আমার রাজ্যের রানী পর্ব-১৯

0
748

#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 19
#Writer : Sriti Nur Avni

?
বেশ কিছুদিন পর,,,,
এতোদিন অভনীর নীলের প্রতি যত্নের কোনো কমতি ছিলো না,,,আজ নীলের হাত আর পায়ের ব্যান্ডেজ খুলতে যাবে,,,নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আর নিহাল আহম্মেদ অফিসে গিয়েছেন,,,নীরব নিয়ে যাবে নীল কে হসপিটালে,,,নীরব শাওয়ার নিচ্ছে।অভনী নীলের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো,,, ও ভেবেছিলো এতোক্ষনে হয়তো নীল কে নিঁচে নেয়া হয়েছে কিন্তু নীলের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলো সে,,,

—মামুনি,,মামুনি? (নীল)

—এভাবে চেচাচ্ছেন কেন?কি হয়েছে? (অভনী)

—আমি কি এমন ভাবে যাবো হসপিটালে?আমার শার্ট,, পেন্ট চেঞ্জ করে দিবে কে?

অভনী খেয়াল করে দেখলো নীলের পরনে ধূসর রঙের শার্ট আর হাঁটুর নিচ অবধি থ্রি কোয়াটার পেন্ট,, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।

অভনী কার্বাড থেকে হুয়াইট রঙের একটি টি শার্ট বের করে এনে নীলের সামনে রেখে বললো,,,

—নিন হিরো সাহেব এটা পরে নিন।

নীল অসহায় দৃষ্টি নিয়ে অভনীর দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো,,,অভনী বুঝতে পারলো এই চাহনীর মানে এখন তাকে এই ভয়ংকর কাজ টা করতে হবে,,অভনী টি শার্ট টা হাতে নিয়ে নীলের আরেকটু কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,,,

—এদিকে আসুন আমি পরিয়ে দিচ্ছি।

—কিন্তু চোখ বন্ধ করে কিভাবে পরাবেন?পরে তো আমার ভাঙা হাত আরো ভেঙে ফেলবেন মিস. অভনী।

—আপনি আছেন কি করতে?আপনি দেখবেন আর ব্যাথা পাবার আগেই বলবেন।

নীল আর কিছু বললো না,,,মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে তার সামনে বসে থাকা লজ্জাবতীর দিকে।

অভনী চোখ বন্ধ করে ভেঙে যাওয়া হাতে টি শার্ট পরানোর সময় নীল ব্যাথা পাবার অভিনয় করে বলে উঠলো,,

—আহহ এভাবে কেউ পরায়?(হালকা চিল্লিয়ে)

অভনী নীলের চিল্লানো তে চোখ খুলে ফেলল,,নীলের এক হাত টি শার্ট এর ভিতর আর আরেক হাত খোলা,,অভনী ইতস্ততভূত করলেও খুব সাবধানে টি শার্ট টা পরিয়ে দিলো,,অভনী কে দেখে নীল মিটমিট করে হাসছে।

—এবার পেন্ট টা চেঞ্জ করে দাও? (নীল)

অভনী চোখ বড় বড় করে তাকাতেই নীল বুঝতে পারলো ও কি বলেছে,, ও তারাতারি করে কথা ঘুরিয়ে বললো,,,

—আ..মি এই পেন্ট টাই পরে যাবো। খুব সুন্দর এই পেন্ট টা তাইনা?হুয়াইট টি শার্ট এর সাথে ব্লাক থ্রি কোয়াটার পেন্ট টাই খুব মানিয়েছে আমায় তাইনা?চলো চলো তারাতাড়ি চলো।

তারাহুরো করে বলে নামতে গেলেই হাতে ব্যাথা পেয়ে বলে উঠলো,,,

—আউচ্।

অভনী এসে নীল কে ধরে বললো,,
–চলুন আমি আপনাকে নিচে দিয়ে আসি,,এখন তো আপনি একটু একটু হাঁটতে পারেন।

অভনী নীল কে নিচে নামিয়ে সোফায় বসালো,,,তখনি নীরব সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলতে লাগলো৷,,

—নীল চল চল তারাতারি চল।

—এতোক্ষন তো নিজেই লেট করলি তো এখন আবার নিজেই তারাহুরো করছিস কেন?

—হসপিটালে মাইশা আসবে,,বলছে তারাতাড়ি যেতে,,,এখন যদি আমি লেট করে যাই তাহলে আমার হাড়গুড় একটাও ঠিক থাকবে না রে,,শেষে তোর মতো আতুরা হতে হবে,,তোর তো তবুও সেবা করার লোক আছে,,,মাইশা কে তো এই বাড়িতে ডুকতেই দিবে না (অসহায় মুখ করে)

নীরবের কথা নীল হুহু করে হেসে বললো,,

—ভাইয়া তোর এখনি এমন অবস্থা? বিয়ের পর তো প্রতিদিন তোর হাড়গুড় ভাঙবে রে মাইশা ভাবি। (নীল)

—ভাইয়া বিয়ে করেছে? (অভনী অভাক হয়ে)

