#আমার রাজ্যের রানী
#Part :2+3
#Writter : Sriti Nur Avni
প্রখর রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে অভনী,, গাড়ি গুলো সব জেনো তার সাথে আজ আড়ি ধরে আছে।রাস্তায় হাজারো গাড়ি ছোটোছুটি করছে কিন্তু অভনীর অফিসের রাস্তায় যাবার মতো একটা গাড়ি ও পেলো না সে,,,।একজন গাড়ি ওয়ালা বললো ওইদিকে নাকি বড় একটা মাফিয়া গুন্ডা কাউকে রাস্তায় এনে মারছে তাই সব গাড়ি যাতায়াত বন্ধ ওইদিকের।
অভনী আজ অফিসে রিজাইন লেটার দিবে।ওই অফিসে আর যেতে চায় না সে।তাই গাড়ি গুলোর সাথে অভিমান করে নিজেই নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলো সে।
প্রখর রোদে অভনীর হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও দ্রুত পা চালাচ্ছে সে,,,। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো সত্যিই সামনে কয়েক জনকে মারা হচ্ছে,, অভনী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওইদিকে,,,ও বুঝতে চাইছে ওখানে কারা আছে যাদের ভয়ে কোনো গাড়ি আসলো না,,হেঁটে হেঁটে আসতে হলো তাকে,,, সব সময় তো সিনেমায় দেখেছে বাস্তবে দেখলে খারাপ কি,,,আর ভাবছে,,
—দেখে তো একজন কেও গুন্ডা দের মতো মনে হচ্ছে না তাহলে ওরা মাফিয়া হলো কিভাবে,,, সিনেমা তে যখন দেখেছি গুন্ডাদের দেখলেই ভয় ভয় লাগতো কিন্তু এদের দেখে আমার ভয় লাগছে না কেনো?কিন্তু ওরা এভাবে ওদের মারছে ওদের হাত কাঁপছে না কেন?যাদের মারছে তাদের আমার এমন চেনা চেনা লাগছে কেনো একটু সামনে গিয়ে দেখি তো (মনে মনে)
ঘরির টিটটিট শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসলো অভনী।১০ টা বেজে গেছে দেখে সব প্রশ্ন নিজের মধ্যে চেপে রেখেই আবারো হাঁটতে শুরু করলো সে।মনে হচ্ছে মাফিয়া টা বড় মাপের মাফিয়া তাই এখন এই রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ও না কেউ ভয়ে।কিন্তু অভনীর ভয় লাগছে না এমন রাস্তা দিয়ে হেটে বেড়াতে দিব্যি লাগছে এখন ওর কাছে।
অফিসে রিজাইন লেটার দিয়েই চলে এসেছে অভনী রাস্তায় এখনো মানুষ নেই গাড়ি ও নেই।মনে হয় মাফিয়া টা এখনো রাস্তা থেকে যায়নি।মাফিয়ার প্রতি এক বস্তা রাগ নিয়ে নিজে নিজেই বকবক করতে করতে আবারো হাঁটা শুরু করতে হলো তাকে।
কিছুক্ষন পর পর মেঘের গর্জনে হালকা কেপে উঠছে সে অভনীর মনে হচ্ছে মেঘেরা ও তাকে বলতে চাচ্ছে,,
“অভনী বাড়ি যাও তাড়াতাড়ি আমরা এখনি বৃষ্টি হয়ে যরে পরবো,,পরে আমাদের কোনো দোষ দিতে পারবে না তুমি””
কথাটা ভেবেই ফিক করে হেসে উঠলো সে আর তার সাথে সাথেই ঝরে পরলো অঝর দ্বারায় বৃষ্টি।প্রখর রোদের মাঝে হঠাৎ জুম বৃষ্টি খুব ভালো লাগে অভনীর।
