আমার রাজ্যের রানী পর্ব-৩৪

0
697

#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 34
#Writer : Sriti Nur Avni

?
ক্যাম্পাসের সামনে গাড়ি থামিয়ে অভনীর হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো নীল।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে অভনী,,,আড়চোখে চারদিকে তাকালো একবার সে।।আশে পাশে মেয়ে গুলো কেমন ডেবডেব করে দেখছে ওকে।মনে হচ্ছে গিলে খেয়ে ফেলবে।ক্রাস বয় কে অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে হিরোর মতো হেঁটে যেতে দেখে তাদের নরম তুলতুলে মনটা যে এলোপাথাড়ি ভাবে ভেঙে চলছে তা ওদের মুখের চাহনী তে স্পষ্ট। এতে নীলের কোনো হেলদোল নেই।নিজের মতো করে হেঁটে চলছে সে।

জয়া আর জুথি বসে আছে ক্লাসরুমে।নীল অভনীর হাত ধরে ক্লাস রুমে ডুকতেই ওদের চোখ দুটো বেড়িয়ে যাবার উপক্রম।ডেব ডেব করে ওদের দিকে তাকিয়ে টুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো দুজন।ওদের মনে এই মুহূর্তে একটা কথাই বারবার তবলা বাজছে “তলে তলে এতোকিছু?How? ”
ওদের কাছে এসেই ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দিলো অভনী।কিন্তু এই মূহুর্তে ওর এই হাসিটা গ্রহন যোগ্য হয়েছে বলে মনে হলোনা।মুখে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো নীল,,,,,

—কি ব্যাপার শালিকা রা এমন হা করে তাকিয়ে কি দেখছো?

নিজের ক্রাস বয়ের কাছ থেকে শালিকা নাম সম্বোধন শুনে হাত পা ছরিয়ে ভ্যা ভ্যা করো কাঁদতে ইচ্ছে করছে জয়ার।অভনীর মুখে এখনো ইনোসেন্ট মার্কা হাসি ঝুলে আছে।খুশিতে গদগদ করতে করতে বলে উঠলো জুথি,,,,,

—আপনি ই বড় ভাই?

—জ্বি আমিই বড় ভাই ?

এবার লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো জয়া,,,,

—আউ কি কিউট তার মানে আমাদের অভনী শেষমেশ বড় ভাইয়ের বউ আর আমদের ভাবি?

দাঁত বের করে হেসে বলে উঠলো নীল,,,,,

—শুধু তোমাদের না জনগনের ভাবি ?

অভনী রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নীল।মুখ টিপে হেসে বলে উঠলো জয়া,,,

—বাহ জনগনের বড় ভাই দেখি এখনি আমাদের ভাবি কে ভয় পায়।

—ভয় পাই না রে বোন।এটাকে বলে বউয়ের প্রতি সেলফ রেসপেক্ট। যা শুধু একজন বিয়ে করা স্বামী আর প্রেমিকরাই বুঝে ?

নীলের কথায় হুহু করে হেসে উঠলো জয়া আর জুথি। অভনী নাক মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুচকি হেসে বলে উঠলো নীল,,,,

—আচ্ছা আপাতত আমার পরী বউ টাকে তোমাদের কাছে বন্দক দিয়ে গেলাম।দেখে রেখো।

নীল যাবার আগেই জুথির মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো,,, কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে তীব্র কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।উওেজিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো জুথি,,,

—কি হয়েছে?

অপরপাশ থেকে কি বলা হলো তা শুনতে পেলো না অভনীরা।তবে জুথির উওেজনায় বেশ ভয় পাচ্ছে অভনী আর জয়া।অপরপাশ থেকে কোনো শব্দ আর ভেসে আসছে না।জুথি টুপ করে বসে পড়লো চেয়ারে।চোখে মুখে প্রচন্ড রকমের বিষন্নতা আকরে ধরেছে তাকে।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।অভনী উওেজিত হয়ে জুথি কে বলে উঠলো,,,,,

—কি হয়েছে এমন করছিস কেন? কেউ অসুস্থ হয়েছে?

