#আমার রাজ্যের রানী
#Part :13
#Writer : Sriti Nur Avni
?
অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে অভনী। জ্ঞান ফিরেছে মাত্র তার।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই চিল্লানো শুরু করেছে সে,, কিন্তু আসেপাশে কারো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অন্ধকার খুব ভয় পায় অভনী তার উপরে রুম টা অত্যান্ত বেশিই অন্ধকার,,, আসেপাশের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে এই বুঝি এই দিক দিয়ে কেউ এসে কিছু করে বসলো নয়তো অন্যদিক থেকে কেউ এসে কিছু করে বসলো। অভনী ভয়ে কান্না করতে লাগলো আর চিল্লাতে লাগলো। হঠাৎ রুমের দরজা খোলার শব্দে অভনীর ভয় আরো বেড়ে গেলো।অভনীর মুখ দিয়ে এখন আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না ভয়ে।লোকটা অভনীর সামনে এসে নিচে বসে পড়লো। অভনী ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল। তখনি ওর পায়ে কিছুর আঁচড় লাগাতে জোরে চিল্লিয়ে উঠলো সে,,,কিন্তু তার ব্যাথার আর্তনাদ সামনে থাকা মানুষ টার কানে পৌঁছালো না।লোকটা আবারো অভনীর পায়ে আঁচড় দিলো,,অন্ধকার রুমে মানুষ টাকে দেখা যাচ্ছে না,,,অভনী ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে মুখ শক্ত করে রেখেছে।
লোকটা উঠে পিছন ফিরে চলে গেলো বাহিরে,,অভনী পায়ের ব্যাথায় এখনো চোখমুখ বন্ধ করে রেখেছে,,, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে তার।একটু পর আবারো একজন লোক এসে অভনীর হাতে পায়ের বাঁধন খুলে চোখ বেঁধে মুখ বেঁধে ফেললো।অভনী হাত পা ছোটাছুটি করতে লাগলো কিন্তু কিছুই করতে পারলো না।লোকটা অভনীর হাত বেঁধে দিলো আবারো।অভনী কে বসিয়ে পায়ের মধ্যে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে টেনে গাড়ি তে তুললো,,,অভনী এখনো ছুটাছুটি করছে,, কিছুক্ষন পর গাড়ি থেকে অভনী কে নামিয়ে হাতের বাধন খুলে সাথে সাথেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো লোক গুলো।
অভনী চোখ খুলে তাকালেও লোক গুলো কে দেখতে পেলো না তবে গাড়ির নাম্বার টা দেখে রাখলো সে।অভনী সামনে তাকিয়ে দেখলো তাকে বাসার সামনেই রেখে গেছে,, নিজের পায়ের দিকে একবার তাকালো সে,,,পায়ে ব্যান্ডেজ করা কিন্তু পায়ের ব্যাথা হচ্ছে খুব।সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে,,, এখন আর বৃষ্টি নেই,,,অভনীর গাঁয়ের ভেজা শাড়ি টা শুকিয়ে গেছে। অভনী চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটা ধরলো বাসার উদ্দেশ্যে।
?
আচ্ছা পিকু আজ আমার ঘুম আসছে না কেনো?আমার বার বার দুপুরের কথা গুলোই মনে হচ্ছে কেন?কেনো আমি মিস অভনীর কথা ভুলতে পারছি না?
নীলের কথায় পিকু সব কথা repeat করতে পারলো না কিন্তু বারবার অনী অনী করতে লাগলো।নীল এবার পিকুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।পিকু তার কথায় অনড় বার বার অনী অনী ই করতে লাগলো।
—তুইও কি আমার মতো তোর মালিক অনী কে মিস করছিস?তোর ও কি এখন অনী কে দেখতে ইচ্ছে করছে?আচ্ছা তুই তো ওর পোষা পাখি তাই ওকে মিস করছিস কিন্তু আমি কেনো?কে হয় ও আমার?কেনো আমি মিস করছি ওকে?তবে কি তোর মতো আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি?
