#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 33
# Writer : Sriti Nur Avni
?
চারদিকে ঘনকালো অন্ধকার আর শুনশান নীরবতা। অভনী ভয়ে ভয়ে কয়েক পা ফেলতেই কেউ একজন এক টুকরো কাপড়ে আবদ্ধ করে চোখ জোরা বন্ধ করে দিলো তার।এক হাতের কনুই ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো সামনে।অভনী জমে ফ্রিজ।বিরবির করে আয়াতুল কুরসি পড়ছে বার বার।এই বুঝি কোনো জিন ভুত তাকে নদীতে ফেলে দিলো।স্বপ্ন নাকি সত্যি তা বুঝার জন্য নিজেই নিজের হাতে চিমটি কেটে ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠলো অভনী।লোকটা থেমে গেলো।পরক্ষনে আবারো হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও।
হঠাৎ থেমে গেলো সবকিছু।থেমে গেলো লোকটার চরনের সাথে সাথে অভনীর চরন গুলোও।ধীরে ধীরে চোখের বাধন আলগা হতেই অস্পষ্ট আলো এসে লাগলো অভনীর চোখে।ডান হাত এগিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে চোখের বাধন খুলতেই চমকে উঠলো অভনী।কি অদ্ভুত সুন্দর!কি অমায়িক সুন্দর্য এসে ভর করেছে বর্ষায় পানিতে ভরপুর চারদিকে আলোপূর্ন এই নদীটাকে।গভীর রাতের নীরবতা পূর্ন নদীটাতে হাজারো ডিঙি নৌকায় ভরপুর।প্রতিটা নৌকায় মরিচ বাতির চিকচিক আলোয় ফুটিয়ে আছে তাহার সাথে আকাশে উড়ে চলছে হাজারো ফানুশ।চোখ জোরা যতটুকু পর্যন্ত দেখতে পায় ততোটুকু ভালো করে খেয়াল করলো অভনী।নাহ! এই সৌন্দর্যের আজ শেষ কোথায় বোঝা যাচ্ছে না।নৌকাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত একটার পর একটা ফানুশ উড়িয়েই যাচ্ছে। যার ধরুন আকাশের অনেক উপর থেকে নিচে পর্যন্ত ছোট ছোট বাতি তে ভরপুর হয়ে আলোকরশ্মি ছরিয়ে দিয়ে চলছে।চারদিকের চোখ ধাধানো পরিবেশ দেখতে দেখতে নিজের নৌকার দিকে তাকাতেই ভুলে গেছে অভনী।
আচমকা শব্দ হওয়ায় ভয় না পেয়ে শব্দের উৎশ খুঁজতে চোখ জোরা পেছনে ঘুরাতেই গোলাপের একগুচ্ছ পাপড়ির সাথে নানান রঙের কাগজের জরি উপর থেকে অভনীর উপরে পরতে শুরু করলো।।মুখে হাত দিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই আরেক দফা জাটকা খেলো অভনী।।নীল! গাড়ো হলুদ রঙের পাঞ্জাবির সাথে ব্লাক পেন্টের পকেটে এক হাত আর আরেক হাত পিছনে রেখে মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখে স্টেটভাবে দাঁড়িয়ে আছে নীল।অভনী কিছু বলবার আগেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো নীল।সাথে সাথে ওদের বড় নৌকো টায় জলমলে আলো ছরিয়ে পড়লো।অভনী পাশ ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো নীহাল আহম্মেদ,, নীলিমা আহম্মেদ,,নীর্ঝয়,, আরিহা,,মাইশা,নীরব,মাহিব দের সাথে দাঁড়িয়ে আছে নানু আর মা শাহেলা বেগম ও।প্রত্যেকে সিরিয়াল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে হাতে বড় একটা করে কাগজ ঝুলিয়ে। যেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে,,, “Will you marry me?”
