#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 23
#Writer : Sriti Nur Avni
?
বেড়াতে যাওয়া!
বেড়াতে যাওয়া মানেই অদ্ভুত এক আনন্দময় শব্দ , বেড়াতে যাওয়া মানেই একরাশ আনন্দ,,,ঘুরাঘুরি,,লাফালাফি,,।আর তা যদি হয় পরিবারের সবাই একসাথে তাহলে তো আর কিছু বলারই নেই।
আজ সবাই একসাথে নীলের নানু বাসায় কিশোরগঞ্জ এর অষ্টগ্রামে যাবে।অভনীরা যাবে না বললেও নীহাল আহম্মেদ আর নীলিমা আহম্মেদের জোরাজোরি তে শেষে রাজি হতেই হলো,,,তাছারা এই কয়েক দিনে মোশারফ চৌধুরী,মনিকা চৌধুরী আর মাইশাও ওদের সাথে অনেকটা মিশে গেছে। অভনীদেরকে এই পরিবার থেকে আলাদা ভাবে না কেউই।তাই ওদের জোরাজুরিতে অভনীও আর না করলো না।তবে অভনীর সাথে করে যাচ্ছে ওর একগাঁধা বই।
সকাল ৭ টা,,
নীহাল আহম্মেদ,নীলিমা আহম্মেদ,শাহেরা বেগম আর রহিমা বেগম এক গাড়ি তে বসেছে।
নীল,,নীরব,,মাইশা,,অভনী আর আরিহা এক গাড়িতে বসবে,,নীল গাড়ি ড্রাইভ করবে,,আরিহা জানালার পাশে বসে পরলো,,মাইশা উঠে অারিহার পাশে বসলো,,অভনী যখনি পেছনে বসতে যাবে নীরব পেছনে মাইশার কাছে বসে পরে ইননোসেন্ড মার্কা হাসি দিয়ে বললো,,
—মিষ্টি আপু এত বড় একটা জার্নিতে আমাকে সামনে বসিয়ে অসহায় মুখ করে বসে থাকতে দিও না প্লিজ।
অভনী মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে নীলের পাশের সিটে সামনে গিয়ে বসে পড়লো। নীল আর চোখে তাকালো অভনীর দিকে,,হালকা গোলাপি রঙের প্রিন্ট এর শাড়ি পরেছে আজ অভনী।চোখে গাড়ো কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,, লম্বা চুল গুলোকে আজও বিনুনি করে আটকে রেখেছে।
মোশারফ চৌধুরী আর মনিকা চৌধুরী এক গাড়িতে বসেছেন।মাহিব আসেনি।ওইখান দিয়ে গাড়ি নিয়ে নিজে নিজেই চলে আসবে বলেছে।মাহিবও এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে,,,ছাএ হিসেবে ভালো হওয়ায় মাহিব ও A+ পেয়েছে।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে,,,অভনী বাইরের পরিবেশ দেখতে ব্যাস্ত।সকাল হলেও বাইরের পরিবেশ টা বেশ কোলাহলপূর্ন আর গাড়ির হনের শব্দে ভরপুর হয়ে গেছে।এই জন্যই বুঝি শহর গ্রাম থেকে এতো আলাদা?গ্রামের সকালে চারদিকে শুনশান নীরবতায় ঠান্ডা বাতাসে কি মুগ্ধই না লাগতো।নীল গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আর চোখে তার পাশের সিটে বসে থাকা প্রেয়সী কে দেখছে।
আরিহা বাহিরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে,,,,।নীরব মাইশার হাতটা শক্ত করে ধর রেখেছে আর মাইশা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।,,,লজ্জা নারীর ভূষন।বাঙালী নারীর কলস ভরা লজ্জা না থাকলে কি হয়?
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। গাড়ি দিয়ে সড়কপথে যেতে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে।কিশোরগঞ্জ থেকে অষ্টগ্রাম ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে। তাই ওইখান দিয়ে যেতে আরো ১:৩০ ঘন্টা সময় লাগবে।
?
দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ওরা এসে পৌঁছালো মিঠামইনে,,দুপাশে সবুজ রঙের ঘাস আর মাঝখানে একটি সড়ক।সবুজ অরন্য বিমোহিত চারদিক। কি অদ্ভুত সুন্দর!! সবুজের বুকে এক টুকরো পিজডালাপূর্ন রাস্তা,,,বাইরের ঠান্ডা বাতাস এসে মনটাকে আরো বেশি ফুরফুরে করে দিচ্ছে।
কিছুক্ষন পর ওরা পৌঁছে গেলো মিঠামইনের নীকলি হাওরের অসম্ভব সুন্দর রাস্তায়।হাওরের কাছে আসার পরই অভনীর চোখ দুটো খুশি আর মুগ্ধ তে চিকচিক করতে লাগলো। অভনী চিল্লিয়ে গাড়ি থামাতে বললো।
নীল গাড়ি থামাতেই অভনী হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে দুহাত প্রশস্ত করে দাঁড়িয়ে পরলো,,,এই মুহূর্তে সাগরের ঢেউয়ের শব্দের সাথে বাতাসের মিষ্টি গ্রান টা গ্রহন করতে ব্যাস্ত অভনী। কি অদ্ভুত সুন্দর জায়গা টা।দুইপাশে বিশাল বড় সাগরের মাঝখানে একটুকরো রোদের ঝলমলে আলোর মতো বিছিয়ে আছে সড়ক।যেনো সাগরের বুকে লম্বা আকারে সড়কটা আপন মনে পরে আছে।আকাশের নীলছে বর্নের কারনে সাগরের পানি গুলোও দেখতে নীলবর্ন হয়ে আছে।এতো সুন্দর রাস্তা এর আগে কখনো দেখেনি অভনী।
বর্ষাকাল হওয়াতে হাওরের সুন্দরর্য যেনো আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।চারদিকে শুধু পানি আর পানি,,নীলচে বর্নের পানিগুলো দেখতে কি অপরুপ সুন্দর ই না লাগছে!পানির মাঝেই ছবির মতো সুন্দর ছোট ছোট গ্রাম গুলো ভেসে আছে,,।রোদের ঝলমলে আলো,,উওাল বাতাস,,মাঝিদের গান,,,জেলেদের ব্যাস্ততা,,ছোট ছোট নৌকায় করে মানুষের যাতায়াত,, সব কিছু মিলিয়ে চারপাশটা হয়ে উঠেছে দেখার মতো।
অভনী নামার পর আস্তে আস্তে সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেলো।বাতাসের শু শা শব্দে বিমোহিত হয়ে আছে চারদিক।কয়েক জন পর্যটক ও আছে আসে পাশে।সাগরের পানিতে পা রেখে হাঁটতে ইচ্ছে করছে অভনীর,, কিন্তু এই মুহূর্তে এমন ইচ্ছেগুলো যে নিতান্তই তুচ্ছ তা খুব ভালো ভাবেই জানে সে।তাই নিজের ইচ্ছের কথা আর কাউকে জানালো না।
বেশ কিছুক্ষন থাকার পরেও অভনীর যেতে ইচ্ছে করছে না,,,এদিকে নীলদের কারোরই আগো আসা হয়নি।তাই সুন্দর এই মুহূর্ত টাকে উপলব্ধি করছে বেশ।কিন্তু মোশারফ চৌধুরী বলে উঠলেন,,,
—এখন চলো যাওয়া যাক।বাসায় গিয়ে সব ঠিক করে পরে আবার এখানে আইসো।কেমন বাচ্চারা?
অগত্যা মন খারাপ করেই গাড়িতে উঠতে হলো অভনীর,,, হাওরের পুরোটা রাস্তা গাড়ি থেকে মুখ বের করে হাত নারিয়ে গেছে অভনী। সবার মুখেই একটুকরো হাসি ঝুলে আছে,,জায়গা টা যে অসম্ভব সুন্দর তা ওদের প্রত্যেকের তাকানোর ধরনেই বুঝা যাচ্ছে।
?