নীলের মুখে ভালোবাসি শুনে পিকু আবারো বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে লাগলো।
পিকুর কথা শুনে নীল হালকা মুচকি হাসতে লাগলো। অনী ঠিকই বলেছে পিকুর সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগে।মন খারাপের সময়ও মন ভালো হয়ে যায়।
— পিকু অনী কে দেখবি?এই দেখ (মোবাইলে তোলা ছবি গুলো দেখিয়ে)
নীলের কথায় পিকুর কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না।পিকু এখনো অনী অনী করতে লাগলো।’মিস করা’শব্দটা খুব অদ্ভুত একটা ভারি শব্দ।যা একবার শুরু হলে তা আর শেষ হতে চায়না।একবার শুরু হতে পারলে তা ক্রমে ক্রমে যেন বাড়তেই থাকে,,।তবে মাঝে মাঝে এই মিস শব্দটাতেই অদ্ভুত এক ভালোলাগা খুজে পাওয়া যায়,,,অদ্ভুত এক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায় আবার মিস নামক অদ্ভুত শব্দ টাই অনেক কে ক্ষনে ক্ষনে বড্ড পোড়ায়।
তবে নীলের এখন ভালো লাগা কাজ করছে।প্রেয়সী কে মিস করার অদ্ভুত এক আনন্দ।অদ্ভুত শব্দ টাও মাঝে মাঝে বড্ড অদ্ভুত লাগে।
নীল পিকু কে হাতে নিয়ে বারান্দায় রাখা অভনীর দেয়া গাছটার কাছে গেলো।গাছে অনেক গুলো ফুলের কলি ফুটেছে যা দেখে একরাশ অপেক্ষা এসে জমা হলো নীলের কাছে।বাহিরের হালকা মৃদ্যু বাতাস ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে এক কাপ কফির সাথে একটা ডায়েরির পাতা হলে মন্দ হয়না,,,আজ যে প্রেয়সীর কথা বড্ড বেশি মনে পরছে,,,ক্ষতি কি ভালোলাগার মুহূর্তগুলো ডায়েরির পাতায় তুলে রাখলে?হয়তো বৃদ্ধ বয়সে ডায়েরির পাতা গুলো আবারো যৌবনের সেই মিষ্টি অনুভূতির জায়গায় পৌঁছে দিবে।
যেই ভাবা সেই কাজ নীল রান্নাঘরে গিয়ে নিজের হাতে এক কাপ কফি বানিয়ে নিলো।কি দরকার এতো রাতে কাউকে ডাকার?যারা কাজ করে তারা তো সারাদিন করেই রাতের বেলাও কি ডেকে ডেকে কাজ করাতে হবে?তারা কাজ করে বলে কি মানুষ নয়?তাঁদেরও কি একটু আরামে থাকার ইচ্ছে হয়না?যারা চুরি করে বেড়ায় তারা তো ঠিকই পায়ের উপর পা তুলে শান্তিতে থাকতে পারে।তাহলে যারা কাজ করে খায় তারা কেন একটু শান্তি পাবে না?তাহলে কি দরকার এতো কষ্ট করে কাজ করার যেখানে নেই কোনো সম্মান,,, নেই কোনো শান্তি সারাক্ষন শুধু হুকুম আর হুকুম,,,,এই জন্যই বুঝি দেশের চুরি ছিনতাই এর হার এতো বেড়ে যাচ্ছে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কফি নিয়ে উপরে গিয়ে অভনীর দেয়া ডায়েরি পিকু কে আর গিটার টা নিয়ে বারান্দায় রাখা রকিং চেয়ারটার উদ্দেশ্য ছুটলো নীল,,,,প্রথমে কফির কাপ টা সামনে রেখে গিটারের টুংটাং শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে চোখ বন্ধ করে একমনে অভনীর কথা ভাবতে ভাবতে গান গাইতে লাগলো নীল,,,,
বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে
তার গন্ধে মেখে থাকতে
কেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে
সে পালায়?
