আমি ফাইসা গেছি(২৭)

0
822

#আমি_ফাইসা_গেছি(২৭)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কুশান অনেকবার সরি বললো কামিনী কে। আর কুশান এটাও জানালো সে আর কখনোই কামিনীর মুখে মুখে এভাবে তর্ক করবে না।কামিনী যা বলবে বা যা করতে বলবে সেটাই শুনবে সে।

তবুও কামিনী দরজা খুলে দিলো না।

বাড়ির সবাই ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।না জানি কামিনী রাগ করে খারাপ কোনো ডিসিশন নিয়ে ফেলে।কুশান সেজন্য দরজা ভাঙার চেষ্টা করলো।কিন্তু কুশান দরজা ভাঙার আগেই কামিনী নিজেই দরজার ছিটকিনি খুলে বের হয়ে এলো।

কামিনী কে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো।কারণ তারা যা ভেবেছিলো সেরকম কিছুই ঘটে নি।কারন কামিনী এতোক্ষন ঘরের দরজা বন্ধ করে নতুন কাপড় পড়ছিলো।কামিনী কারো সাথে কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বের হতে ধরলো।

কুশান তা দেখে দৌঁড়ে কামিনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো আম্মু কই যাচ্ছো?প্লিজ যেও না কোথাও।
কামিনী কোনো কথা না বলে কুশানকে হাত দিয়ে সরে দিতে ধরলে কুশান তার মায়ের হাত ধরে বললো আম্মু সরি।আর কখনোই তোমার মুখের উপর এভাবে তর্ক করবো না।প্লিজ রাগ করে থেকো না আর।

কামিনী সেই কথা শুনে বললো ভাঙা গ্লাস আর কখনোই জোড়া লাগানো যায় না কুশান।যদি জোড় করে জোড়া লাগানো হয় তখন সেই ফাঁটা দাগ টা আজীবন রয়ে যায়।তুই আমার মনে যে আঘাত দিয়েছিস সেই ক্ষত আর কখনোই ভালো হবে না।তুই যে একটা বেয়াদব ছেলে হয়ে গেছিস তা আমার আর বুঝতে বাকি নেই।

কুশান এবার তার মায়ের পায়ে পড়লো আর বললো আম্মু এভাবে বলো না প্লিজ।প্লিজ এভাবে বলো না।আমি জেনেবুঝে তোমার মনে আঘাত দেই নি।ভুল হয়ে গেছে আমার।আমার মন মেজাজ ভালো ছিলো না।
কামিনী তখন বললো আমার পা ছেড়ে দে কুশান।তাছাড়া আমি তো বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি না।আর আমি কোন দুঃখে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো?প্রয়োজন হলে সবাইকে বের করে দেবো বাড়ি থেকে।কারণ এ বাড়ি টা বাবা আমার নামে লিখে দিয়েছে।আমার কিছু থাক বা না থাক এই বাড়ি টা আমার নামেই আছে।

কামিনীর এই কথার মানে কেউই বুঝতে পারলো না।কামিনী হঠাৎ কেনো এ কথা নতুন করে আবার বললো সবাইকে?তাছাড়া সবাই তো এটা আগে থেকেই জানে যে সবকিছু তার।

কুশান আবার গেলো কামিনীর কাছে আর জিজ্ঞেস করলো তাহলে তুমি এভাবে কোথায় যাচ্ছো?

কামিনী তখন বললো তোর বউকে আনতে যাচ্ছি।যে বউ বউ করে তুই আমাকে এতোগুলো কথা শুনালি তাকে এনে দিচ্ছি তোকে।তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি নিজে নিজে নেবো।আজ থেকে একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বুঝে গেলাম তা হলো পরের,,,, বলেই আটকে গেলো কামিনী।

কামিনী কথা বলতে যখন আটকে গেলো সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো পরের লাইন শোনার জন্য।কিন্তু কামিনী আর পরের লাইন বললো না।

কুশান তখন বললো আম্মু তোমাকে যেতে হবে না তোড়াকে আনতে।তাছাড়া সুমন আর সোনিয়া তো গেছেই, ওরা নিয়ে আসবে।

