#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 38
#Writer : Sriti Nur Avni
?
শরৎকাল–
বর্ষার মাঝপথে শরৎকাল আসার পূর্বেই নিজেকে নতুন রঙে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরে প্রকৃতি।নীল আকাশে সাদা মেঘের এলোমেলো বর্নিল ছরিয়ে পরে ছিটে ছিটে।।
শুভ্র সমুদ্রল আর প্রানময় ঋতু রানী শরৎকাল।।নগরে তাই উঁকি দিতে শুরু করেছে কাশফুল।।তবে হেয়ালি ঋতুর স্বভাব টাই যেনো অন্যরকম,এই মেঘ তো এই বৃষ্টি।।দ্রুত গতিতে সাদা মেঘের ভেলা নিয়ে এগিয়ে আসে শরৎকাল।।শরৎকালের বৃষ্টি আপন মনে বসে গিয়েছে ইতিমধ্যে।।বিশাল নীল আকাশে পেঁজা তুলোর ন্যায় গুচ্ছ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে।।গাছপালা,নদীনালা প্রকৃতির তালে তাল মিলিয়ে নিজেকে নতুন করে ঝকঝকে করে তুলতে নেমে গিয়েছে।নদীর ধারে ও বিলে অল্প পানিতে কাঁদা মাটিতে সবুজ ঘাস থেকে বের হয়ে আসছে সাদা মেঘের ন্যায় নরম কাশফুল।বিশাল রাত্রি কাটিয়ে কাক ডাকা ভোরে একগুচ্ছ শিউলি ফুল গুলো ঝরে পরে মাটির উপর নিজের বিছানা বিছিয়ে।তাদের সাথে আপন মনে যোগ দেয় পদ্মবিলে ফুটিয়ে উঠা জীবন্ত ফুটন্ত পদ্মফুল।।
“ওই চেয়ে দেখো,নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত”
কবির ভাষায় ঋতুরানী শরৎকাল এমনি।।
সাদা মেঘ ক্ষনে ক্ষনে রং বদলানো আকাশ আর কাশফুলের গায়ে বাতাসের দোলা যেনো স্পর্শকাতর প্রকৃতির আনাগোনা।।বর্ষার ইতি ঘটিয়ে শরৎ এর শুরুতেই ফুলে ফুলে ভরে উঠে পুরো নদীর আনাচে কানাচে কাঁশফুল ।।সাদা মেঘের সাথে সাদা ফুলের শুভ্রতায় মোড়ানো হয়ে যায় চারদিক।।এমনি বৃষ্টিস্নান্ত একটি দিনে কাশফুলের ন্যায় সাদা রঙের লাল পাড়ের কাপড় আর চোখে গাড়ো কাজল,,হাতে পায়ে টকটকে রক্তজবা মাখা আলতা,,লম্বা হাঁটু ছুই ছুই চুল গুলো ছেড়ে দেবার সাথে হাতে একগুচ্ছ লাল রঙের রেসমি চুড়ি পড়ে গাড়িতে বসে আছে অভনী।।তার ঠিক অপর পাশের সিটে গাড়ো লালে মোড়ানো পাঞ্জাবি গায়ে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে দিয়ে বসে আছে নীল।।
উদ্দেশ্য তাদের উত্তরার দিয়া বাড়ির কাশফুল বন অতিক্রম করে ঘুরে শপিংমলে যাওয়া।শরৎ এর সকালে মিষ্টি কাশফুলের গ্রান নিতে বের হয়ে গেছে আজ ওরা।।গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে।।বাহিরের দিকে মুখপানে তাকিয়ে আছে অভনী।।লম্বা চুল গুলো হেলেদুলে এগিয়ে যাচ্ছে নীলের চোখে মুখে।এতে নীলের বিরক্তি মাখা মুখের পরিবর্তে ফুটে উঠেছে একরাশ ভালোলাগা ময় মিষ্টি হাসি।।তবে সেই হাসি প্রকৃতিকন্যা অভনীর চোখের আড়ালেই ঘটে অনবরত।।
গাড়ি ছুটতে ছুটতে নিজগতিতে চলে এলো উত্তরার বিখ্যাত দিয়াবাড়ির খোলা আকাশের কাশফুলের রাজ্যে।।সাদা ছিটা মেঘের সাথে ঘন কালো আর ঝলমলে আকাশের লিলাখেলায় কাশফুলের সাদা রঙের সাথে শুভ্রতায় মুড়িয়ে যাবে আজ আরো দুটো তরুন তরুনি।।লাল সাদা রঙে প্রকৃতির সাথে নিজেদের নতুন রুপে ফুটিয়ে তুলে শুভ্রতার গহীনের রুপ নিয়েছে আজ অভনী আর তার হিরো সাহেব।
