#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 25
#Writer : Sriti Nur Avni
?
আর ৭ দিন পর নীরব আর মাইশার বিয়ে।বিয়ে নিয়ে সবাই খুব এক্সাইটেড। নীলের দাদু বাসা থেকে দাদি আর ফুফাতো ভাই বোন রা চলে এসেছে।নীহাল আহম্মেদ আর ওনার বোন নীলা আহম্মেদ,ওনারা দুই ভাই বোন।নীলা আহম্মেদের এক মেয়ে নিতু অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আর এক ছেলে রামিন অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট।
আজ সবাই একসাথে শপিং করতে যাবে।নীহাল আহম্মেদের কথায় অভনীও যখন রেডি হয়ে নিচে আসলো যাওয়ার জন্য,, তখন মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো নিতু,,,
—মামি মনি এইখানে আমরা পরিবারের সবাই যাবো।তাহলে এই বাইরের মেয়েটা যাবে কেনো?
অভনী দাঁড়িয়ে গেলো। এই মূহুর্তে ওদের সাথে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নাই তার,,,চোখ মুখ রাগে শক্ত করে বলে উঠলো নীল,,,,
—বাইরের লোক কাকে বলে জানো তুমি?ও প্রতিদিন আমাদের সাথে আছে তাই ওরা আমাদের পরিবারের একজন।বাইরের লোক হলে তুমি হবে কারন তুমি আমাদের পরিবারের সাথে থাকো না। গট ইট।
নীল অভনীর হাত ধরে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।অভনী অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে,,নিজে থেকে এই নিয়ে দুইবার হাত ধরেছের নীল।প্রতিবার এমন অদ্ভুত ফিলিংস কাজ করার কারন বুঝতে পারছে না অভনী।অন্যদিকে নিতু রাগে ফুসতে ফুসতে বাহিরে বের হয়ে আসলো।অভনী কে নীলের পাশের সিটে বসতে দেখে নিতুর রাগ আরো হাজার গুনে বেরে গেলো।
মাইশা আর মাহিব নিজেদের বাসা থেকে ওইদিক দিয়ে আসবে।নীল,অভনী,আর নীর্ঝয় এক গাড়িতে বসেছে।নীরব,,নিতু আর রামিন বসেছে এক গাড়িতে।
যমুনক ফিউচার পার্কের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো নীল।মাইশা আর মাহিব ও এসে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই একে একে শপিংমলের ভিতরে ডুকলো,,,,চারদিকে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ।সবাই যার যার জিনিস পছন্দ করলেও অভনী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এককোনায়।শপিংমল টা যেমন সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ ঠিক তেমনি দাম গুলোও জাঁকজমকপূর্ণ। যা অভনীর কেনার মতো সামর্থ্য নেই।
নীল আর নীরব মিলে মেহেদী আর হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য সব ছেলেদের একরকমের পাঞ্জাবি পায়জামা দুই দিনের জন্য দুই রঙের করে আর মেয়েদের সবার জন্য এক রকমের শাড়ি অর্ডার দিলো মেহেদী আর হলুদের জন্য দুই রঙের দুটো করে।
নাহ মায়ের জন্য আর আরিহার জন্য কিছু কেনা লাগবে,,বিয়ে তে তো আর পুরনো কাপড় পরতে পারবে না তাছারা বিয়েতে থাকবে কিছু গিফট তো দিতে হবে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভনী অন্য একটা দোকানে চলে গেলো।এতোক্ষন যাবৎ নীল আড়চোখে অভনী কে দেখছিলো।
অভনী মায়ের জন্য ২ হাজার টাকার একটা শাড়ি আর আরিহার জন্য ৩ হাজার টাকা দিয়ে ড্রেস নিলো।জুতা বাহিরে থেকে কিনে নিবে এখানে অনেক দাম।এটা ভেবেই অভনী আবার মাইশাদের কাছে আসলো।মাইশা অভনীর হাতে একটা গারো নেবি ব্লু রঙের লেহেঙ্গা ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,
—ট্রায়াল রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে দেখো তো লাগে কিনা।তোমার মতোই আমার একটা বোন কে দিবো।
অগত্যা একড্রাম বিরক্তি নিয়ে অভনী ট্রায়াল রুমে গেলো।লেহেঙ্গা পরে মাইশা কে দেখানোর জন্য গুটিগুটি পায়ে বেড়িয়ে আসলো।এই প্রথম এমন ভারী ড্রেস পরেছে সে।প্রচন্ড পরিমানে অস্বস্তি লাগছে।একঝাক বিরক্তির মধ্যে এক টুকরো হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে হাঁটা ধরলো সামনে।
নিজের জন্য ড্রেস দেখতে দেখতে অভনীর দিকে চোখ গেলো নীলের।এই প্রথম অভনী কে অন্যরুপে দেখেছে সে তবে প্রতিদিন এই মেয়েটাকে একেক রকম রূপবতী লাগে নীলের কাছে।অভনীর আড়ালে নিজের মোবাইলে কয়েকটা পিক আবদ্ধ করে রাখলো নীল।
অভনীর প্রতি রাগ কাজ করছে নিতুর মধ্যে। অভনী কে দেখলেই গা জ্বলে যাচ্ছে নিতুর।অভনী আবার ট্রায়াল রুমে গিয়ে নিজের শাড়ি পড়ে বের হবার সাথে সাথে নিতু অভনীর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো,,,অবাক চোখে নিতুর দিকে তাকিয়ে অভনী বলে উঠলো,,,
—-আপু কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?