কামিনী তখন বললো,না,আমিই নিয়ে আসবো।আমি নিয়ে আসলেই যখন তুই শান্তি পাইতি তাহলে আমিই যাচ্ছি।জীবনে তো তোর কোন আশা অপূর্ণ রাখি নি।আর এই সামান্য কাজ টা করতে পারবো না?এই বলে কামিনী বাসা থেকে বের হলো।

লুতফা তখন পিছন থেকে ডাকতে লাগলো কামিনী কে।বুবু যেও না।সুমন আর সোনিয়া ইতোমধ্যে তোড়াকে নিয়ে রওনা দিয়েছে।

কামিনী লুতফার কথা শুনে থেমে গেলো আর পিছন ফিরে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো, কে আসতে বলেছে ওদের?

লুতফা তখন নিচ মুখ হয়ে বললো আমিই আসতে বলেছি।

কামিনী লুতফার কথা শোনামাত্র রাগান্বিত কন্ঠে বললো কেনো বলেছিস লুতফা?কার থেকে পারমিশন নিয়ে ওদের আসতে বলেছিস?না তোর ও সাহস বেড়ে গেছে?
এই বলে কামিনী কান্নার স্বরে কুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,যেখানে সবার সামনে নিজের ছেলেই অপমানিত করে, বেয়াদবের মতো উল্টাপাল্টা কথা বলে সেখানে তো এখন বাড়ির বিড়ালটাও নিজেকে বাঘ ভাবতে শুরু করবে।

লুতফা কামিনীর কথা শুনে বললো, বুবু! এভাবে বলছো কেনো?আমি আগেও যেমন ছিলাম আর এখনও তেমনি আছি।
তোড়ার বাপের বাড়ি থাকা নিয়েই তো ঝামেলা শুরু হইছে সেজন্য আমি সোনিয়া আর সুমনকে বলেছি আর এক মুহুর্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি রওনা দে।তোমাদের মা ছেলের ঝামেলায় সোনিয়া আর সুমনকে জড়াতে চাই না আমি।যাদের অন্ন খেয়ে বেঁচে আছি,যে পরিবার না থাকলে আমাদের অস্তিত্বই থাকতো না সেই পরিবারে আমি কোনো ঝামেলা চাই না।

লুতফা কামিনীর সাথে কথা বলতেই তোড়া কল দিলো কুশানকে।কিন্তু কুশান রিসিভ করলো না।সে কেটে দিলো কলটা।সেজন্য তোড়া আবার কল দিলো।কুশান এবারও কেটে দিলো কল।

কামিনী তখন বললো বার বার কল কেটে দিচ্ছিস কেনো?ধর কল টা।না আমাদের সামনে বউ এর সাথে কথা বললে তোর মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।না না তোর না,তোর বউ এর মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।ভি আই পি বউ বলে কথা।

কুশান কামিনীর কথা শুনে বললো আম্মু এরকম করতিছো কেনো?প্লিজ আম্মু!বললাম তো ভুল হয়ে গেছে আমার।আমি বা তোড়া কেউই তোমাকে অসম্মান করতে চাই না কখনো।যদি করেও থাকি সেটা ভুল বশত করে ফেলি।আমরা দুইজনই তোমাকে যথেষ্ট ভালোবাসি আর রেসপেক্ট করি।

কামিনী তা শুনে চিৎকার করে বললো,না,না।এটা কোনো ভুল না।ভুল তো মানুষের একবার হয়।কিন্তু তুই বিয়ে করার পর থেকেই শুধু ভুল করেই যাচ্ছিস।আচ্ছা কুশান আজ একটা সত্যি কথা বলবি?এই মেয়েটাকে কি তুই আগে থেকেই চিনতিস?না মানে একটা অচেনা মেয়ের জন্য তোর এতো মায়া দরদ কই থেকে আসে?