গাড়ি থামতেই ছুটে হারিয়ে গেলো অভনী কাশফুলের রাজ্যের রানী হয়ে।।তার পিছন পিছন ছুটে চললো নীল ও।।শুভ্রতায় পরিপূর্ণ কোমল এক রাজ্যের বৃষ্টিস্নান্ত কাশফুলের ভিতরে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা।আকাশে সাদা কালো মেঘের ফাঁক বেয়ে বেড়িয়ে আসছে সোনালী বর্নের এক মুঠো রোদ।নীলাব আকাশের নিচে কখনো কাশফুল কখনো সোনালী বিমর্ষ রুপ নেয় দিয়াবাড়ি।বর্ষা শেষ হবার আনন্দ উৎসবে যোগ দিচ্ছে ঘাসফড়িং,যার আগমনে ঝরে পড়ার মাঝে আনন্দ খুঁজে পায় শরৎকন্না শিউলি ফুল। অভনী আর নীল ছুটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো নদীর ন্যায় বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর ছোট্ট এক জলাশয়ের সামনে।।সবুজ গাছের আগায় জুড়ে থাকা আবছা রোদের আলোয় সোনালী সাদা বর্নের কাশফুল ছিঁড়ে ধরিয়ে দিলো অভনীর হাতে নীল।।মুচকি হেসে অভনীর কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো সে,,,
“পরী বউ,,আমি চাই শীতের কুয়াশা’য় চাদর হতে,,তোমার প্রনয়ে যত্নে আঁকিবো আদর পূর্নতায়,কিংবা অপূর্নতায় ভালোবেসে।
আমি চাই হবো শরৎকালের নীল আকাশে ছুঁটে চলা মেঘ,তুমি চেয়ে থাকবে দূর আকাশে।তোমায় জড়াবো আমার স্নিগ্ধ মায়া জালে।❤
হৃদস্পন্দনে প্রতিটি স্থানে জরিয়ে নেবো তেমায়।আলতো অনুভূতির ছোঁয়ায় স্পর্শতায়।
তোমার ওই আকাশ দুটি চোখে আমি হয়ে গেছি তারা।এই জীবন ছিলো নদীর মতো গতিহারা।”
অভনী লজ্জায় হালকা কুঁকড়ে গেলো।।মুচকি হেসে ফুলগুলো হাতে নিয়ে ছোটে চললো আবারো।।আলতা রাঙা পায়ে সাদা শাড়িতে অভনীকে আজ অপরূপা লাগছে নীলের কাছে।।অভনীর আড়ালেই নিজের ফোনের ক্যামেরায় কয়েকটা ছবি আবদ্ধ করে নিলো নীল।গোধূলির লাল নীল ক্যানভাসে সাদা কালো মেঘ রঙের ছটা যা এই স্নিগ্ধ বিকাল কে মনের খাতায় লিখে রাখার ঘটা।
বৃষ্টির কাছে আত্নসমর্পণ করা কাশফুলের বনে হেঁটে বেড়াচ্ছে শুভ্র বালিকা।কাশফুলের মাঝে জমে থাকা জলকরার মাঝে পূর্ববতী শরতের বিদায়ে যে ছন্দগন্দ রেখে যায় এই শরৎেও সেটা খুঁজে ফিরছে আজ তারা।।হালকা বাতাসে ছরিয়ে ছিটিয়ে একে অপরের উপর হেলিয়ে পরছে ক্রমাগত কাঁশফুলগুচ্ছ।।আকাশে জমাট বেঁধে আছে ছেড়া মেঘ রাশিরাশি।
হাতে হাত রেখে কাশফুল হাতে হেঁটে বেড়াচ্ছে দুজন।।নীরবতা কে সাথে নিয়ে হেঁটে বেড়াতে ভালো লাগছে না নীলের।।তাই সুর তোলে গান গাইতে শুরু করলো নীল।
আজ এই দিনটাকে,,
মনের খাতায় লিখে রাখো,,,
আমায় পরবে মনে,,
কাছে দূরে যেখানেই থাকো,,।
হাওয়ার গন্ধ আর
পাখিদের গান শুনে শুনে,,,
আজ এই ফাল্গুনে
দুটি চোখে স্বপ্ন শুধু আঁকো,,,,।
এসো আজ সারাদিন,,
বসে নাহয় থাকি পাশাপাশি,,,,
আজ শুধু ভালোবাসা বাসি
শুধু গান আর হাসাহাসি,,।
রঙের বর্ষা ওই নেমেছে যে দেখো
ফুলে ফুলে,,,
দুটি হাত তুলে
আমাকে আরো কাছে ডাকো,,,।
আজ এই দিনটাকে
মনের খাতায় লিখে রাখো,,
আমায় পরবে মনে,,
কাছে দূরে যেখানেই থাকো,,,।
.