—ওই যে একটু সামনে চলো অভনী।ওইখানে ভালো ভালো ড্রেস আছে।
—কিন্তু আমার ভালো ড্রেস লাগবে না আপু।আমি আর ড্রেস নিবো না।ছারো আমায়।
নিতু অনেকটা দূরে চলে এলো অভনী কে নিয়ে।অভনী কে একটা দোকানের ভিতর ডুকিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,
—তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমার কল আসছে একটু কথা বলেই আসছি।আমি নিজে পছন্দ করে ড্রেস কিনে দিবো তোমায়।
—আপু আমার ড্রেস লাগবে না আমি এখানে একা একা থাকতে পারবো না।তুমি এখানেই থাকো আপু…।
অভনী পুরো কথা শেষ করার আগেই নিতু মোবাইল হাতে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।অভনীর খুব ভয় আর অস্বস্তি লাগছে।কোনো কিছু কেনার জন্য বসবে তার ও জো নেই কারন ও এখন এতো দাম দিয়ে কিছু কিনে টাকা নষ্ট করতে চায়না।একটু পর পর একজন না একজন এসে বলছে,,
—excuse me!mam…can i help you?
অভনী ধীর পায়ে বের হয়ে গেলো দোকান থেকে।কিন্তু আসেপাশে কোথাও নিতু কে দেখতে পাচ্ছে না।ওর এখন জোরে জোরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।যমুনা ফিউচার পার্কের এতো বড় মলে কোন জায়গা দিয়ে গেছে কোন জায়গা দিয়ে বের হয়েছে প্রথম বার গেলে চেনার উপায় নেই।অভনীর এখন কি করা উচিৎ বুঝতে পারছে না।এদিক ওদিক ঘুরছে কাউকেই পাচ্ছে না।হঠাৎ ওর মোবাইলের কথা মনে হলো,,নিজের হ্যান্ড ব্যাগ টা খুলে মোবাইল খুঁজছে কিন্তু মোবাইল টাও ব্যাগে নেই।তখন ওর মনে হলো তারাহুরো করে আসার সময় খাটের উপর ই রেখে চলে এসেছে মোবাইল টা।এই মূহুর্তে নিজের চুল গুলো সব টেনে টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে তার।আসে পাশে ঢাকা শহরের মর্ডান মর্ডান ছোট বড় ড্রেস পরা অনেক কেই দেখা যাচ্ছে আবার বিদেশি কাউকে কাউকেও দেখা যাচ্ছে কিন্তু নীলদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না সে।অনেকক্ষন ঘুরেও বের হবার রাস্তা বা কাউকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে একটা ছোট বেঞ্চে বসে পরলো।এতো এতো মানুষের ভীড়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার,,না চাইতেও চোখ দিয়ে ফর্সা গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।
?
ভাবিপু মিস. অভনী কোথায়?ওনাকে দেখতে পাচ্ছি না যে?