কিন্তু নাহ! জুথির মুখে কোনো কথা নেই।নীল ভ্রু জোরা কুঁচকে তাকিয়ে আছে জুথির দিকে।মূহুর্তেই জ্ঞান হাড়িয়ে ডলে পরলো অভনীর কোলে জুথি।জুথি কো ডাকতে ডাকতে নীল কে উদ্দেশ্য করে অভনী বললো,,,,
—আমার ব্যাগে পানির বোতল আছে দিন তো তারাতারি।

নীল পানির বোতল দিতেই জুথির চোখে মুখে মাথায় পানি দিতে লাগলো জয়া।ইতিমধ্যে বেশ কয়েজন এসে জমা হয়েছে ওদের কাছে।নীল উৎকৃষ্ট সূরে বলে উঠলো,,,,

—ডক্টরের কাছে নিতে হবে মনে হয়।তোমরা বসো আমি ট্রলি নিয়ে আসছি।

তখনি জ্ঞান ফিরে আসলো জুথির। জ্ঞান ফিরতেই উত্তেজিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলতে লাগলো,,,

—আমি বাসায় যাবো,, বাসায় যাবো আমি অভনী।আমাকে বাসায় নিয়ে চল না।বাসায় যাবো আমি।আমার বাবা!

জুথির চোখে মুখে হাত দিয়ে নরম সূরে বলে উঠলো অভনী,,,,,

—কি হয়েছে বল আমাদের।আংকেল কি অসুস্থ?

জুথি জোরে জোরে কান্না করতে করতে বলে উঠলো,,,,,

—ওরা বলছে আমার বাবা আর নেই রে।আমার বাবা চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।

মূহুর্তেই পরিবেশ টা কেমন থমথমে রুপ ধারন করেছে।এতোক্ষন সবাই উৎকৃষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকলেও বর্তমানে সবার চোখে বিষন্নতা,,মায়ায় ভরপুর। জয়া আর অভনীর চোখ দিয়েও পানি পরছে।

মেয়েরা বাবাকে একটু বেশিই ভালোবাসে।বাবারাও হয়তো মেয়েদের একটু বেশিই ভালোবাসে।মেয়েদের প্রতিটি অশ্রু ফোঁটায় বাবাদের বুক ভরা সান্ত্বনা মিশে থাকে নীরবে।প্রতিটি মুগ্ধ দৃষ্টিতে থাকে আদর মাখা চাহনি।প্রতটি সফলতার প্রদক্ষেপগুলোতে বাবার পায়ের চিহ্নটিই স্পষ্ট। বাবার হাজারো স্বপ্ন গুলোতেই মিশে থাকে একটি মেয়ের ভালোথাকা।সেই বাবাই যখন আদরের মেয়েকে রেখে পারি জমায় না ফেরার দেশে সেটা কি মেয়েটার সহ্য সীমার মধ্যে? অভনীর চোখে মুখে ফোটে উঠছে নিজের বাবা কে হারানোর সেই কঠিন মুহূর্ত গুলো।ফুটে উঠছে সেই কঠিন যন্ত্রনা, বুক ফাঁটা আত্নচিৎকার।সময় কখন কাকে কোন পরিস্থিতি তে ফেলে বলা যায় না।সময় পরিবর্তনশীল।এই তো একটু আগে খিলখিল করে হাসছিলো মেয়েটা আর এখন!

কান্নার গতি কমিয়ে অভনী আর জয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো জুথি,,,,

—আমাকে বাসায় দিয়ে আয় না প্লিজ।আমাত এই শহরে তোরা ছাড়া আর কেউ নেই আপন।

অপরাধীর চোখে জুথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো জয়া,,,

—আমার বাবা কেমন জানিস ই তো।তাও আবার গ্রামে।আমাকে দিবে নারে,, অভনী তুই যা না প্লিজ।

অভনী অসহায় চোখে নীলের দিকে তাকালো নীল চোখে ইশারা করে সায় দিলো যাওয়ার জন্য।অভনীর দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো নীল,,,,

—তুমি ওকে নিয়ে আমার গাড়িতে গিয়ে বসো।আমি ২ মিনিট স্যারের সাথে ওর ব্যাপারে কথা বলে চলো আসছি।আমি নিয়ে যাবো তোমাদের।

