#আমার রাজ্যের রানী
#Part :17
#Writer : Sriti Nur Avni
?
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে অভনী।নীল কে আইসিইউ তে নেয়া হয়েছে।বাসায় খবর দেয়া হলেও এখনো কেউ আসেনি।
তখন রাস্তায় অভনী যখন পাগলের মতো কান্না করতেছিলো তখন এতো মানুষের ভীড়ের মধ্যে একজন ছেলে এগিয়ে আসলো অভনী কে সাহায্য করার জন্য। তার ভাষ্যমতে তিনি নীল কে আগে থেকেই চেনেন।হয়তো এখান কার অনেকেই চিনেন কিন্তু বিপদের সময় কেউই কাছে আসতে চায় না।সব মানুষ আবার একও না।ছেলেটা গাড়ি ড্রাইভ করতে পারায় নীলের গাড়ি দিয়েই ছেলেটার সাহায্য নিয়ে নীল কে হসপিটালে নিয়ে আসলো অভনী।নীলের কন্ডিশন ভালো না বিধায় সাথে সাথেই আইসিইউ তে নেয়া হয়েছে তাকে।অন্য কেউ হলে হয়তো আগে ভর্তি করাতে হবে,,এক্সিডেন্ট পুলিশ কেস তাই আগে পুলিশ কে খবর দিতে হবে এমন টাই বার বার বলতেন ডক্টররা,,,কিন্তু নীল কে ওনারা অনেকেই চেনে,,,একে তো বড় মাফিয়া তার উপর টপ বিজনেস আহাম্মেদ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজ এর নীহাল আহম্মেদ এর ছেলে।তাই তারাহুরো করেই ওনারা নীল কে আইসিইউ তে নেয়া হয়েছে।হসপিটালে এসে ছেলেটি যখন বললো,,,
—ম্যাম বাসায় কল দিয়ে জানিয়ে দিন
অভনীর এতোক্ষনে মনে পরলো বাসার কথা।কাঁপাকাঁপা হাতে মিসেস নীলিমা আহাম্মেদ চৌধুরী কে বললো অভনী।ছেলেটা নীল কে ভর্তি করিয়ে দিয়েই কাজ আছে বলে চলে গেলো।
অভনী একনাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছে,,,তার ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,খুব কি ক্ষতি হতো মানুষ টার এক্সিডেন্ট না করে আমাকে করলে?আমি তো কষ্ট পেতাম না এতে কিন্তু এখন যে আমার খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে আল্লাহ!তুমি ওনাকে সুস্থ করে দাও আল্লাহ,, জীবনে যদি কোনো ভালো কাজ করে থাকি তার উছিলায় ভালো করে দাও তুমি উনাকে (জোরে জোরে কান্না করে)
একজন ডক্টর সাহেব নিজের কেবিনে যাওয়ার সময় অভনীর আহাজারি শুনতে পায়,,,ডক্টর টি ধীর পায়ে অভনীর কাছে এগিয়ে আসেন।মধ্যবয়ষ্ক থেকে একটু বেশি বয়সের ডক্টরটি আলতো করে অভনীর মাথায় হাত রাখেন।অভনী ফিরে তাকায় ওনার দিকে।চোখ দুটো তার ফুলে লাল হয়ে আছে,,,চোখে এখনো জল টয়টুম্বুর। ডক্টরটি অভনীর পাশে বসে জিজ্ঞাসা করলেন,,,
—কাছের কারো শরীর খারাপ হয়েছে মা?এভাবে কাঁদছো কেনো?বাসা থেকে আর কেউ আসেনি?তুমি একা যে?