নীলের কথায় গলা থেকে নেকলেস টা নামিয়ে আসেপাশে চোখ ভুলালো মাইশা।না আসেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেয়েটাকে।সবাই তো এক সাথেই ছিলো তাহলে কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?মাইশা চিন্তিত মুখ করে নীরব আর নীর্ঝয় কে ডাকলো,,,
—অভনী কোথায়?সবাই এখানে কিন্তু ওকে দেখতে পাচ্ছি না যে?
নীরব আর নীর্ঝয় ও চারদিকে একবার চোখ ভুলালো।কিন্তু কোথাও অভনী কে দেখতে পাচ্ছে না।নীরব সবাই কে একসাথে ডাকলো সবাই কে জিজ্ঞাসা করার পরেও অভনীর খোঁজ জানতে পারলো না।নীল আর দেরি না করে অভনীর মোবাইলে কল দিতে লাগলো,,,কিন্তু মোবাইলের অপর পাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠি একটা মেয়ে বলে উঠলো,,,
—দুঃখিত আপনার কানচিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রধান করা সম্ভব হচ্ছে না।
মেয়েটার মিষ্টি কন্ঠে বলা কথাটাও এই মূহুর্তে বিরক্ত লাগছে নীলের কাছে।প্রচন্ড রকমের বিরক্তি এসে ভর করেছে তার মধ্যে। নিতুর কোনো ভাবান্তর নেই।সে নিজের মতো মোবাইল টিপতে ব্যাস্ত।নীল আবারো কল দিলো অভনীর নাম্বারে কিন্তু আবারো অপরপাশ থেকে একি কন্ঠ ভেসে আসায় প্রচন্ড রাগ আর ভয়ে হাতের মোবাইল টা জোরে আছার মেরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,,,
—ডেমন ইট!
নীলের এমন রাগ দেখে নীতু সহ সবাই ভয় পেয়ে গেলো,,,নীল আর নীর্ঝয় মিলে একদিকে আর অন্য সবাই মিলে অন্য দিকে খুঁজতে লাগলো অভনী কে,,,কিন্তু এতো বড় মলে একজন মানুষ কে যোগাযোগ বিহীন খুঁজে পাওয়া স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।
?
excuse me apu! Are you ok?Can i help you?এখানে বসে এভাবে কাঁদছো কেনো?
মিষ্টি কন্ঠি একটা মেয়ের সুরে উপরের দিকে তাকালো অভনী।পার্পেল রঙের শাড়ির সাথে চোখে গাড়ো কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিয়েছে সে,,ফর্সার হার যে অভনীর থেকে এক সেট বেশি বেশি হবে।অসহায় চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,
—আপু আমি বাহিরে যাবো কিন্তু বাহিরে যাবার কোনো পথ পাচ্ছি না।ঘুরে ঘুরে যেনো বার বার একরকম জায়গায় ই আসছি?
—তুমি একা এসেছো?
—না আপু।অনেকেই এসেছে কিন্তু আমাকে এক আপু একটু দূরে রেখে কল এসেছে বলো গেলো পরে অনেক খুঁজেও আর পেলাম না।মোবাইল টাও ভুলে বাসায় রেখে এসেছি।
—ওকে।তুমি আমার মোবাইল দিয়ে কাউকে কল দিয়ে বলো এখানে আসতে।
অভনী কৃতজ্ঞতা সূচক তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়েটার মোবাইলের দিকে।কিন্তু মোবাইলের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো অভনী।চরম রকমের অবাক!
অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অভনী,,,
—আপু তোমার মোবাইলের ওয়ালপেপারের ছেলেটা তোমার কি হয়?
মেয়েটি মুচকি হেসে বললো,,,
—আমার ভালোবাসা।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমি ওনার ভালোবাসা নই।
পাশথেকে আরেক জন মেয়ে বলে উঠলো,,,,
—-এই নীরু চলনা,,,আরো কত শপিং বাকি আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে সময় কাঁটাচ্ছিস?
—শাট আপ!তুই যদি এমন বিপদে পরতি তাহলে কি করতি?(রেগে)
—আপু আপনার কাছে নীর্ঝয় ভাইয়ার ফোন নাম্বার আছে?(অভনী)
অভনীর কথায় নীরা অবাক হয়ে অভনীর দিকে তাকালো।নীর্ঝয়ের নাম ও জানলো কীভাবে?কৌতুহলী চোখে অভনীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো নীরা,,,
—তুমি নীর্ঝয় কে চেনো?