অভনী জুথি কে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরলো। জুথি অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।যার ধরুন অভনীর চোখের টলমল করা নোনাজল গুলোও বাঁধা মানছে না।নীল গাড়িতে এসে অভনী কে ইশারা করলো কান্না না করার জন্য অভনীও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে,,, প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা গাড়ি ড্রাইভ করার পর তারা গ্রামে এসে পৌঁছালো।জুথির কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।দেখে তো গিয়েছিলো হাসি খুশি পূর্ন একটি পরিবার অথচ আজ চারদিকে কান্নার সমাগম। বাবার হাতের আদর খেয়ে বেড়িয়েছিলো সে এই বাসা থেকে।কে যানতো আবার এসে বাবা নামক আদরের ছায়া কেই দেখবে নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে।?

চারদিকে মানুষে ভরপুর।অভনী জুথি কে নিয়ে বাসার ভিতরে গেলো।নীল গাড়ি পার্ক করে রেখে ভেতরে গিয়ে বসলো।।

জুথি আর ওর একজন বড় ভাই কে নিয়েই সংসার ছিলো ওদের।জুথি ওর মায়ের পাশে বসে কান্না করছে আর অভনী জুথির পাশে বসে আছে।কয়েকজন মহিলা এসে একে অপরের কাছে বলতে লাগলো,,,,

—কয়দিন আগে ভালা একটা বিয়া আনছিলাম কিন্তু না হুনলো না জুথির বাপে।মাইয়া নাকি এহন বিয়া করবো না পড়ালেহা করবো বলি এবার কে বিয়া দিবো জুথি রে? (প্রতিবেশী ১)

—হু আমগো হের বাপেও একটা আনছিলো কিন্তু না কইরা দিছে।ভালা জায়গা ছিলো। বাপ নাই এহন দেখমু নে কেমন জায়গাত বিয়া হয় (প্রতিবেশী ২)

—পড়ালেহা কইরা কি উল্টাই বো?মাইয়া মানুষ এতো পড়ালেহা করা লাগে হেই তো ডেক পাতিল ওই খোঁচান লাগবো। (প্রতিবেশী ৩)

—জুথির বাপ শুনলো না আমার কথা।বিয়ার পর কি পড়তে পারতো না কন তো?আর পড়লে পড়তো না পরলে নাই জামাই ভালা ব্যাবসায়ী আছিলো পায়ের উপরে পা তুইলা খাইতো।(প্রতিবেশী ১)

—-এহন এই বাপ ছাড়া কালা মাইয়া রে কেডায় করবো বিয়া।জুথির মার আরো জ্বালা দিয়া গেলো জুথির বাপে।(প্রতিবেশী ৪)

একে অপরের কানাকানি প্রতিনিয়ত বাড়তেই লাগলো।প্রতিটি কথাই জুথি,,জুথির না আর অভনীর কানে বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছে অনবরত,,, নাহ! আর সহ্য হলো না অভনীর। জুথি কে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো সে,,,,,,

—সমস্যা কি আপনাদের?আপনারা কি মেয়েটাকে স্বান্তনা দিতে এসেছেন নাকি ওর বিয়ে নিয়ে কথা বলে আরো কষ্ট দিতে এসেছেন?ডক্টর দেখানোর সময় আপনারাই মেয়ে ডক্টর খুঁজেন অথচ পড়াশোনার বেলা?বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই বরং বাঁচি।
ছেলেদের বেলায় তো এমনটা হয়না।কারন মেয়েরা তো পরের বাড়ি চলে যাবে,,, কি দরকার নিজেদের টাকা খরচ করে লেখাপড়া করানোর তাইনা?বিয়ে দিয়ে দাও শশুড় বাড়ির লোকেরা পড়াশোনা করালে করাবে আর না করালে নাই।
অথচ মেয়েদের যত টাকা খরচ করে পড়াশোনা করানো হয় তার চেয়ে হাজার গুনে বেশি টাকা দিয়ে তারা বাবা মা কে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে।আর যে মেয়ের নিজের হাতে টাকা নাই! তারা স্বামীর দিকে মুখ পানে তাকিয়ে থাকে বৃদ্ধা বাবা মা কে একটু সাহায্য করার জন্য।
তাহলে?কেনো মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সমাজে আপনাদের এতো মাথা ব্যাথা?সব নিয়ম শুধু মেয়েদের বেলায়ই কেনো?কেনো ২০ বছর হলেই আপনাদের ওই মেয়েটার উপর উঠে পরে লাগতে হবে আর বার বার বলতে হবে “মেয়েটা বুড়ি হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনো বিয়ে হচ্ছে না /দিচ্ছে না?হুয়াই??
মেয়েরা প্রতিবাদ করতে পারবে তো বেঁচে থাকতে পারবে না হলে সমাজে আপনাদের মতো পাটকলের চিপায় পড়ে বাবা মায়ের কঠিন সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে আত্নহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।।বাট হুয়াই?আপনারা মেয়ে নন?নাকি শুধু নামে মাএ মেয়ে??