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা
আমি দাঁড়িয়ে দেখছি
শেষটা জানালায়❤
বোঝেনা সে বোঝেনা,,,বোঝেনা সে বোঝেনা
বোঝেনা সে বোঝেনা,,,বোঝেনা সে বোঝেনা
বোঝেনা,,,,,বোঝেনা,,,,,,বোঝেনা
বোঝেনা,,,,,,বোঝেনা,,,,,,বোঝেনা?,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
গান গাইতে গাইতে নীলের অভনীর সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে দেখতে পাচ্ছিলো সে,,,,,গান শেষ করে গিটার টা পাচে রেখে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো নীল,,,,,তারপর ডায়েরি নিয়ে আবারো বসে পরলো রকিং চেয়ার টায়,,,।আজ লিখবে সে তার প্রেয়সীর বর্ননা,,,আজ লিখবে সে তার অনুভূতি,,,, আজ লিখবে সে প্রকৃতি কতো অদ্ভুত সুন্দর,,,,আজ লিখবে সে তার ভালোলাগার মুহূর্ত।❤
?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে একমনে আকাশে থালার মতো বৃও আকারের চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে অভনী।চাঁদ টাকে নিয়ে মেঘগুলো যেন এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছে।কখনো মেঘের আড়ালে ঢেকে ফেলা তো কখনো আবার দূরে চলে যাওয়া,,,এটা যেন বাচ্চা দের লুকোচুরি খেলার মতো হয়ে যাচ্ছে,,,বাহিরে থেকে হালকা বাতাসে চুল গুলো বারবার সামনে চলে আসছে কিন্তু তাতেও অভনীর আজ ভাবান্তর নেই চুলের এই লুকোচুরি খেলা টাও যেন অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে তার,,,,,,চুল গুলো এমন অবাধ্য হোক সেটাই যেন চাচ্ছে সে,,,,কি হয়েছে আজ ওর সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না অভনী।কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে পা কেন কেঁটে দিবে?একটা মেয়েকে একা পেয়েও শুধু পা কেঁটে ছেরে দেবার মতো ভদ্রলোক রয়েছে? নাকি সেটা কে ভদ্রসয়তান বলা যেতে পারে?কে সে?শাফিন নয়তো?কাল তো ওনি ই ফোন দিচ্ছিলো আমাকে।আমি ভুল ভাবছি নাতো?শাফিন এতোটা খারাপ ব্যাবহার কিভাবে করতে পারবে????ইদানিং সকাল টা ভালো গেলেও পরের সময় গুলো ভালো কাটছে না অভনীর,,,,সকাল থেকে দুপুরের পরের কথা গুলো খুব মনে পরছে তার।খুব কি ক্ষতি হতো সময় টা সেখানে থমকে গেলে?প্রিয় মানুষ টা কাছে থাকার সময়ে সময় গুলোকো যদি আঁটকে রাখা যেত কতোই না ভালো হতো তাহলে।কিন্তু সময় কি শুনবে আমার কথা?সে তো চলবে তার নিজস্ব আপন গতিতে।আচ্ছা সময় কে যদি একডজন চকলেট আর আইস-ক্রিম গিফট করি তাহলে কি শুনবে?চকলেট আর আইস-ক্রিম তো সব মেয়েদের ই পছন্দ কিন্তু সময় কি মেয়ে? সময় যদি মেয়ে না হয় তাহলে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফিক করে হেসে উঠলো অভনী,,,কাঁধে মায়ের হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালো না অভনী,,,কারন মায়ের হাতের স্পর্শ যে বড্ড চেনা তার,,,মায়ের আদর মাখা স্পর্শ কি আর না চেনা যায়?অভনী আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলতে লাগলো,,,,
—মা সময় খুব অদ্ভুত তাইনা?কখনো ভালো তো কখনো খারাপ,,, কখনো ভালোবাসা তো কখনো ঘৃনা,,,,দেখো এই আকাশ টাকেই কখনো সূর্যের প্রকট উত্তাপ তো কখনো মেঘলা আকাশ,,,,কখনো থালার মতো একটা বড় চাঁদ তো কখনো চাঁদ ছাড়া শূন্য অন্ধকারে ছায়া।মানুষের জীবন টাও তো এমন কখনো আলোয় আলোয় ভরা আবার কখনো অন্ধকারে আবৃত।তাহলে মানুষ অহংকার করে কেনো?তারা কি জানেনা আল্লাহ চাইলে এক মুহূর্ত সময়ে সব চেঞ্জ করে দিতে পারে?মা সময় কেন ঘুষ খায়না?এই পৃথীবিতে বেশির ভাগ মানুষই তো ঘুষ খায়।অনেকে চাকরি না পেয়ে সুইসাইড করে তবুও ঘুষ নামক শব্দ টার জন্য তাদের স্বপ্ন গুলো সারাজীবন দোল খেয়েই যেতে হয়।তাহলে সময় কেনো ঘুষ খায়না?তাহলে তো আমি চকলেট, আইস-ক্রিম দিয়ে থামিয়ে রাখতাম সুন্দর এক মুহূর্তে ?।