দুপুর ১ টা
অভনীরা নীলের নানু বাসায় এসে পৌঁছালো।বিশাল বড় রাজপ্রাশাদের মতো বাসা।হয়তো চৌধুরী নামক টেগ টা অনেক আগে থেকেই লেগে আছে ওদের।নীলিমা আহম্মেদের মধ্যে কিছুটা ভয় কিছুটা ভালো লাগা,সব মিলিয়ে কেমন অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে ওনার।চোখ দুটো জলে চিকচিক করছে।বাইরে থেকে বাড়িটা ঠিক আগের মতোই আছে।
গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো অভনী।সবার পিছু পিছু হাঁটা ধরলো বাড়ির ভেতরের উদ্দেশ্য।
রায়হান চোধূরী ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছেন,,,বয়ষ্ক মানুষদের তালিকায় পরে গেছেন এখন।গায়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবি আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে একমনে খবরের কাগজ পরছেন ওনি,,।
—বা..বা (নীলিমা)
হঠাৎ বাবা ডাকে থমকে গেলেন উনি,,,এই মুহূর্তে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছেন না। যদি চোখ তুলে দেখতে পান কেউ নেই?নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তো সুপ্ত এক আশা থাকবে।রায়হান চৌধুরী তাকালেন না উপরে।নীলিমা আহম্মেদ দৌঁড়ে গিয়ে বাবার পা জরিয়ে ধরলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন,,,
—বাবা তুৃমি কি এখনো আমার সাথে রেগে আছো?বাবা দেখো আমি তো কোনো ভুল করিনি।ঠিক মানুষটাকে ভালোবাসা তো অন্যায় নয় বাবা।দেখো তোমাদের মেয়ে আজ সুখে আছে,,অসম্ভব সুখে কিন্তু তোমাদের শুন্যতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
রায়হান চৌধুরী চোখ তুলে তাকালেন,,হ্যাঁ এটাই তো ওনার মেয়ে।সেই ছোট্ট মেয়েটি আজ কত বড় হয়ে গেছে,,,চোখে মুখে হালকা বয়সের ছাপ ভেসে উঠেছে,,,দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ দেখে না এই মেয়েটাকে।
অতিরিক্ত সুখ আর দুঃখে মিশ্রিত হয়ে সবার সামনে নীলিমা আহম্মেদ কে চড় বসিয়ে দিলেন ওনি।চোখে তার চিকচিক করা জল গুলো কুঁচকানো গাল বেয়ে পরে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে নিজের মেয়েকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন ওনি।নীহাল আহম্মেদ গিয়ে সালাম করলেন,,ওনি নীহাল আহম্মেদ কেও জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,,,
—বাবা হিসেবে কি এতোটাই খারাপ ছিলাম রে মা?যে এতো দূরে চলে গেলি আমাদের ছেরে?এতোদিন কি একবার ও দেখার ইচ্ছে হয়নি এই রাগী বদমেজাজি বাবা টা কেমন আছে?একটা বার মনে হয়নি তোর মা তোকে ছারা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে?
—-সরি বাবা।আমার ভুল হয়েছে এতোদিন অভিমান করে থাকা।আমি ভুলে গেছিলাম যে বাবা মা কখনো সন্তান দের ভুলতে পারেনা।আমাকে মাফ করে দাও বাবা।(নীলিমা)
—বাবা মার কাছে সন্তান দের কখনো অন্যায় থাকে না মা।মরার আগে একবার তোকে দেখতে পেরেছি এটাই যে অনেক।
—বাবা মা কোথায়?
—দেখ গিয়ে নামাজ পরতে গেছে,,,তোকে দেখলে কি যে খুশি হবে না রে। (রায়হান)
নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী মায়ের রুমের দিকে যেতে নিলেই চোখ পরলো একটু সামনে হিজাব পরিহিতা মুর্তীর ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে।চোখ দিয়ে মানুষটার টপটপ পানি পরছে কিন্তু সে নির্বাক।মেয়েকে দেখে অতিরিক্ত সুখে ওনার কথা বলার ক্ষমতা টুকু পাচ্ছেন না।’মা’ শব্দ টা বুঝি এমনি?
