আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব ১২

0
226

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১২
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ শোনো আজ দুপুরে বাসায় গেস্ট আসবে,ভালোমন্দ রান্না করো।

রিয়া রিমিকে জামা পড়িয়ে দিচ্ছিল। রায়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কে আসবে বাসায়?

রায়ান বিছানায় বসতে বসতে বলে-
-“ ঐ তো সাভারে যে জমির জন্য ফ্যাক্টরির কাজ বন্ধ ছিলো ঐ জমির মালিক।
-“ ওহ্ আজ তো ফুপিদের ও আসার কথা। ফুপা এসেছে সে জন্য চাচা ওদের ও ইনভাইট করেছে।

রায়ান অবাক হয়ে বলে-
-“ ফুপা এসেছে সিলেট থেকে?
-“ হ্যাঁ কাল এসেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা রিমি কে দিয়ে যাও দুপুর হতো হলো বলে তাড়াতাড়ি চাচি কে নিয়ে রান্না বান্না সেরে ফেলো।

রিয়া হু জানিয়ে রিমি কে রায়ানের কোলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বসার রুমে এসে চয়নিকা বেগম কে দেখে বলে-
-“ চাচি কি কি রান্না করতে হবে বলে দিন, রান্না বসিয়ে দেই বেলা হচ্ছে তো।

চয়নিকা বেগম চিত্রার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিল। রিয়ার কথা শুনে বলে-
-“ তুমি রান্না ঘরে যাও আমি সব কেটে ধুয়ে রেখেছি,তুমি গরুর মাংস টা বসিয়ে দাও আমি আসছি।

রিয়া চয়নিকা বেগমের কথা শুনে রান্না ঘরে চলে যায়। চুলার সাইডে এক এক করে সব কেটে ধুয়ে রাখা আছে। রিয়া চুলাতে কড়াই বসিয়ে গরুর মাংস টা বসিয়ে দেয়।

চয়নিকা বেগম চিত্রার চুল গুলো হাত খোঁপা করে বলে-
-“ যাও এখন গোসল টা করে ফেলো। একটু পর তোমার ফুপা,ফুপি চলে আসবে।

চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ফোন টা সোফা থেকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে এসে আলমারি খুলে ব্লাক কালারের একটা থ্রিপিস নিয়ে গোসল খানায় চলে যায়। গোসল করে টাওয়াল দিয়ে চুল ভালো করে মুছে হাত পায়ে ময়েশ্চারাইজার দেয়।

বিছানায় শুয়ে ফোন টা নিয়ে স্ক্রোল করতে থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই সেদিকে তাকায় চিত্রা। রায়ান এসেছে রিমি কে কোলে নিয়ে। চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসে। রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কিছু বলবে?

রায়ান দরজার বাহিরে থেকেই বলে-
-“ হ্যাঁ আসলে একটু রিমি কে নিতে পারবা? আমার একটু বাহিরে যেতে হবে।

চিত্রা বিছানা থেকে নেমে রায়ানের কোল থেকে রিমি কে নেয়। রায়ান এক সেকেন্ড ও দেড়ি না করে চলে যায়। চিত্রা রিমি কে খাটে বসায়। নিজে ফ্লোরে বসে দু হাত গালে দিয়ে বলে-
-“ রিমি বুড়ি এতো কিউট কেনো তুমি?

রিমি চিত্রার কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। চিত্রা রিমির গালে চুমু দিয়ে বলে-
-“ পাক্কা বুড়ি একটা,একটু নিজেক নিয়ে প্রশংসা করলে হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।

রিমিকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো চিত্রা। বেলকনি থেকে বাড়ির সামনে টার সব দেখা যায়। রিমি কে কোলে রেখেই কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো দুজন। ছবি গুলোর মধ্যে থাকা দুটো সুন্দর ছবি ফেসবুকের ডে তে দিলো।

