#আমার রাজ্যের রানী
#Part : 11
#Writer : Sriti Nur Avni
?
আজ অভনীর রেজাল্ট দিবে।তাই আজ আর অফিসে যায়নি সে।সবাই টেনশনে থাকলেও শাহেরা বেগম টেনশন করছে না।ওনার একটাই কথা,,আমি জানি আমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট করবে শুধু শুধু এতে টেনশন করার কি আছে?
কিন্তু অভনীর মাথায় এখন টেনশনের বোঝা হয়ে আছে হয়তো রেজাল্ট এর দিন প্রতিটা মানুষের ই এমন অবস্থা হয়।পরীক্ষার দিন যতো টেনশন হয় তার থেকে হাজার গুন বেশি টেনশন এসে ভর করে রেজাল্ট এর দিন।অভনীর ও এক ই অবস্থা ওর মধ্যেও নানা রকম টেনশন ভর করছে,,,আমি যদি ভালো রেজাল্ট না করি তাহলে বাবার স্বপ্ন পূরন করবো কিভাবে?কিভাবে নিজেকে অনেক বড় করে তুলে যারা বিপদের সময় অবহেলা করেছে তাদের দেখিয়ে দিবো?কিভাবে আমি সবাই কে বলবো,,মেয়েরা চাইলেই সব পারে,, মেয়েরা মা,,মেয়েরা স্বপ্ন,, মেয়েরা বাস্তব,,মেয়েরা শক্তি।
নানারকম চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে সময় পার হচ্ছে অভনীর। তখন ওর ওই নানু এসে বললো,,,
—দিদিভাই চিন্তা করিস না।তুই তো সোনার টুকরা মেয়ে রে। দেখবি আল্লাহ তোর রেজাল্ট অনেক ভালো করে দিবে।
—দোয়া করো নানু (জরিয়ে ধরে)
?
নীল আর নির্ঝয় একসাথে বসে গল্প করছে নীলের রুমে।নীল ও আজ অফিসে যায়নি।নীল জানে আজ অভনীর রেজাল্ট দিবে তাই ওর ও একটু টেনশন হচ্ছে কারন বর্তমানে জিপিএ যে অনেক বড়,,যার কারনে জিপিএ ফাইভ না পেয়ে কতো কতো তরুন তরুনি আত্নহত্যা করে।
কিছুক্ষন পর নীলের মামুনি মিসেস নিলিমা আসলেন নীলের রুমে আর এসে হন্তদন্ত হয়ে বলতে লাগলেন,,,
—নীল নীল জানিস অভনী A+ পেয়েছে।এখনি মেয়েটা ফোন করে জানালো আমায়,,।ইশশ আমার তো মনে হচ্ছে আমার নিশু,,,
নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠলেও নিশুর কথা বলাতেই মুখটা চুপসে গেলো নীলের তাই মিসেস নিলিমা কথা ঘুড়িয়ে বললেন,,,
—শুন না নীল আজকে আমরা সবাই অভনী দের বাসায় যাবো।এখনো তো ওর মায়ের সাথে পরিচয় হলো না।যাবি তুই?
নীল কিছু বলার আগেই নির্ঝয় বলে উঠলো,,,
—আন্টি কোন অভনী?আপনাদের অফিসে যে কাজ করে ও?
—হাম ও শুধু অফিসে কাজ ই করে না ও আমার মেয়ের মতো।
—ওহ আন্টি আন্টি আন্টি নীল তো যাবেই সাথে আমিও যাবো।তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিন।
—ওই তুই এমন ছেসরা হইলি কবে থেকে?মামুনি বাবা গেলে যাক তাই বলে আমরা কেনো?(নীল)
—ওহ তুই চুপ করতো আমরাও যাবো বুঝেছিস।আন্টি আপনি যান আংকেল কে বলোন।
মিসেস নিলিমা চলে যেতেই নির্ঝয় বলে উঠলো,,,
—ইশশশশশ কবে থেকে দেখি না এটিটিউট গার্ল টাকে।আজকে বাসা টা চিনে নিলে পরে যেতে পারবো। (নির্ঝয়)
নীলের ইচ্ছে করছে নির্ঝয় এর মাথা টা ফাটিয়ে দিতে।তবুও বন্ধু বলে কথা।তাই নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
—কিছু বললি?
—না না কিছু বলিনি,, চল চল তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ভাই। (নির্ঝয়)
নীল মনে মনে ভাবছে,,
—তোকে আজ আমি নেওয়াচ্ছি তোর এটিটিউট গার্ল এর কাছে।হুহ আজকে চিনে পরে আবার যাইতি?না না আমি তো তা হতে দিবো না।
নীল ভাবতে ভাবতে রেডি হতে লাগলো।
?