অভনীর টয়টুম্বুর করা চোখে চিকচিক করা জল গুলোর যেনো বাধ ভেঙে গেলো এবার।আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো সে।ডক্টর সাহেব ও কিছু বললেন না তাকিয়ে রইলেন অভনীর দিকে,,,করুক না কান্না মাঝে মাঝে চিৎকার করে কান্না করার মাঝেও যে কান্না জলের সাথে কষ্ট গুলো ধূলিসাৎ হতে থাকে,,,যখন খুব কষ্ট লাগবে তখন জোরে জোরে কান্না করাটাই ভালো মন হালকা হয়,,, চাপা কান্না বড্ড পোড়ায়!তাই ডক্টর সাহেব চুপ করে রইলেন।বেশ কিছুক্ষন পর অভনীর কান্নার শব্দ কিছুটা কমে এলো,,, তখন ডক্টর সাহেব বললো,,,,
—দীর্ঘ ৪৫ বছরের ডাক্তার জীবনে অনেক মানুষের আহাজারি শুনেছি মা,,,কেউ তার সন্তানকে হাড়িয়ে কেউ বা বাবা মা,,কেউ তার ভালোবাসার মানুষের কষ্টে তো কেউ স্বামী-স্ত্রীর কষ্টে। যখন ওরা প্রিয় মানুষকে বাঁচানোর জন্য কাঁদতে কাঁদতে আমাদের কাছে আসতো তখন মনে হতো ইসসস আজ যদি ম্যাজিক জানতাম তাহলে ওদের কষ্ট টা একটু হলেও হয়তো নিবারন করতে পারতাম।প্রতিটা রোগী দেখার আগে আল্লাহর কাছে চাইতাম আমাদের দ্বারা যেনো ওনি রোগীর প্রিয় মানুষদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেন।কারন আমরা শুধু একটা মাধ্যম মাএ মা।সব কিছুর মালিক তো আল্লাহ।তাই বাস্তবতার কাছে হার মেনে অনেক প্রিয় জনের কাছেই আমাদের মাথা নত করে ছোট করে বলতে হয় সরি!!
এই সরি শব্দ টা সেই মুহূর্তে তাদের কতটা বেদনা দেয় তা একটু হলেও আমাদের মনে নাড়া দেয় মা।কেঁদো না আল্লাহ কে ডাকো ইনশা্আল্লাহ ওনি তোমার প্রিয় মানুষ টাকে সুস্থ করে দিবেন।কে হয় তোমার আর কেউ আসেনি?(মাথায় হাত ভুলিয়ে)
অভনী কাঁপাকাঁপা ঠোটে বললো,,,
—আ..মার স্যা..র হন ওনি। অফি..স থেকে বাসায় যাবার সময় এক্সি..ডেন্ট হয়েছে।বাসায় বলা হয়েছে কিন্তু এখ..নো আসছেনা।
ডক্টর সাহেব একজন নার্স কে ডেকে এক গ্লাস পানি দিতে বললেন অভনীর জন্য। শুধু মাএ অফিসের স্যারের জন্য এভাবে কান্না করছে সেটা বুঝতে পারছেন না ওনি,,,আবার স্যারের সাথে বাসায় যাচ্ছিলো ও বললো মেয়েটি,,,ডক্টর সাহেব বললেন,,,
—ভালোবাসো ২ জন দুজন কে?
অভনী একটু অবাক হয়ে তাকালো ডক্টর টির দিকে।কি বলবে ও?উত্তর কি জানা আছে তার?সত্যিই কি ভালোবাসা নামক জালে আটকে গেছে সে?কেনো কষ্ট হচ্ছে মানুষ টার জন্য? অভনী চোখ নিচে নামিয়ে আস্তে করে বললো,,,
—না।
ডক্টর সাহেব হালকা মুচকি হেসে নার্স এর দেয়া পানি টা এগিয়ে দিয়ে বললো,,, ,
—নাও পানি খেয়ে নাও।বয়স টা এমনি এমনি যায়নি রে মা।আমার বিয়ে টাও ছিলো ভালোবাসার বিয়ে।তাই ভালোবাসা মানে কি বুঝি।তোমার মাঝে আমি তোমার স্যারের জন্য ভালোবাসা দেখেছি,,সময় থাকলে বলে দাও নইলে পরে হয়তো আর সময় পাবে না।ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কিন্তু খুব গভীর (মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে)
অভনী অশ্রুশিক্ত অভাক চোখে তাকিয়ে আছে ডক্টরের দিকে।তখনি ডক্টর কে একজন নার্স বললো,,,
—স্যার আপনার রোগী দেখার সময় হয়ে গেছে।সবাই অপেক্ষা করছে।
ডক্টর সাহেব উঠে গেলেন,,যাওয়ার আগে মাথায় হাত ভুলিয়ে বললেন,,,
—আল্লাহ কে ডাকো ওনি না চাইলে কোনো ডক্টরের ক্ষমতা নেই মা ভালো করার।
ডক্টর চলে গেলে অভনী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইসিউর দরজার দিকে,,,কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দৌঁড়ে চলে গেলো দরজার কাছে।দরজার কাছে গিয়ে উঁকিঝুকি দিতে লাগলো সে,,,একটু খানি যদি হিরো সাহেব কে দেখতে পায় হয়তো সেই আশায়।কিন্তু দরজার মোটা কাঁচ বেধ করে দেখার সৌভাগ্য হলো না তার।তবুও দরজার সাথে হেলান দিয়ে নিচে বসে কাঁদতে লাগলো সে।কেনো এতো কষ্ট হহচ্ছে বুঝতে পারছে না সে।তবে কি ডক্টরের কথাই ঠিক?