তুষার রুমে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিল। হঠাৎ ফেসবুক রিফ্রেশ করে উপরে আসতেই চিত্রার ফেসবুক স্টোরির দিকে চোখ গেলো। স্টোরির ভেতর ঢুকলো,চিত্রা আর রিমির ছবি। তুষারের হাসি পেলো পিক দেখে। চিত্রা রিমির দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে,আর একটায় গাল চেপে চুমু দিয়েছে। তুষার নিজের এক্সপ্রেশন প্রকাশ করলো চিত্রার স্টোরিতে তিনটে হাহা রিয়াক্ট দিয়ে।

সচারাচর প্রত্যেক মেয়েই ফেসবুক স্টোরিতে কোনো কিছু পোস্ট করলে মিনিটে মিনিটে চেক করে, কয়জন দেখেছে আর কে কি রিয়াক্ট দিয়েছে। চিত্রাও একটু পর স্টোরি করতে গিয়ে দেখে লাভ,কেয়ার,হাহা এই তিনটে রিয়াক্ট ছবির উপর ভাসছে। ভিউসের মধ্যে ক্লিক করে দেখে সর্ব প্রথম তুষারের আইডির নাম জ্বল জ্বল করছে আর পাশে নামের পাশে তিনটে হাহা রিয়াক্ট। হাহা দেওয়ার মানে বুঝলো না চিত্রা। বাজে লেগেছে নাকি চিত্রাকে? চিত্রা ভেবে নিলো হয়তো বাজেই লাগছে তাই স্টোরি ট ডিলেট করে দিলো।
ফোনটা চার্জে লাগিয়ে নিচে চলে আসলো রিমি কে নিয়ে।

তৃষ্ণা আজ পার্পল কালারের কুর্তি পড়েছে। মুখে হালকা মেক-আপ, চুল গুলো খোলা। কিউটনেস টা খানিক বেড়ে গেছে। আয়নায় তাকিয়ে একবার দেখে নিলো সাজে কোনো ত্রুটি আছে নাকি। না নেই। ওড়না টা গলায় ঝুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ষোড়শীর মেয়েরা যখন কাউকে ভালোবাসে তখন প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে খুব এক্সপেন্সিভ, আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। যাতে ওপর পাশে থাকা মানুষটার এটেনশন কেবল তার দিকেই থাকে। তৃষ্ণার ও নিজেকে পদে পদে তেমন আকর্ষণীয় করে তুলছে।
তানিয়া বেগম আর তার স্বামী তামিম খান বসে আছে। তৃষ্ণা গিয়ে তাদের মাঝখানে বসে পড়ে। তামিম খানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ দেখো তো আব্বু কেমন লাগছে তোমার আনা ড্রস টায়?
তামিম খান মেয়ের দিকে তাকালো। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল-
-“ মাশা-আল্লাহ আমার প্রিন্সেস টাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

তৃষ্ণা হাসলো ফের মায়ের দিকে ঘুরে বলল-
-” মা বলো তো আমাকে কেমন লাগছে।

তানিয়া বেগম সিঁড়ির দিকে তাকালো দেখলো তুষার নামছে। পড়নে ব্লাক শার্ট। এই ছেলে এতো ব্লাক পড়তে পারে, মানে সাদা, ব্লাক ছাড়া আর কোনো কালার মনে হয় আছে সেটা তার ডিকশিনারিরতে নাই। মেয়েকে রাগানোর জন্য তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ মাশা-আল্লাহ আমার বাপ জানকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

তৃষ্ণার মুখ চুপসে গেলো। বিরস মুখে বলল-
-“ জানি ভাই অসম্ভব সুন্দর, আমি তো ভাইয়ের প্রশংসা করতে বলি নাই। আমার টা করতে বলছি।

তানিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকালো।
-“ ওহ্ তুই আমায় বলছিলি তোর প্রশংসা করতে? আমি ভাবছি তোর আব্বুকে বলছি। না খারাপ লাগছে না দেখতে তোকে। মোটামুটি ভালোই লাগছে।