কুশান কামিনীর মুখে এই কথা শুনে আর তাকাতে পারলো না কামিনীর দিকে।এমনিতেই সে নানা অশান্তির মধ্যে আছে।আর এখন যদি কামিনী জানে তোড়া তার প্রেমিকা ছিলো তখন তো আরেক নতুন অশান্তি শুরু হয়ে যাবে।

–কি রে চুপ করে আছিস কেনো?না মানে আমার কেনো জানি ডাউট হচ্ছে।একজন অপরিচিত অচেনা মেয়ের সাথে তো তোর বিয়ে দিয়েছি আমরা।তাহলে দুই দিনেই তার প্রতি তুই এতো বেশি আসক্ত হয়ে গেছিস কেনো?সেই মেয়ে ছাড়া কিছুই বুঝছিস না।তার হয়ে আমার সাথে ঝগড়া করছিস?

কুশান তার মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।কামিনী হঠাৎ কুশানের হাত টা তার মাথায় দিয়ে বললো, এবার বল।আসলেই কি তোড়া কোনো অচেনা মেয়ে?না সে তোর আগে থেকেই চেনাজানা?

কামিনীর প্রশ্ন শুনে কুশানের হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো।তার গলা একদম শুকিয়ে গেলো,আর চোখ মুখ ভয়ে ছোটো হয়ে গেলো।এই অবস্থায় সে কি করে এই প্রশ্নের উত্তর দিবে?

কুশানের কাঁপা-কাঁপি দেখে কামিনীর সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো।কামিনী তখন তার হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,তাহলে আমার ধারণাই ঠিক।তোড়া তোর পূর্ব পরিচিত?সত্যি করে বল তোড়া তাহলে তোর কে হয়?তুই আবার আমার ভয়ে লুকিয়ে প্রেম টেম করিস নি তো?

কুশান কামিনীর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।

কামিনী কুশানকে এভাবে চলে যাওয়া দেখে তার মেয়েদের বললো,কি রে?কুশান আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে এভাবে চলে গেলো কেনো?সে কিছু বললো না কেনো?

ইরা তখন কামিনী কে ধরে বললো আম্মু প্লিজ এবার একটু শান্ত হও।এই বেটা বেটা করে তুমি সবসময় একটু বাড়াবাড়ি করো।তুমি নিজে ওকে মাথায় তুলেছো।সেজন্যই তো আজ বাদরের মতো মাথায় চড়ে নাচছে।

মিরাও তার মায়ের কাছে চলে এলো।আর বললো আম্মু প্লিজ তুমি চুপ করো এবার।আর ভালো লাগছে না এসব।ওকে না হয় তুমি আলাদা করে দাও।ও যখন ওর বউ ছাড়া কিছু বুঝছে না তাহলে ওর আমাদের সাথে থাকার কি প্রয়োজন?

লিরাও সেম কথা বললো, হ্যাঁ আম্মু তাই করো।তা না হলে এ সংসারে নিত্যনতুন ঝগড়া শুরু হবে।আমরা অশান্তি চাই না,শান্তি ভাবে থাকতে চাই।

কামিনী তার মেয়েদের কথা শুনে কোনো উত্তর দিলো না।কারণ কামিনী যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক আগেই নিয়ে ফেলছে।

এদিকে তোড়া কুশানকে একের পর এক কল দিতেই আছে।তোড়া যখন দেখলো কুশান তার কল ধরছে না তখন তোড়া সোনিয়ার ফোন থেকে কল দিলো কুশানকে।
আসলে তোড়া ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছে।এভাবে হঠাৎ করে লুতফা তাদের আসতে বললো কেনো?কারো আবার কোনো বিপদ হলো না তো?

কুশান এবার রিসিভ করলো কল।কুশান বললো,হ্যাঁ সোনিয়া বল।
তোড়া তখন বললো আমি করেছি কলটা।তুমি আমার কল কেনো ধরছো না কুশান?আর সোনিয়ার কল টা তো সাথে সাথেই ধরলে।কি হয়েছে তোমার?
আমি তো চিন্তায় একদম শেষ হয়ে গেলাম।