অভনীর চোখ গেলো সামনে দৌঁড়ে হন্তদন্ত হয়ে তার দিকে আসা ছেলে টার দিকে।ছেলেটাও ওর দিকে তাকিয়ে থেক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ওর কাছে এসেই থামলো।অভনী অশ্রুশিক্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।ছেলেটার টুপ করে ওর সামনে বসে পরে বললো,,,
—নীল কোথায় অভনী?বলো নীল কোথায় বলছো না কেনো বলো নীল কেমন আছে এখন?বলছো না কেন কেমন আছে নীল? (অভনীর হাত ঝাকিয়ে)
অভনী কিছু বলতে পারলো না হাত দিয়ে ইশারা করে আইসিউর রুম টা দেখালো শুধু। নীর্ঝয় বুঝতে পারলো নীল কে আইসিউ তে নেয়া হয়েছে।নীর্ঝয়ের চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।অভনীর চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে আরো বেশি কষ্ট হতে লাগলো তার।হোক না অন্য কারো কিন্তু ভালোবাসে যে।তাই নিজের চোখের পানি গুলো আড়াল করে অভনী কে উঠতে বললো কিন্তু অভনী উঠছে না বিধায় অভনীর হাত ধরে টেনে সামনে থাকা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো তাকে।নীর্ঝয় কে নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী ফোন দিয়ে জানিয়েছেন।বাসা দূরে না হওয়ায় খুব তারাতারিই ছুটে এসেছে সে।,,তখনি আইসিউ থেকে একজন নার্স বের হয়ে বললো,,,
—ফারহান আহম্মেদের বাসার লোক কারা?
অভনী আর নীর্ঝয় দুজনি দৌঁড়ে গেলো নার্সটির কাছে।
—নার্স আমি।পেসেন্ট কেমন আছে এখন? (দুজন একসাথে)
দুজন একবার দুজনের দিকে তাকালো,, নার্স বললো,,,
—আপনাদের পেসেন্ট এর B+ রক্ত লাগবে খুব তারাতাড়ি। তাই যতো তারাতাড়ি পারেন জোগার করুন।পেসেন্ট এর কন্ডিশন ভালো না।
—নার্স আমার রক্তের গ্রুপ B+ আমি দিবো রক্ত। আমাকে এখুনি নিয়ে চলুন প্লিজ(নির্ঝয়)
নার্স নির্ঝয় কে সাথে করে নিয়ে গেলো। অভনী সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে গেলো হসপিটালের করিডোরের এককোনে থাকা মেয়েদের নামাজ পরার স্থানে।ধূসর রঙের শাড়িটা হালকা ঝারা দিয়ে ওজু করে আঁচল টাকে ভালো করে মাথায় দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পরলো সে।সেজদায় গিয়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে তার হিরো সাহেবের সুস্থতা চাইছে সে।সে শুনেছে সেজদায় দোয়া আল্লাহ কবুল করেন বেশি।নামাজ শেষ করে চোখমুখ মুছে ধীর পায়ে আবারো আইসিউর দরজার সামনে এগিয়ে গেলো সে।
তখনি কাঁদতে কাঁদতে অভনীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো নীহাল আহম্মেদ,,, নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আর শাহেরা বেগম।তার পিছনে আছেন হাসু কাকা।
—অভনী নীল কোথায় মা?কেমন আছে আমার ছেলেটা?(নীলিমা)
—স্যা…র আই..সিউ তে আছে ছোট মা (অভনী)
—কিভাবে হয়েছে এক্সিডেন্ট মা?গাড়ির তো কিছুই হয়নি তাহলে?(নীহাল)
—ফুচকার জন্য বাহিরে বের হয়েছিলাম আমরা,,কিন্তু আমি জানিনা ছোট আব্বু আমি জানিনা কিছুই,,,কোথা থেকে গাড়ি চলে আসলো আমি কিছুই দেখিনি। (কেঁদে নীহাল আহম্মেদ কে জরিয়ে ধরে)