মেয়ের কথায় হেসে উঠলো শাহেরা বেগম,,,সময় কে ঘুষ দিবে তাও কিনা চকলেট আর আইস-ক্রিম? তবে মায়ের মুখে হাসি দেখে খুব ভালো লাগছে অভনীর।অনেক দিন যাবৎ মায়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনেনা সে তবে মুচকি হাসিই কম কিসে? মায়ের মুখে হাসির একটু কারন হবার অনুভূতি তো পৃথিবীর সব অনুভূতি কে হার মানায়।শাহেরা বেগম মুচকি হেসে বলতে লাগলেন,,,,,
—সময় কে ঘুষ দিয়ে চালানো যায়না রে মা।সে চলে তার আপন গতিতে।আজ যা হয়েছে ভুলে যা তার জন্য মন খারাপ করিস না।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে ভাজ্ঞিস তোর তেমন কোনো ক্ষতি করেনি,,,বার বার তোর সাথেই সবসময় এমন কেন হয় বলতো,,।অনেক রাত হয়েছে চল ঘুমিয়ে পরবি চল,,,এই পা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যাথা করবে।তাছাড়া তোর জ্বর আসবে সারাদিন ভেজা ছিলি চল রুমে চল।
—এখন ঘুম আসছে না মা তুমি যাও শুয়ে পরো আমি আসছি একটু পর।
মেয়ের কপালে চুমু একে দিয়ে রুমে চলে গেলেন শাহেরা বেগম। মা মেয়ে ফ্রেন্ড হলে সব সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়।কঠিন পরিস্থিতি গুলোতেও মায়ের সাপোর্টে এগিয়ে যাওয়া যায়,,,তাই তো মায়েদের উচিৎ ছোট থেকেই সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ করা,,,অভনী বাসায় এসেই মা কে সব কথা বলেছে। শাহেরা বেগম নিজে একটু ভয় পেলেও মেয়ের কথা ভেবে ভয় টাকে সামলে নিলেন ওনি,,,ওনি নিজে ভয় পেলে মেয়ে হয়তো আরো বেশি ভয় পাবে।কিন্তু সব অবস্থাতেই সাহস দরকার হয়,,,নিজের মনোবল টাই যে খুব কাজে লাগে সবসময়।
সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই সহজ হয়ে যায়,,,সময়ই ভুলিয়ে দেয় কঠিন সময় গুলোকে।
মা চলে যাবার পর আবারো একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখতে ব্যাস্ত অভনী।আজ ঘুম নেই দুজন মানুষের চোখে,,,,একজন ব্যাস্ত ডায়েরির পাতায় নিজের ভালোবাসা তুলে ধরায় তো আরেক জন চাদেঁর নেশায় ❤
?
নিজের কেবিনে বসে আছে অভনী। মাস না হওয়ার শর্তেও বড় স্যার কে বলে বেতন নিতে হবে তার।সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে,,, তাছাড়া এমন পা নিয়ে একটু হাঁটাও যায় না।চাকরি টা নেয়ার পর বিভিন্ন কারনে অনেক দিন অফিস কামাই দিয়েছে সে তাই মায়ের বারন শর্তেও হালকা জ্বর আর কাটা পা নিয়েই অফিসে ছুটে আসতে হয়েছে তার।মেডিকেলের স্বপ্ন থাকলেও পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না এখন,,,তাহলে কি বাবার স্বপ্ন সারাজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে?এমন একটা সময় চাকরি ছেড়ে কোচিং করার কোনো উপায়ও নেই,,,, অভনী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো,,,,তখনি হুরমুড়িয়ে অভনীর কেবিনে আসলো রুমি,,,।
—হেই কিউট বালিকা how are you?তোমাকে তো তেমন একটা দেখাই যায়না (রুমি)
—এই আলহামদুলিল্লাহ,,, তুমি কেমন আছো আপু?
—হুম ভালো,,, ছোট স্যারের ফাইল গুলো রেডি করেছো স্যার কিন্তু চলে এসেছে,,,এই। প্রজেক্ট টা কিন্তু ছোট স্যার কেই ফাইনাল করতে হবে আর তার এসিস্ট্যান্ট যখন তুমি তাই তোমাকেই সব ঠিক রাখতে হবে নাহলে নীল স্যার যা রাগী তুমি তো জানোনা।
—হুম রেডি ই আাছে,,,সমস্যা নেই আপু আমি আগেই সব ঠিক করে রেখেছিলাম।
অভনীর কথা শেষ হবার আগেই কেবিনে আসলো জিসান।জিসান ওদের কলিগ।নিতান্তই ভদ্র স্বভাবের ছেলে সে তবে রুমির সাথে সারাক্ষন ঝগড়া আর দুষ্টুমি তে মেতে থাকতেই ইচ্ছে করে তার। রুমি অফিসে থাকলে বেশির ভাগ সময়ই তার সাথে সাথে থাকে সে তবে রুমি এতে একবস্তা রাগ প্রকাশ করলেও জিসানের কোনো ভাবান্তর খুঁজে পাওয়া যায় না,,,, তবে জিসানের সাথে ঝগড়া লাগতে রুমির ও খুব ভালো লাগে যা বাস্তবে প্রকাশ করেনা সে।
—গুড মর্নিং অল,,,,কি অবস্থা সবার?
