছু বলার আগেই হঠাৎ সোনিয়ার চোখ গেলো টেবিলের উপরে।সে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স হাতে নিয়ে বললো,ভাইয়া? এগুলো কার? তুই এনেছিস?
সুমন সেই কথা শুনে বক্স গুলো হাতে নিয়ে বললো,তোর মনে হয় এখনো ঘুম কম্পিলিট হয় নি।সেজন্য ভুলভাল বকছিস?নিজে এনে এখন নিজেই বলছিস কে এনেছে এগুলো?
সোনিয়া সুমনের কথা শুনে চিন্তার সাগরে ডুবে গেলো।সে আবার কখন আনলো এসব জিনিস?সে তো মাত্র রুমে ঢুকলো।তাছাড়া আজ তো সে বাহিরেই যায় নি?
সোনিয়া মনে মনে ভাবতে লাগলো তার ভাই যখন বলছেই এগুলো তার তাহলে সে তো সাথে করেই নিয়ে যেতে পারে।এই ভেবে সোনিয়া চকলেট বক্স,আর আইসক্রিমের বক্স নিয়ে যেতে ধরলো।
–এই দাঁড়া দাঁড়া।তুই কখন আনলি এসব?তুই তো আজ কলেজেই যাস নি?রাখ।অন্য মানুষের জিনিস এভাবে নিয়ে যেতে লজ্জা লাগে না?
সোনিয়া সেই কথা শুনে রাগ করে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স রেখে বললো তুই তো বললি এগুলো নাকি আমি নিয়ে এসেছি।
–যা ভাগ এখান থেকে।জীবনে দশটা টাকা খরচ করিস না।আর তুই আনবি এসব জিনিস?
সোনিয়া তখন বললো, যেই আনুক এগুলো এখন আমার।এই বলেই সে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স টা নিয়ে দৌঁড় দিলো।আইস্ক্রিম আর চকলেট গুলো একদম গলে যাওয়ায় সোনিয়া সেগুলো ফ্রিজে রেখে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ জারিফ চৌধুরী আবার আসলেন সুমনের রুমে।কারণ তিনি যে নিজের চোখে দেখেছেন কাউকে ঢুকতে। জারিফ চৌধুরী আবার ভালো করে দেখতে লাগলেন চারপাশ। তিনি যখন বেলকুনির দিকে যেতে ধরলেন তখন হঠাৎ করে সুমন বললো, বড় আব্বু তুমি কি চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স এনেছিলে?
জারিফ চৌধুরী সুমনের কথা শুনে ঘুরে তাকালো।আর বললো,না তো?কিসের চকলেট বক্স?আর কিসের আইসক্রিম বক্স?
–টেবিলের উপর কে যেনো রেখে গেছে?
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তুই মনে হয় এনেছিস।আর কে আনতে যাবে?
ঘুমিয়ে পড় তো এখন।আর দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবি।তোর এই বদ অভ্যাস কবে যে ভালো হবে?এইভাবে দরজা খোলা রেখে কেউ ঘুমায় নাকি?এই বলে জারিফ চৌধুরী চলে গেলেন।
সুমন যেই শুতে যাবে হঠাৎ সে খেয়াল করলো কতগুলো চিপসের প্যাকেট ও।সোনিয়া চিপসগুলো দেখে নি তা না হলে এগুলোও নিয়ে যেতো।
চিপসের প্যাকেট দেখে সুমনের আর লোভ মানলো না।সে একটা প্যাকেট ছিড়ে খেতে লাগলো চিপস।আর ভাবতে লাগলো সত্যি কি সে নিজেই এসব এনেছে?কিন্তু কখন এসেছে?
সুমনের এবার ভয় হতে লাগলো।যদি সত্যি সত্যি কেউ এসে থাকে তার রুমে।আর সেই অচেনা ব্যক্তিই যদি তার জন্য নিয়ে আসে এসব?
কিন্তু সেই অচেনা লোক কেনো আনবে এসব জিনিস?
তাকে আবার কেউ মেরে ফেলানোর ফন্দি করছে না তো?