ফুচকার জন্য বের হলেও মেয়েটার কোনো দোষ নেই,,,বের হতেই পারে তাই বলে কখন নিপদ হয়ে যাবে তার জন্য ও তো দায়ী নয়,,,তাছাড়া মেয়েটাও কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে,,,প্রচন্ড ভয় পেয়েছে বলেও মনে হচ্ছে তাই নীহাল আহম্মেদ বললেন,,,,
—টেনশন করিস না ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন(নীহাল)
নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী কান্না করতে লাগলো। শাহেরা বেগম ওনাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।তার ঠিক পাশেই বসিয়ে দিলেন মেয়ে অভনী কে।খুব যে কেঁদেছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।নীহাল আহম্মেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো একটু অভনীর দিকে।
বেশকিছুক্ষন পর আইসিউ থেকে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো। সবাই দৌঁড়ে ডক্টরের কাছে গেলো।ডক্টর বললো,,,
—খুব বেশি ইনজুরি হওয়ায় ওনাকে আজকে রাত আইসিউ তেই রাখা হবে।কালকে সকালেই কেবিনে দেয়া হবে তবে কয়েক দিন হসপিটালে থাকতে হবে।আপনারা ওনার ভর্তির ব্যাবস্থা করুন।আশা করি আল্লাহ চাইলে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
—আমি কি একটু দেখা করতে পারবো ডক্টর আমার ছেলেটার সাথে?(নীলিমা)
—সরি মিসেস আহম্মেদ,, আইসিউতে কাউকে এলাউ করা হয়না কালকে সকালে কেবিনে দেয়া হলে দেখতে পারবেন।
ডক্টর চলে গেলে নীহাল আহম্মেদ নীলের ভর্তির ব্যাবস্থা করতে গেলেন।নীর্ঝয় রক্ত দিয়ে বের হলে অভনী কে বাসায় চলে যেতে বললো,,,কিন্তু অভনী যেতে নারাজ।তার এককথা যতোদিন না নীল সুস্থ হবে ততোদিন সে হসপিটালেই থাকবে।নীর্ঝয় আর কিছু বললো না।কেউই আর আজ বাসায় যায়নি হসপিটালের করিডোরে বসে আইসিউর দরজার দিকে মুখপানে তাকিয়ে থেকেই কেঁটে গেলো সারারাত।
নীলের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।তাকে কেবিনে দেয়া হবে ৮ টায়।ডক্টর বলেছে এরমধ্যে জ্ঞান ফিরে যাবে।সারারাত জেগে থেকে সবার চোখেই ঘুম।তবুও ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থেকে নীলের জ্ঞান ফেরার আশার প্রহর গুনতে থাকলো তারা।
৭ঃ৫০ মিনিট
নীলের মাএই জ্ঞান ফিরেছে।হালকা চোখ পিটপিএ করে তাকাচ্ছে সে।এরি মধ্যে তার কেবিনে নেবার ব্যাবস্থা হয়ে গেলো।নীল কে কেবিনে নেয়ার পিছু পিছু সবাই কেবিনে যেতে লাগলো,,,নীল কে বেডে শুইয়ে দিয়ে লোক কমাতে বলে চলে গেলো নার্স রা।
নীল চোখ মেলে সবার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো,,,
—অনী!
অভনী ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মানুষ টার কাছে,,,মানুষ টাকে এমন অবস্থায় দেখে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না সে,,,মাথায় ব্যান্ডেজ,,,ডান হাতে,,,পায়ে ব্যান্ডেজ।অভনী
একটু কাছে যেতেই নীল আবারো অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো,,,,
—তু…মি ঠ.ক আছো অনী?ব্যা..থা পেয়েছো তুমি?