এই মেয়েটা কি জানতো ওর বাবা এভাবে ওকে রেখে চলে যাবে?আপনারা মেয়েটি বিয়ে করেনি বলে তার পড়াশোনা নিয়ে এতো এতো কথা শুনাচ্ছেন অথচ মেয়েটি স্কুল কলেজে গোল্ডেন A+ পেয়ে পাশ করা মেডিকেলের স্টুডেন্ট। মেয়েরা কোনো পরিবারের আঁগাছা নয় যে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি। মেয়েদের নিয়ে সমালোচনা করার আগে প্রত্যেকে নিজের ঘরের মেয়েদের দিকে তাকান।মেয়েদের ইচ্ছা অনিচ্ছার একটু দাম দিন।তাদের একটু সুযোগ দিন তারা একটি পুরো পরিবারে খুঁটি হয়ে দাঁড়াবে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অভনী।এতোক্ষনে পুরো রুম শান্ত হবার সাথে সাথে বেশ কয়েক জন এসে দরজার কিনারে দাঁড়িয়েছে।কিন্তু নাহ! এই কথাগুলোর কোনোটিই যে কারো কানে যাবে না তা বেশ ভালো করেই জানে অভনী।এই মুহূর্তে চুপ থাকলেও একটু পরে আবারো ওকে নিয়েই বলে উঠবে ” মেয়েটা বেশি পকপক করে।ঢাকা শহরের মেয়ে হলে যা হয় আরকি।বাপ মা শিক্ষা দেয়নি”
অথচ সেই শিক্ষা টা তাদের মাঝে ছিদ্র ওয়ালা বালতির মতো তা তারা নিজেরাই জানেনা।
এটাই আমাদের সমাজ।

অভনী নিচু হয়ে জুথির কাছে বসলো,,,জুথির চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,,,,

— কান্না করিস না।আমারো বাবা নেই,,বাবা হারানোর কষ্ট আমি জানি।কিন্তু কারো কথা কানে নিস না তাহলে তোকেও শেষমেশ আত্নহত্যার সিদ্ধান্তই নিতে হবে।খুব তারাতাড়ি ভাইয়া আর আন্টি কে নিয়ে ঢাকা চলে আয় ওখানে আর যাই হোক প্রতিবেশী বা সমাজের কথা শুনতে হবে না।আসি রে আমাদের বাসায় পৌঁছাতে হবে আবার।

.

.

.
?
———————–
ছাদের এক পাশে বড় দোলনায় নীলের কাদে মাথা রেখে বসে আছে অভনী।নীল অভনীর একহাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে রেখেছে।।দৃষ্টি তাদের গোল বল আকারের কিরন ছরিয়ে পড়া চাঁদের দিকে।।কারো মুখে কোনো কথা নেই।শুনশান নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো অভনী,,,,,,

—এভাবে চুপচাপ বসে আছেন কেনো?আর এতোরাতে এখানেই বা ডাকলেন কেন?

—চুপ করে থেকে অনুভব করছি।

—কিহ?

—তোমার হার্টবিট।

নীলের কাদ থেকে মাথা তুলে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলো অভনী,,,,

—আচ্ছা হিরো সাহেব আপনার ওই রিকশা ওয়ালা মামার কথা মনে আছে?ওনার বউ কে যে এসিডে মুখ নষ্ট করে দেয়া হয়েছিলো?আচ্ছা কোনো ভাবে যদি আমার চেহারা টা নষ্ট হয়ে যায়।তাহলে কি আপনি আমায় ভুলে যাবেন?