জনমানবশূন্য রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যেতে খুব ভালো লাগছে অভনীর,,, “ইসসস সাথে আইস- ক্রিম আর একটা ভালোবাসার মানুষ থাকলে মন্দ হতোনা”
আবারো ফিক করে হেসে উঠলো সে।আর ভাবতে লাগলো,,
“আমাকে এইসব ভাবলে হবে না।আমাকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে আমার মা আর বোন কে নিয়ে,,,দিনশেষে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই বেঁচে আছে ওরা।আমি কিভাবে অন্যের দিকে ঘুরে তাকাবো?কিন্তু আজ এমন একটা পরিবেশে হিমুর মতো সারা শহর হেঁটে বেড়ালে মন্দ হয়না”
হাতে থাকা হ্যান্ড ব্যাগ টা রাস্তা থেকে একটা পলিথিন দিয়ে মুড়ে নিয়েছে সে যেন যেই টাকা গুলো আছে ওইগুলো ও যেন নষ্ট হয়ে না যায়।
কিছুদূর যাবার পর সামনে একটা ছেলেকে দেখে থমকে দাঁড়ায় সে।আজও আবার খারাপ কিছু হবে নাতো? এমন জনমানবশূন্য রাস্তায় একটা ছেলে একা একটি মেয়েকে পেয়ে বাজে নজর তো দিতেই পারে। বৃষ্টির মধ্যেও অভনীর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ছেলেটিও বৃষ্টিতে বিঝছে কিন্তু শুধু পিছন দিক টাই দেখতে পাচ্ছে সে।কতক্ষন ই বা আর দাঁড়িয়ে থাকবে সে মেয়েদের যে প্রতিনিয়ত নিজেকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হয়।তবুও আবার অনেকেরই শেষ রক্ষা হয় না,,,। অভনী আর কিছু বা ভেবে সুতি উরনা টা দিয়ে খুব ভালো ভাবে মুখটা ঢেকে এগিয়ে গেলো সে।
ছেলেটি এখনো তাকায়নি অভনীর দিকে নিজের মতো বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো সে।অভনী বার বার আর চোখে তাকাচ্ছে ছেলেটির দিকে এখনো শুধু পিছনের দিক টাই দেখতে পাচ্ছে সে।সেদিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো সে,,,একটু পর অভনীর মনে হলো ওর পিছন পিছন কেউ আসছে ঘুরে তাকানোর মতো সাহস ও পাচ্ছে না ওর মনে হচ্ছে “এই বুঝি সব শেষ,,, শেষ রক্ষা আর হলোনা”।
আসতে আসতে মানুষ টা আরো এগিয়ে আসলো,,,,অভনী চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো তখনি তার চেনা একটা সুর বেসে উঠলো,,,,লোকটা বললো,,,
—হেই আপনি অভনী না?
অভনী নিজের নাম শুনে সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালো,,,সামনে নীল কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে যায় সে,,,সাথে খুশিও হলো এখন আর ভয় লাগছে না তার হয়তো শেষ রক্ষা টা হয়ে গেছে বা সামনের মানুষ টাকে খুব বিশ্বাস করে ফেলেছে তাই।
অভনী দেখলো বৃষ্টিতে যেই ছেলেটি ভিজতে ছিল সেটাই নীল।
—হে আমিই অভনী।কিন্তু আপনি এখানে (অভনী)
—বৃষ্টি আমার খুব পছন্দ তাছাড়া মানুষ জনের বা যানবাহনের কোলাহল ও নেই,,,ঢাকা শহরে এমন একটা পরিবেশ পাওয়া খুব মুশকিল তাই মিস করতে পারলাম না (হেসে)