নীলিমা আহম্মেদ মা কে জরিয়ে ধরলেন,,এতোদিন পর মায়ের মুখটা দেখে ওনি নিজেও কিছু বলতে পারছেন না।বেশকিছুক্ষন শুনশান নীরবতায় কেটে গেলো চৌধুরী বাড়ি।মোশারফ চৌধুরী,মনিকা চৌধুরী,নীল,নীরব,মাইশা,আরিহা আর অভনী অনুভূতিসম্পন্ন চোখ নিয়ে ড্রইংরুমের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে।মোশারফ চৌধুরী ধীর পায়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন,,,
—মা দেখো আমাদের বুড়ি ফিরে এসেছে।আবার আমাদের ঘর টা আলোকিত হয়ে যাবে বুড়ির খিলখিল হাসির শব্দে। মা আবার তোমার কোলে কো আগে মাথা রাখবে তা নিয়ে ঝগড়া হবে।তুমি খুশি নও মা?কথা বলো বুড়ির সাথে বুড়ি কষ্ট পাচ্ছে তো মা।
মরিয়ম চৌধুরী মেয়েকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন,,,পুরো বাড়ি জুরে কান্নার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। এতোক্ষনে বাড়ির কাজের লোক সহ বিভিন্ন সার্ভাররা চলে এসেছে।২৫ বছর আগের অনেকেই এখনো আছেন।ওদের চোখ বেয়ে পরছে রঙহীন নোনাপানি।
?
”পরিবার”
শব্দ টা বড্ড অদ্ভুত। না চেনা যায় না বোঝা যায় তবে অদ্ভুত এক টান অনুভব করা যায়।মেয়েরা পরিবার থেকে যত দূরেই থাকুক না কেনো কোনোদিনও পরিবার নামাক কঠিন বন্ধন কে ভুলতে পারেনা,, জন্মের পর প্রথম পরিবারই তাদের মা বাবার সাথের পরিবার❤।ছেলেরা কাজে হাজার মাইল দূরে থাকলেও দিন শেষে পরিবারের জন্য মনে শূন্যতা বিরাজ করবেই।পরিবার একটা শক্তি। সকল অবস্থায় পুরো পরিবার হাতে হাত রেখে একসাথে থাকলে কেউ কখনো কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,,,অন্যের কথায় একগুচ্ছ পরিবার ছিন্নভিন্ন করতে পারবে না।বাবা মায়ের উচিৎ সন্তানের কথা ভেবে সবসময় তাদের পাশে থাকা,,তাহলে কোনো পরিস্থিতি তাদের মধ্যে আত্নহত্যার মতো খারাপ কাজের কথা মাথায় আসতো না,,,,কি দরকার সন্তানকে জোর করে অন্য একটা পরিবারে ডুকিয়ে দেবার যেখানে সারাজীবন যে সংসার করবে সে নিজেই রাজি নয়?সঠিক মানুষ কে ভালোবাসা অন্যায় নয়,,,তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা অন্যায়।ঘোর অন্যায়!ভুল মানুষ কে ভালোবাসা মানেই বিষাক্ত,,, পুরো জীবন টাই বিষাক্ত তে ভরপুর,,,।মোশারফ চৌধুরীর মতো ভাই থাকলে হয়তো কোনো বোনের ক্ষতি হতো না।হয়তো নীলিমাও অন্য একজন কে বিয়ে করার বোঝা সহ্য করতে না পেরে কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আত্নহত্যার পথটাই বেছে নিতেন,,,মনে থাকতো না আত্নহত্যা করলেই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।পরিবার শব্দ টা খুব ছোট হলেও এর গভীরতা দৃঢ়,,চিরস্থায়ী ভাবে মনে দাগ কেটে যাবার জন্য এই একটা শব্দই যথেষ্ট ❤
ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে সবাই।একটু পরেই দুপুরের খাবার খাবে একসাথে।মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী।মা পরম আদরে মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছেন।রায়হান চৌধুরী অভনী কে ইশারা করে বলে উঠলেন,,,
—-কিরে এটা কি আমার নাতবউ নাকি?