তৃষ্ণা বাবার পানে চাইলো। তামিম খান মেয়েকে চোখের ইশারায় বলল- মোটামুটি না অনেক সুন্দর লাগছে।

তুষার এসে মা বাবা বোনের সামনে দাঁড়াতেই তানিয়া বেগম বলে উঠল-
-“ তোর কি ব্লাক কালারের শার্ট ছাড়া আর কোনো শার্ট নেই?
তুষার শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে-
-“ থাকবে না কেনো আছে তো হোয়াইট কালারের।
-“ সেটা আমিও জানি। সাদা, কালো ছাড়া কি আর নেই?
-“ উফ তুমি আবার আমার শার্ট নিয়ে পড়লে কেনো।দেরি হচ্ছে চলো।

তুষার চলে গেলো। তানিয়া বেগম স্বামীর পানে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে সে ও বেরিয়ে গেলো। তামিম খান মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চেলে গেলো।

রায়ান বাড়ি থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা আর তার ফ্যামিলি আসছে। বাসা চিনে না তাই এখান টা এসে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ একটা ব্লাক কালারের গাড়ি সামনে এসে দাঁড়াতেই রায়ান বুঝলো এটাই অধরার গাড়ি। গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলো। অধরা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো। রায়ান গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে দেখে গাড়িতে অধরা ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। অধরা ইশারায় রায়ান কে গাড়িতে উঠে বসতে বললো।

রায়ান অধরার পাশে থাকা সিটে বসে পড়লো।
-“ আপনার বাবা মা আলেন না যে?
-“ তারা এসব দাওয়াতে আসা খুব একটা পছন্দ করে না।
রায়ান ওহ বলে বাসা টা কোন দিকে সেটা বলে দিলো। অধরা রায়ানের ডিরেকশন অনুযায়ী গাড়ি চালিয়ে বাসার সামনে আসলো। অধরা গাড়ি থেকে নামলো। দু তলার একটা ডুপ্লেক্স। আকাশী রং এর। রায়ান অধরাকে বাসার ভেতর ঢুকতে বললো। অধরা আর রায়ান বাসার ভেতর ঢুকলো। মেন গেট পেড়িয়ে ভেতরে আসতেই দেখলো চারপাশে হরেক রকমের ফুলের গাছ।

– এতো ফুল প্রিয় কে আপনাদের বাসার?
অধরার ফুল গাছ গুলোর দিকে তাকালো।রায়ান অধরার তাকানো দেখে বললো-
-” এই ফুল গাছ গুলোর অংশীদার অনেক,শুধু একজনের নাম নেওয়া যাবে না।

অধরা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ অংশীদার অনেক মানে?
-“ এই ফুল গাছের বাগনের মালিক হচ্ছে আমার ভাই বোন গুলো।
-“ আপনার ভাই তো রাফি,আপনার বোন ও আছে নাকি?
-“ হ্যাঁ, রাফি আর আমার চাচাতো বোন চিত্রা আর ফুপির মেয়ে তৃষ্ণা। ওদের শখের বাগান এটা।
-“ ওহ্ আচ্ছা।

রায়ান অধরা কে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে বসার ঘরে ঢুকে। সোফায় বসে ছিলো চিত্রা। হঠাৎ অচেনা একটা মেয়েকে রায়ানের সাথে দেখে কিছুটা বিস্ময় হয়। রায়া অধরাকে নিয়ে চিত্রার সামনে এনে বলে-

-“ এটা হচ্ছে আমার বোন চিত্রা।

চিত্রা রিমিকে কোলে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা মুচকি হেসে বলল-
-“ হাই।
চিত্রা ও ভদ্রতার খাতিরে হাই বললো। রায়ান অধরাকে সোফায় বসতে বলে উপরে চলে যায়। অধরা আশেপাশে তাকিয়ে সোফায় বসলো।
-“ তুমি কিসে পড়াশোনা করো?
চিত্রা দাঁড়িয়ে থেকেই বললো-
-“ জ্বি এবার এডমিশন দিবো।
অধরা চিত্রার কোলে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে বললো-
-“ বাচ্চা টা কার?
-“ যার সাথে আসলেন তার মানে রায়ান ভাইয়ার মেয়ে রিমি।

রাফি শুয়ে ছিলো। হঠাৎ দরজায় টোকা পাওয়ার শব্দ শুনে শুয়া থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে রায়ান।
-“ কিছু বলবা?