.
.
?
শরৎকালের আকাশ যেমন মেঘ জমলে মনের ঘরে রঙ টা যেনো বদলে যায়, ঘনকালো বর্ষার মেঘ রঙ মেখে নেয়,, মন খারাপের সেই খাম টাই হারিয়ে সেই কখন থেকে খুঁজে সারা নীরা।।
মাঝে মাঝে হুট করেই মন খারাপ হয়ে যায়।আস্তে আস্তে সেই মন খারাপ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে যা একসময়ে মাথা ব্যাথার পরোক্ষ কারন হয়ে যায়।।এই মন খারাপ টাকে যতো বেশি আসকারা দিবে ততো বেশিই লাফাবে কিন্তু এই মূহুর্তে আর কোনো কাজ নেই নীরার।।তাই অগত্যা মন খারাপ ভাব টাকে আসকারা দিয়েই মাথা ব্যাথার আয়োজন করে খাটের এক কোনে বসে আছে সে।।
মোটা কালো ফ্রেমের চশমা টা পাঞ্জাবির এক কোনা দিয়ে মুঁছতে মুঁছতে নীরার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন হাফিজুর রহমান।রুমের দরজার পাশে এসে নক করতেই ঘার ঘুরিয়ে দরজার মুখপানে তাকালো নীরা।এই মুহূর্তে মুখ দিয়ে কোনে কথা উচ্চারন করতেও ইচ্ছে করছে না তার।।হাফিজুর রহমান দরজার বাইরে থেকে বলে উঠলেন,,,,
—নীরা মা ঘরে আছিস?
শশুড় আব্বুর ডাক শুনে সাথে সাথেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বলে উঠলো নীরা,,,
—আব্বু ভিতরে আসো।।আমি রুমেই আছি।
হাফিজুর রহমান মুচকি হেসে চশমা চোখে জরিয়ে নিয়ে হাঁটা দিলো রুমের উদ্দেশ্যে।নীরা মাথায় ঘুমটা টেনে উঠে দাঁড়ালো।হাফিজুর রহমান রুমে ডুকে হালকা হেঁসে খাটের উপর বসলেন।নীরা কে কাছে ডেকে বললেন,,,
—আমার কাছে এসে বস মা।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।।
মাথা হেলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো নীরা।।হাফিজুর রহমানের কাছে বসতেই বিষন্ন দৃষ্টিতে নীরার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ওনি,,,
—তুই নীর্ঝয়ের সাথে সুখে নেই তাইনা রে মা??নীর অভনী কে ভালোবাসে তাই এখনো তোকে মেনে নেয়নি আমি জানি।
নীরা অবাক নয়নে তাকালো হাফিজুর রহমানের দিকে।।যখন মন খারাপের আনাগোনা নিয়ে কারন খুঁজতে ব্যাস্ত তখন ‘সুখে নেই’ কথাটা শুনে বারবার এই একটা কারন ই মনে হতে লাগলো মন খরাপের কারন হিসেবে।কিন্তু নাহ! এটা তো মন খারাপের কারন হতে পারেনা।কারন আমি তো জানতাম নীর অভনী কে ভালোবাসে।।জেনেই তো আমি বিয়ে করেছি।তাহলে??