—আরে গর্দভ বিয়ে করলে কি বউ এই বাসায় থাকতো না?ভাইয়ার লাভার আছে লাভার (নীল)

—হুম বল তোরা,, এখন সারাদিন যাবৎ কথা বল আর আমার গরদান টা যাক (নীরব)

নীল আর অভনী দুজনেই হেসে উঠলো,,,নীল বললো,,,

—ওলেলেলে আমার ইঁদুর ছানা ভাইটা রে,, নে নে ধর আমাকে।

নীল আর নীরব হসপিটালে চলে গেলো,,,আর অভনী গিয়ে পরতে বসলো।

?
হসপিটালে,,,

—ভাইয়া আর কতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?আমার ডক্টর দেখিয়ে ব্যান্ডেজ খোলা শেষ এখনো তো ভাবি আসলো না। (নীল)

—চুপ করে দাঁড়া আরেকটু এখনি চলে আসবে।

তখনি শাড়ি পরা একজন মেয়ে এসে বললো,,,

—হেই how are you? (মাইশা)

—আমরা ফাইন এখন বলো এতো লেট হয়েছে কেন?আমার লেট হলে তো কুরুক্ষেএ করে ফেলতে (নীরব রেগে)

—সেটা তো একটু আধটু কটতোই তাই না ভাবি?হাই আমি নীল,, তোমার ১টা মাএ দেবর।

—বাহ্ তুমি তো দেখি খু ফাস্ট ফাস্ট এখনি ভাবি বানিয়ে ফেললে?ভাগ্যিস তোমার এই মাথা মোটা ভাই টার মতো হও নি?

—কি বললো তুমি? আমি মাথা মোটা?(নীরব রেগে)

—আচ্ছা তুমি তো আমার ভাবি +আপু,,এখন আমি তোমাকে ভাবিপু বলে ডাকবো ঠিক আছে?

—হাম ঠিক আছে দেবরজি,,,কিন্তু তুমি আমাকে ভাবি বানিয়ে দিলে ঠিকই বাট বাসায় কি আদৌ মেনে নিবে?

—আরে ভাবিপু চিল করো চিল,,,আমি তো এতোদিন আতুরা হয়ে থেকে তোমাদের মিলানোর জন্য ভাবতে ভাবতেই চুল পেকে গেলো,,,তবে একটা প্লান কিন্তু বানিয়েও ফেলেছে আশা করি কাজে লেগে যাবে।

—কি কি বলনা রে? (নীরব উওেজিত হয়ে)

—এমনি এমনি তো বলবো না আগে আমাকে ট্রিট দিবি তারপর বলবো বুঝেছিস?

—আচ্ছা এখানে দাঁড়িয়ে আর কতোক্ষন চলো আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি তারপর তোমার ট্রিট ও হয়ে যাবে আর প্লানও শোনা যাবে।(মাইশা)

ওরা একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেলো,,, নীল
প্লান টা বলে দিয়ে ওদের দুজনকে একা time spend করতে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসলো,,।

?
সন্ধ্যা ৭টা,,,

সবাই ড্রইং রুমে বসে আছে,,,অভনী রা আলাদাভাবে খেলেও প্রতিদিন সন্ধ্যায় সবাই একসাথে নাস্তা করে আর গল্প করে ওরা।
অভনী সবার জন্য ফ্রেন্স ফ্রাই,,সস,,আর সাথে কফি নিয়ে আসলো। নীহাল আহম্মেদ বললেন,,,

—অভনী মামুনি রেসাল্ট দেবার অনেক দিন তো হয়ে গেলো,,, তো তোমার কি করার ইচ্ছা? ভার্সিটি নাকি অন্য কিছু? (কফিতে চুমুক দিয়ে)

—আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি বড় হয়ে ডক্টর হবো,,, তাই এখন আমারো স্বপ্ন সেটাই,, কিন্তু এখন তেমন একটা পড়া হচ্ছে না আর এখন আমি কুচিং ও যেতে পারবো না তাই টেনশন হচ্ছে,,,মেডিকেল তো আর সোজা কথা না তাইনা ছোট আব্বু। (মন খারাপ করে)

—হুম বুঝলাম,,,শুন মা তোর বাবা মারা গেছে,,,ওনার একটা ইচ্ছে ছিলো তোকে নিয়ে।এখন তোর ও উচিত ওনার ইচ্ছে টা পূরণ করার চেষ্টা করার।আমি জানি তোকে যদি আমি চাকরি ছেড়ে আমাদের সাথে খেতে বলি চলতে বলি তাহলে তুই শুনবি না,, কারন তোর আত্নসম্মান বোধ প্রকট,,,আর আমার মনে হয় সবার এমন টাই থাকা উচিত। আর চাকরি করে কুচিং ও করা সম্ভব না।কিন্তু নীল কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের স্টুডেন্ট,,, নীল তোর মতো এই সময় টা পার করে এসেছে আর চান্স ও পেয়েছে,,,তাই বলছিলাম কি৷ তুই এখন থেকে নীলের কাছে পড়াশোনা কর।নীল তো এখন সুস্থই আছে মোটামুটি।তুই ও তো নীলের জন্য কম করিস নি মা তাইনা?
আমি সব কিছু ভেবেই বলছি তোর বাবার,,তোর ইচ্ছা মানে আমাদের ইচ্ছা তাই কাল থেকে অফিস থেকে এসে নীলের কাছে পড়তে বসবি কেমন?