কুশান তোড়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর তো দিলোই না,সে উলটো তার ফোনের সুইচ অফ করে রাখলো।
🖤
সুমন,সোনিয়া আর তোড়া একসাথে বাসায় ফিরলো।সুমন আর সোনিয়া বাসায় ঢোকামাত্র লুতফার রুমে চলে গেলো।আর তোড়া সোজা নিজের রুমে।কারণ তারা কেউই জানে না কেনো তাদের এভাবে আজকেই আসতে বলা হলো।
লুতফা তার ছেলে মেয়েদের সব টা বললেও কুশান তোড়াকে কিছুই বললো না।তোড়া বার বার জিজ্ঞেস করলো কুশানকে।কিন্তু কুশান উলটো রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়া কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো।কিন্তু তার আগেই কুশান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।তোড়া তখন লুতফার কাছে চলে গেলো।কিন্তু লুতফা তোড়াকে দেখে অন্য মুখ হয়ে থাকলো।তোড়া লুতফার ভাবসাব দেখে বুঝে ফেললো নিশ্চয় বড় কিছু হয়েছে।তা না হলে লুতফা তার থেকে মুখ ফিরে কেনো নিলো?কারণ লুতফার সাথে তো তোড়ার এখন সম্পর্ক টা অনেক ভালো হয়েছে।তোড়া তখন বললো,
চাচী কি হয়েছে বাড়িতে?প্লিজ বলুন চাচী।

লুতফা তখন রাগ দেখিয়ে বললো সব তোমার জন্য হয়েছে।তুমি এ বাড়িতে আসার পর থেকে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে।আগে কত শান্তি ছিলো এই সংসারে।তোমাকে যে কেনো সবাই এ বাড়ির বউ করে এনেছিলো?

তোড়া লুতফার কথা শুনে বললো আমি আবার কি করলাম চাচী?আমি তো মাত্র ফিরলাম বাসায়।

লুতফা তখন বললো তুমি কিছু না বললেও তোমার হয়ে কুশান আজকাল তার আম্মু আর বোনদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে।তুমি যে অনেক চালাক মেয়ে তা আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছি।নিজের মুখে কিছু না বললেও স্বামীকে ঠিক শিখিয়ে শিখিয়ে দাও।
–কি বলছেন কি চাচী?আমি কুশানকে আবার কি শিখালাম?
–তাহলে কুশান হঠাৎ করে এমন বদলে কেনো?ও এখন আর কাউকে মানছে না।সবার মুখে মুখে তর্ক করে।আগে কত সম্মান করতো সবাইকে।

হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো লুতফার রুমে।লুতফা তোড়াকে এভাবে বকাবকি করায় কামিনী বললো,লুতফা?তোর এতো বড় সাহস?কুশানের বউকে তুই বকছিস?তুই জানিস না কেউ তোড়াকে বকলে কুশান তাকে উলটো বকে দেয়।সেজন্য কুশানের বউকে আজ থেকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি।জানিসই তো কুশানের এটা ভি,আই,পি বউ হয়।

তোড়া কামিনীর কথা শুনে এগিয়ে গিয়ে বললো, আম্মু কি হয়েছে?এভাবে বলছেন কেনো?চাচীও বকছে।আবার আপনিও কেমন রেগে আছেন?

–হয় নি কিছু।তোমাকে যে সংসারের চাবি টা দিয়েছিলাম সেটা ফেরত দাও আমাকে।

তোড়া কামিনীর কথা শোনামাত্র চাবির ঝোপাটা ঘর থেকে এনে দিলো।সে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করলো না কেনো কামিনী চাবিগুলো এভাবে ফেরত নিলো।
এবার কামিনী লুতফার দিকে তাকিয়ে বললো,তুই কি আমার সাথে থাকবি লুতফা?না তুই ও আলাদা থাকতে চাস?

লুতফা অবাক হয়ে বললো, মানে?এসব কি বলছো বুবু?

–যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে।

লুতফা তখন বললো না আমি কোথাও যাবো না।মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তোমার সাথেই থাকবো।

এদিকে কামিনীর এমন পাগলামির কথা শুনে জারিফ চৌধুরী বাসায় আসলেন।।তার মেয়েরা কল দিয়ে সব বলেছে জারিফ সাহেব কে।জারিফ চৌধুরী এসেই বললো হয়েছে কি কামিনী?তুমি নাকি ইরা,মিরা লিরাকে বাসা থেকে চলে যেতে বলেছো।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে চিৎকার করে বললো হ্যাঁ বলেছি।ওরা এ বাড়িতে কি জন্য থাকবে আর?যার যার স্বামীর বাড়ি সে এখন সেখানেই থাকবে।আমি আমাদের পরিবারের সমস্ত নিয়ম কানুন ভেঙে দিতে চাই আজ।কাউকে আমি আর আমার বাড়িতে রাখবো না।

জারিফ চৌধুরী এবার কামিনী কে টেনে তার রুমে নিয়ে গেলো। আর বললো কামিনী প্লিজ শান্ত হও।এরকম করো না।মেয়েগুলো যে ঐশ্বর্যের মধ্যে বড় হয়েছে ওদের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তারা কিভাবে থাকবে?

–জানি না আমি।যার যেভাবে মন চায় সে সেভাবেই থাকবে।আমি আর কারো জন্য ভাববো না।অনেক ভেবে ফেলেছি সবার জন্য।

ইরা,মিরা, লিরা এবার কাঁদতে কাঁদতে কামিনীর রুমে চলে এলো।আর বললো আম্মু এরকম করো না আমাদের সাথে।আমরা তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।

কামিনী তখন বললো আমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন আর সেটা নড়চড় হবে না।আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল।

ইরা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো কুশানের উপর রাগ করে তুমি কেনো আমাদের বাড়ি ছাড়া করছো?যা রাগ দেখানোর ওর উপরই দেখাও না।

–হ্যাঁ দেখাবো।সময় হলে ওর উপরও দেখাবো।তার আগে তোদের ঝামেলা আগে মিটমাট করি।এই বলে কামিনী তিন বোনের হাতে তিনটা দলিল দিয়ে বললো,তোদের নানু হজ্জ্বে যাওয়ার আগে সমস্ত সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছে।তিনি আমাকে শুধু এই বাড়িটা আর কিছু জমিজমা লেখে দিয়েছে। আর তোদের তিন বোন এর নামেও কিছু জমিজমা লেখে দিয়েছে।

কামিনীর কথা শুনে তিন বোন অবাক হয়ে বললো, কি বলছো কি এসব?তাহলে বাকি সম্পদ?সেগুলো তাহলে কার নামে আছে?

কামিনী এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।তিন বোন তখন জারিফ চৌধুরীকে গিয়ে বললো,আব্বু? আম্মু এসব ভুলভাল কি বলছে?বাকি সম্পদ নানু তাহলে কাকে দিয়েছে?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো কুশানকে।তোর নানুর ব্যবসা বাণিজ্য, শহরের বাড়ি দুইটা, আর বাকি সব জমিজমা সব কুশান কে দিয়েছেন।

ইরা তখন বললো নানু আমাদের সাথে এরকম অন্যায় কেনো করলেন আব্বু?আমাদের কে কি নানু তাহলে ভালোবাসেন না?শুধুই কুশানকে ভালোবাসেন?

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো কুশান তোদের বংশের মধ্যে একমাত্র ছেলে হওয়ায় বংশ রক্ষার জন্য এই কাজ করেছেন তিনি।তাছাড়া তোদের নানু আগেই এটা ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই বোনের মধ্যে যার ছেলে হবে তাকেই তিনি সবকিছু লিখে দেবেন।তোদের তোদের যামিনী খালার তো কোনো ছেলে হয় নি,অন্যদিকে তোদের তিন বোনের পর কুশানের জন্ম হওয়ায় উনি অনেক খুশি হয়েছেন।

ইরা,মিরা,লিরা জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।তাদের এখন কি হবে?যে তোড়াকে তারা অপছন্দ করতো,নানা ধরনের কটুকথা শোনাতো তার পা ধরেই থাকতে হবে এখন?সবকিছু যেহেতু কুশানের তাহলে তো তোড়াই এখন মালিক।