—কিন্তু সামনে তো একদল মাফিয়ার জন্য সব বন্ধ সেটা আপনি জানলেন কীভাবে? আপনি ও কি এই রাস্তা দিয়ে কোনো কাজে যাচ্ছিলেন নাকি?(অভনী)
—হুম সেটাই।(হালকা হেসে যে হাসির রহস্য অভনীর অজানা) তো আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?(নীল)
—অফিসে রিজাইন লেটার দিতে।আপনাকে তো বলছিলাম ই জব টা করবো না তাই।(অভনী)
—অবশেষে তাহলে জব টা ছেড়েই দিলেন? (নীল)
—হাম (অভনী)
—তাহলে এখন কি শুধু টিউশনি ই করবেন?(নীল)
—নাহ নতুন জব খুজবো সাথে।(অভনী)
—আবারো যদি এমন হয়?(নীল)
—ছেড়ে দিব।তবুও কখনো নিজের সম্মান হানি হোক এমন কিছু করবো না। (অভনী)
—Strange!!! I like it (নীল)
—আচ্ছা আপনি তো ওইদিক দিয়ে আসলেন তো মাফিয়া গুলো কি চলে গেছে?(অভনী)
—আপনি চাইলে চলে গেছে না চাইলে রয়ে গেছে। (নীল)
—মানে?আসলে আমার মাফিয়া টাকে কাছ থেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,,, সিনেমার গুন্ডা আর এই মাফিয়া টাকে আমার এক লাগেনি তাই কাছ থেকে ভালোভাবে দেখতে ইচ্ছে করছে মেইন লোকটাকে দেখতে সিনেমার গুন্ডাদের মতো লাগে কিনা। (অভনী)
—ভয় লাগবে না,,,আর আপনি তাকে দেখেছেন?(নীল)
—পিছন থেকে দেখেছি হুডি পড়া এই গরমে ও।নাহ আমার ভয় লাগেনি তো।আমার তো মনে হচ্ছিল সবাই এমন ভয় পাচ্ছে কেনো আমার তো ভয় লাগছে না।সব গুলো লোককে তো দেখতে অন্য মানুষের মতোই লেগেছে।আমার তো মনে হচ্ছে ওই মাফিয়া গুলো মাফিয়া হবার যোগ্যই না।(অভনী)
অভনীর কথা শুনে কাঁশতে লাগলো নীল।চোখ বড় বড় হয়ে আছে তার।কি বলে এই মেয়ে?যাকে কিনা পুরো শহরের সবাই ভয় পায় তাকে তার মাফিয়া ই মনে হচ্ছে না?
—কি হলো আপনার? মনে হয় ঠান্ডায় কাঁশছেন। বাসায় চলে যান আমিও যাই মা অপেক্ষা করবে।(অভনী)
—চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আমিও ওইদিক দিয়েই যাবো।তাছারা এখন আর কোনো গাড়ি পাবেন না।একটু সামনেই আমার গাড়ি।(নীল)
—ওকে চলুন (অভনী)
?
কিরে তুই এমন কাক ভেজা ভিজে এসেছিস কেন?গাড়িতে ছিলি না নাকি?(শাহেরা)
—না মা গাড়ি ছিলো না তাই হেঁটেই আসতে ছিলাম কিন্তু আবারো কালকের ওই ছেলেটা আছে না নীল? ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো তারপর আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো। (অভনী)
—ছেলেটা খুব ভালো তাইনা?আমার যদি এমন একটা ছেলে থাকতো তাহলে আর তোকে এতো কষ্ট করতে হতো না (শাহেরা)
—মা তোমার কি মনে হয় আমি পারবো না?ছেলেরাই কি সব পারে মেয়েরা পারে না?(অভনী)
—নারে মা তোর মতো যার মেয়ে আছে তার আর ছেলের অভাব থাকবে কীভাবে?কিন্তু মাঝে মাঝে কষ্ট হয় তোর জন্য খুব আর কোনো আফসোস নেই আমার।যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। (শাহেরা)
—হুম।
?