—কথা বলবেন না একদম। আমি ঠিক আছি এখন আপনার জন্য কথা বলা ঠিক হবেনা আপনি ঘুমান (অভনী)
কতোটা ভালোবাসলে নিজের এমন অবস্থায়ও আরেক জনের কেয়ার করে বুঝতে পারছেনা নীর্ঝয়,,,তবে গত একদিনে সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে অভনীও নীল কো ভালোবাসে।কথাটা ভাবেই হালকা মুচকি হাসলো নীর্ঝয়।এটাই তো চেয়েছিলো সে।
নীলিমা আহম্মেদ ছেলের কাছে গিয়ে কান্না করতে লাগলেন।ছেলের এমন অবস্থা কোনো বাবা মা ই সহ্য করতে পারেন না।নীল বললো,,,
—মা..মুনি আমি ঠিক আছি।কাঁদছো কোনো?বাসায় যা..ও তুমি।
—না আমি যাবো না তোর কাছেই থাকবো আমি (নীলিমা)
—মাই সান তুমি খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে তাইনা বলো?নীলিমা তুমি বাসায় চলো সারারাত ঘুমাওনি।আমার ছেলে স্ট্রং আছে ইনশা্আল্লাহ কিছুই হবে না ওর।তাছাড়া অভনী থাকুক ওর সাথে। (নীলিমা)
—হ্যা বাবা আমি ঠিক আছি।
—কি বলছো তুমি? মেয়েটা কালকে সারারাত ঘুমায়নি।কান্না করেছে শুধু এখন না ঘুমালে মাথা ব্যাথা করবে না?(নীলিমা)
—না মানে এখানে ঘুমিয়ে থাকবো নে।নীল ও তো একটু পর ঘুমাবেই তাইনা! (নীহাল)
নীল চোখ ঘুরিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ধূসর রঙের শাড়ি পরা লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকলো।চোখ মুখ ফুলে আছে।ফর্সা গাল দুটো লালা টকটক হয়ে আছে।অভনীর এমন অবস্থা দেখে নীলেরও খুব খারাপ লাগছে।
তখনি কেবিনে একজন নার্স ডুকে বললো,,,
—প্লিজ স্যার লোক কমান না হলে পেসেন্ট এর খারাপ হবে।
অভনী আর নীর্ঝয় কে রেখে সবাই। বেড়িয়ে গেলো হসপিটাল থেকে।নীর্ঝয় খাবার অর্ডার দিয়েছিলো সেই জন্য কেবিনের বাহিরে গেলো সে।অভনী এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলের সামনে।নীল ইশারা করলো বসার জন্য। অভনী না বসে নীলের আরেকটু সামনে এসে বললো,,,
–সরি!!আমি যদি ফুচকা খেতে বের না হতাম তাহলে আপনার এতো কষ্ট পেতে হতো না।সরি!