—হুম ওনি আমার ভাইয়া হয় আপু।ওনিও আজকে এখানে এসেছেন।ফোন নাম্বার থাকলে ফোন দিন না প্লিজ!
নীরা আর কিছু না বলে মোবাইল টা নিয়ে নীর্ঝয়ের নাম্বারে কল দিলো।হয়তো অনেক সন কাকতালীয় ভাবে অপত্যাশিত কিছুও হয়ে যায়।কল দেয়ার সাথে সাথেই নীর্ঝয় কল ধরে ফেললো,,,উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলো নির্ঝয়,,,,
—হ্যালো কে বলছেন?
—-আপনার বোন সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টারের সামনে বসে আছে মি. নীর্ঝয়।আপনারা আসুন এখানে।
বোন বলাতে প্রথমে চিনতে না পারলেও নীর্ঝয় যখন বলেছে তাহলে হয়তো অভনীর খোঁজই হবে।সে আশায় নীল কে নিয়ে ছুটে চললো টিকেট কাউন্টারের সামনে।
নীল আর নীর্ঝয় গিয়ে দেখলো অভনী দাঁড়িয়ে আছে সাথে দুটো মেয়ে।ওদের কাছে যাওয়ার পরেই নীরা কে দেখে বেশ অবাক হলো নীর্ঝয়।নিজের মধ্যেই নিজের অবাক টাকে হজম করে নিয়ে নীরব কে কল দিয়ে জানিয়ে দিলো নীর্ঝয়।
সবার সামনে অভনীর গালে ঠাসসস করে একটা চড় মেরে বলে উঠলো নীল,,,,
—-এই মেয়ে আপনার সাহস হয় কিভাবে এমন করার?এতো বড় শপিংমলে একা একা হেঁটে বেড়ানোর সাহস কোথায় পান আপনি?সিনেমা দেখার এতো শখ?নাকি কোনো ছেলের হাত ধরে চলে আসছেন সিনেমা দেখতে?আসছেন ভালো কথা মোবাইল টা অফ করে রাখছেন কেন?কাউকে কি বলে আসা যেতো না?কি ভেবেছেন আপনার জন্য আমরা শপিং রেখে আপনাকে খুঁজে খুঁজে সময় কাটাবো?Answer me (চিল্লিয়ে)
অভনী নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।এই মূহুর্তে নীলের এতো রাগের মধ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না সে।এতোক্ষনে অনেকেই প্রবল আগ্রহ দৃষ্টি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।নীল আর কিছু না বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো শপিংমল থেকে। এতে নীতু মনে মনে খুব খুশিই হয়েছে।
আজ আর শপিং করার মুড নেই কারো তাই নীর্ঝয় নীরা কে ছোট করে ধন্যবাদ জানিয়ে
বেরিয়ে গেলো বাসার উদ্দেশ্য।
?
আজ নীরব আর মাইশার মেহেদি অনুষ্ঠান। বাসায় ইতিমধ্যে মেহমানে ভরপুর হয়ে গেছে।নীরব আর মাইশা কে এক সাথেই মেহেদি পরানো হবে বলে মাইশা কে নীরবদের বাসায় এনেই পার্লার থেকে সাজানো হচ্ছে।মাইশা অভনী কে বার বার পার্লারে সাজতে বললেও অভনী তাতে নারাজ।
গোলাপী পাড়ের নেবি ব্লু কালারের শাড়ি আনা হয়েছে সব মেয়েদের জন্য। আর নেবি ব্লু রঙের পাঞ্জাবির সাথে হুয়াইট কালারের চুরিধার পাজামা আনা হয়েছে ছেলেদের জন্য।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘরে দরজা লাগিয়ে একটানা পড়ছে অভনী।নীলের প্রতি একবস্তা অভিমান জমে আছে তার মধ্যে। কিন্তু অভিমান!সেটা তো আসে শুধু প্রিয় মানুষটির কাছে।তাহলে কি হিরো সাহেব আমার প্রিয় মানুষ? না না এমন টা হতে পারেনা।কোথায় ওনি আর কোথায় আমি,,বামন হয়ে চাঁদে হাত দেবার মতো সাহস আমার হয়ে উঠেনি।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে পরলো অভনী।শাড়ি টা খুলে পড়ে নিলো সে।লম্বা চুল গুলো খোলা রেখে কানের পাশের একটা গোলাপ ফুল গুঁজে দিলো ।চোখে গাড়ো কাজলের সাথে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে নিলো।কানে পাথরের এক জোরা দুল পরে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