রায়ান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ এখনও রুমে কি করছিস বাহিরে যা অধরা এসেছে।

রাফি বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ তাতে আমার কি?
-“ তোর কি মানে? মেয়েটাকে একটু সময় দে। চিত্রাও আছে ওখানে। বাবা আসছে।
-“ চিত্রা তো আছেই তাহলে আমার ক…
-“ চিত্রা তো তেমন চিনে না অধরা কে তুই যা।

রাফি তপ্ত শ্বাস ফেলে নিচে নেমে আসলো। অধরা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফি আসছে। রাফি অধরার পানে চাইলো। অধরার সেই একই ড্রেসআপ, সাদা শাড়ি চুল গুলো হাত খোপা। রাফি এসে চিত্রার পাশে বসলো। রান্ন ঘর থেকে রিয়া আর চয়নিকা বেগম ও বেড়িয়ে আসলো। খাবার টেবিলে এক এক করে সব খাবার সার্ভ করলো। রাফি অধরার সাথে কোনো কথা বললো না। রিয়া আর চয়নিকা বেগমের সাথে হালকা পাতলা পরিচয় হয়ে গেলো।

এরমধ্যে সদর দরজা দিয়ে রাসেল আহমেদ আর সাহেল আহমেদ বসার রুমে ঢুকে। রাসেল আহমেদ অধরা কে দেখে কিছুটা খুশি হয়। অধরার দিকে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। সাহেল আহমেদ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপারা এখনও আসে নি?

চয়নিকা বেগম মাথা নাড়িয়ে না জানায়। সাহেল আহমেদ আর রাসেল আহমেদ উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। চিত্রা রিমিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে রইলো রাফি আর অধরা। রাফি এক ধ্যানে ফোন স্ক্রোল করতে থাকে। এরমধ্যে কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে তার ফুপি ফুপা আসছে। তার পেছনেই আছে তুষার আর তৃষ্ণা। চোখ থমকে যায় রাফির। অধরা রাফির দৃষ্টি অনুসরণ করে। রাফির চোখ মুখে রয়েছে মুগ্ধতা। দুজন মধ্যবয়সী আর দুজন ইয়াং। তৃষ্ণা বাড়ির ভেতর ঢুকেছিল যতোটা হাসি খুশি নিয়ে এখন আর ততটা হাসি নেই মুখে। তানিয়া বেগম আর তামিম খান সোফায় বসতে বসতে বলে-
-“ বাড়ির লোকজন কই?
রাফি তৃষ্ণার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে-
-“ সবাই উপরে দাঁড়াও এখনই ডাকছি।
কথাটা বলে রাফি সবাই কে ডাক দেয়। তৃষ্ণা গিয়ে মায়ের পাশে বসে। তুষার আলাদা একটা সোফায় বসে। তানিয়া বেগম অধরার দিকে তাকিয়ে রাফিকে বলে-
-“ মাইয়া টা কে রে রাফি? চিনতেছি না। তর বান্ধবী নাকি?

রাফি অধরার দিকে একবার তাকি বলে-
-“না ফুপি,আব্বুর বান্ধবী আমার না।

অধরা আড়চোখে তাকালো রাফির দিকে। তুষারের দৃষ্টি এদিক ওদিক। চিত্রা কে কেনো দেখছে না। মেয়েটা কই। রাসেল আহমেদ, সাহেল আহমেদ, চয়নিকা বেগম, রিয়া, রায়ান নিচে নেমে আসলো। রাসেল আহমেদ আর সাহেল আহমেদ বোন আর বোনের স্বামীর সাথে কুশলাদি করে। রায়ান তুষারের পাশে বলে-
-“ হেই তুষার কেমন আছিস?