আজকে আবারো ইন্টারভিউ দিতে যাবে অভনী,,বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ দিয়েছে সে কিন্তু একটা চাকরি ও হয়নি,,,সবে মাএরো এইচএসসি পরীক্ষা দিলো সে বেশি মাইনের কাজ ও পাচ্ছে না।এদিকে সংসারের অবস্থা হিমশিম খাচ্ছে।ভাবতে ভাবতেই হাঁটছে অভনী।
—এই মামা রাজধানী যাবা?(অভনী)
—হ যামু কিন্তু ১০০ টেহা লাগবো (রিকশা ওয়ালা)
— কম হবে না মামা,,৬০ টাকায় যাবেনা? (অভনী)
—না একদাম ৯০ টাকা লাগবো। (রিকশা ওয়ালা)
অভনী ঘরির দিকে তাকালো ইন্টারভিউ এর আর বেশি সময় নাই আজকের টাও মিস হয়ে যাবে নয়তো,,,। অভনী আবার হেন্ড ব্যাগ টা খুলে দেখলো কত টাকা আছে,,,গাড়ি ভাড়া দিয়ে এসে শেষ হয়ে যাবে সকালে তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে এসেছে দুপুরেও আর খাওয়া হবে না তাহলে,,,।বেশি টাকা নিয়ে বের হয়না অভনী,, ঢাকা শহরে কখন চুরি হয়ে যায় বলা যায়না পরে যা টাক আছে তাও যাবে,,।
আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়লো অভনী,,,রিকশা চলছে তার আপন গতিতে।
একটু পর অভনী দেখলো তার একটু সামনে একটা বয়স্ক লোক গাড়ি থেকে নেমে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ।
অভনী লোকটার সামনে গিয়ে রিকশা থামাতে বললো,,,
—আপনি ঠিক আছেন আংকেল? (অভনী)
—না মা বুকে খুব ব্যাথা আর চেপে আছে মনে হচ্ছে,,, গাড়ি ড্রাইভ করে হসপিটাল যেতে পারছিনা।ছেলে কে ফোন দিয়েছি চলে আসবে হয়তো (লোকটা)
—ততোক্ষন কি আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি,,,আপনি আসুন আমি আপনাকে হসপিটাল নিয়ে যাই,,,আমি তো ড্রাইভ করতে পারিনা তাই এই গাড়িটা এখন এখানেই থাকোক আমি অন্য গাড়ি দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাই চলুন আংকেল। (অভনী)
—মা তোমার তো কাজ আছে (লোকটা)
—আমার কাজের থেকে বড় আপনার জীবন আংকেল। চলুন (অভনী)
—ওকে আমি গাড়ি টা লক করে আমার ছেলেকে জানিয়ে দেই তাহলে,,,তোমার মতো মেয়ে হয়না মা। (লোকটা)
অভনী লোকটা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলো,,,,ডক্টরের কাছে রেখে ও বেড়িয়ে আসলো কারন লোকটা বলেছে তার ছেলে চলে আসবে এখনি।
ডক্টর কে বারবার বলে এসেছে সে লোকটা কে যেন একা না ছাড়ে ওনার ছেলে আসবে একটু পর।
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ঘরির টাইম দেখলো অভনী,,, শুকনো মুখে হালকা মুচকি হাসলো সে,,,না থোক না একটা চাকরি তাতে কি একটা মানুষ কে সাহায্যে তো করতে পেরেছে সে।নাহয় আবারো অপেক্ষা করবে আরেকটা ইন্টারভিউর।
চলবে,,,,
#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 3
#Writer : Sriti Nur Avni
?