হয়তো বাঙালী মেয়েরা স্বামী কে মেনে নিক বা না নিক,,স্বামীরা মেনে নিক বা না নিক স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা বা চায় না।।পারেনা সহ্য করতে স্বামী অন্য কাউকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর থাকুক।।
নীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে হাফিজুর রহমানের কোলে শুয়ে পরলো।।হাফিজুর রহমান হালকা হেসে নীরার মাথায় হাত এগিয়ে দিলেন।।কারন এটা ওর প্রথম ওনার কোলে শুয়া না।নিজের আব্বুর মতে করে হাফিজুর রহমানের সাথে মিশে গেছে সে।হাসি,ঠাট্টা আর খুনসুটিতে মেতে উঠে বাবা মেয়ে,,,যা মাঝে মাঝে নীর্ঝয়ের মনে খুব সহজে নারা দিয়ে যায়।।
নীরা হাফিজুর রহমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো,,,
—আব্বু আমি তোমার কাছে আর আমার ওই আব্বুর কাছে কখনো মিথ্যা কথা বলিনি।।আর না কখনো বলবো।আমি হ্যাপি আছি আব্বু।তবে মাঝে মাঝে কারন ছাড়া মন খারাপ রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই।।আমি অনেক অনেক হ্যাপি তোমার মতো আব্বুকে পেয়ে।আমি জানি নীর একদিন না একদিন আমায় ঠিক মেনে নিবে।।আমি অপেক্ষায় থাকবো সেই দিনটার।।
হাফিজুর রহমান নীরার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,,,,
—তুই দেখবি নীর খুব তারাতাড়ি তোকে মেনে নিবে।।নিজের ভুল টা বুঝতে পারবে সে৷।যাকে কখনো পাবেনা তার কথা ভেবে ভেবে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে আর তোকেও দিচ্ছে।
নীরা চোখ বন্ধ করে বললো,,,
—আব্বু এখন আর এই সব বলো নাতো।আমার মাথায় হাত ভুলিয়ে দাও আমি ঘুমাবো।
হাফিজুর রহমান আর কথা বাড়ালেন না।মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতেই বারান্দায় মোটা গ্রিল বেঁধ করে পা জোড়া গ্রিলের সাথে আঁটকে রাখা হলদে বর্নের পাখিটার দিকে তাকিয়ে রইলেন।।মাঝে মাঝে মনে হয় পাখি হয়ে যেতে। সূচনা বেগম কে এখনো বড্ড মনে পড়ে ওনার।।আচ্ছা উড়ে যদি
সূচির কাছে চলে যাওয়া যেতো?তাহলে কি খুব মন্দ হতো??
মনে মনে অগোছালো কথা ভাবতেই হালকা হেসে উঠলেন ওনি।পরক্ষনেই একগুচ্ছ মন খারাপ এসে ভর করলো ওনার মাঝে।।মন খারাপের তীব্র কারন হলো ভাবনা!!ওনি ভাবছেন,,,”আচ্ছা নীর কি পারবে ভালোবাসার এই কঠিন শিকল ছেড়ে বেড়িয়ে এসে অন্য আরেকটি শিকলে বাঁধা পরতে??নাকি সারাজীবন এই মেয়েটাকে চাতক পাখির ন্যায় নীরের একটু ভালোবাসার জন্য অপেক্ষাই করতে হবে??ভালোবাসা যে বড্ড কঠিন!!আবার বড্ড সোজাও।পবিত্র বন্ধনের জোড়ে অতি তাড়াতাড়ি নীরের মনে নীরার জন্য ভালোবাসা জাগিয়ে দাও প্রভু।আমিন”
দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে বাবা আর নীরার কথা গুলো একটাও নীর্ঝয়ের শ্রবনের বাহির হলো না।জীবন নামক সংগ্রামে বারবার দুটানায় পড়তে হচ্ছে তাকে।।দরজার পাশ থেকে সরে গিয়ে ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে মাথায় দুহাত চেপে ধরে বসে পরলো নীর্ঝয়।।
“কি করবো আমি??আমি কি কোনো ভুল করছি??আমি কি নীরা কে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছি??ও তো নিঃসার্থ ভাবেই ভালোবাসে আমায় তাহলে কেনো আমি ওকে কষ্ট দিচ্ছি?”
