আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৪

0
1348

#আমার রাজ্যের রানী
#Part: 4
#Writer : Sriti Nur Avni

?

আজ অফিসের প্রথম দিন অভনী। শাহেরা বেগম সকাল সকাল উঠে নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো এবার আর মেয়েটার সম্মানে হানি যেন না হয়,,,নামাজ পরে রান্না করে মেয়েকে ডাকলো ওনি,,অাজ অফিসের প্রথম দিন আগে আগে যাওয়া টা ঠিক হবে বলেই মনে হলো ওনার।

অভনী উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মা কে সালাম করে বের হয়ে গেলো। আজো খুব বেশি বিচলিত লাগছে তার কাছে,,, কে জানে কলিগ রা কেমন হবে,,কে জানে আবারো কেউ হায়নার মতো ঝাপিয়ে পড়তে চায় কিনা।

সময়ের প্রায় অনেক টা আগেই এসে গেছে অভনী,,, তেমন কেউ আসেনি নিজের কেবিল কোনটা সেটাও জানেনা এখন তার মায়ের প্রতি রাগ হচ্ছে এতো তাড়াতাড়ি পাঠালো কেনো এখন একা একা বোর হতে হবে,,,কিন্তু মায়ের প্রতি রাগ টা আল্লাহ হয়তো মেনে নিতে পারেনি,,,তখনি একজন মেয়ে আসলো অভনীর সামনে,,

—হায়।ইউ অভনী রাইট? (মেয়েটি)
—হাম,,,আপনি?(অভনী)

—আমি রুমি,, বড় স্যার এর পি এ,,,স্যার আমাকে রাতেই কল দিয়ে বলে রেখেছে আজ যেনো তাড়াতাড়ি চলে আসি কারন টা হলো তুমি।তোমাকে তো কাজ সম্পর্কে কিছুই বলে দেওয়া হয়নি তাই তুমি যদি আগে আগে এসে বসে থাকো তাই।

—ওহ কেমন আছেন? (অভনী)

—জ্বি ভালো কিন্তু তুমি তো আমাকে আপনি আপনি করে বলে বুড়ি বানিয়ে দিচ্ছো (হেসে)

—কারো অনুমতি ছাড়া কাউকে তুমি করে বলতে আনইজি লাগে আমার কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

—আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে তুমি করে বলবে,,,চলো কাজ দেখিয়ে দেই তোমার।

—ওকে।

রুমি অভনী কে ওর কেবিন দেখিয়ে দিয়ে কাজ গুলো বুঝিয়ে দিল।অভনী ও ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় অল্প তেই কাজ গুলো বুঝে ফেললো।

—তুমি কি জানো তুমি খুব কিউট একটা মেয়ে (হেসে রুমি)

—তুমিও খুব সুন্দর আপু (অভনী)

আজ প্রথম দিন হওয়ায় তেমন কোনো কাজ ছিল না অভনীর। নিহাল আর নিলিমা এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অভনী কে।সবাই কে খুব ভালোই লাগছে অভনীর কাছে।ছেলে গুলো কে ও ভালোই মনে হচ্ছে কিন্তু কে জানে কার মনে কি আছে সুযোগ পেলে ভালো ছেলে গুলো ও যে নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দেয়।

অভনী কে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর নিহাল আর নিলিমা সবাইকে ইনভাইট করলো আগামিকাল ওদের ছোট ছেলের জন্মদিন এর পার্টি তে।

জন্মদিনের পার্টির কথা শুনেই অভনী চিন্তায় পরে গেলো,,,কিছু তো গিফট দেয়া লাগবে তাও আবার এতো বড়োলোকের ছেলে কমদামি উপহার দিলে যদি সবার সামনে অপমান করে তাহলে ও কি করবে?নতুন চাকরি তে জয়েন করেছে যদি ওদের ইনভাইট ফিরিয়ে দিয়ে না যায় তাহলে তো রাগ করতে পারে।কি করবে এখন সে? নিজের কেবিনে বসে একমনে কথাগুলো ভাবছিল অভনী তখনি ওর কেবিনে ডুকলো নিহাল আর নিলিমা,,,,