সবাই এক শাড়ি হলেও সবার মাঝে যেনো অভনী অন্যরকম ফুল হয়ে বসে আছে।সবার মুখে পার্লারের একগাদা মেকাপের প্রলেপ থাকলেও অভনীর মুখে নেই,,তাই হয়তো সবার থেকে আলাদা লাগছে তাকে।
বড় ড্রইং রুম টায় মেহেদীর আয়োজন করা হয়েছে।মাইশা কে সাজিয়ে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়া হলো নীরবের কাছে।তখনি নেবি ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পরে গড়ি পড়তে পড়তে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো নীল।আজকে নীলের গায়ে নীল রঙে যেনো পুরো নীলময় হয়ে গেছে সে।
নীল নিচে নেমে সবার আগে নীতুর দিকে এগিয়ে গেলো যা দেখে নিতু খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।কিন্তু সবাই কে চরম রকমের অবাকে শেষ পর্যায় পৌঁছে দিয়ে নিতুর গালে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।নিতু পাশ ফিরে কিছু বলার আগেই আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো।পুরো জনসভায় এখন শুনশান নীরবতা।
নিতু চোখ মুখ গরম করে বলে উঠলো,,,,
—-হেই ইউ!তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার গালে হাত তুলার??
অপর পাশ থেকে চেঁচিয়ে নীলা আহম্মেদ বলে উঠলেন,,,,
—তুই এটা কি করলি নীল?সবার সামনে আমার মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুললি কোন সাহসে?
—-সেদিন ও আমি শপিংমলের সবার সামনেই মিস. অভনীর গায়ে হাত তুলে ছিলাম ফুপ্পি।যেখানে ওর কোনো দোষ ছাড়াই সবার সামনে চড় খেতে পেরেছে সেখানে নিতুর দোষ থাকা সত্যেও নিরিবিলি তে চড় দেই কীভাবে বলোতো ফুপ্পি?(আরাম করে সোফায় বসে)
—-মানে কি বলতে চাইছিস তুই? (নীলা আহম্মেদ)
—ফুপ্পি তোমার মেয়ে ভুলে গেছে এখন ছোট ছোট শপিংমলেই সিসিটিভি থাকে,,,আর সেখানে এতো বড় শপিংমলে থাকবে না সেটা ও ভাবলো কিভাবে?আর সেটা যদি মনে থেকেও থাকে তাহলে হয়তো ও ভুলে গেছে যে আমি চাইলেই দুইদিনের মধ্যেই পুরো সিসি ফুটেজ টা পেতে পারি।পেয়েও ছিলাম কিন্তু খুব কষ্টে রাগ টা ধমিয়ে রেখছি কারন সবার সামনে চড় টা দিবো বলে।
নিতু ভয় পেয়ে গেলো এমন টা তো ও ভেবে দেখেনি।উঠে নিতুর সামনে গিয়ে বলে উঠলো নীল,,,,
—-সেদিন তুমি অভনীকে টেনে ওখানে নিয়ে রেখে চলে আসলে কেনো?Ans. Me (চিল্লিয়ে)
—আচ্ছা ছাড় না না এখন নীল।বাচ্চা মেয়ে হয়তো বুঝতে পারেনি,, এখন মেহমানের সামনে এমন রাগ করিস না বাবা (নীলিমা)
—-নেক্সট টাইম যেনো এই চড়ের কথা মনে থাকে।আমারদের পরিবারের কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।অভনীরাও এখন আমাদের পরিবারের।understand?
নিতু হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো,, তার পিছন পিছন যেতে যেতে বলে উঠলেন নীলা আহম্মেদ,,,,
—কাজ টা তুই ঠিক করলি না নীল,,,বাইরের একটা মেয়ের জন্য আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললি?
নীলা আহম্মেদ চলে যেতেই অভনীর কাছে গিয়ে বলে উঠলো রামিন,,,,
—সরি আপুই।ওর হয়ে আমি সরি!ছোট বেলা থেকেই অত্যান্ত জেদি মেয়ে নিতু।এগেইন সরি!