আপু আপনি আমাদের মাফ করে দেন,,আমরা ভুল করেছি।
আচমকা এমন কথায় থমকে দাঁড়ালো অভনী।ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সে।তার ঠিক একটু সামনেই ৪ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে আর আরেক জন হুইলচেয়ারে বসে আছে।প্রত্যেকটার হাতে পায়ে মাথায় মুখে ব্যাণ্ডেজ।মুখ দেখে চেনার উপায় নেই।অভনীর ছেলে গুলোকে চেনা চেনা লাগলেও ঠিক মনে করতে পারছেনা সে এরা কারা।আজ এতোদিন পর আবারো ইন্টারভিউ এ যাবে সে তাই ব্রেন কে এতো চাপ দিয়ে মনে করানোর কি দরকার ভাবছে অভনী,,তার মধ্যেই ছেলে গুলো আবারো বলে উঠলো,,,
—আপু সরি।প্লিজ আমাদের মাফ করে দেন নইলে যে আমাদের খবর আছে।
ছেলেগুলোর কথায় আবারো ভ্রু কুচকে চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে আছে অভনী ছেলেগুলোর দিকে।এখনো মনে করতে পারছেনা ছেলে গুলো কারা আর ভয়েস টাও কেমন চেনা চেনা লাগছে।ছেলেগুলো নিজেদের এমন অবস্থা নিয়ে আমার কাছে সরি বলতে এসেছে আমার একটু ব্রেন কে চাপ না দিলে অন্যায় হবে যাকে বলে গোর অন্যায়।
ভাবতে ভাবতেই রাস্তার সাইডের উচু জায়গা টায় গালে হাত দিয়ে টুপ করে বসে পরলো অভনী। ওর এমন কান্ডে ছেলে গুলো অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।অভনী কে দেখে মনে হচ্ছে ও একমনে দেন করতে বসেছে,,ছেলেগুলো আবারো বলে উঠলো,,,
—আপু আমাদের এতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ মাফ করে দিন।
—ওই ওই ওই আপনারা ওই বাজে ছেলে গুলো না?এইতো মনে এসে গেছে, এইজন্যই তো বলি এতো চেনা চেনা লাগছে কেনো চান্দু দের।হিহিহিহি আপনারা জানেন আপনাদের এখন পুরোই পৃথীবির অষ্টম আশ্চর্য মনে হচ্ছে আমার কাছে।
Btw লাইক সিরিয়াসলি আপনারা আমার কাছে মাফ চাচ্ছেন?আমার কাছে?বাহ আমি তো জানি এখনকার ছেলেরা ধর্ষন করে খুন করে বুক ফুলিয়ে হেটে বেড়ায়,,,আবার নিজেদের টা নিজেরাই বুক ফুলিয়ে ফেসবুকে লাইভ করে বলে বেড়ায়।ভিক্টিমের কাছে মাফ চাইবে দূরের কথা ভিক্টিম কে খুন করে তার বাবা মায়ের কলিজা টাকে কেরে নিয়ে তার বাবা মার কাছেই মাফ চায় না উল্টো তার বাবা মা কেই আবার থ্রেট দিয়ে বেড়ায়।আপনাদের কাহিনী কি বলেন তো তাছাড়া এমন ব্যান্ডেজ দিয়ে সবগুলো ভুত মার্কা চেহারা হয়ে আছেন কেনো? ?(হুট করে দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে)
—আপু আমরা আর কিছুই বলতে পারবো না তাহলে আমাদেরকে একেবারে মেরে ফেলে সত্যি সত্যি ভুত বানিয়ে দিবে।প্লিজ ক্ষমা করে দিন আমরা আর কোনোদিন ও আপনাকে কিছু বলবো না।(ছেলেগুলো)
—ওকে মাফ করতে পারি কিন্তু আমার সাথে একটা গেম খেলতে হবে এখনি।(অভনী)
—হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে কিভাবে? (ছেলেগুলো)
—ওকে তাহলে আমি মাফ ও করবো না,,বায় আমার ইন্টারভিউ আছে। (অভনী)
—না না না আপু প্লিজ আমাদের মাফ না করে যাবেন না। যেই গেম খেলতে বলবো ওইটাই খেলবো আমরা (ছেলেগুলো)
অভনী রাস্তার সাইড থেকে বড় একটা ইটের টুকরো পেলো,,ওইটা হাতে নিয়ে ছেলেগুলো কাছে গিয়ে বলতে লাগলো,,,,
—এই যে নিন এটা দিয়ে যাদের হাত ভাঙা তার সেই হাত দিয়ে আর যাদের পা ভাঙা তারা সেই পা দিয়ে ডিলা দিয়ে ওই ডাস্টবিন টায় ফেলবেন।যার ঠিক যায়গায় না পড়বে তাকে মাফ করবো না। (অভনী)