btw অভনী তুমি এই শাকচুন্নিটার সাথে কিসের কথা বলো বলোতো?দেখো সবসময় কেমন আমার সাথে ফুলে থাকে একদম শেওরা গাছের পেত্নীর মতো দেখা যায় আর এয় তো একটা কথাও সোজা করে বলতে পারে না সবসময় ঢাকা বললে ময়মনসিংহ বুঝে হিহিহি (জিসান)
—ওই আপনি সবসময় এমন আমার সাথে লেগে থাকেন কেন বলেন তো?কোথাও একটু শান্তি দেন না কেন?আপনি তো বটগাছের ঝুলে থাকা বড় সয়তান,,,যে আপনার বউ হবে তার কপাল খুব খারাপ সারাজীবন এই সয়তান টাকে নিয়ে সংসার করা আর কচু গাছে সারাজীবন ঝুলে থাকা এক কথা হুহ।
রুমি রেগে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো কেবিন থেকে আর জিসান হাসতে লাগলো,,,,অভনী রুমি কে ডেকে উঠে একটু জোরে হাঁটতে নিলেই পায়ের ব্যাথায় আহ্ বলে বসে পরে নিচে,,,জিসানও সাথে সাথে হাটু ঘেরে নিচে বসে পরলো,,,
—কি ব্যাপার কি হয়েছে অভনী?তোমার পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো?আর এমন পা নিয়ে অফিসেই বা কেনো এসেছো দেখে হাঁটবে তো (জিসান)
—না আমি ঠিক আছি।
অভনী নিচে থেকে একা একা উঠতে নিলে আবারো ব্যাথা পেলো তাই জিসান উঠে ওর হাত ধরে উঠিয়ে দিলো।
—-কিভাবে কেঁটেছে এটা?দাঁড়াও আমি এখুনি বড় স্যার কে বলে ছুটি নিয়ে দিচ্ছি তোমায়।
জিসান বলতে যেতে নিলেই অভনী জিসানের হাত ধরে ফেলে বলে,,,
—না না আমি ঠিক আছি।হালকা একটু ই কেঁটেছে প্রবলেম হবে না,,,আপনার স্যার কে বলতে হবে না ভাইয়া।প্লিজ স্যার কে বলবেন না।
—আর ইউ সিউর?অফিস করতে পারবে তুমি?এই কাঁটা পা নিয়ে হাঁটবে কিভাবে?একটু পরেই তো স্যার ডাকবে এখানে যেতে হবে ওখানে যেতে হবে। (জিসান)
—আমি পারবো সমস্যা নেই ভাইয়া (মুচকি হেসে)
—-ওকে তাহলে আমি এখন যাই,,,শাঁকচুন্নি টাকে আরেকটু জালিয়ে কাজ করতে হবে।?এমনিতেই ফুলে ডাম্ভুস হয়ে আছে মহারানী।
—ওকে ভাইয়া।
জিসান চলে গেলে অভনী চেয়ারে বসে আবারো কাজ করতে লাগলো।
?
নীল রাগে চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে,,,, চোখ দিয়ে যেন আগুন জ্বরছে তার।রাগে ফুস ফুস করতে করতে দেয়ালে একটা জোরে ঘুষি মারলো সে নিজের হাত কে,,,,কিন্তু তবুও তার রাগ কমছে না তাই সামনে থাকা টেবিল টায় জোরে এক লাত্থি মারলো যার কারনে চারপাশ ফাইল দিয়ে ছরিয়ে ছিটিয়ে ভরে গেলো,,,,
—কেনো জিসান তোমার হাত ধরবে?কেনো তুমি জিসানের হাত ধরবে?জিসান কেনোই বা তোমার কেবিনে যাবে?আমাকে ছারা অন্য কোনো ছেলের সাথে কোনো কাজ তো আমি রাখিনি তোমার তাহলে কেনো এতো কথা বলতে হবে তোমাদের?হুয়াই?