.
.
.
?
—————
শপিংমল থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ১১ টা বেজে গেলো সবার।।অভনী আর নীল একা একা আসলেও সবাই আগে থেকেই শপিংমলে চলে আসছিলো।আর মাএ ১৫ দিন!!
পনেরো দিন পরেই সারাজীবনের জন্য একে অপরের পবিত্র বন্ধনে জোড়া লেগে যাবে ওরা।মনের কোনে সুপ্ত এক ভালোলাগার সাথে কাজ করছে একাধিক ভয় আনন্দ আর ভীর জমিয়ে থাকা হাজারো নাম না জানা অনুভূতি।
ঢাকাতেই বিয়ের আয়োজন করা হবে।।অভনীর চাচা চাচীদের সাথে মনোমালিন্য থাকলেও বিয়ের খবর জানানো হয়েছে তাদের।।মামা মামিদেরও বলা হয়েছে বিয়েতে আসার জন্য।।মামা শাহেদ হোসেনের খুশি যেনো আর ধরে না।বোন ভাগনীর প্রতি আলাদা এক মায়া কাজ করে হয়তো ভাইদের।
সারাদিনের ছুটোছুটির ক্লান্ত এসে ভর করেছে সবার মাঝে।।কাপড়ের পিন খুলে দিয়ে নিজেকে আকাশী আর সাদা রঙের সেলোয়ার কামিজে মুড়িয়ে নিলো অভনী।।নিজেকে আজ সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে আসা একঝাঁক ছেড়া মেঘ মনে হচ্ছে তার।।বাহিরে থেকে একসাথে খেয়ে এসেছে সবাই।তাই নিজেদের ক্লান্ত শরীর টাকে বিছানায় এলিয়ে দিলো সবাই।।তবে নীল আর অভনীর চোখে ঘুম নেই।।সারাদিনের এতো এতো ছুটোছুটির মাঝেও শরীর ক্লান্ত না হয়ে আলাদা এক শক্তি কাজ করছে ওদের মাঝে।হয়তো নিজের মানুষ টাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে লিখিতভাবে পেয়ে যাবে সেই আনন্দে নিজেকে ক্লান্ত করেও আলাদা আনন্দ পাচ্ছে ওরা।।
.
.
.
?
————-
বিছানা গুছিয়ে নীর্ঝয়ের ঘুমানোর ব্যাবস্থা করে দিচ্ছে নীরা।।বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা নিয়ে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে।।বিয়ের পরের দিন থেকে নীর্ঝয় কে খাটে দিয়ে নীরা নিজেই সোফায় ঘুমায়।এতে নীর্ঝয় প্রথমে আপত্তি করলেও নীরা মানতে নারাজ।।স্বামী কে সোফায় ঘুমুতে দিয়ে এতো বড় খাটে আয়েস করে ঘুম আসবে না তার।।
সোফা তে বালিশ রাখতেই কোথা থেকে যেনো নীর্ঝয় এসে বালিশ নিয়ে খাটের উপর রেখে দিলো।।নীরা কপাল কুঁচকে তাকালো নীর্ঝয়ের দিকে।।নীরার হাত থেকে কাঁথা টা ছোড়ে নিয়ে খাটের এক কোনে রেখে দিলো নীর্ঝয়।নীরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীর্ঝয়ের দিকে।।নীর্ঝয় নীরা কে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করালো।।আয়নার দিকে তাকিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো নীরা কে।।নীরা ডেবডেব করে তাকালো সামনে অবস্থানত আয়নার দিকে।।
নীর্ঝয়ের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি।নীর্ঝয়ের এমন অদ্ভুত হাসি কখনো দেখেনি নীরা।
নীর্ঝয় ঠোঁট জোরা অভনীর কানের পাশে এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বললো,,,,
—সরি। আমি অভনী কে ভালোবাসলেও তোমাকে অবহেলা করে কখনে কষ্ট দিতে চাইনি।।তবুও নিজের জানা অজানায় হয়ে গেছে।।অভনী নামটা আমি আমার মনের এক কোনে রয়ে যাবে ঠিকই,,কিন্তু বাকি জায়গা টুকু আমি তেমাকেই দিতে চাই।।নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাই আমি।।তুমি কি থাকবে আমার সাথে জীবনের সীমা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত?? আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না নীরা।।
নীরা দর্পনে এক দৃষ্টিতে নীর্ঝয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ এমন কিছু হবার কথা ভাবতেই পারেনি সে।জলে টইটুম্বুর করা চোখে মুখে এখনো লেগে আগে একবস্তা অবাকময় চাহনি।।নীর্ঝয় কিছু না বলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরার দিকে।।
ঘার ঘুরিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো নীরা তার ভালোবাসার মানুষ কে।।নীর্ঝয়ের ভালোবাসা পাবার অপেক্ষার প্রহর এতো তারাতাড়ি চুকে যাবে তা ভাবতে পারেনি সে।।
নীর্ঝয় ও আর বাঁধা দিলো না।। নীরা কে কোলে তুলে নিলো সে।লজ্জায় লাল হয়ে নীর্ঝয়ের বাহুডোরে মুখ লুকালো নীরা। ভালোবাসার জড়তা কাটিয়ে নতুন করে ভালো থাকবে ওরা।ভালো রাখবে দুজন দুজন কে।
.