অভনী এতোক্ষন যেনো ঘোরের মধ্যে ছিলো,,,রামিনের কথায় হুশ ফিরলো তার।রামিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো অভনী,,,
—আরেহ ভাইয়া সরি বলছেন কেনো?আপু হয়তো ইচ্ছে করে করেনি।উল্টো তো আপুকেই গন্ডারের মতো শক্ত হাতের দু’দুটো চড় খেতে হলো ?
নীল গিয়ে গান ছেড়ে দিয়ে আবারো পরিবেশ টাকে স্বাভাবিক করে নিলো।তবে অভনীর সামনে যেতে বেশ দ্বিধা লাগছে তার।রাগের মাথায় কি থেকে কি বলে ফেলেছে।তাই ভাবলো যেভাবেই হোক সরি বলতে হবে।
মাইশা কে মেহেদী পরাচ্ছে দুজন মেহেদী আর্টিস্ট। তার সামনেই গানের তালে তালে নেচে বেড়াচ্ছে অনেকে।
অভনী বসে আছে আরিহার পাশে। হঠাৎ একটা ছোট পিচ্ছি এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো অভনীর হাতে,,,অভনী ভ্রু কুঁচকে চিরকুট হাতে নিয়ে পিচ্ছি ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলো,,,
—কিসের এটা বাবু?কে পাঠিয়েছে?
কিন্তু গানের তীব্র সাউন্ডে কিছুই শুনতে পায়নি বাচ্চাটা।তাই ব্লু রঙের পাঞ্জাবি টায় হাত দিয়ে দৌঁড়ে নিরোদ্দেশ হয়ে গেলো যেনো কোথায়,,,অভনী চিরকুট টা খুলে দেখলো,,,,
—বাগানে আসুন মিস.অভনী।(ইতি,,,হিরো সাহেব)
?
বাগানে গিয়েই নীলের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। রাগে চোখ দুটো দিয়ে যেনো অগ্নি ঝরছে,,,কারন অভনী কে শক্ত করে ঝরিয়ে ধরে আছে একটি ছেলে,,,আস্তে আস্তে ছেলেটার ঠোঁট জোরা অভনীর দিকে এগুতে থাকে কিন্তু অভনী এতে কিছুই বলছে না শুধু ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে।আর দেখার মতো সহ্য হলো না নীলের,,,রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের রুমে গিয়ে ভাংচুর করতে লাগলো সে।
অভনী যখন নীলের কথায় বাগানে আসলো,,,এসে কাউকেই দেখতে পেলো না সে কারন মামুনির ডাক পরায় নীলের আসতে লেট হয়ে যায় একটু,,,অভনী যখন ঘুরে ঘুরে নীল কে খুজঁতে ছিলো তখনি হেঁচকা টানে জরিয়ে ধরে কেউ,,,উপরের দিকে তাকিয়ে শাফিন কে দেখে ভয়ে আর অবাকে পুরো জমে যায় সে।এতোদিন পর আবারো শাফিন কে এভাবে দেখে কিছু মুখ দিয়ে বের হচ্ছিলো না তার।কিন্তু যখনি শাফিন ঠোঁট জোরা এগিয়ো আনতে লাগলো তখনি অভনী শাফিনের গালে ঠাসস করে চড় বসিয়ে দেয়,,,কিন্তু চড় দেবার আগেই নীল সেখান থেকে চলে যায়।অভনী নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,,,,
—আমাকে টাচ্ করার সাহস হয় কোথা থেকে তোর?আবারো কেন আসছিস আমার লাইফে বল কেন এসেছিস?
—-আমি না আসলে আর কে আসবে বলো সুইটহার্ট। ঝাল মরিচ তুমি শুধু আমার।আমার মানে আমার।তার জন্য আমাকে যত নিচু নামতে হয় আমি নামবো।ভালোই হয়েছে এখন বাগানে এসেছো আমার কাজ অনেক টাই সহজ হয়ে গেছে এখন।(জোরে হেসে)
অভনী শাফিনের শেষের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,,কিন্তু শাফিন আর না দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগলো।
#চলবে,,,,,
(আমি নিতান্তই প্রকৃতি আর বৃষ্টি প্রেমি কন্যা।তাই হয়তো এগুলো নিয়ে একটু বেশিই বর্ননা করে ফেলি?।Btw,,, এই রাগী বদমেজাজি ফারহান আহম্মেদ নীল অভনীর কি করবে এবার আল্লাহ ই জানে ?)