অভনীর মাথায় এখনো কিছুই ডুকছে না।ভ্রু জোর কুঁচকে নীলের দিকে তাকাতেই মুচকি হেসে একগুচ্ছ বর্ষার বৃষ্টি স্নান্ত কদম ফুল এগিয়ে দিলো অভনীর দিকে নীল।চারদিকে এতো এতো ঝলসানো আলোর মাঝে টাটকা হলুদ আর সাদা মিশ্রনের ফুল গুলো ঝলমলে হয়ে রুপ ধারন করেছে বাহারী রঙে।অভনী একদৃষ্টিতে কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকে আগ্রহময় চোখে তাকালো নীলের দিকে।।আবেগ প্রবন দৃষ্টিতে অভনীর দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট জোরা নাড়িয়ে বলে উঠলো নীল,,,,
“❤তোমার প্রতিটা খিলখিল হাসির শব্দে আমার হৃৎপিন্ডের তীব্র আওয়াজ টাই যেনো বেজে উঠে বারবার।তোমার হাজারো স্বপ্ন গুলোতে আমার স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি যেনো খুঁজে পাই বারবার।তুমি আমার অস্তিত্বে মিশে আছো শিউলি ফুলের সুগন্ধি টির মতো শীতল কিন্তু তীব্রভাবে।আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমাতে বিভোর,,,প্রতিটি শব্দ তোমাতে ভালোবাসায় স্নিগ্ধ।।প্রতিটি মানুষের জীবনে আলো ধরে রাখার মতো কেউ একজনের প্রয়োজন হয়।।তুমি কি আমার জীবনে আলো ধরে রাখার মানুষটি হবে?বর্ষায় একগুচ্ছ কদম হাতে সমুদ্রের তীর ঘেষে ঝুনঝুন করা নুপুরের শব্দের সাথে সাগরের ওই উতালপাতাল ঢেউয়ের শব্দের মাঝে হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবে আমার সাথে?বর্ষা ফুরিয়ে গেলে নাহয় তীব্র গন্ধে ডাকা বেলীফুলের মালা চুলে গেঁথে দিয়ে হেঁটে বেড়াবো সমুদ্রের সমারোহে।।সাথে থাকবে তোমার হাতে মুগ্ধ করা সুগন্ধযুক্ত সাদাগোলাপ।।হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে তোমার কানে ফিসফিস করে বলে উঠবো ” জীবনের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার সাথী হবে কি আমার?হবে কি তুমি #আমার রাজ্যের রানী’?”❤”
অধীর আগ্রহ পূর্ন চোখ জোরা নিয়ে তাকিয়ে আছে অভনীর দিকে নীল।চারদিকে ফানুশের আলোর সমারোহের মাঝে নীল রঙের শাড়িতে মুড়িয়ে থাকা রমনীর বর্ষায় বৃষ্টির টুপ টুপ ফোঁটার মতো ঝরে পরছে শ্রাবনের উল্লাসিত চোখের নোনাঝল।নীলের প্রতিটি কথা বার বার কানে বাজছে তার।গোলাপের ন্যায় পাপড়ির মতো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গাল দুটো। নীলের প্রতিটি কথায় প্রতিটি শব্দে আজ অন্যরকম মাদকতা,,,যেই মাদকে তীব্র গতিতে নেশাগ্রস্ত করে তুলছে অভনীকে।।পাশ থেকে আপনজনদের কন্ঠ ভেসে আসায় চোখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো অভনী।সকলের কন্ঠে ‘হ্যাঁ বলে দে অভনী’ ধ্বনি টা বার বার বুকের বা পাশ টায় তীব্র ভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে অভনীর।ছলছল ময় চোখ জোরা নিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকালো অভনী,,মায়ের মুখের তীপ্তির হাসি,,শাহেরা বেগম মাথা কাথ করে সায় দিলেন মেয়েকে।
অভনীর মুখে ফুটে উঠলো রাজ্য জয় করার হাসি।।যতোই হোক মানুষ টাকে মনে মনে ভালোবাসে যে।নীলের তুমি তে আচ্ছন্ন আজ সে।।
ঘার ঘুরিয়ে নীলের দিকে তাকিয়েই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো অভনী।।নীল ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মুচকি হেসে কদমফুল গুলো হাতে নিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,
❤””পরের বছর অপেক্ষায় থাকবো আপনার,,,ভারি বর্ষায় ক্লান্ত হয়ে পড়া আমার হিরো সাহেব হয়ে একগুচ্ছ কদম ফুল হাতে নিয়ে কানে কানে এসে বলে যাবেন,,” মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ পারি দেওয়ার সাথী হবে কি আমার”❤
মুচকি হেসে অভনী কে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নীল।নীর্ঝয়,মাহিব,নীরব আর নীহাক আহম্মেদ এসে একে একে জরিয়ে দরলেন নীল কে।।শাহেরা বেগম, নীলিমা আহম্মেদ আর মাইশা এসে জরিয়ে দরলো অভনী কে।মাইশার দিকো তাকিয়ে ভ্রু জোরা কুঁচকে প্রশ্ন করে উঠলো অভনী,,,,,
—মাইশা আপু তোমরা তো দেশের বাহিরে ছিলে তাহলে এখানে কিভাবে?