.
.
?
————-
সকাল ৮ টা,,
ড্রইং রুমে বসে আছে সবাই।।অভনী,,মাইশা আর শাহেলা বেগম রান্নাঘরে চা,কফি বানাতে ব্যাস্ত।নিজেদের হাতে বানিয়ে কিছু খাবার মজাই আলাদা।।ব্যাস্ত শহরে এই পরিবারে একটু পরেই যার যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরবে সবাই।ব্যাস্ত নগরে ব্যাস্ত মানুষের আনাগোনাই বেশি।।সোফার মাঝ বরাবর খবরের কাগজের দিকে নজর দিয়ে বসে আছেন নীহাল আহম্মেদ।।রহিমা বেগম,,নীলিমা আহম্মেদ আর আরিহা বসে আছে তার পাশের সোফায়।তাদের বিপরীত পাশের সোফায় বসে মোবাইল টিপছে নীরব।।
অভনী,মাইশা আর শাহেলা বেগম ট্রে তে করে চা,কফি নিয়ে আসলো সবার জন্য।ভেজা চুল গুলো লেপ্টে থাকা কঁপালে হাতে ঘড়ি পরতে পরতে নিচে নেমে এলো নীল।অভনী আড়চোখে নীলের দিকে তাকালো।।কিন্তু নীলের দৃষ্টি শুরু থেকেই অভনীর উপর।দুজনের চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো অভনী।।
মাইশার চোখ মুখ শুকনা শুকনা দেখা যাচ্ছে।।চায়ের কাপ নিয়ে নীলিমা আহম্মেদের দিকে এগিয়ে গেলো মাইশা।।নীলিমা আহম্মেদ মাইশার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
—কিরে মামুনি।তোর কি শরীর অসুস্থ? চোখ মুখ কেমন লাগছে।
মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা টেনে মাইশা বললো,,,,
—না মামুনি।আমি ঠিক আছি।
মাইশা কফির কাপ নিয়ে নীরবের দিকে এগোতেই মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে নিলে পাশ থেকে অভনী ধরে ফেললো তাকে।।
কিন্তু মাইশার জ্ঞান নেই।।সবাই সোফা থেকে উঠে মাইশার কাছে এলো।নীরব কোলে নিয়ে সোফয় শুইয়ে দিলো তাকে।।শাহেলা বেগম পানি এনে ছিটিয়ে দিলো মাইশার মুখে। কিন্তু নাহ!
মাইশার জ্ঞান ফিরছে না।।
নীরবের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাঁপের সাথে একঝাঁক অস্থিরতা।মাইশা কে কোলে নিয়ে উপরে নিজেদের রুমে খাটের উপর শুইয়ে দিলো নীরব।।চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে ডাকছে সবাই মাইশা কে।।অভনী মাইশার হাত পায়ের তালুতে নিজের হাতের সংঘর্ষ লাগিয়ে গরম করতে ব্যাস্ত।
বেশ কিছুক্ষন চলে গেলো এমন ভাবেই।।সবার চোখে মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ।যখন জ্ঞান ফিরাতে পারছিলো না তখন হসপিটালে নেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।।নীরব,নীল,নীহাল আহম্মেদ আর অভনী মিলে রওনা হলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।।মোশাররফ চৌধুরীর বাসায় ও খবর দেয়া হয়েছে।
.