তাহলে কি তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?তুমি কি তাহলে আজ অন্য কারো?
চিল্লিয়ে কথা গুলো বললো নীল কিন্তু রুম সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় বাহিরের কেউ শুনতে পেলো না তার কথা,,,নীল অভনী কে কল দিয়ে নিজের কেবিনে আসতে বলে চেয়ারে বসে পড়লো।
অভনী কাঁটা পা নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আসতে লাগলো নীলের কেবিনে,,,মাথা টা খুব ঘুরাচ্ছে তার,,,মনে হচ্ছে জ্বর চলেই এসেছে তাই হয়তো এতো খারাপ লাগছে।
Permission নিয়ে কেবিনের ভিতর ডুকে এমন অবস্থা দেখে কিছুটা অভাক হলো অভনী,,,লোকটা তো খুব গুছালো তাহলে এখন রুমের এমন অবস্থা করলো কেনো?কোনো কারনে কি খুব রেগে আছে?অভনী মিন মিন করে বললো,,,
—-হিরো সাহেব আমায় ডেকেছিলেন?
—-সাট আপ জাস্ট সাট আপ,,,আমি তোমার স্যার হই সো যেখানে সেখানে হিরো সাহেব হিরো সাহেব করবে না।
অভনী নীলের চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো,,,রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে মানুষ টার,,,অভনী তারাতাড়ি করে চোখ নামিয়ে নিলো লোকটার দিক থেকে।এখন আর তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।ভয় লাগছে তার খুব,,,,তবুও মিনমিন করে বললো,,,,
—সরি স্যার আর এমন হবে না।
নীল অভনী কে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো,,,, আচমকা এমন করার অভনী পায়ে খুব ব্যাথা পেলো আর মাথা টাও প্রচন্ড বেগে ঘুরতে লাগলো তার কিন্তু তবুও লোকটা কে কিছু বলার মতো সাহস এখন তার কাছে লাগছে না।নিবু নিবু চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
—-তোর লজ্জা করে না অন্য একটা ছেলের হাত ধরতে?অফিসে আসিস কি ছেলেদের সাথে এমন করার জন্যেই?জিসান তোর হাত ধরার সাহস পায় কোত্থেকে?বল আমায়? কিভাবে তুই ওর হাত ধরিস?হাও ডেয়ার ইউ?আমার অফিসে এইসব করতে আসলে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
মুখ চিপে ধরে রাখায় কিছুই বলতে পারছে না অভনী,,,ভয়ে,,পা ব্যাথায়,, মাথা ঘুরানো,নিজের অপমান সব মিলিয়ে চোখ থেকে শুধু টপটপ করে পানি পরছে তার।
অভনীর চোখের পানি দেখে ওকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো নীল।নীল সরি বললো কিন্তু অভনীর কান পর্যন্ত সেই সরি পৌঁছালো না। ছাড়ার সাথে সাথেই অভনী আর সহ্য করতে না পেরে ঢলে পরলো নিচে কিন্তু নিচে পরার আগেই নীল ধরে ফেললো অভনী কে,,,নীলের এতোক্ষনে হুস ফিরলো রাগে তার কোনো দিকে খেয়াল ছিলো না,,,,কি করবে প্রিয় মানুষ টাকে অন্য কারো কাছে দেখলে কি সহ্য করা যায়?হারানোর ভয় থাকে যে,,,মেয়েটার শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে,,, অভনী সেন্সলেস হয়ে গেছে।নীল ওকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিলো। অফিসে সবার সামনে দিয়ে কোলে করে নেয়ায় সবার মুখেই নানারকম কথা ছড়তে লাগলো,,,মেয়েটা যে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই অথচ অফিসের স্যার কোলে নেয়াতে বড্ড জ্বলে যাচ্ছে সবার।এতোক্ষনে নিহাল আহম্মেদ অভনীর অসুস্থতার কথা শুনে নিয়েছেন।তিনি সবাই কে কাজে পাঠিয়ে ছেলের কাছে ফোন দিয়ে হাসপাতালের নাম জেনে ছুটতে লাগলেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।বিপদ যেনো মেয়েটার পিছু ছাড়ছেই না,,,এতো বিপদ যাচ্ছে তারউপর বারবার অসুস্থ হয়ে পরছে সে।১৮-১৯ বছরের মেয়ে হয়ে আর কতোই বা সহ্য করা যায়?,,,,,,
চলবে,,,,,
(sorry for late everyone,,,,golpo ta ke ki miss korchilen? ?)