নীল কিছু বলল না তখনি কেবিনে আসলো ডক্টর। ডক্টর চেকআপ করে কিছু ঔষুধ দিয়ে চলে গেলেন।তখনি নীর্ঝয় খাবার নিয়ে ভিতরে ডুকলো। খাবার গুলো রেখে ঔষুধের পেস্কিভশন টা হাতে নিয়ে বললো,,,
—কিরে তুই তো এমন আতুরা হয়ে বসে আছিস আরেক জনের সেবা পাবার জন্য তাইনা?হিহি অভনী করো করো এবার সেবা করো তোমার স্যারের।আতুরা ভেঙুরা নিজের হাতে তো আর খেতে পারবে না স্যুপ আছে ওইটা আতুরা রে খাইয়ে দাও (হেসে)
—তবে রে,,,আগে একটু সুস্থ হই তারপর বুঝাবো তোর মজা হুহ (নীল)
নীর্ঝয় বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে অভনী হাত মুখ ধুয়ে এসে নীলের স্যুপ টা নিলো খাওয়াতে।প্রথম প্রথম ইতস্তত বোধ করলে নীল বললো,,,
—কালকে থেকে না খেয়ে আছি বলি আমাকে একটু খাবার দিবেন মিস (অসহায় মুখ করে আস্তে আস্তে)
অভনী মুচকি হেসে খাইয়ে দিতে লাগলো নীল কে।নীর্ঝয় এতোক্ষন যাবৎ বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো অভনীর নীল কে খাইয়ে দেয়া দেখে একদিকে ভালো লাগা আর আরেক দিকে কষ্টের হাহাকারে হালকা মুচকি হাসলো সে।তারপর সেখান থেকে চলে গেলো ঔষুধ আনতে।
অভনী নীল কে খাইয়ে দিয়ে বসে রইলো। নীল রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
—খাচ্ছো না কোনো?(নীল)
—ক্ষিধে নেই (মাথা নিচু করে)
নীল রাগী লুক নিয়ে তাকালো অভনীর দিকে।অভনী মুখটাকে বাংলা পাঁচের মতো করে খাওয়া শুরু করলো।যে রাগী কো জানে কখন এই ভাঙা হাত পা নিয়েই ডিসুম ডিসুম কিক মেরে বসে।
নীর্ঝয় ঔষুধ নিয়ে এসে বললো,,,
—দোস্ত আমার একটা জরুরি কাজ আছে তাই যেতে হবে রে।অভনী তুমি থাকো ওর কাছে,,,আসি। (নীর্ঝয়)
—ওকে সাবধানে যাস (নীল)
—আমি চাইনা তোদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে থাকতে রে।তোরা ভালো থাক হ্যাপি থাক সেটাই চাই। অভনী কে তোর সাথে নিজের চোখে দেখে খুব কষ্ট হয় কিন্তু আমি ইচ্ছে করে পাইনা বিশ্বাস কর,,ভালোবাসি যে (নীর্ঝয় মনে মনে)
অভনী নীল কে ঔষুধ খাইয়ে দিয়ে পাশের সিটে বসে রইলো,,,নীল আস্তে আস্তে বললো,,,
—অনী ঘুমিয়ে যাও!আমিও এখন ঘুমাবো।
—না মানো আপনার যদি কিছু লাগে।আমি ঘুমিয়ে গেলে কে দিবে বলুন (অভনী)
—কিছু লাগলে আমি ডেকে নিবো।বেশি কথা না বলে এখন ঘুমাতে বলছি তাই ঘুমাও।
অভনীর ও খুব ঘুম পাচ্ছিলো,,সারারাত কান্না করায় মাথা টাও খুব ব্যাথা করতেছে,,,মাথা ব্যাথায় মাথা টা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে।অভনীর মনে হচ্ছে চারপাশ থেকে যেনো ঘুম রা ডাকছে আর বলছে,,ঘুমা ঘুমা ঘুমা।তাই আর কিছু না বলো পাশের সিট টায় শুয়ে পরলো,,,একটু পরেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।আর নীল একমনে তাকিয়ে আছে তার ঘুমন্ত পরীর দিকে,,আহা কি নিষ্পাপ সেই ঘুমন্ত মুখ খানি।
কিন্তু এতোটুকু দূর থেকে দেখতে একটু কষ্টই হচ্ছে নীলের।কিন্তু কাউকে ডাকতে পারবে না এখন সে আর ডাকলে অভনীর ঘুম টাও ভেঙে যাবে তাই দূর থেকেই দেখতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষন পর একজন নার্স আসলো নীল কে দেখার জন্য নীল নার্স টিকে বললো,,,
—আমি ঠিক আছি কিন্তু আমার একটি কাজ করে দিন তো।
—জ্বি স্যার বলুন কি করতে হবে আমায় (নার্স)
—হুসসসস আস্তে দেখতে পাচ্ছেন না পাশের সিটে একজন ঘুমুচ্ছে?শুনুন ওর সিট টা আমার সিটের সাথে মিলিয়ে দিন আর মাথা ব্যাথায় মলম দিয়ে যান একটা।
নার্স প্রথমে একটু অবাক হলেও হালকা মুচকি হেসে বাহিরে থেকে আরেক জন নার্স কে ডেকে এনে আস্তে আস্তে সিট টা নীলের সিট এর সাথে মিলিয়ে দিলো।
নার্স মলম নিয়ে নীলের মাথায় লাগাতে গেলে নীল বললো,,,
—-মাথা ব্যাথা আমার না অভনীর।আপনারা যান আমি ওকে লাগিয়ে দিবো।
—কিন্তু স্যার আপনি এখন কিভাবে নরাচড়া করবেন?ব্যাথা পাবেন কিন্তু।
—আমি আপনাদের যেতে বলছি সো যান আমার টা আমি বুঝে নিবো।
—ওকে স্যার।
নার্স দুটো চলে গেলে নীল অভনীর দিকে তাকিয়ে বাম হাত দিয়ে অভনীর চোখে মুখে আসা চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো।মলম টা নিয়ে বা হাতে একটু কষ্ট করেই মলম টা লাগিয়ে দিলো মাথায়।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,,,
—আমি জানি তোমার মাথা ব্যাথা করছে।কিন্তু আমার জন্য তুমি এমন ভাবে কান্না কেনো করেছো অনী?আমার কিছু হয়ে গেলে কি তুমি কষ্ট পেতে?