অভনীর কথা শুনে ছেলেগুলো বড়সড় একটা সক খেলো,,ভাঙা হাত পা তো নড়ানোই যাচ্ছে না তাহলে ডিলা দিতে এতোদূর কিভাবে নিবে,,কিন্তু মাফ না করলে তো একে বারে উপরে পাঠিয়ে দিবে।ছেলেগুলো কি করবে বুঝতে পারছে না একজন আরেক জনের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।
—গেম টা খেলবেন নাকি আমি চলে যাবো?(অভনী)
—না না খেলছি খেলছি। (ছেলেগুলো)
ছেলেগুলো হাত ঝুলানো থেকে খুলে ইটটা ছুড়ে মারলো প্রত্যেকটা ছেলেই চিৎকার করতে লাগলো,,রাস্তায় সবাই তাদের কাহিনী দেখতে ব্যাস্ত।গ্রামে হলে হয়তো এতক্ষনে হাজার হাজার মানুষের ভির জমে যেতো। কিন্তু শহরে তা হয়না সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত তবুও বেশ কয়েক জন দাঁড়িয়ে আছে।
অবনী প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,,,,
—কি কষ্ট হচ্ছে?এই কষ্ট তো কিছুই না যখন একটা মেয়েকে ধর্ষন করা হয় শরীরের প্রতি টা হার ভেঙে ফেললে যেমন লাগবে তার থেকেও হাজার গুন কষ্ট হয় তার।একজন ধর্ষিতার বাবা মাকে যদি বলা হয় আপনাদের শরীরের চামড়া ছিলে মরিচ লাগানো হলে আপনাদের মেয়ে আবার আগের মতো হয়ে যাবে তাহলে দেখতি তারা হাসতে হাসতে রাজি হয়ে যেতো।শরীরের চামড়া ছিলে মরিচ লাগানোর কষ্ট সহ্য করতে পারলেও তারা মেয়ের এই কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারে না তাই তো বিচার না পেয়ে ছোট মেয়েটাকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পড়তে হয় এই যন্ত্রণা না পাওয়ার আশায়।
এখন বল আর কোনো দিন কারো সাথে এমন করবি?
—-না না না প্রমিস (ছেলেগুলো)
—ওকে যা মাফ করে দিলাম।
এটা বলেই অভনী চলে যাচ্ছে আর দূর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে অভাক দিকে তাকিয়ে আছে একজন যা অবনীর দৃষ্টিতে আসলো না,,,
অবনী হাঁটছে আর ভাবতে ছিল ,, এই দেশের কত জন কে দিয়েই বা আমি ধর্ষন না করার প্রমিশ করাতে পারবো? এই দেশের বেশিরভাগ মানুষ ই যে এখন পশু হয়ে গেছে।পশু না হলে কি আর হাসবেন্ড এর মৃত্যুর খবর শুনে হসপিটালে গিয়ে ফিরে এসে আদরের মেয়ের ধর্ষিত অবস্থায় লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখতে হতো?পশু না হলে কি আর মেয়েকে মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে পাঠিয়ে মেয়েকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ডলে পরতে দেখতে হতো?ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অভনী।
ভাগ্যিস আজ ১২ টা বাজে ইন্টারভিউ আবার আগে বের হয়ে ছিল নইলে তো আজকেও মিস করতে হতো তাকে।
অভনী নানান রকম চিন্তাভাবনা করে হাঁটতে গিয়ে দুম করে একজনের সাথে ধাক্কা খেলো,,অভনী পরে যেতে নিলেই লোকটা ধরে ফেলল ওকে।অভনী দূরে সরে এসে লোকটার দিকে রাগি চোখে তাঁকায়।
—চোখে দেখতে পান না নাকি?মেয়ে দেখলেই ধাক্কা খেলে মন চায়?(অভনী)
—আরেহ আমি তো ফোনে কথা বলছিলাম তাই খেয়াল করিনি কিন্তু আপনি তো আরো বেশি চোখে দেখতে পারেন না ম্যাম।
হায় আমি নির্জয়( হাত বাড়িয়ে)
অভনী হাত না মিলিয়ে পাশ কেটে একজন রিকশা ওয়ালা কে ডেকে রিকশায় উঠে পরে,,।
—বাহ। i like her attitude (নির্জয়)
?