সুমনের মনে নানারকম প্রশ্ন জাগতে লাগলো।শেষমেশ সে চিপসের প্যাকেট টা রেখে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
তোড়া ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকলেও সে কিছুতেই ঘুমাতে পারছিলো না।নানা ধরনের চিন্তা ভাবনা আসতে লাগলো তার মনে।কুশান কত করে মিনতি করলো তবুও সে খুলে দিলা না দরজাটা।না জানি বেচারা এখনো দাঁড়িয়েই আছে দরজার সামনে।এইভাবে কুশানকে বাহিরে রেখে তার কি ঘুম আসবে?দেখি বলদ টা এখন কি করে?ওকে দেখেই আবার বন্ধ করে দিবো দরজা টা।এইভেবে তোড়া ঘরের দরজা খুলে দিলো।কিন্তু কুশান কে সে দেখলো না।
তোড়া ভাবলো হয়তো কুশান সুমনের রুমে আছে।একবার কি যাবো সেখানে?
এই ভেবে তোড়া সোজা সুমনের রুমে চলে গেলো।
এদিকে জারিফ চৌধুরী এখনো নোটিশ করছিলেন সুমনের রুম।কারণ তিনি সিওর ছিলেন কেউ না কেউ রুমে অবশ্যই ঢুকেছে।কারণ তিনি যে নিজের চোখে দেখেছেন।
তোড়াকে সুমনের রুমে যাওয়া দেখে জারিফ চৌধুরী বেশ অবাক হলেন।তখন তিনি নিজেও তোড়ার পিছু পিছু চলে গেলেন।
তোড়াকে দেখামাত্র সুমন তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো। আর বললো,ভাবি তুমি?এতো রাতে এ রুমে?
তোড়া চারপাশে তাকিয়ে দেখে কুশান নেই রুমে।তখন সে বললো, তোমার ভাই কই?
–ভাই?কোন ভাই?
তোমার কয় টা ভাই আছে?
–কুশান ভাই?
–হ্যাঁ।
–জানি না তো?
তোড়া তখন অবাক হয়ে বললো, কি বলছো এসব?কুশানকে দেখো নি তুমি?
–না তো?
তোড়া তখন বললো, কিন্তু কুশান তো তোমার রুমেই ছিলো?
–বলো কি?ভাইয়া আমার রুমে কেনো আসবে?
তোড়া তখন সুমনের ফোনটা দেখিয়ে বললো, কিছুক্ষণ আগে কুশান তো তোমার নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলো আমাকে।
সুমন তো কিছু বুঝতে পারছিলো না।কুশান কেনো তার নাম্বার থেকে তোড়াকে কল দিতে যাবে?এই জন্য সুমন চেক করতে লাগলো।
না তো?কই কল দিয়েছে কুশান?
এদিকে কুশান কথা বলা শেষ করেই ডিলিট করে দিয়েছে তোড়ার নাম্বার।
তোড়া তখন কুশান কুশান বলে ডাকতে লাগলো। কিন্তু বের হয়ে এলো না কুশান।তোড়া এবার ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।তাহলে কুশান গেলো কোথায়?
হঠাৎ বেলকুনির দরজার ছিটকিনি খুলে কুশান বের হয়ে আসলো।তবে সে কারো সাথে কোনো কথা বললো না।চুপচাপ সুমনের রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
সুমন একদম হা করে তাকিয়ে রইলো।সে এতোক্ষণে বুঝতে পারলো ব্যাপার টা।তাহলে জারিফ চৌধুরী ঠিকই দেখেছেন।আসলেই কেউ একজন ঢুকেছিলো তার রুমে।তাহলে এই হলো আসল কাহিনী।
জারিফ চৌধুরী নিজেও এখনো বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছেন?
সুমন তোড়াকে বললো, ভাবি তোমরা কি ঝগড়া করেছো?ভাইয়া এ রুমে কেনো এসেছে?
তোড়া বললো হুম।
–ভাইয়া তোমার সাথে ঝগড়াও করে?
তোড়া তখন বললো কাল কথা বলি?এই বলেই সে সুমনের রুম থেকে বের হলো।
হঠাৎ জারিফ চৌধুরী ডাক দিলো,মা তোড়া?
জারিফ চৌধুরীর কন্ঠ শুনে তোড়া একদম চমকে উঠলো।সে ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকালো।কারন এতো রাতে তাকে সুমনের রুমে দেখে জারিফ চৌধুরী বুঝি কি ভাবেন কে জানে?
