আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ৭

0
359

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরলো। যাতে অর্শি চিৎকার না করে। ছেলেটি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলছে “প্লিজ চিৎকার করিস না। আমার কাছে টিকেট নাই। প্লিজ ভাই”! অর্শি ভয়ের কারনে ছেলেটির বলা কোনো কথাই কানে নিলো না। ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরতেই অর্শি ভয় পেয়ে যায়। আত্নরক্ষার চেষ্টা করার জন্য অর্শি ছেলেটির মুখের উপর থাকা কাপড়টা টেনে খুলে ফেললো। ছেলেটির মুখের কাপড় সরে যেতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। চিৎকার এর শব্দ ছোট হয়ে এসে তার চোখে মুখে কৌতুহলের ছাপ উঁকি দিতে লাগলো। ছেলেটি আর কেউ নয় আয়াদ। আয়াদ অর্শির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি। আয়াদ কোনো শব্দ করছে না। অর্লির কোমল পিংকালার ঠোঁট জোড়া তার হাতের তালুতে স্পর্শ করছে। আয়াদ সেই স্পর্শের আবেশ নিজের মনের মধ্যে মাখছে। চোখ দিয়ে আয়াদ বারংবার প্রকাশ করে চলেছে অর্শিকে নিয়ে তার হৃদয়ের অনুভুতি। প্রকাশ করে চলেছে অর্শির প্রতি তার মুগ্ধতা অবিরত। অর্শি আয়াদের মতিভ্রম দেখে ভিশন বিরক্ত হয়ে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদের হাতের তালুতে নিজের পিওর দাঁত জোড়া বসিয়ে দিলো শক্ত করে। আয়াদ নিজের হাতের তালুর মধ্যে ব্যথা অনুভব করতেই নিজের ঘোরে ফিরে আসে। অর্শির মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠলো আয়াদ।

— উফফফফ! খোদা কি মেয়েরে বাবা! হাতে কামড় দিয়ে দিলো। এই তুই আমায় বলতে পারতিস তো কিছু? তা না করে কেনো আমার হতে কামড় বসিয়ে দিলি?

— আহহহহ রে…..! আপনি আমার মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছেন আর আমি আপনাকে কিছু বলবো তাই না। কি লজিক ভাই! আপনি এখানে কেনো আগে সেটা বলুন।

— আমি এখানে কেনো মানে? তুই একা একা কোথাও যেতে পারিস না। তাই তোকে নিরাপত্তা দিতে আমি নিরাপত্তা কর্মী হয়ে তোকে পাহাড়া মানে তোকে সেভ করতে এসেছি। যাতে করে‌ তোর ভ্রমণ পিপাসু মন বিনা ভয়ে ভ্রমণের মজা নিতে পারে।

— বাহহহ, বাহহহ! কবে থেকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিলেন?

— যবে থেকে তুই একা চলতে ভয় পেতে শুরু করেছিস। তবে থেকে।

— তাই আয়াদ ভাইয়া! আচ্ছা আপনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ। কথাটার মানে জানেন?

অর্শির কথা আয়াদের হাস্যজ্বল মুখটার মধ্যে কালো আঁধার জমিয়ে দিলো। অর্শির কথার মনে সেই দিনকার কথা যে দিন অর্শির সাথে সে বাজে ব্যবহার করে ছিলো। আয়াদ এক মিনিটের মধ্যে নিশ্চুপ হয়ে যায়। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ফেললো। “ভুল না হয় সেই দিন আমি করে ছিলাম। হ্যাঁ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। তবে তার সম্পূর্ণ দোষ আমার একার না। যদি ঐ দিনের জন্য আমাকে অপরাধী হতে হয় তবে সেই একি ভুলের সমান অপরাধী অর্শি তুই নিজেও। তুই আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে ছিলি বলেই এতো কিছু হয়েছে। কিন্তু অর্শি আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তোর থেকে দূরে চলে এসেছি। ক্ষমা চেয়েছি বারবার কিন্তু তুই ক্ষমা করতে পারছি না। নির্লজ্জ বেহায়া হয়তো আমি তাই বারবার তোর কাছে ফিরে আসি। যেচে অপমানিত হতে”। মাথাটা নিচু করে কথা গুলো ভাবতে লাগলো আয়াদ। অর্শি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। আয়াদ অর্শির পাশে বসে থাকলেও একটা ভাবনার উপর ভর করে আছে সে।”অর্শি‌র কাছে বারবার অপমানিত হবার থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেললেই হয় তো ভালো হবে। কারন অর্শি আমার উপস্থিতিতে চরম বিরক্তি বোধ করে। একটা মানুষকে শুধু শুধু বিরক্ত করার কোনো মানে হয় না”।