রেজাল্ট ভালো হবার কারনে অভনী দের পরিবারের সবাই আজ খুশি।অভনী আর অভনীর মা মিলে ওদের দালানের সবাই কেই মিষ্টি দিলো।বাড়ি ওয়ালার বাসায় অভনী আর অভনীর মা মিলে মিষ্টি নিয়ে গেলো,,,অভনী কে না চিনলেও অভনীর মায়ের সাথে সবার ই কম বেশি পরিচয় আছে।অভনী রা যাওয়ার ও দরজা খুলে দিলো বাড়িওয়ালার বউ মিসেস সাবিনা,,,
—আরে আরে আপা আসেন ভিতরে আসেন,,,এটা কি আপনার বড় মেয়েটা নাকি?ভিতরপ আসেন বসেন। (সাবিনা)
অভনী আর মিসেস শাহেরা বেগম ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলো,,,শাহেরা বেগম বললেন,,,,
—হে আপা এটা আমার বড় মেয়ে।ওর এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ A+ পেয়েছে আপনাদের দোয়ায়।তাই মিষ্টি নিয়ে আসলাম।
—মাশা-আল্লাহ এ তো খুশির কথা।এতো অল্প বয়সে মেয়েটা কে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে। (সাবিনা)
মিসেস সাবিনা আর শাহেরা বেগম গল্প করতে লাগলেন।অনেকক্ষন হয়ে যাবার পরেও ওদের গল্প শেষ হচ্ছে না দেখে অভনীর এবার খুব বিরক্ত লাগছে,,,,তাই ওর মা কে বললো,,,
—মা বাসায় চলো আমি ওয়াশরুমে যাবো।
—আরে মাএরো তো আসলা আর ওয়াসরুমের জন্য বাসায় যেতে হবে কেনো?ওই যে সামনে গিয়ে বা দিকের দেখো ওয়াসরুম আছে,,তুমি যাও মা আমরা গল্প করি। (সাবিনা)
অভনী মনে মনে নিজেকে একগাদা বকাবকি করতে করতে উঠে গেলো। বলেছে ওয়াশরুমে যাবে এখন না গেলেও তো সমস্যা,,, নিজের মায়ের প্রতিই এখন রাগ হচ্ছে তার।হয়তো এটাই মহিলা দের সব থেকে বড় সমস্যা কথা শুরু হলে আর শেষ হতে চায়না।অযথা ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
হুট করে কারো হেঁচকা টানে ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো অভনী। যখন চোখ খুললো দেখলো শাফিন ওর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাঁসছে।অভনীর রাগ উঠে গেলো,,,
—ঝাল মরিচ তুমি শেষমেষ আমাদের বাসায় চলে আসলে চুরি করতে?বলি আমায় চুরি করে মন ভরেনি?
—ওই আপনি কি পেয়েছেন কি হ্যা?যখন তখন এমন করেন কেন?আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো বলে দিলাম।
—আহ ঝাল মরিচ কুল কুল এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?দেখো ভালো করে এটা আমার রুম। আমি তোমার রুমে যাইনি তুৃমিই আমার রুমে এসেছো সো চিৎকার করলে কার ক্ষতি হবে বলো তো আমার নাকি তোমার?হুম?
—আপনি আমার পিছনে এভাবে লেগে আছেন কেনো বলোন তো?কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?
—সব থেকে বড় ক্ষতি টাই যে তুমি করেছো ঝাল মরিচ।যে কারনে প্রতিনিয়ত আমার বুকের বা পাশ টা ব্যাথা করে।
—ফালতু কথা বাদ দিয়ে আমাকে যেতে দিন বলতেছি।
—যেতে তো দিবোই একেবারে তো আর রাখবো না।তার আগে এতো ভালো রেজাল্ট করেছো কিছু তো পাওনা আছো তাইনা।
এটা বলেই সাফিন নিজের পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে অভনীর হাতে দিয়ে বললো,,,
—আগেই বলেছি আমার এতো মায়া নেই শুধুমাএ আমাদের বাসায় থাকো বলে একটা কর্তব্য পালন করলাম।তবে হ্যা ভুলেও যেন এটা নিজের পা থেকে না খুলো যদি খুলো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না mind it!
এটা বলেই হাটু গেড়ে বসে অভনীর পায়ে পায়েল টা পরিয়ে দিয়ে হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো,,,
—Now get lost,,
সাথে সাথেই রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো,,,ঘটনার আকষ্মিকতায় অভনী শুধু ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে।মা কে না নিয়েই নিজেদের বাসায় চলে গেলো অভনী। শাহেরা বেগম বেশ কয়েক বার ডাকলেও সারা দিলো না অভনী।নিজের রুমে গিয়ে সাথে সাথেই পায়েল টা খুলে নিচে ফেলে দিলো অভনী।আর রাগে ফুসতে ফুসতে নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলো,,,
—কি পেয়েছে টা কি হ্যা?নিজেকে নিজে কও মনে করেন ওনি?হুহ যখন দেখা হবে একটা না একটা গন্ডগোল বাধিয়েই ছাড়বে ওনি।ধরকার নাই আমার এমন দয়া দেখানোর পায়েল হুহ।গন্ডারের হাতি ঘোরা হরিন বানরের খাঁচা নাইজেরিয়ন এনাকন্ডা কোথাকার
আরিহা এসে পায়েল টা হাতে নিয়ে বললো,,,
—কিরে আপু কাকে এভাবে বকছিস?তাছারা এই পায়েল টাই বা কার এখানে পরে আছে?