—কি ব্যাপার কি ভাবা হচ্ছে এতো মাথা নিচু করে?(নিহাল)

—তেমন কিছুই না স্যার ওই একটু মাথা ব্যাথা হচ্ছে (অভনী)

—কি বলো মাথা ব্যাথা হচ্ছে আগে বলোনি কেন?যাও যাও এখনি বাসায় চলে যাও গিয়ে রেস্ট নাও (নিহাল)

—-না আংকেল আমি ঠিক আছি,,, প্রথম দিনই এভাবে চলে যেতে পারবো না (অভনী)

—চুপ একদম চুপ তোমার সাহস তো কমনা মুখে মুখে কথা বলো,,, যাও বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও (নিলিমা)

—ওকে ম্যাম (অভনী)

—শুনো কালকে সকালে তোমাদের বাসার সামনে গাড়ি চলে যাবে তুমি সকালেই চলে আসবে,,,,এটা নিয়ে একটা কথা ও বলবা না তুমি শুধু আমার পিএ না আমার মেয়ের মতো তাই আমি যা বললাম তাই হবে। (নিলিমা)

সকালে আসার কথা শুনে অভনী আরো চিন্তায় পরে গেলো,,,তবুও কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু।

—ঠিক আছে বাসায় যাও এখন (নিলিমা)

অভনী নিজের হ্যান্ড ব্যাগ টা নিয়ে ওদের সালাম দিয়ে সামনে এগুতে লাগলো,,,তখনি পিছন থেকে কেউ একজনের ডাকে ফিরে তাকালো সে,,,

—শুনো মেয়ে (রাগি ভাব নিয়ে নিহাল)

—জ্বি স্যার? (অভনী)

—এক থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিব পঁচা মেয়ে (নিহাল)

নিহালের কথা শুনো অভনী দু হাত গালের মধ্যে চেঁপে ধরলো,,,মার খেয়ে অব্যস্ত নয় অভনী,,ছোট বেলা থেকেই মার কে খুব ভয় পায় সে,,,অভনী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,,,,

—স্যার কি করেছি আমি (অভনী)

অভনীর এমন চেহারা দেখে নিহালের খুব হাসি পাচ্ছে,,,তবুও হাসি কে যথাসম্ভব চেপে রাখার চেষ্টা করে রাগি রাগি ভাব নিয়ে বললো,,,,

—-তুমি খুব পঁচা হয়ে যাচ্ছো মামুনি (নিহাল)

নিহালের কথা শুনে অভনীর বাবার কথা মনে পরে গেলো,,,ছোট বেলা ও যখন কোনো অন্যায় করতো,,, তখন ওর মা কে ওর বাবা কিছু বলতে দিতো না কিন্তু সে নিজেই অভনী কে কাছে টেনে নিয়ে বলতো,,,,

—তুমি মার খাবা অভনী?( শাহেদ =অভনীর বাবা)

অভনী তখন ঠিক এমন ভাবেই গাল দুটো চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতো আর ওর বাবা বলতো,,

—তুমি খুব পঁচা হয়ে যাচ্ছো অভনী

অভনীর বাবার কথা মনে হতেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো তা দেখে নিহাল আর নিলিমা অস্থির হয়ে গেলো,,,

—কি হয়েছে মামুনি আরে বোকা মেয়ে তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো,,,, প্লিজ ডোন্ট ক্রাই মামুনি,,,আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি (নিহাল)

—-ভালো হয়েছে তুমি মেয়েটাকে এভাবে বললে কেনো ভালো ভাবেই বললে হতো আমাদের যেনো স্যার ম্যাম না বলে আমরা ওর মামুনি পাপ্পার মতো,,,,প্লিজ মামুনি কান্না করোনা (নিলিমা)

অভনী অবাকচোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে কেউ এতো টা ভালো ও হয়?অভনী চোখ মুছে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,,

—আংকেল আমি কাঁদছি নাতো দেখো আমি তোমার কথায় একটু ও হার্ট হয়নি আমি।আসলে আমার বাবার কথা মনে পরে গেলো খুব,,, আমার বাবা ও না তোমার মতো করেই শাসন করতো আমায় (হালকা হেসে)