— আরে আয়াজ ভাইয়া কখন এসেছেন?

কৌতুহলপূর্ণ কন্ঠেস্বর টি অনুর।‌ অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটি। আসলে আয়াদের আসার কথা না থাকার পরেও আয়াদ চলে এসেছে তাই হঠাৎ করে আয়াদকে দেখতে পেয়ে যে কেউ একটু অবাক হবেই। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে জবাব দিলো

— তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে ছুটে আসলাম।

— সত্যি ভাইয়া আপনি না থাকলে ট্রিপে মজা নেই। আপনি কি ফ্রি আছেন?

— হ্যাঁ, ফ্রি আছি। কিছু বলবে?

— ভাইয়া আপনার সাথে গল্প করতে ভিশঞ ইচ্ছে হচ্ছে। আপনি আমার সাথে চলুন। কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে।

আয়াদ অনুর কথার অমর্যাদা করলো না। অর্শির পাশ থেকে উঠে গিয়ে চলে আসে অনুর সাথে। অর্শি ভাবনায় মগ্ন থাকায় আয়াদের চলে যাওয়া উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আয়াদ অনুর সাথে অনুর কম্পার্টমেন্টে চলে আসে। অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে একটু লাজুক কন্ঠস্বর নিয়ে বলতে লাগলো

— আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া আপনি এতো সুন্দর করে গল্প লিখেন! জানেন আমি আপনার বিরাট ফ্যান। আপনার গল্প পড়ে আপনার প্রেমে পরে গেছি।

অনুর কথা শুনে আয়াদ মৃদু হেসে ফেললো। কফির কাপে আলতো চুমুক দিতে দিতে আয়াদ অনুকে বলল

— ধন্যবাদ। কিন্তু যতটা বলছো ততটা ভালো গল্প লিখতে আমি পারি না। যাই হোক পড়াশোনার কি অবস্থা?

— আসলে ভাইয়া পড়াশোনার অবস্থা বেশ ভালো নয়। কারন আমি লেখকদের উপর ক্রাশ খেয়ে পড়াশোনা করতে ভুলে যাই। আর কতকাল যে সিঙ্গেল থাকবো! আমার সমস্যা গুলোর সমাধান কি? একটু বলবেন?

— এই সব শুধু মাত্র মনের ফাজলামি। আর কিছু না। মনকে শান্ত করে ফোকাস করো হয়ে যাবে।

— আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলুন। আপনার জিএফ আছে? সত্যি বলবেন প্লিজ!

কথাটা বলা শেষ করতেই অনু আয়াদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে নিলো। অনুর ব্যবহার আয়াদকে একটু বিচলিত করলো। এটা কেমন ব্যবহার? আয়াদ নিজের হাত অনুর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে যাবে এমন সময় আয়াদের কাঁধের উপর থেকে কেউ একজন ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠল

— বাহহহহ! ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট কে কি করে নিজেদের বেড রুম বানিয়ে ফেলতে হয়? তা মিস্টার আয়াদের থেকে শিখতে হবে।

আয়াদ মুখ ঘুরিয়ে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। অনু আয়াদের হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই সব কি বলছিস তুই? কাকে কি বলতে হয় ভুলে গেছিস?