মুচকি হেসে অভনীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,

—পরী বউ তুমি কি জানো মাঝে মাঝে তুমি বাচ্চা হয়ে যাও?

অভনী গাল মুখ ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টে বসে আছে।আবারো মুচকি হেসে বলে উঠলো নীল,,,,

—চেহারা দেখে ভালোবাসা হয়না পরী বউ।এই পৃথিবীতে সুন্দর বলতে কিছুই নেই।যে যাকে যত বেশি ভালোবাসে তার কাছে তাকে ততবেশিই সুন্দর লাগে।।তাতে সে যত কুৎসিত ই হোক না কেন।প্রেম সেটা তো মোহ মাএ,,,আমি তোমায় মায়ায় পরেছি পরী বউ যা এ জীবনে শেষ হবেনা❤

অভনী লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে আবারো মাথা এলিয়ে দিলো নীলের কাদে।আকাশের মুখপানে তাকিয়ে থেকে উদাসীন সুরে বলে উঠলো নীল,,,,,

—আমি তোমাকে একটা important কথা বলার জন্য ডেকেছি পরী বউ।

কাদে মাথা রেখেই পা নাচাতে নাচাতে বলে উঠলো অভনী,,,,,

—কি হিরো সাহেব?

—আজ রাত ৩ টায় আমার একটা মিশন আছে।খুবই ক্রিটিকাল মিশন এটা।দেশের বাহিরে কয়েকশ মেয়ের সাথে নেশাদ্রব্য পাচার করে দেয়ার জন্য নেয়া হবে।।আমার লোক সেটা রাত ৮ টার দিকে খবর পেয়েই আমাকে জানিয়েছে।জানিনা বেঁচে ফিরবো কিনা।আগে কোনো ভয় ছিলো না কিন্তু এবার ভয় লাগছে কারন আমার পরী বউ কে হারিয়ে ফেলতে হয় যদি।

অভনী নীলের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো। অভনীর এমন হাসির কারন বুঝতে না পেরে কপালে ভাজ পরে আছে নীলের।হাসি থামিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,,,,,

—নাইস জোকস মি. হিরো সাহেব।আপনি একজন ডক্টর। আর ডক্টর হয়ে কিনা যাবেন মারামারি করতে?হাও ফানি!আপনি বলবেন আর আমি বিশ্বাস করবো?

অভনী কে ধমকের সূরে বলে উঠলো নীল,,,,,,

—আমি সিরিয়াস।

অভনী এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। এক দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে।অভনীর হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,,

—আমি শুধু একজন ডক্টর নই পরী বউ।আমি এ শহরের বড় একজন মাফিয়া।তোমার মনে আছে তোমার দিকে যারা খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তারা তোমার কাছে মাফ চেয়েছে? ওদেরকে আমিই মেরেছিলাম।একদিন বৃষ্টিতে আমাদের দেখা হয়েছিলো সেদিন আমিই রাস্তার মাঝে তোমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো বলে মেরেছিলাম।আর ওইযে শাফিন! শাফিন কেও আমিই মেরেছি।কারন ও বড় একজন ড্রাগস ব্যাবসায়ী ছিলো তার সাথে নজর ছিলো তোমার উপর তাই শেষ করে দিয়েছি।প্লিজ ভুল বুঝো না আমায়।আমি এমন টা না করলে শাফিন আরো হাজার টা মানুষ কে মারতে পারতো। আজকের মিশনে আমি ফিরে আসতে পারবো কিনা জানিনা।কিন্তু তুমি আমাকো ভুল বুঝো না প্লিজ পরী বউ।মামুনি বাবা নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে এই পেশা করতে দিয়েছে কারন আমি দেশের জন্য কাজ করি।তাছাড়া এটা আমার ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিলো।আজকেও মামুনি বাবা জানে আমি মিশনে যাবো কিন্তু এটা কতোটা ক্রিটিকাল সেটা জানে না ওরা কারন আমি জানি যতোই হোক নিজের সন্তান কে মৃত্যুর মুখে যেতে দিবে না ওরা।হয়তো আমায় ঘরে বন্দি করেই রাখবে।কিন্তু এতে কত কত মানুষের ক্ষতি হবে ভেবে দেখেছো।তোমাকও বলতাম না।কিন্তু মনে হলো যদি আর ফিরে না আসতে পারি তুমি কিছুই জানতে পারবে না।