—হু আর বলো না।আমরা ফিরেছি ১০ টার দিকে।একটু খানি রেস্ট করে শুধু খেতে পারছি।তারপর আর শান্তি দিলো বুজি তোমার হবু জামাই।নিয়ে আসলো এখানে।তবে পরিবেশ টা কিন্তু ভারি সুন্দর। আমার দেবরজি কিন্তু তার বড় ভাইয়ের মতো গাঁধা না।
—ওই কি বললে তুমি আমি গাঁধা??(নীরব)
অভনীর থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠলেন নীলিমা আহম্মেদ,,,,,
—আহ থাম তো তোরা ঝগড়া করিস না।জানিস অভনী আমি আজ অনেক অনেক খুশি।মাইশা আরোকটা মেয়ে হিসেবে পেলেও তোকে হারানো ভয় ছিলো সবসময়।মনে হতো তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের আর মনেই রাখবি না। কিন্তু আজ বিকালে নীল যখন আমার কোলে মাথা রেখে সোজাসুজি বললো “মা আমার অভনী কে চাই।দিবে আমায়?কথা দিলাম তোমাদের মেয়ে কে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না”।আমার সে কি খুশি! আমার এই বদমেজাজি রাগী ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে তোকে।ভালো থাকিস সবসময়। (কপালে চুমু দিয়ে)
অভনী লজ্জায় লাল নীল হলুদ হয়ে যাচ্ছে।শাহেরা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,,,,
—ভাগ্য করে জন্মেছিস তুই বলতেই হয়।নাহলে কি আর এমন একটা পরিবার পেতি?জানিস আমি রাজি ছিলাম না কারন এটা বামন হয়ে চাঁদে হাত দেয়ার মতোই হয়ে যায় কিন্তু সবার কথায় জোরাজুরিতে আর নীল বাবার দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েই গেলাম।ভালো রাখিস সবসময় সবাই কে।
অভনী মা কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।নিহাল আহম্মেদ পাশ থেকে বলে উঠলেন,,,,
— আমাদের এখন ঘুমুতে যাওয়া উচিৎ তাইনা নীলু?অনেক ঘুম পাচ্ছে।চলো চলো,,, নাহলে নীল একটু পরে ফানুশের মতো আমাদের ও উরিয়ে দিবে।
সবাই ফিক হয়ে হেসে উঠলো। আসেপাশের ডিঙি নৌকা থেকে এখনো একটু পরপর আকাশে ফানুশ উরিয়ে দেয়া হচ্ছে সবার খিলখিল হাসি আর বাতাসের শু শা শব্দে অন্যরকম ভাবে মেতে আছে সবাই।কিন্তু হাসি নেই শুধু নীর্ঝয়ের মুখে!কৃতিম শুকনা হাসি একেঁ রেখেছে সে মুখে।এই দিনটাই তো দেখতে চেয়েছিলো সে।।তাহলে! বুকের বাম পাশ টায় এতো ব্যাথা হচ্ছে কেনো?কেনো ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিয়ে অভনী কে নিয়ে চলে যাক দূর অজানায়।যেখানে থাকবে না কোনো বাঁধা। কিন্তু নাহ! এমন কিছুই করবে না নীর্ঝয়।বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।
নীল হেঁচকা টানে নীর্ঝয়কে নৌকার অপর প্রান্তে নিয়ে গেলো।টলমল করা পানির দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে উঠলো,,,,,
—তুই অভনী কে ভালোবাসিস তাইনা রে?
নীর্ঝয় একটু থতমত খেয়ে গেলো, এমন একটা প্রশ্নের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।আমতা করে বলে উঠলো,,,,,
—কি বলছিস তুই এসব নীল?