অভনী গভীর ঘুমে থাকায় বুঝতে পারলো না কিছুই,,বুঝতে পারলো না নীলের ভালোবাসার স্পর্শ,,, দেখতে পেলো না ভালোবাসার চাহনী।
?
দুপুর ২ টা
অভনী এখনো ঘুমিয়ে আছে তবে ওর সিট এখন আর নীলের কাছে না।নার্স আসলে নীল বলাতে আবারো আগের জায়গা রাখা হয়।
নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আর নীহাল আহম্মেদ আসলেন দুপুরের খাবার নিয়ে।অভনীর ঘুম ভেঙে গেলো,,,শুয়া থেকে উঠতে উঠতে বললো,,,
—ছোট মা ছোট আব্বু তোমরা কখন এলে?
—-এইতো মাএ আসলাম।তুই ঘুমা মা আমরা তো এখন আছি ওর পাশে(নীহাল)
—না ছোট আব্বু আমি অনেক আগেই ঘুমিয়েছি।
—তাহলে তুমি বাসায় যাও একটু,,,শাওয়ার নিয়ে রেস্ট করে আসো।(নীলিমা)
—না ছোট মা আমি এখানেই শাওয়ার নিয়ে নিবো।মা কে বলে দিবো কাপড় নিয়ে আসতে।
নীহাল আহম্মেদ অফিসে চলে গেলেন,,, নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী আর অভনী নীলের পাশে থাকলেন।
সন্ধ্যাবেলা নীর্ঝয় আসলো হাতে করে অনেক গুলো ফুচকা নিয়ে।ফুচকা দেখে অভনী অবাক হয়ে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে ফুচকার দিকে।অভনী কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীর্ঝয় বললো,,,
—এভাবে তাকিয়ে থেকো না শেষে দেখা যাবে ফুচকার ই পেট ব্যাথা উঠে গেছে ?সব গুলো তোমার জন্যই আনা হয়েছে।
অভনী একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বললো,,,
—-আপনি কিভাবে জানলেন আমার ফুচকা খেতে মন চাইছিলো?