অভনী এতোক্ষন যাবৎ নীলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে ঝর্নার গতিতে পানি ঝরছে তার।অভনী কে কিছু বলছে না দেখে নীল অভনীর কাদে হাত দিয়ে নাড়া দিলো অভনীকে।।মুহূর্তেই অভনী নীল কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অভনী।। নীল কি বলবে বুঝতে পারছে না।চোখের কোন ঘেঁষে নোনাজলে জমাট বেঁধে আছে যে তারও।।এই মুহূর্তে অভনী কে জরিয়ে ধরা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না সে।
পরক্ষনেই সব দ্বিধা দূর করে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো অভনী কে।যেনো ছেড়ে দিলেই চলে যাবে কোথাও।

বেশ কিছুক্ষন পর নীল কে ছেরে দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো অভনী,,,,,,,

—-আমি এক্ষুনি ছোট মা কে সব বলে দিবো।আপনি যাবেন না প্লিজ।আমি আপনাকে যেতে দিবো না।আমি এক্ষুনি যাবো ছোট আব্বুর কাছে।

অভনীর এমন উত্তেজনা দেখে নীল শক্ত করে চেপে ধরলো অভনী কে।কিন্তু নাহ!এতেও অভনীর এমনি করছে নীল বাধ্য হয়ে জোড়ে ধমক দিলো অভনী কে।অভনী চুপ করে বসে পরলো কিন্তু চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে।অভনীর দুই কাদে হাত রেখে নিজের দিকে ফিরালো নীল।শান্ত দৃষ্টিতে অভনীর দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠলো নীল,,,,,

—বি প্রেক্টিকাল পরী বউ।আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।আমি না গিয়ে আমার টিমের সবাই কে আমি বিপদে ফেলতে পারিনা।আর আমরা না গেলে এতোগুলো মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাবে।পাগলামি করো না।তাহলে আমার মন খারাপ হয়ে যাবে মিশনে মন থাকবে না।সকাল ১০ টার ভিতরেই আমি চলে আসবো ইনশাআল্লাহ। তুমি,,,,

তখনি নীলের ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে নীর্ঝয়ের নাম দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো নীল।ফোন রিসিভ করতেই উপাশ থেকে গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,,,,,

—মিশনে যাবি কয়টায়?

—তুই জানলি কিভাবে?

—যেভাবেই জেনেছি।নৌকা ঘাট থেকে ছারবে কয়টায়?আর তুই যাবি কয়টায়?

—এখন বাজে ১১ :৪৫.আমি যাবো ১২ঃ৩০ টার দিকে আর নৌকা ছারবে ২ টার দিকে।কেনো বলতো?

উপাশ থেকে শান্ত সুরে বলে উঠলো,,,,

—আমি যাবো নিয়ে যাস।

অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,,

—হুয়াট? তুই আর মিশন?হাউ?তুই ঠিক আছিস নীর?

—আমি যা বলেছি তাই করবি নাহলে আমি একাই চলে যাবো।তুই এতো বড় একটা মিশনে গিয়ে বসে থাকবি আর আমি ঘরে ঘুমাবো?নো নেভার।আমি ঝগড়া মারামারি না করলেও করতে পারি না যে তেমন না কিন্তু।

—কিন্তু নাহ আমি তোকে নিয়ে যাবো না।

—যাবি মানে যাবি নাহলে আমি একাই চলে যাবো।

—নীর শুন,,,

অপরপাশ থেকে কল কেটে দিলো।নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভনীর দিকে তাকালো।অভনী ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নীল দোলনায় বসে অভনীর মাথা টা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে অভনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো,,,,,

—লুকিয়ে প্রেম করার মজাই আলাদা ?

কিন্তু নাহ!অভনীর এতে কোনো হেলদোল নেই। সে ভাবছে,,,,

“সত্যিই কি হারিয়ে ফেলবে মানুষ টাকে?”

.

#চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here