আমি আমার পর্ব ১

0
1049

“এক্সের বিয়েতে এতো সেজেগুজে যাচ্ছো মনে হচ্ছে তোমার ই বিয়ে।” হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে অয়ন কথাটা বললো।

রিদিতা আয়নার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে টিপ পড়ছিলো। অয়নের কথা শুনেও না শুনার ভান করলো।

অয়ন আবারো বললো,” হয়েছে আর সাজতে হবে না। এই কাজল একটু পর লেপ্টে যাবে। ”

এবার প্রচন্ড রাগ হলো রিদিতার। আয়না থেকে চোখ সরিয়ে অয়নের দিকে তাকালো রিদিতা।
“তোমার মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশি বলে ফেলছো অয়ন।”

অয়ন বুঝতে পারলো এভাবে বলা উচিত হয়নি। অয়ন রিদিতার কাছে যেয়ে তাকে কপালে একটা একটা চুমো খেলো। রিদিতার দু গাল তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,” সরি না বাবা। ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি তো মজা করছিলাম। ”

রিদিতা অয়নের হাত ছাড়িয়ে শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে বললো,” দেখো, সুপ্ত আমার এক্স হলেও আরো একটা পরিচয় আছে ওর। ও আমাদের আত্নীয়। এটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।”

অয়ন রিদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। কেনোনা অয়ন খুব ভালো করেই জানে রিদিতার মনের কোথাও না কোথাও এখনো
সুপ্ত আছে। প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। আর সব থেকে বড় আঘাত টাও তো সুপ্তই দিয়েছে। ”

রিদিতার ফোনটা বেজে উঠলো। রিদিতা নিজেকে ছাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে,

” কি রেবের হয়েছিস? আমরা বের হয়ে গিয়েছি। শুন তোদেরকে পিক করে নিয়ে যাবো। ”

রিদিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,” জি ভাবি।”

★★★

গাড়িতে বসে আছে রিদিতা। মাথায় ঘুরছে সেই পুরোদিনের কথা৷ অয়নের সাথে তার বিয়ের এক বছর পার হলো সেদিন। কিন্তু আজ ও তার অতীত তাকে তাড়া করে বেড়ায়। কি দোষ ছিলো তার! মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে করলো। এই অন্ধকারেও অয়ন যেনো তা দিব্যি দেখতে পেলো।

দেখতে দেখতে তারা পৌছে গেলো। গাড়ি থেকে নামতেই রিদিতাএ পুরো শরীর যেনো ঝাকি দিয়ে উঠলো। কেমন যেনো সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে সে নিজেকে সামলেছিলো। অয়ন তার জীবনে না এলে হয়তো সে এই নড়ক যন্ত্রনা থেকে কোনো দিন ও বের হতে পারতোনা।

গেইট দিয়ে ঢুকতেই রিদিতার চোখ গেলো সোজা স্টেইজের দিকে। ফুটফুটে একটা রক্ত লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে একটা মেয়ে। দেখতে ভাড়ি সুন্দর। তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর। মেয়েটাকে দেখেই রিদিতার মন ভালো হয়ে গেলো।

অয়ন শক্ত করে রিদিতার হাতটা ধরলো। রিদিতা অয়নের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। এই হাসির পিছে থাকা লুকোনো কষ্ট কেউ না বুঝলেও অয়ন ঠিকই বুঝতে পারলো।

রিদিতা সবার সাথেই কুষল বিনিময় করলো। রিদিতা আর অয়ন স্টেইজে উঠলো ছবি তোলার জন্য। রিদিতা প্রথমে যেতে চায়নি। কিন্তু ভাবির জোড়াজুড়ি তে তাকে যেতে হলো।
মাঝে বউ দুপাশে রিদিতা আর অয়ন দাড়ালো। হঠাৎ ই রিদিতা তার পাশে কাউকে অনুভব করলো। আজ ও সুপ্তের উপস্থিতি বুঝতে রিদিতার একটু ও কষ্ট হলোনা। রিদিরা পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো সুপ্ত দাঁড়ানো।

সাদা শেরোয়ানি পরে মাথায় সাদা পাগরি পড়ে দাড়িয়ে আছে। ঠিক এভাবে তো রিদিতা তাকে দেখতে চেয়েছিলো।

অয়ন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিজেই সুপ্তকে হাগ করলো।
” কি ব্যাপার তুমি এমন সাদা পড়েছো যে। তোমাদের কে দেখে তো পহেলাবৈশাখ মনে হচ্ছে”। বলেই হেসে দিলো।