অর্শি অনুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে বলতে লাগলো

— উঁহু। আমি ঠিক ঠাক কথা বলি সব সময়। আর যাকে যা বলতে হয় তাই বলছি।

অর্শির কথা শেষ হতেই আয়াদ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— অর্শি নিজের লিমিট ক্রস করিস না। আমি অনুর সাথে এমনি‌ গল্প করছিলাম। এই সাধারণ ব্যাপারটাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা আমি সহ্য করবো না।

— তাই আয়াদ ভাইয়া! আপনি যে কি তা আমার খুব ভালো জানা আছে। অসহ্যকর।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই রেগে গিয়ে হনহন করে চলে গেলো আয়াদের সামনে থেকে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে যায়।‌ কিছু না করেও বার বার কেনো আমায় অপমানিত হতে হয়? কথাটা ভাবতে লাগলো আয়াদ। আয়াদকে চিহ্নিত দেখে অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— সরি ভাইয়া। আমার জন্য আপনাকে বাজে কথা শুনতে হলো। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ! ও পাগল হয়ে গেছে তাই যা তা বকে। প্লিজ, ওর কথায় কষ্ট পাবেন না।

আয়াদ অনুকে থামতে বলে অনুর সামনে থেকে চলে যায়। অর্শির উপর রাগ উঠার থেকে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে লাগলো আয়াদের। আয়াদ নিজের কম্পার্টমেন্টে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। অর্শি নিজের সিটে বসে আছে।

*চট্টগ্রাম আসতেই আয়াদ নিজের ব্যাগ পত্র নিয়ে অর্শি অনু ও তার বান্ধবীদের সাথে ট্রেন থেকে নেমে পরলো। সন্ধ্যা হবে প্রায়। হোটেল বেশি দূরে নেই। যেতে প্রায় আধঘন্টার মত সময় লাগবে। আয়াদ অর্শির সাথে গাড়ি করে চলে আসে হোটেলের সামনে। ট্রেনের ঐ ঘটনার পর আয়াদ অর্শির সাথে বা অনু কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি। কি করে বলবে? আপসেট মন নিয়ে কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে থাকে না। আয়াদ ভাবছে এখানে আসা টাই কি ভুল ছিলো? কিন্তু না আসলে অর্শিকে চোখে চোখে রাখতাম কি করে? ওকে চোখের আড়াল করলেই যে আমার বুকের মধ্যে তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হয়।

আয়াদ গাড়ি থেকে নামতেই অর্শি অনু কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অনু তুই আর ফারজানা এক সাথে থাকবি। আমি আর মিলি এক সাথে দুটো রুম বুক করা আছে।

কথাটা শেষ করতেই অর্শি আয়াদের দিকে আড়চোখে তাকালো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে আছে। দুটো রুম বুক করলে সে থাকবে কোথায়? “ওহহহ সিকিউরিটি গার্ডের বোধ হয় রুম থাকে না”। আপন মনে কথাটা বলল আয়াদ। অর্শি নিজের চুল গুলো ঝাপটা মেরে হনহন করে চলে যায় হোটেলের মধ্যে। অর্শি চলে যাবার পরেও অনু আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ অর্শির চলে যাওয়ার দিকে এক ঘোরে তাকিয়ে আছে।

— ভাইয়া আপনার জন্য কি একটা রুম বুকিং করে দিবো?

অনুর মায়া ভরা কন্ঠস্বর আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ অভিমানী মন নিয়ে অনুকে বলে উঠলো

— উহু আমার ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নিতে পারবো। তুমি যাও তা না হলে পরে‌ তোমাকেও আমার মতো বাহিরে থাকতে হবে।

— হুম।

* হোটেলের নিচে রেস্টুরেন্টে বসে আয়াদ সিগারেট ফুকছে আর হালকা করে ড্রিংক করছে। স্বভাবত মাঝে মধ্যে ড্রিংক করাটা আয়াদের একটা হ্যাবিট। আয়াদ ড্রিংক শেষ করে নিজের বুক করা রুমের দিকে চলে যেতে লাগলো। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে আয়াদের চোখ পরলো অর্শির রুমের দিকে। আয়াদ অর্শির রুমের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে………………………..

#চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here