তুষার নড়েচড়ে বসে বলে-
-“ এইতো আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালো। তুমি?
-“ আমিও আছি ভালো। তা বিয়ে করছিস কবে?
-“ এই শীতেই।
-“ সত্যি?
-“ তুষার মিথ্যা বলে না জানো তো।
-“ তা অবশ্য ঠিকই। ফুপি মেয়ে দেখেছে?
-“ না মেয়ে তোমার ফুপি কেনো দেখবে? আমি দেখেছি।

রায়ান সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ তুই দেখছিস মানে! পছন্দ আছে?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই।
চয়নিকা বেগম সবাই কে খাবার টেবিলে বসতে বললো। তুষার, রাফি,তৃষ্ণা এখন খাবে না বলে দিয়েছে। তাদের রেখেই বাকি সবাই খেতে বসেছে। অধরার আনইজি লাগছে। এতো মানুষ। তুষার রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাড়িতে আরেক জন কে দেখছি না কেনো?
তুষার ভ্রুকুটি করে বলে-
-“ কে?
-“ চিত্রা।
-“ হয়তো ওর রুমে আছে।

তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাফি তৃষ্ণার দিকে চেয়ে বলল-
-“ কোথায় যাচ্ছো?
-“ চিত্রার কাছে।

তৃষ্ণা চলে গেলো। রাফি তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চলো ব্রো আমার রুমে যাই। তুষার আর রাফি উপরে চলে গেলো।চিত্রা রুমে বসে আছে রিমিকে নিয়ে।হঠাৎ রুমে তৃষ্ণা কে আসতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-“ কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি,এতোক্ষণ লাগে আসতে?
-“ তুই নিচে যাস নি কেনো?
-“ এমনি।
-“ তোদের বাসায় নতুন ঐ মেয়েটা কে রে?
-“ আমি ঠিক চিনি না। বিজনেস রিলেটেড হয়তো।
-“ ওহ্।

-“ চিত্রা রিমি কে দে খাইয়ে দেই।
কথাটা বলতে বলতে রুমে ঢুকে রিয়া। চিত্রা বিছানায় বসে খেলতে থাকা রিমি কে রিয়ার কোলে দেয়।
-“ তোমরা নিচে যাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

কথাটা বলে রিমি কে নিয়ে চলে যায়। চিত্রার ক্ষিদে পেয়েছে খুব। তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চল খেয়ে আসি ক্ষিদে লেগেছে খুব।

তৃষ্ণা চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই যা আমি আসছি।

চিত্রা কোনো কথা ব্যায় না করে রুম থেকে চলে আসে। সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখে তুষার আর রাফি বের হচ্ছে। রাফি চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি একা যে চিত্রা কোথায়?
-“ আমার রুমে ডেকে নিয়ে এসো তো।

রাফি চিত্রার ঘরের দিকে যায়। তুষার চিত্রার দিকে মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” এভাবে তাকাবেন না একদম।

তুষার ঠোঁট কামড়ে হাসে। চিত্রার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে-
-“ কেনো তাকানো বারন নাকি?
-“ হ্যাঁ আপনার জন্য বারন।
-“ কেনো?
-“ আমি কি আপনার দিকে এমন দৃষ্টি দিয়ে তাকাই? তাকাই না তো তাহলে আপনি কেনো তাকাবেন?