—আমি জানবো কোথা থেকে বলো,,,আমি তো আর কারো মন নিয়ে পরিক্ষা করি না বা মনোবিজ্ঞানী নই।ওই যে আমার আতুরা ভেঙুরা দোস্ত আছে যে ওয় ই আমারে বললো আসার সময় ফুচকা নিয়ে আসতে,,,গাড়ি থেকে এনে ওর মোবাইল টা যে ওর পাশে রেখেছিলাম ভাঙা হাত দিয়ে ওইটা দিয়েই ফোন দিয়েছিলো,,।আর এই বেরশিক পোলায় যে ফুচকা খাবে না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি তাই বুঝলাম তোমার জন্য।(নীর্ঝয়)
অভনী কিছু না বলে নীলের দিকে তাকালো।নীল মুচকি হাসছে।তখনি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসলো মিসেস নীলিমা আহম্মেদ।ওনি বের হয়ে বললেন,,,,
—নীর্ঝয় তুই কখন এলি?আরেহ ফুচকা এনেছিস ।
—ছোট মা তোমারো মনটা এখন ফুচকা ফুচকা করছে তাই না? (হেসে, অভনী,,)
—হাম ?(নীলিমা)
অভনী নীর্ঝয়ের থেকে পেকেট টা নিয়ে ছোট মা আর ও মিলে একমনে ফুচকা খেয়ে চলছে।যেনো একজন আরেক জনের সাথে প্রতিযোগিতা লেগেছে।নীল আর নীর্ঝয় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে,,,কি অদ্ভুত একটা খাবার কে ওরা এমন ভাবে খাচ্ছে বুঝতে পারছে না ওরা,,,কি আছে এই অদ্ভুত খাবার টায় যে মেয়েরা এতো পছন্দ করে?ভ্রু জোরা কুঁচকে কপালে ভাজ করে সেটাই ভাবতে লাগলো ওরা।নীর্ঝয় নীলের সিটের একপাশে বসে গালে হাত দিয়ে ওদের খাওয়া দেখতে লাগলো,,,অভনী ছোট মা কে আর ছোট মা ও অভনী কে খাইয়ে দিচ্ছে।সবগুসবগুলো শেষ করে ওরা নীলদের দিকে তাকালো,,,ছোট মা বললো,,,
—কিরে কি চাই তোদের?খাবি নাকি?কিন্তু তোদের দেয়া যাবে না শেষ হয়ে গেছে।
—না গো মামুনি তোমাদের খাওয়া দেখেই আমাদের পেট ভরে গেছে তাইনা রে নীল (নীর্ঝয়,,,,নীল আর ওর গভীর বন্ধুত্বের কারনে নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী কে মামুনী বলে ডাকেন কারন ওর মা নেই)
যার লাইফে যে নেই সেটা পবার জন্যই হয়তো সবার আফসোস থাকে।কারো বা বড় ভাই কারো বড় বোন,,কারো বা ছোট ভাই বা ছোট বোন,,,আবার কারো বাবা বা কারো মা,,,কারো ছেলো তো কারো মেয়ে এটাই যে দুনিয়ার নিয়মনীতি।
?
আজ ৩ দিন পর নীল কে বাসায় নেয়া হবে।যদিও ডক্টর বলেছেন আরো কিছুদিন রাখতে কিন্তু নীলিমা আহম্মেদ ছেলে কে আর হসপিটালে রাখতে চান না।ওনি বাসায় নার্স রাখতে চান নীলের সেবা করার জন্য। কিন্তু নীহাল আহম্মেদ নার্স নিতে নারাজ।ওনি বলে দিয়েছেন অভনী তো অফিসে কাজ করেই সে না হয় অফিসে কাজ না করে কয়েকদিন নীলের সেবা করবে,,তাছাড়া যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে সে হয়তো খুব সহজেই সামলে নিতে পারবে।
নীহাল আহম্মেদের অভনী কে হঠাৎ এতো নীলের কাছে রাখতে চাওয়ার কোনো মানে বুঝতে পারছেন না নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরী।তবুও স্বামীর কথাটাই মেনে নিলেন ওনি।
হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে নীল কে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো ওরা।এই কয়েক দিন অভনী নীলের অনেক সেবা করেছে,,,নীলিমা আহম্মেদ চৌধুরীও ছিলেন সাথে।
বাসার কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন শাহারা বেগম।ওনি মূলত কিচেনেই কাজ করছিলেন।সবাই ভিতরে ডুকে দেখলো একজন সূদর্শন ছেলে সোফায় বসে একমনে বই পরছে কিন্তু বইয়ের দিকো তার কোনো মনোযোগ সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,,,মনে হচ্ছে কলিংবেলের শব্দ শুনেই সে বই নিয়ে মুখে গুজার চেষ্টা করেছে যার ফলস্বরুপ বই টা সে উল্টো ধরেছে।অভনী আগে কখনো দেখেনি ছেলে টাকে।তবে নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো,,,অভনীর মনে এখন একটা কথাই ফুটবল খেলে যাচ্ছে,,,
—কে ওনি?
চলবে,,,,
(আমি আগেই বলেছিলাম আমার আম্মু অসুস্থ,,, but now আমার আপু আর ওর ১১ মাসের বেবি টাও খুব অসুস্থ,,,তাই late হয়েছে,,,আশা করি আর late হবে না ☺)