নীর্ঝয়ের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,,
—তোর চোখের ভাষা আমাকে সেটাই বলছে রে।আমি যেমন তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ঠিক তেমনি তুইও কিন্তু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি অভনীর জন্য সবাই কে খুন করে ফেলতে পারি।কিন্তু তুই!একবার ওর কাছে চেয়ে দেখ যদি তোকে চায় আমি সারাজীবনের জন্য দূরে চলে যাবো নীর।
মুচকি হাসি দিয়ে নীলের কাঁদে হাত রেখে বলে উঠলো নীর্ঝয়,,,,
—চাইলেই কি সবাই কে পাওয়া যায়?থাকনা কিছু না পাওয়া!যা থেকে যাবে আজীবন মনের গহীনে।অভনী তোর সাথেই ভালো থাকবে।বেস্ট অফ লাক দোস্ত।
নীল কে একবার জরিয়ে ধরে আবারো হাঁটা দিলো সবার উদ্দেশ্য নীর্ঝয়। অন্যদিকে নীহাল আহম্মেদ অভনীর মাথায় হাত রেখে বললেন,,,,,
—আমি কিন্তু আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে নীল তোকে ভলোবাসে।তুই যেদিন হসপিটালে ভর্তি ছিলি তখন নীলের ছন্নছাড়া চোখ দুটোতেই আমি তোর জন্য ভালোবাসা দেখে ছিলাম।তাই তোর কাছাকাছি রাখতে চেয়েছি সবসময়।ভালো থাক মা।
চলো সবাই এবার আমরা বাসায় যাই।
একে একে সবাই অন্য নৌকাতে উঠে চলে যেতে লাগলো নীল এসে অভনীর পিছে দাঁড়িয়েছে।আরিহার পিছনে থেকে মাহিব ওর কানের কাছের গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,,,,,
—একেবারে আমিও প্রপোজ টা সেরে ফেলি?ভাইয়ার খরচে হয়ে যাবে। (মুচকি হেসে)
আরিহা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,
—অসভ্য।
.
.
?
টলমল করা স্তব্ধ পানি গুলো তে পা ডুবিয়ে বসে আছে অভনী।একটা ফানুশ হাতে দাড়িয়ে থেকে পেছন থেকে ডাকছে নীল।অভনী হাসি হাসি মুখে উঠে নীলের কাছে গেলো।।ফানুশ উড়ানোব খুব ইচ্ছে ছিলো অভনীর।।এখন খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে তার।।দুজন ফানুশের দুপাশে ধরে অভনীর খিলখিল হাসির সাথে উরিয়ে দিলো নীল আকাশে ফানুশটিকে।আঁকাবাঁকা পথে হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে ফানুশটি নিজ গতিতে।কিছুক্ষন ফানুশটির দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পরলো দুজন প্রেয়সী।। চারদিকে শুনশান নীরবতা।নীরবতা নিয়ম ভঙ্গ করে বলে উঠলো অভনী,,,,
—কয়টা বাজে?
—৩ঃ২০.
—আচ্ছা আমাকে এখানে আনা হলো কিভাবে?আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।
—জ্বি ঘুমিয়ে ছিলে।তুমি আজ ৭ টায় ই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে কারন মামুনির হাতে পাঠানো দুধে ঘুমের ঔষুধ ছিলো।তাইতো ড্রেস চেঞ্জ করার পরেও টের পাওনি।আর তোমাকে এখানে আনা হয়েছে আমার কোলে করে।(মুচকি হেসে অভনীর দিকে তাকিয়ে)
অভনী এতোক্ষন খেয়ালই করেনি ও নীল রঙের শাড়ি পড়ে আছে।বেশি উওেজিত থাকলে যা হয়।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো অভনী,,,,,
—আ আমার ড্রেস চেঞ্জ করেছে কে?
—আমি।(ডেবিল হেসে)
—হুয়াট? (বড় বড় চোখ করে)
অভনীর রিয়েকশনে নীল হুহু করে হেসে উঠলো। অভনী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।।ছেলেদের হাসিও কখনো এতো মায়বী হয় বুঝতে পারছেনা সে।
হাসি থামিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,,
—এতো হাইপার হলে হয়?তোমার ড্রেস আমি চেঞ্জ করবো আমাকে কি ভুতে কামড়িয়েছে।মামনি আর আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে দিয়েছিলাম শাড়ি।তবে বিয়ের পর হলে কিন্তু ওদের কাছে দিতাম না।
লজ্জায় রাঙাবতী হয়ে পানির দিকে তাকিয়প মিনমিন করে বলে উঠলো অভনী,,,,
—দুইঘন্টায় ই এমন লাজলজ্জা বিহীন হয়ে যাচ্ছেন কেন?