অভনী ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে নিচে দাঁড়িয়ে থেকে অফিস টার দিকে তাকিয়ে আছে,,।অনেক বড় অফিস টা।
—হে আল্লাহ এই জব টা যেনো হয়ে যায়। আমি যেনো আমার মা আর বোন টার জন্য কিছু করতে পারি তুমি সহায় থেকো আল্লাহ। (অভনী)
অভনী ইন্টারভিউ এর জন্য ওয়েট করছে।একটু পরই ডাক পরে অভনীর,,খুবই বিচলিত সে আজও যদি চাকরি টা না হয় তাহলে সংসারের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে যে কিভাবে তাকাবে তার মায়ের দিকে?
অবনী ইন্টারভিউ এর রুমে গিয়ে অভাক হয়ে গেছে কারন ওই খানে ওই মধ্য বয়ষ্ক লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার একটু সামনেই একজন মহিলা বসে আছে।
অভনী কে দেখেই লোকটা বললো,,,
—আরে মামুনি তুমি?সেদিন কোথায় চলে গিয়েছিলে আমি তোমাকে কতো খুজলাম পাইনি।
—আংকেল বাসায় চলে গিয়েছিলাম।
—নিলিমা এই হচ্ছে সেই মেয়েটা যে আমাকে সেদিন হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল (লোকটা)
—আসসালামু আলাইকুম আন্টি (অভনী মুচকি হেসে)
—ওয়ালাইকুম-আসসালাম কেমন আছো মামুনি?যানো তোমার কথা নিহাল আমাকে কতো বার বলেছে এই পর্যন্ত (নিলিমা হেসে)
—ওহ আসলে সেদিন কাজ ছিলো তাছাড়া আংকেল বলেছিল ওনার ছেলে চলে আসবে তাই চলে গেছিলাম (অভনী)
—ওকে ওকে বসো।আমি আসলে ইন্টারভিউ নিতে আসিনি এটা হচ্ছে আমার মিসেস তো ওর সাথেই একটু কথা বলতে এসেছিলাম। ভাগ্যিস এসে ছিলাম নইলো তো তোমার সাথে দেখাই হতো না (নিহাল)
অভনী কিছু বললো না মুচকি একটা হাসি দিয়ে বসে পড়লো।
—তোমার ইন্টারভিউ লাগবে না মামুনি তোমার চাকরি কনফার্ম (নিলিমা)
—না আন্টি আমি এইভাবে চাকরি টা নিতে চাইনা। আমি নিজের যোগ্যতা তেই চাকরি টা পেতে চাই তাছাড়া আমি মাএরো এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি আপনাদের ও আমাকে যাচাই করা উচিত স্যার ম্যাম (অভনী)
—এই মেয়ে স্যার ম্যাম বলছো কেন আংকেল বা আন্টিই বলবা নয়তো মামুনি পাপ্পা।
ওকে তুমি যা বলো তাই হবে ইইন্টারভিউ নেওয়া হবে।(নিলিমা)
অভনীর ইন্টারভিউ নেওয়া হলো চাকরি টাও হয়ে গেলো,,,,অভনী খুশি দেখে কে ওকে বলা হয়েছে কালকে সকাল থেকে জয়েন করতে নিলিমার পি এ এর চাকরি পেয়েছে অভনী।
গাড়িতে উঠে ভাবছে অভনী,,, লোক দুইটা খুবই ভালো এমন মানুষ ও আছে এখনো,,,হুম আছেই তো যেমন নিহাল নিলিমা কেই দেখে আসলো সে।বড়লোক হয়েও কোনো অহংকার নেই।এমন খুশির একটা খবরে খালি হাতে যায় কিভাবে বাসায়?অভনী গাড়ি থামিয়ে দোকান থেকে এক কেজি মিষ্টি কিনে নিল।
আজকে চাকরি টা পেয়ে খুশি তারা,,,হয়তো আবারো সময় টা পাল্টে যাবে বা দুমুঠো ভাতের জন্যে আর চিন্তা করতে হবে না সেই আশায়,,,,,।
পরের দিন সকালে,,,,
চলবে,,,,,,
(সারাদিন কারেন্ট ছিল না নয়তো সকালেই দিতাম ?)