রায়হান চৌধুরীর কথায় অভনীর চোখ গুলো বড়বড় হয়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে নীলের দিকে তাকালো সে,,কিন্তু নীলের এতে কোনো ভাবান্তর নেই।দেখে মনে হচ্ছে কিছুই শুনতে পায়নি,,একমনে মোবাইল টিপতে ব্যাস্ত সে।তবে নাতবউ বলাতে সবার আগে নীলের দিকেই নজর গেলো কেনো বুঝতে পারছে না অভনী।তবে বেশ লজ্জা লাগছে তার।অভনী কে লজ্জার খনি থেকে৷ বের করার জন্য নীহাল আহম্মেদ বলে উঠলেন,,,
—না বাবা ও আমার মেয়ে।আমাদের অফিসেই কাজ করে,,তবে সবথেকে বড় কথা ও আমার মেয়ে।
একে একে সবাই কে পরিচয় করিয়ে দিলেন নীহাল আহম্মেদ।বিশাল বড় বাড়ি হবায় সবাইকে সবার রুম বুজিয়ে দেয়া হলো।এখানে ৩ দিন থাকবে ওরা।
দুপুরে খেয়ে যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলেন।
?
১ দিন পর,,
আজ মাহিব আসবে,,,সবাই মিলে একসাথে আবারো নিকলি হাওরে গিয়ে নৌকা করে ঘুরে বেড়াবে কাল।মাহিব আসতে আসতে সকাল ১০ টা বেজে গেলো।ফুপ্পি কে ছবিতে দেখলেও সামনে থেকে কখনো দেখেনি সে।তাই তার মধ্যে একরাশ এক্সাইটেড বিরাজ করছে,,,বাসায় ঢুকেই জোরে জোরে ফুপ্পি কে ডাকতে লাগলো সে।তখনি ওর চোখ আটকে গেলো বাচ্চা মেয়ে আরিহার দিকে।টিভিতে কার্টুন দেখতে দেখতে চকলেট খাচ্ছে সে।যার অর্ধেক চকলেট গালে আর মুখে লেগে আছে।মাহিব এক দৃষ্টিতে আরিহার দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার কাছে,,,আরিহার সামনে গিয়ে বলে উঠলো,,,,
—হেই পিচ্ছি? কে তুমি?
আরিহা ভ্রু জোরা কুঁচকে বললো মুখ ফুলিয়ে বললো,,,
—-হুহ,,, আমি মোটেও পিচ্ছি নই,,আমার ক্লাসমেটের অনেকেই প্রেম করে।
আরিহার কথায় মাহিব জোরে জোরে খিলখিল করে হাসতে লাগলো,,,।মাহিবের এমন হঠাৎ হাসি দেখে আরিহার চরম রকমের বিরক্ত লাগছে,,,কাউকে দেখে এভাবে হাসার কি হলো?উল্লুক কোথাকার!আরিহা মনে মনে একবস্তা গালি দিচ্ছে মাহিব কে,,একে তো কার্টুন দেখা নষ্ট করছে আবার কেমন খিলখিল করে হাসছে,,,কিন্তু আরিহার মনে মনে গালি মাহিবের উপর প্রভাব ফেললো না সে এখনো হেসে যাচ্ছে।আরিহার হঠাৎ মনে হলো,,,
—আরেহ এই ছেলে তো হুট করে বাসার ভিতর ডুকে গেছে।সেজে গুজে বোকা বানিয়ে চুরি করতে আসেনি তো?
ভাবতে দেরি আরিহা জোরে জোরে চিল্লাতে লাগলো,,,
—চোর,,,চোর? আপু,,,ছোট মা,,ভাইয়া? চোর আসছে চোর ?।
মূহুর্তেই মাহিবের হাসি গায়েব হয় একবস্তা রাগ এসে ভর করলো ওর মধ্যে।
————————-
?
ভার্সিটির মাঠে সবুজ ঘাসে হেঁটে বেড়াচ্ছে নীর্ঝয়।অভনী কে দেখে না আজ অনেকদিন।বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে,,,কিন্তু অভনী কে নিয়ে ওর ইচ্ছে গুলো যে ডুকরে ডুকরে ধামা চাপা দিয়ে মরতে হবে তা খুব ভালো ভাবেই জানে সে।তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটতে লাগলো।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে নীর্ঝয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। আচমকা এমন হওয়ায় নীর্ঝয় চমকে গেলো।ভ্রু কুঁচকে অবাক নয়নে তাকালো মেয়েটির দিকে,,,সাদা ফর্সায় দুধে আলতা গায়ের বরন মেয়েটার,,চেহারা টাও বেশ সুন্দর,, ১০০ জনের মধ্যে সুন্দরী প্রতিযোগিতা হলে নিঃসন্দেহে মেয়েটি প্রথম হবে।কিন্তু সেই চেহারায় মায়া খুঁজে পেলো না নীর্ঝয়।চুলগুলো কে পিঠ অবধি লেয়ার কাটে কেটে রেখে ব্রাউন কালার করে রেখেছে,,গায়ে টপস আর পেন্ট পরে আছে,,,মেয়েটি হুট করে বলে উঠলো,,,,
—-i love u নীর্ঝয়।Do you love me?