মুচকি হেসে মাথা অভনীর দিকে হেলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,
—মাএ তো শুরু পরী বউ।
নীল পাঞ্জাবির পকেট থেকে বকুলফুলের মালা বের করে গেঁথে দিলো অভনীর মাথায়।অভনী অবাক নয়নে তাকালো নীলের দিকে।অভনীর তাকানো কে উপেক্ষা করে পানি থেকে পা উঠিয়ে টুপ করে শুয়ে পরলো অভনীর কোলে নীল।অভনী হাত দুটো উঁচু করে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।অভনীর হাত দুটে টেনে মাথায় চুলের উপর রেখে বলে উঠলো নীল,,,,,
—-খুব কষ্টে জুগিয়েছি বকুল ফুলের মালা টা।যত্ন করে রেখে দিবে পরী বউ।আমি চাইলেই পারতাম অনেক দামী দামী উপহার দিয়ে তোমাকে প্রপোজ করতে কিন্তু আমি জানি আমার পরী বউ দামী দামী উপহারের থেকে একগুচ্ছ তাজা কঁদমফুল আর বকুল ফুলের মালা বেশি খুশি হবে।তবে জনগনের বড় ভাইয়ের বউ বলে কথা এমনি এমনি কি মানসম্মান থাকবে বলো?
নীল পেন্টের পকেট থেকে একটা রিং বক্স খুলে রিং টা বের করে অভনীর হাতে পরিয়ে দিলো।অভনী যেনো অবাকে উপরে অবাক হচ্ছে ওর কোলে শুয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখে।ভ্রু জোরা কুঁচকে নীলের চুল টেনে বলে উঠলো অভনী,,,,,,
—আপনিই তবে সেই বড় ভাই যার জন্য জনগনের ভাবি আমি?
নীল আবারো হুহু করে হেসে বলে উঠলো,,,,,
—জি হ্যাঁ মহারানী।
সময় চলছে তার আপন গতিতে।দুটি নতুন প্রেমিক প্রেমিকার মনে একটাই ধ্বনি ‘ইশশশ সময় টা যদি থেমে যেতো এখনি ‘
কিন্তু না!সময় নিজের মতো করে চলে।আইস-ক্রিম বা চকলেটের মতো জিনিস গুলোও যে ঘুষ নেয়না তাকে অন্য কিছু ঘুষ দেবার কথা বলা নিতান্তই তুচ্ছ। তাই সময় কে থমকে রাখার কোনো উপায়ই জানা নেই ওদের।অভনীর কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নৌকায় মাচায় বসে পরে বলে উঠলো নীল,,,,
—তোমার ঘুম না হলে খারাপ লাগবে যেহেতু ঔষুধ খাইসো।তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও আমি মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি,,,,
অভনী লজ্জা অনুভব করছে।এই লোকটা আজ প্রতিনিয়ত বারবার লজ্জার গভীর তলদেশে পৌঁছে দিচ্ছে তাকে আজ।।নিচের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল ধরে হাত নাড়াচ্ছে অভনী।নীল মুচকি হেসে শুইয়ে দিলো কোলে।লজ্জায কুকরে গেলো অভনী।কিন্তু ঘুমের সাথে সেই কখন থেকেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সে।।তার ইচ্ছে করছে ঘুম গুলোকে কেঁটে কুঁচি কুঁচি করে নদীতে ভাসিয়ে দিতে।।আজকের রাতেও এভাবে চেপে ধরতে হবে ঘুমগুলো তাকে?আজকে রাতেও!
একবস্তা মন খারাপ করে ঘুমের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে অভনী।নীল অভনীর মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে খালি গলায় গান ধরলো,,,,,,
❤”বকুলের মালা শুকাবে,,,
রেখে দেব তার সুরভী,,, ?
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে,,,,
মুছ নাকো আমারি ছবি,,?
আমি মিনতি করে গেলাম,,,,,
তুমি চোখের আড়াল হও,,,,,?
কাছে কি বা দূরে রও,,,,,
মনে রেখো আমিও ছিলাম,,,
এই মন তোমাকে দিলাম,,,এই প্রেম তোমাকে দিলাম❤
(গান বাকিটা শুনে নিয়েন ?)
যখন ঘুমের সাথে যুদ্ধ করতে ব্যাস্ত তখন আপন হয়েও ঘুমের দলে হয়ে কেউ যদি মাথায় হাত ভুলিয়ে গান শুনায় তাহলে কি আর ঘুমের সাথে পারা সম্ভব?
নাহ!একদমি না।
অভনীও হেরে গিয়ে ঘুমের দেশে চলে গেছে আর নীল!একমনে তাকিয়ে দেখছে তার ঘুমন্ত প্রেয়সীকে ❤?।
.
#চলবে,,,,,,,,,,
(Awwww ki cute propose…….কালকে বড় পার্ট দিবো পাক্কা প্রমিস?)