তুষার বিরস গলায় বলে-
-” এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই বলে কি আমাকে এটা বলবা,আমি যেনো তোমাকে ভালো না বাসি?
-“ ভালোবাসেন তাই বলে এভাবে তাকাবেন নাকি?
-” তুষার তাকাতেই পারে যেকোনো ভাবে তোমার দিকে। তুমিও চাইলে মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে পারো। তুষার একটু ও বিরক্ত হবে না।

আড়চোখে তাকায় চিত্রা তুষারের পানে। কিছুটা নরম কন্ঠে বলে-
-” আপনি কি জানেন? পুরুষের অল্প ভালোবাসায় নারী আসক্ত হয়। আর নারীর অতিরিক্ত ভালোবাসায় পুরুষ বিরক্ত হয়।

তুষার হাটা থামিয়ে দিলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-” যে পুরুষ নারীর অতিরিক্ত ভালোবাসায় বিরক্ত হয়, আর যাই হোক সেই পুরুষ ভালোবাসা মানেই বুঝে না।
-“ আপনি বুঝি ভালোবাসায় পিএচডি করে বসে আছেন।

তুষার হেঁসে ফেলে। চিত্রা হাসির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” এতো হাসেন কেনো? আগে তো হুতুম পেঁচার মতো মুখ করে রাখতেন।আর এখন কিছু বলতে না বলতেই হাসেন।
-“ খেতে চলো ক্ষুধা লাগছে।

তুষার চলে যায়। চিত্রা তুষারের পেছন পেছন চলে যায়।

চিত্রার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তৃষা।

-“ ওদিকে তাকিয়ে ওভাবে কি দেখছো?

তৃষ্ণা পাশ ফিরে তাকালো না। রাফি তৃষ্ণার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো সেদিকটায়। তৃষ্ণার চোখ মুখ জুড়ে রয়েছে মুগ্ধতার আবেশ। দৃষ্টি রায়ান,রিয়া আর রিমির দিকে রেখেই তৃষ্ণা বলল-
-“ একদিন আমি আপনি মিলে হবো আমরা।
-“ মানে!

তৃষ্ণার হুঁশ ফিরলো। রায়ান আর রিয়া বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিমি কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। দৃশ্য টা দেখছিল তৃষ্ণা। ভালে লেগেছে,কখন যে ওখানে নিজেকে আর রাফি কে কল্পনা করলো বুঝতেই পারে নি। পাশ ফিরে রাফি কে দেখে বলে-
-“ মানে টানে কিছু না। আপনি এখানে কেনো? মামুর বান্ধবী কই?
-“ আমি কিভাবে বলবো সে কই।
-“ কেনো আপনিই না দেখলাম তার সাথে গল্পগুজব করছিলেন।
-“ আশ্চর্য আমি কখন গল্পগুজব করলাম। আমি তো জাস্ট বসে ছিলাম।

তৃষ্ণা বিরক্তি নিয়ে তাকালো রাফির পানে।
-“ বসে কেনো থাকবেন? আমাকে বলেছিলেন কোনো ছেলের সাথে মিশতে না আপনার ও উচিত কোনো মেয়ের সাথে মেশা তো দূরস্থ, তার আশেপাশে ও না বসা।

রাফি হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ আর ইউ জেলাস মিস তৃষ্ণা?
– “ নো। আমি জাস্ট আপনার কথাটাই আপনাকে ব্যাক করলাম। যে কথা নিজে মানতে পারেন না সে কথা অন্য কে কেনো মেনে চলতে বলেন?
– “ ওক্কে মেনে চলবো খেতে চলো এখন।

তৃষ্ণা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। রাফি হাসলো, তার এখন একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে আর সেটা হলো-
-“ মেয়ে তোর জেলাস জেলাস চোখে, যেন হিংসেরা ঢেউ খেলে, সেই ঢেউয়ের খেলা দেখিতে আমার ভাললাগে! মেয়ে তোর গোলাপী গোলাপী গালে যখন রাগের আভা ফুটে । সেই আভা দেখিতে আমার ভাল্লাগে! বড়ই ভাল্লাগে!

(আজ যারা পর্ব ছোট বলবে। তাদের এক একটাকে তুষারের ব্লাক শার্ট ছুড়ে মা’রবো)

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here