মেয়েটির কথায় নীর্ঝয়ের ভ্রু জোরা আটেকটু কুঁচকে গেলো।এতোক্ষনে ভার্সিটির অনেক মানুষ জরো হয়ে গেছে ওদের সামনে,,,পাশ থেকে সবাই চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,,,
—-say yes নীর্ঝয়,,,,হ্যাঁ বলো নীর্ঝয়,,, হ্যাঁ বলে দাও।
মেয়েটি এখনো নিচে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।নীর্ঝয় মেয়েটিকে বললো,,,,
—উঠে দাঁড়ান।
—আগে ইয়েস বলুন তারপর উঠবো।
—আমি উঠতে বলেছি।
মেয়েটি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো,,নীর্ঝয় মেয়েটির আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,,,
—নাম কি?
—নীরা।
—হুম মিস. নীরা শুনো আমি কোনোভাবেই তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা,,,কিন্তু ভাগ্য নামক জিনিস টায় সবার জন্য সবাই থাকেনা।যে যাকে চায় তাকে সবাই পায় না।সরি মিস.নীরা।আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি।যদিও ভাগ্যের পরিহাসে সে আমার হবে না।
এটা বলেই নীর্ঝয় নীরা কে পাশ কেটে চলে যেতে লাগলো,,,নীরা পিছন থেকে ডেকে বললো,,,,
—হেই মি. নীর্ঝয়,,,ওই মেয়েটির মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?
নীর্ঝয় পিছন ফিরে মুচকি হেসে বললো,,,
—শহরের অলিগলিতে এমন কি অফিসেও মেয়েটি শার্ট পেন্ট না পরে সুতি শাড়ি পরে অব্যস্ত।হাঁটু ছুই ছুই চুল গুলো কে কেঁটে পিঠ অবধি করে ব্রাউন কালার রঙ করে নয় বরং লম্বা চুল গুলো কে খোলা রেখে বা বিনুনি তে আটকে রাখতে ভালোবাসে।মুখে মেকাপের দল প্রলাপ দিয়ে নয় গারো কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিকই মেয়েটির সুন্দর্য হাজার গুন বাড়িয়ে দেয়,,,মেয়েটির বর্ননা করে আমি শেষ করতে পারবো,,তবে সবথেকে বড় কথা মেয়েটির টানা টানা চোখের গভীরে এক বুক মায়া জমে থাকে যেখান থেকে চাইলেও নজর সরানো দায়।ভালো থেকো,, আসি।
নীর্ঝয় আবারো চলে যেতে লাগলো,,মেয়েটি পিছন থেকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,,,
—-আমিও ঠিক ওই মেয়েটার মতোই হবার চেষ্টা করবো মি. নীর্ঝয়।মেয়েটিকে আমি আপনার মন থেকে সরাতে চাইনা তবে আপনার মনের এককোনে নীরা নামক শব্দ টা জায়গা নেবার মতো জায়গা অবশ্যই তৈরী করে নিবো।আপনিও একদিন আমায় ভালোবাসবেন মি.নীর্ঝয়। খুব বেশি ভালোবাসবেন।
নীরার চোখের চিকচিক করা জল গুলো ফর্সা গাল বেয়ে মাটিতে পরলো।
নীর্ঝয় আবারো পিছন ফিরে তাছ্যিল্যের একটা হাসি দিয়ে হাঁটা ধরলো নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে। ❤
#চলবে,,,,
(গল্পের প্রতিটা ক্যারেক্টার কে গুছাতে হয়,,,,তাই গল্পটা একটু বড় তো হবেই,,,তাই বলে কেউ কি বিরক্ত?)