—তা এখন বড় হয়ে গেছো বলে বাবা আর শাসন করে না বুঝি পাগলি? (নিলিমা)

—আমার বাবা মারা গেছে আড়াই মাস আগে আন্টি (অভনী)

বাবা মারা যাওয়ার কথা শুনে নিহাল নিলিমার ও মন খারাপ হয়ে গেলো,,, তবু মন খারাল টা কে দমিয়ে রেখে নিহাল আবারো রাগি রাগি ভাব নিয়ে বললো,,,

—আমি তোমার কি হই অভনী? (নিহাল)

—আংকেল (অভনী)

—আবার মার দিবো নাকি?(নিহাল)

নিহালের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো অভনী,,,, বাবা মারা যাওয়ার পর আজই সে প্রথম এমন ভাবে মন খুলে হাসছে সে,,,হাসবেই তো আজ আরেকটা বাবা পেয়েছে যে সে,,কতজনের ই বা ভাগ্য আছে এমন বাবা পাওয়ার।

অভনী কে নিহাল নিলিমা দুজন ই জরিয়ে ধরলো অভনী ও খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ওদের,,,আর মনে মনে ভাবছে,,,,সত্যিই সব ছেলে এক হয়না কই এই লোকটাও তো পুরুষ তবুও এই লোকটা কে জরিয়ে ধরে সে বাবার স্নেহ পাচ্ছে খুব কি খারাপ হয় এদের মতো পুরুষ হলে?

—এখন থেকে আমাকে মামুনি আর নিহাল কে বাবা বলে ডাকবে তুমি মনে থাকবে?(নিলিমা)

অভনী মুচকি হেসে বললো,,
—আচ্ছা।
—হয়েছে হয়েছে এবার মেয়েটাকে বাসায় যেতে দাও মেয়েটার মাথা ব্যাথা ভুলে গেলে নাকি তুমি?(নিহাল)

অভনী ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো,,,আজ তার মনটা খুব ফুরফুরে লাগছে,,,এমন বাবা মায়ের মতো স্যার ম্যাম কয়জন ই বা পায়?ভাগ্যিস ওই জব টা ছেড়ে দিয়েছিল নয়তো এতোদিনে হয়তো নিজের সম্মান টাকে হাড়িয়ে বসে থাকতে হতো,,,,তাছাড়া রক্তের সম্পর্ক হয়েও তো ওর চাচা চাচি বিশ্বাস ঘাতকতা করলো,,,দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভনী আবারো ভাবতে লাগলো,,,

“” রক্তের সম্পর্ক হলেই সে আপন হয়না,,, অনেক সময় রক্তের সম্পর্ক না থাকা মানুষ গুলো ও নিজের জীবনের থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায়”””
আজ নিহাল নিলিমার প্রতি অভনীর সম্মান শ্রদ্ধা ভালোবাসা আরো বেড়ে গেছে,,,তাহলে তাহলে কেন তোমরা মেয়েদের অসম্মান করে পশুর থেকেও নিকৃষ্ট প্রাণী হয়ে যাও?

?
বাসায় গিয়ে মা কে সব বলেছে অভনী,,, ছোট বেলা থেকেই মায়ের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক তার,,,অভনী মনে প্রানে বিশ্বাস করে মা বাবার সাথে সন্তানের বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক থাকলে সেই সন্তান কখনো কোনো বিপদে পরে না।পার্টি তে কি পরে যাবে সেটা খুঁজে পাচ্ছিল না অভনী,,, এতোবড় লোকের পার্টিতে পুরনো জামা পড়ে গেলে কি হয়,,,,এতো বড় চিন্তা টার সমাধান ও ওর মা সহজেই মিটিয়ে দিল,,,,গত বছর বাবা মা কে বেশ দামি ই একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিল,,,মায়ের পড়া হয়নি এখনো তাই সে শাড়ি টাই পড়ে যাবে,,,,সব কিছুর পরেও একটা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে,,,

“”” কি গিফট দিবে সে?তাহলে কি সবার সামনে অপমানিত হতেই হবে তাকে?নিজের সম্মান টা হাড়িয়েই ফেলবে?

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here