?
“সি ইজ প্রেগন্যান্ট ”
ডক্টর হাফিজুর রহমানের কথাটা বার বার বাজতে লাগলো সবার কানে।।এটা সত্যি?
সবার চোখে মুখে এক নিমিষেই সমস্ত চিন্তা দূর হয়ে আনন্দ খুশি এসে ভর করলো।।খুশিতে চুপসে যাওয়া চোখ মুখ চিকচিক করছে মাইশার।।মা হবার অনুভূতি একটি মেয়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি।
হাফিজুর রহমান বললেন,,,,
—তবে মাইশা মা কিন্তু খুব দূর্বল। তাই জ্ঞান ফিরতে লেট হয়েছে।তবে ভয় পাবার কিছুই নেই।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে।।কি ব্যাপার নীরব বাবা মিষ্টি খাওয়াবে না নাকি?? (হেসে)
পাশ থেকে খুশিতে গদগদ করতে করতে বলে উঠলো নীল,,,
—-আমি চাচ্চু হবো আর আপনাকে মিষ্টি খাওয়াবো না তা কি করে হয় আংকেল।।পুরো হসপিটালের সবাই কে মিষ্টি খাওয়ানো হবে আজ।
নীরব এখনো খুশি টাকে হজম করতে পারছে না।চারদিক থেকে মনে হচ্ছে আদো আদো সূরে ছোট এক বাবু বাবা বাবা বলে ডাকছে ওকে।
নীহাল আহম্মেদ মাইশার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন বাইরে বাসায় খবর দেয়ার জন্য।। হাফিজুর রহমান ও মুচকি হেসে চলে গেলেন নিজের চেম্বারে।
অভনী মাইশার কাছে যেতে নিলেই অভনীর হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো নীল।অভনী রেগেমেগে নীলের দিকে তাকাতেই ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠলো নীল,,,
—এখন ভাইয়া আর ভাবিপু কে একা থাকতে দাও একটু।ওদের নিজেদের মতো সময় কাঁটানোর সুযোগ করে দেয়াই তো উচিত তাইনা বলো?
অভনী আর না রেগে থেকে খুশিতে গদগদ করতে করতে বলে উঠলো,,,,,
—awwwwe ki cute ?.একটা গুলোমুলো কিউটি বেবি আসবে বাসায়।।আমি সারাদিন খেলবো বেবির সাথে।ছোট ছোট হাতে আদর করবে আমায়।আবার আদো আদো সূরে মামুনি বলবে।ইশশশ আমার তো এখন খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে। ??
অভনীর দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে নীল বললো,,,,
—এতো লাফিয়ো না।পড়ালেখা রেখে সারাদিন লাফানো চলবে না।।আমি কিউটু বাবু কে আমার কাছে রাখবো সারাদিন আর তুমি পরবে।awwwe ki cute নাহ??
নীলের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে অভনী।।নীল মুচকি হেসে অভনীর দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে বলে উঠলো,,,,,
—পরী বউ যখন তোমার আমার বেবি হবে তখন এই বেবির সাথে ওই বেবি সাথে নিয়ে সারাদিন আদর করো।চিন্তা করো না সময় টা কিন্তু বেশি দূরে নয়।আর কিছুদিন অপেক্ষা করো তোমার কোলে কিউট কিউট বাবুর অভাব হবে না। ?
নীল দাঁত কেলিয়ে হাঁসা শুরু করলো। অভনীর ইচ্ছে করছে এখন নীলের দাঁত গুলো ভেঙে দিতে।
“হিরো সাহেব টা ইদানিং বেশ লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।মুখে কিছুই আটকায় না।যখন তখন লজ্জায় ফেলে দেয় আমায়।”
#চলবে,,,,
(আমি দুঃখিত লেট করার জন্য।আরেকটু গুছানোর ইচ্ছে ছিলো কিন্তু নাহ! দ্রুতই শেষ করে দেবার ট্রাই করবো এই গল্পটা)