অয়নের কথা শুনে সবাই হাসলো। সুপ্তর হবু বউ মিতু বললো,” তাই না বলেন ভাইয়া।আমিও বলেছিলাম এমন সাদা না পড়তে। কিন্তু আপনারা তো জানেন ই সুপ্তের জেদ। ও যা বলবে সেটাই। ”

তারা বেশ কিছু ছবি তুলে নেমে গেলো স্টেইজ থেকে। সবাই যার যার মতো ব্যাস্ত। অয়ন ও একটু বেড়িয়েছে। কি যেনো কাজ পড়ে গিয়েছে। রিদিতা সেন্টারের কোনায় ছোট একটা বেলকনি আছে সেখানে দাড়িয়ে আছে। ভিতরে তার দম বন্ধ লাগছিলো।

মনে পড়ে গেলো তার অতীতের সেই ভয়ানক কথাগুলো।

” তুই চিনস আমাকে?তোরে একবার বলছি না আমার তোরে ভালল্লাগে না। তোর বাপ মা কি তোরে পয়দা করছে আমার সাথে গেজানোর জন্য? এই তুই এতো বড় ছেচড়া কেন রে? তোর মধ্যে কি কোনো লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই! তুই কি…

নাহ আর ভাবতে পারছে না রিদিতা। আজও কথা গুলো তার কানে বাজে৷ সে অনুভব করলো পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে না ফিরেই রিদিতা বললো,

” এখানে এসেছো কেনো? কেউ দেখলে কি ভাববে?”

সুপ্ত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কোন মুখে সে কথা বলবে রিদিতার সাথে।
কোনো সারা শব্দ না পেয়ে রিদিতা পেছন ফিরে তাকালো।
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সুপ্তর চোখে পানি টলটল করছে। কিন্তু এই পানি রিদিতার কাছে নেহাৎ ই নেকামো মনে হলো।কেনোনা সুপ্ত রিদিতাকে যে কষ্ট টা দিয়েছে ঐ কষ্টের সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয়না।

রিদিতা খুব ঠান্ডা গলায় বললো,” কিছু প্রশ্ন করবো? উত্তর দিবে? ”

রিদিতার ওই কন্ঠ সুপ্তের বেশ ভয় লাগে। কেনোনা আজ থেকে দেড় বছর আগে ঠিক এভাবেই রিদিতা সুপ্তের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করেছিলো। সুপ্তের হাজার রিকোয়েস্টেও রিদিতা একবার ও পিছে ফিরে তাকায় নি।

“যেদিন তোমার সাথে সবটা শেষ করেছিলাম ঐদিন অনেক কিছু বলার ছিলো। কিন্তু বলতে পারিনি। আচ্ছা আমাকে বলবে কি দোষ ছিলো আমার? কেনো এতোটা কষ্ট দিয়েছিলে? তোমার জন্য কি করিনি আমি? আমার ভালোবাসার এই দাম কেনো দিলে আমায়? জানো তো মানুষ বাসার পোশা প্রানীর জন্য মায়া হয়। কিন্তু তোমার আমার জন্য হয়নি। দিনদিন অবহেলার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলে আমায়। কেনো করেছিলে? আমি তো তোমার কাছে যাইনি। তুমি এসেছিলে। আমাকে কতভাবে কনভিন্স করেছিলে। যখন আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তখন কেনো করলে এমন। আমি কতটা বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম তোমার এতো অপমান অসম্মানের পরও তোমার কাছে ফিরতে চাইতাম। তুমি তো আমার বাবা মা কেও ছাড়োনি সুপ্ত। তাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছো। কত পাগল ছিলাম আমি তাও তোমাকেই চাইতাম। আচ্ছা তুমি কেনো করেছিলে আমার সাথে এমন? তোমার জন্য এখন আমার অয়নকে ভালোবাসতে ভয় লাগে। ছেলেটা আমার গায়ে একটা ফুলের টোকা পড়লেও বেহুস হয়ে যায়। আর তুমি আমার গায়ে হাত তুলতেও ছাড়ো নি। ”

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললো রিদিতা। বলতেই রিদিতার চোখ গেলো পেছনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে। এবং রিদিতার কি যেনো হলো সে যেয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো গালে।

চলবে……..

#আমি_আমার
পর্ব-১
#Tani_Tass_Ritt.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here