তিনবোন তখন কামিনীর হাত ধরে বললো,আম্মু প্লিজ জিদ করো না।রাগের মাথায় এভাবে সবার সম্পদ সবাইকে বুঝে দিও না।আর কুশানকে এখনই জানানোর কোনো প্রয়োজন নাই।প্লিজ আম্মু শান্ত হও।এভাবে আগেই কুশানের হাতে সবকিছু তুলে দিয়ে তোড়ার পাওয়ার বাড়াও না।

কামিনী তখন বললো, না।আমি আর কারো সম্পদের লোভ করতে চাই না।এই সম্পদের লোভে আমি অনেক পাপ করে ফেলছি।এই সম্পদ আর আমার চাই না।এই বলে কামিনী কাঁদতে লাগলো।

মিরা তখন বললো আম্মু কি বলছো এসব?কিসের পাপ করছো?

জারিফ চৌধুরী নিজেও বুঝতে পারছে না কামিনী কোন পাপের কথা বলছে?

কামিনী তখন চিৎকার করে বললো প্লিজ তোরা এখন যা তো।আমার ভালো লাগছে না কিছু।যে ছেলেকে এতো আদর করে বড় করলাম সেই আজ আমাকে এতো কথা শুনালো।আমি চাই না এই ছেলে আর চাই না ওর সম্পদ ভোগ করতে।ওকে আমি আজকেই আমার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবো।ওর বউ নিয়েই থাক ও।

জারিফ চৌধুরী তখন মেয়েদের ইশারা করে ঘর থেকে বের হতে বললেন।ইরা মিরা লিরা সেই কথা শুনে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

বাহিরে আসার পর জারিফ চৌধুরী বললেন তোর মায়ের মাথা এখন গরম আছে ওর সাথে সেজন্য বেশি কথা বলা যাবে না।মেজাজ ঠান্ডা হলে এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে।যা তোরা নিজেদের রুমে যা।কামিনী এতো সহজে কুশানকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবে না।

ইরা,মিরা,লিরা সেজন্য নিজেদের রুমের দিকে চলে যেতে ধরলো।তখন জারিফ চৌধুরী বললো,
এখন বুঝেছিস কি, ক্ষমতা চিরদিন কারো হাতে থাকে না।যে তোড়াকে দেখতে পারিস না সেই কিন্তু এখন মালিক।ক্ষমতা কিন্তু এখন ওর হাতে।পারলে ওর সাথে এখন থেকে ভালো ব্যবহার করিস।বুঝতেই তো পারছিস সবকিছু কুশানের।আর কুশানের সবকিছু মানে তোড়ারও সবকিছু।

তিন বোন তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, নানু আমাদের এতো বড় ক্ষতি কেনো করেছে আব্বু?আমাদের কেনো সবকিছু থেকে বঞ্চিত করলো এভাবে?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো ক্ষতি করে নি বরং ভালো করেছেন।কারণ উনি হলেন জ্ঞানী আর বিচক্ষণ মানুষ। তোদের তিন বোনের ব্যবহার সম্পর্কে উনি ভালো করেই জানেন।আর কামিনীর ব্যবহার তো জানাই আছে।সমস্ত সম্পত্তি তোদের হাতে গেলে তোরা যে কেমন অহংকারী হয়ে উঠবি অন্য মানুষ কে মানুষ মনে করবি না তা উনি আগে থেকেই অনুধাবন করেছিলেন।এজন্য এ কাজ টা করেছেন।আমি তো অনেকবার বলেছি প্লিজ শুধরে যা।তবুও তোরা শুনিস নি আমার কথা।এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও।

লিরা তখন বললো আব্বু তুমি কি এখন আমাদের তোড়ার পা ধরে বসে থাকতে বলছো?যদি এরকম কিছু ভেবো থাকো তাহলে তোমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।আমরা আমাদের স্বামীর বাড়িতেই চলে যাবো।ওখানে গিয়ে সংসার করবো।তবুও তোড়ার পা ধরে বসে থাকতে রাজি নই।কি বলিস?
এই বলে লিরা ইরা আর মিরার দিকে তাকালো।

–হ্যাঁ তাই করবো।চল সবাই।কেউ যখন চায় না আমরা এ বাড়িতে থাকি তাহলে সেটাই হবে।এই বলে তিন বোন বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here