—আমার সামনে থেকে যা এখন আরু নাহলে জানিস ই তো আমার রাগ সম্পর্কে।
আরিহা আর কিছু না বলে পায়েল টা সোকেসে রেখে চলে গেলো।
?
মামুনি তুমি আর বাবা ওই গাড়ি দিয়ে যাও আমি আর নির্ঝয় এটা দিয়ে যাবো।
—ঠিক আছে আমাদের পিছু পিছু চলে আসো। (নিহাল)
—-ওকে বাবা (নীল)
নীল আর নির্ঝয় গিয়ে গাড়িতে উঠলো তখন নির্ঝয় বললো,,,
—তুই তো চিনিস না আমিও চিনি মা তাই একেবারে আংকেল দের গাড়ির সাথে সাথে যাবি।
—হু তোর বলতে হবে না (নীল)
নিহাল আহম্মেদ দের গাড়ি আর নীলদের গাড়ি এক সাথে গেলেও একটু পর নীল গাড়ি থামিয়ে নির্ঝয় কে বললো,,,
—তুই বস আমি আসছি এখনি।
—আরে আংকেল দের গাড়ি চলে যাবে তো কিরে কই যাস?
নির্ঝয়ের পুরো কথা শেষ হবার আগেই নীল উদাও হয়ে গেলো,,,প্রায় ৫ মিনিট পরেও যখন নীল আসলো না তখন নির্ঝয় গাড়ি থেকে নামলো। আর সাথে সাথেই নীল চলে আসলো,,,
—-কিরে কোথায় গিয়েছিলি?এখন তো আংকেল দের গাড়ি টাই চলে গেলো। (নির্ঝয়)
—আরে কোনো ব্যাপার না একটু জোরে ড্রাইভ করলেই হবে।
—হুম চল চল তারাতাড়ি চল (নির্ঝয়)
নীল আর নির্ঝিয় আরেকটু সামনে গিয়ে দেখলো সামনে দিয়ে তিন দিকে রাস্তা গিয়েছে কিন্তু একদিক দিয়েও নিহাল আহাম্মেদ দের গাড়ি দেখা যাচ্ছে না।
নীল মনে মনে ভাবছে —-হিহিহি আমি তো জানতাম সামনে তিন রাস্তা এখন কোন দিক দিয়ে তুমি তোমার এটিটিউট গার্ল এর কাছে? (ডেবিল হাসি দিয়ে)
—কিরে এতো দেখি তিনটা রাস্তা এখন কোন দিক দিয়ে যাবি?আগেই বলেছিলাম একদম পিছন পিছন যাবি (হালকা রেগে নির্ঝয়)
—দাড়া বাবা রে কল দেই
নীল নিহাল আহম্মেদ কে কল না দিয়েই মোবাইল কানে ধরে কথা বলতে লাগলো।
—কিরে কি বললো আংকেল? (নির্ঝয়)
—বলছে বা পাশের রাস্তায় যেতে।
নীল আবারো গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।কিন্তু কিছুক্ষন পর আবারআবারো এমন ২ রাস্তা দেখে কল দেয়ার নাটক করলো,,,অনেকক্ষন যাবৎ ড্রাইভিং করিয়ে ঘুরছে নীল।তখন নির্ঝয় বলে উঠলো,,,,
—-কিরে এটা তো ওইদিকে না এটা তো তোদের বাড়ির রাস্তা মনে হচ্ছে।
—হুম আমারো তো এখন তাই মনে হচ্ছে।
নীল নিজেদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে বললো,,,
—নির্ঝয় এটা আমাদের বাড়ি না?একদম আমাদের বাড়ির মতো দেখতে লাগছে ?
—কি করলি তুই এটা শেষমেশ বাড়িতেই চলে আসলি?এটা তোদের বাড়ির মতো দেখতে না তোদের বাড়ি ই। পুরো শহর ভেজে খাস আর এখন একটা জায়গা চিনলি না হুহ আমার আজও এটিটিউট গার্ল কে দেখা হলো না।
নীল একটা ডেবিল হাসি দিয়ে বললো,,,
—দোস্ত আমি কি করবো বল ড্রাইভিং তো আর কম করিনি। তবুও না পেলে কি করবো তুই ই বল।আচ্ছা শুন আমি অভনী কে বলবো আমাদের যেন কাল ট্রিট দিয়ে দেয়।ওকে?
—-হাম
নির্ঝয় হনহন করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো আর নীল মনে মনে ভাবতে লাগলো,,,,
—তোকে আজ নিয়ে গেলো তুই নিশ্চিত আবারো চলে যেতি।সরি দোস্ত। আমার হিংসে হচ্ছিলো কেন যেন ?
চলবে,,,,
(হিরো সবাই হলেও অভনীর হিরো একজন ই হবে,,,,সবাই কি নীল কেই অভনীর হিরো চান নাকি??)