জারিফ চৌধুরী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তোড়া নিজেই গড়গড় করে বললো,
আসলে আব্বু কুশান এতোক্ষণ সুমনের রুমে ছিলো।সেজন্য তাকে ডাকতে এসেছিলাম আমি।
জারিফ সাহেব নিজেও কুশানকে বের হতে দেখেছেন সুমনের রুম থেকে। সেজন্য তিনি সন্দেহ করলেন না তোড়াকে।তবে তিনি তোড়ার কথা শুনে বললেন,
–কুশান নিজের ইচ্ছাতে সুমনের রুমে ছিলো না। তুমি তাকে ঘরে উঠতে দেও নি দেখে সে সুমনের রুমে গিয়েছে।
–না মানে আব্বু।ও আসলে,
তোড়া বলতে ধরে আর বললো না।
জারিফ চৌধুরী তখন বললো, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হবে,মারামারি হবে,মান অভিমান হবে আবার ভালোবাসাবাসিও হবে।তাই বলে স্বামীকে তুমি ঘরে উঠতে দেবে না?এটা কি ধরণের অসভ্যতা তোড়া?কুশানের সাথে এই রকম আচরণ করতে করতে একদিন দেখবে সে নিজেও পালটে গিয়েছে।সেও তোমার সাথে এমন বাজে আচরণ করা শুরু করলো তখন কি হবে?
–না মানে?
–কিসের মানে?আজ যদি কামিনী দেখতো এটা?কি হতো বুঝতে পেরেছো?
তোড়া নিচ মুখ হয়ে থাকলো।সে কোনো উত্তর দিলো না।
জারিফ চৌধুরী তখন বললো, আর কখনোই এই রকম কাজ করবে না তোড়া।কুশান কতো টা ভয় পাইছে জানো তুমি?না জানি ভয়ে আজ ছেলেটার বোধ হয় জ্বর এসে যায়?
তোড়া এবারও কোনো কথা বললো না।
জারিফ চৌধুরী তখন তোড়ার মাথা বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে এ বাড়িতে থাকতে?কামিনী আর ইরা,মিরা,লিরা যেভাবে তোমাকে অপমান করে কথা বলে যেকোনো মেয়ের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।তবে কুশান কিন্তু তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।আমি আগেও বলেছি ও একটু সহজ সরল মানুষ। এতো পেচ সে বোঝে না।তাই বলি কি মা ওকে অযথা কষ্ট দিও না।তোমার রাগ কামিনীর উপর যা বলার ওকে বলো,তোমার রাগ ইরা,মিরা,লিরার উপর,প্রতিবাদ করার হলে ওদের সাথে করো।অযথা ওদের রাগ কুশানের উপর ঝাড়িও না।
তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে কাঁদতে লাগলো।তার আজ নিজেকে অনেক বেশি অসহায় লাগছিলো।সে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে যেখান থেকে সে নড়তেও পারছে না, সরতেও পারছে না আবার লেগে থাকতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
তোড়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে জারিফ চৌধুরী বললো, এভাবে কেঁদো না তোড়া।আজ তুমি যাদের জন্য কাঁদছো একদিন তারাই তোমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইবে।তবে সেদিন পেতে হলে তোমাকে অনেক বেশি স্ট্রং হতে হবে।তোমাকে সেজন্য ধৈর্য্য হারালে চলবে না।আমি আমার নিজের বউ আর মেয়েদের কে কখনোই সাপোর্ট করি না,কারণ তারা কখনোই আমার কথা শোনে নি।নিজেদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করেছে।তবে আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো মনে করি।সেজন্য যা যা বললো যদি সেই অনুযায়ী চলতে পারো তাহলে কখনোই তোমার খারাপ কিছু হবে না।প্রথম উপদেশ হবে,তুমি কখনোই কুশানের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।কুশান যদি কোনো জিনিস বুঝতে না চাই ওকে ভালো করে বোঝালেই সে বুঝবে।কুশানকে যাকে ভালোবাসে তাকে কিন্তু সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।আর যাকে একবার ঘৃণা করবে তার দিকে কিন্তু আর ফিরেও তাকাবে না।
কামিনী আর ইরা,মিরা, লিরাকে কেনো কুশান কিছু বলতে পারে না জানো?কেনো তাদের মুখে মুখে কিছু বলতে পারে না?
তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো।
একটাই কারণ তা হলো ওরা কখনোই কুশানের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।যতকিছু হয়ে যাক কামিনী কখনোই কুশান কে গালাগালি করে না।ইরা,মিরা,লিরা তার ভাই এর উপর কখনোই রাগারাগি করে না।তাহলে কুশান কি করে তাদের গালমন্দ করবে?কিন্তু আমি অনেকবার দেখেছি তুমি কুশানের সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করো।ওর উপর তৎক্ষনাৎ রেগে যাও।এরকম রাগ না দেখিয়ে ওকে একটু বুঝিয়ে বলবে তাহলেই ও বুঝতে পারবে?
তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, আব্বু ওরকম বোকা ছেলেকে আমি কি করে বুঝাবো?সে যে সহজ জিনিস টাও বুঝতে পারে না।তখন আম্মু আর আপুরা কত আজেবাজে কথা বললো আমি সেজন্য মন খারাপ করে কাঁদতেছিলাম।
আপনার ছেলে আমাকে কাঁদা দেখে বলে আমি নাকি চকলেট আর চিপসের জন্য কাঁদছি?বলেন তো কার মেজাজ ঠিক থাকবে তখন?
হঠাৎ পিছন দিক থেকে কুশান এসে বললো, এই কথা টা আমাকে বুঝিয়ে বললে কি প্রবলেম হতো তোমার?আমি তো আর জানি না তুমি কেনো কাঁদছো?আমি তো আর সব জান্তা শমসের না।যে তোমার মুখ দেখেই বুঝে যাবো কি হয়েছে তোমার?
তোড়া তখন কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো, তুমি বোঝো না মানলাম।কিন্তু বাচ্চাদের মতো উল্টোপাল্টা কথা কেনো বলো?আমি কোনদিন চিপস আর চকলেটের জন্য কেঁদেছিলাম?
–কাঁদোই তো?একদিন চিপস চকলেট না আনলে মুখ ফুলে বসে থাকো।ভেবেছো আমি বুঝি না।সেজন্য ভাবলাম আজও বুঝি সেজন্যই কাঁদছো?
–কুশান?এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে?আমি কোনদিন ফুলে থাকলাম চিপস আর চকলেটের জন্য?
–থাকোই তো।বাবার সামনে ভালো সাজছো এখন।
তোড়া তখন জারিফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, আব্বু আপনি যে বলছেন ধৈর্য্য ধরে থাকতে। আমি কি করে ধৈর্য্য ধরি?নিজের চোখেই দেখেন কিভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলছে?আমি কিন্তু কখনোই এসব কিছুর জন্য রাগ করে বসে থাকতাম না।
কুশান তখন বললো আব্বু তুমি কার কথা বিশ্বাস করবে?আমার না তোড়ার?
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তুই মিথ্যা বলছিস আর তোড়াই সত্য কথা বলছে।যা এখন রুমে চলে যা।
কুশান তখন বললো, আব্বু এটা তুমি বলতে পারলে?আমাকে মিথ্যাবাদী বানালে।আমি আর যাবোই না রুমে।
–না গেলে না যাবে।আব্বু ওকে জোর করবেন না।এই বলে তোড়া একা একা রুমে চলে গেলো।
জারিফ চৌধুরী তখন তোড়াকে ডাক দিয়ে বললো, তোড়া?একাই যাচ্ছো কেনো ওভাবে?কুশানকেও নিয়ে যাও।
তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে থেমে গেলো।আর বললে,আব্বু ও কি ছোটো বাচ্চা?যে ওকে নিয়ে যেতে হবে?ও কি পায়ে হেঁটে আসতে পারে না নিজে?
কুশান তখন জারিফ চৌধুরীকে বললো,না আব্বু।আমি আর যাবো না ওই ঘরে।কারণ ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।আমি আর কখনোই যাবো না ও ঘরে।আগে ওর বিচার করো তারপর দেখা যাবে।
–এতো রাতে বেশি ঝামেলা করিস না কুশান।কাল এর বিচার করে দেবো।এখন রুমে চলে যা।তোর আম্মু কিন্তু জেগেই আছে।এভাবে এখানে দেখলে কি হবে বুঝতেই তো পারছিস?তোকে তো কিছুই বলবে না শুধু শুধু তোড়াকে বকবে।
কুশান জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে বললো, আব্বু মনে যেনো থাকে।কাল অবশ্যই এর বিচার করবে।এই বলে কুশান ঘরে চলে গেলো।
চলবে,