এতোক্ষন যাবৎ সবাই খুব মনোযোগ দিয়েই শুনছিলো নীহাল আহম্মেদের কথা।অভনীও তার ব্যাতিক্রম নয়।নীলের মন তো এখ৷ নাগিন ডান্স দিচ্ছে,,,অভনীর মা মিসেস শাহেরা বেগম অভনীর মাথায় হাত রেখে বললো,,,,

—ভাইজান তো ঠিকই বলছে রে অভনী।নীল বাবা তো মেডিকেলের স্টুডেন্ট তুই ওর কাছেই পড় কাল থেকে।

অভনী মুচকি হেসে বললো,,,

—ঠিক আছে ছোট আব্বু।

অভনী আর চোখে নীলের দিকে তাকালো,,, তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো আর অভনী সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো।অভনী মনে মনে ভাবছে,,,

“ইসসস ওরা কি জানে না এই লোকটার কাছে গেলে আমার হার্টবিট বেড়ে যায়?দম বন্ধ হয়ে আসে আমার?এই লোকটার আসেপাশে থাকলে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হয় ওরা কি তা জানে না?অবশ্য জানবেই বা কি করে,,, আমার মনের কথা ওরা জানবে কি করে ?

এইসব ভাবছে আর বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছে নীলের দিকে,,,আর নীল মুচকি মুচকি হাসছে।

অভনীর নানু মিসেস রহিমা বেগম বললেন,,,

—সব ওই তো হইলো তা বড় নাতি একটা বিয়া সাদি লাগাও এইবার,, নিজের নাতির ঘরের পুতি গো দেখবার তো কোনো সুযোগ হইলো না ছাইরা দিলো কত দূরে,,তোমার পোলা মাইয়া রেই দেইখা মরি।

রহিমা বেগমের কথায় অভনী রা বাদে সবাই একটু অভাকই হলো,,,কারন ওরা জানতো ওনি অভনীর আপন নানি ই,,,ওদের সবার মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলে থাকায় অভনী ওদের সব টা বললো,,,,নীরব এসে রহিমা বেগম কে জরিয়ে ধরে বললেন,,,

—নানী তোমার মতো যার একটা বউ থাকে তার কি আর বউয়ের দরকার পরে বলো?

রহিমা বেগম চোখের পানি গুলো মুছে বললো,,,,

—আল্লাহ ভালা মাইনষের লগে ভালা মানুষ ই ঝুটায়।আমার এই নাতি না (অভনী কে দেখিয়ে)যতটা ভালা তোমরাও ভালা,,,আর আমার এই মাইয়াডার মতো (শাহেরা বেগম কে দেখিয়ে)এই পোলা মাইয়া ডাও ভালা (নীহাল আহম্মেদ আর নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী কে দেখিয়ে)

সবাই এসে জরিয়ে ধরলো মিসেস রহিমা বেগম কে,,, রহিমা বেগমের চোখে পানি,,দুঃখের নয় সুখের কান্না করছেন ওনি,,,,যেখানে নিজের আপন সন্তান ফেলে রেখে চলে গেলো সেখানে অন্য কারো সন্তান এতো ভালোবাসা দিবে এটা ওনার ভাবনার বাহিরে।তবুও সবাই ভালোবাসে,,,এই কয়দিন একসাথে থাকতে থাকতে ওনিও ভালোবেসে ফেলেছেন সবাই কে,,,তাই পরম যত্নে জরিয়ে ধরলেন ওনিও।

?
রাত ৯:৩০ মিনিট

অভনী নীলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে,,,

—চোরের মতো বাহিরে দাঁড়িয়ে এমন উঁকিঝুকি না দিয়ে ভিতরে আসতে পারেন মিস. অভনী।(নীল)

নীলের কথায় চমকে উঠলো অভনী।গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো রুমের ভিতর।

—কি চাই?(নীল)

—পি..কু কে।

—কিন্তু ও তো এখন আমার (নীল)

—শুধু আজকের জন্য,,, প্লিজ দিন না হিরো সাহেব।পিকুর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব।

—-কি আর করার,, বড় মালিক বলে কথা,,নিয়ে যান।তবে কালকে থেকে আবার আমার।

—গিফট দিয়ে ফেরত নেই না আমি ?

অভনী পিকু কে নিয়ে হনহন করে চলে গেলো নিজের রুমে,,,

“” শেষে কিনা এই রাগী,,বদমেজাজী টাকেই আমার স্যার হতে হলো?ঘরেও স্যার অফিসেও স্যার,,দিনেও স্যার রাতেও স্যার,,, সারাদিন বুকে হার্টবিটের ধুকপুকানির শব্দে কবে না জানি স্ট্রোক করি আমি,,,আহা কি স্যার ময় জীবন আমার।

চলবে,,,,

(একটু বোরিং হচ্ছে?ধৈর্য ধরে পরের পর্বগুলোর অপেক্ষা করুন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here