#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৭
#তানিশা সুলতানা
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুলতুল। ডান হাতটা আপনাআপনি চলে গেছে গলায়। বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। সায়ান আপতত আবারও দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে গোল গোল চোখে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
এখনও মনে হচ্ছে সায়ানের ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে তুলতুলের গলায়। মানে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো? তুলতুল বললো “আর এমন হবে না” সাথে সাথেই সায়ান ঝড়ের গতিতে এসে তুলতুলের গলায় ঠোঁট ছুঁয়িয়ে শব্দ করে চুমু খেয়ে আবার আগের জায়গায় চলে গেছে।
“কি যেনো বলছিলি?
সায়ান ডান হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটে আঙুল বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করে।
কেঁপে ওঠে তুলতুুল। ও এতোখন সায়ানের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। চোখ নামিয়ে নেয়।
“তাকাচ্ছে কি অসভ্যের মতো। এই ছেলে যার কপালে আছে তার কপালে দুঃখ আছে।
শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে দাঁড়ায়। এই হনুমানকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। আবার হুটহাট করে কাছাকাছি এসে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিতে পারে।
” কি বলেছিলি?
আবারও গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে বসে সায়ান।
তুলতুল এবার আর থেমে থাকবে না।
“আপনি এটা কি করলেন? এটা কিভাবে করতে পারলেন? আমার মতো একটা নিরিহ মাইয়ার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিছেন?
এখন আমাকে কে বিয়ে করবে? কি হবে আমার?
আমার কেমন কেমন লাগছে। হার্ট অ্যাটাক করবো মনে হচ্ছে। আপনার মুখের বিরির গন্ধ এখনো আমার গলায় লেগে আছে। মনে হচ্ছে জ্বলে যাবে। একা একাই সুরসুরি লাগছে।
হাই আল্লাহ এ আমার কি হয়ে গেলো?
তুলতুল হাত পা ছড়িয়ে বসে বিলাপ বকতে শুরু করে।
” হুয়াট বিরির গন্ধ?
সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মাথাটা ঠান্ডা রাখার প্রতিজ্ঞা করেছিলো। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখতে পারছে না। এই মেয়ের ননস্টপ বকবক মাথাটা গরম করে দিচ্ছে।
“আরেকটা চুমু খাওয়ার ইচ্ছে হইছে? না কি থা*প্প*ড়?
সায়ান বলে।
তুলতুল গলায় হাত দিয়ে চেপে। আবার চুমু দেবে?
হায় হায় এটা হতে পারে না।
সায়ান তুলতুলের পাশে বসে পড়ে। তুলতুল কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় এক পলক সায়ানের দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। হাই আল্লাহ বেশি বেশি বকবক করে ফেললো। এখন কি আবার থাপ্পড় পড়বে না কি? থা*প্প*ড় দিলে দিক। কিন্তু চুমু যেনো না দেয়। এখনো মনে হচ্ছে গলায় লোকটার ঠোঁট লেগে আছে। যদি আরেকটা চুমু দেয় তাহলে তো
নাহহহহ
এটা হতেই পারে না।
সায়ান তুলতুলের একদম গা ঘেসে বসে। তুলতুল ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে একটু সরতে যায়। সায়ান এক টানে পাশে বসিয়ে দেয়। শক্ত করে হাত চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলে তুলতুল।
“ককথায় ককথায় এভাবে চিপকান কেনো?
আমতা আমতা করে বলে তুলতুল।
” কি বলেছিলি তুই? “আমি তোর কিচ্ছু করতে পারবো না?
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে। তুলতুল আস্তে আস্তে এক খুলে একটুখানি তাকায় সায়ানের দিকে। দুই চোখে যেনো আগুন জ্বলছে। তুলতুল আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। ওই হেংলা বাতলানোর ছেলেটা উস্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
” ওওই পোলা মিথ্যে বলছে। আমি একদম এই কথা বলি নি। এই যে আপনার খাট ছুঁয়ে বললাম। মিথ্যে বললে এতোখনে খাট ভেঙে চৌকি হয়ে যেতো।
যেহেতু খাট ভাঙে নি। তার মানে আমি সত্যি বলেছি। বিশ্বাস হয়েছে?
আপনাকে এই কথা বলবো আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা?
এতো সাহস আছে না কি আমার?
আমি কখনো তো অচেনা মানুষদের সাথে কথায়ই বলি না। আর তারপর ও পোলা তো বেডা মানুষ। তার সাথে তো আরও কথা বলি
বাকি শেষ করার আগেই চোখ পড়ে যায় সায়ানের দিকে। র*ক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। তুলতুল থেমে যায়। ওর ঢপ যে সায়ান বিশ্বাস করছে না বেশ বুঝতে পারছে।
“আমাকে হ্মমা করে দিন
আমার ভুল হয়ে গেছে।
দুই কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বলে তুলতুল। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” আজকে তোর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। সারা রাত আমার সাথে থাকবি।
সায়ান উঠে খাটে গিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে বলে। তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
এই বেডার মাথায় গন্ডগোল আছে।
“এইটা একটা কথা বললেন আপনি? আপনার সাথে যদি আমি থাকি তাহলে তো মানুষ
” জাস্ট সাট আপ
সায়ান ধমক দেয়। তুলতুল কাচুমাচু হয়ে যায়। এ কোন মসিবতে পড়লো? কথায় কথায় ধমক৷ ঠিক করে কথাও বলতে দেয় না।
এখান থেকে বের হবে কিভাবে?
“আমার পা ব্যাথা করছে।
সায়ান কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে।
” ইহহহহ ঢং দেখে বাঁচি না। ওনার পা ব্যাথা করছে তাতে আমার কি? আমি কি নাচবো না কি? মনডায় চায় থা*প্প*ড়াইয়া বইরা বানিয়ে দেই। কিন্তু হায়য়য়য়
এতো সাহস কি আর সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন আমায়? তাছাড়া ওনার যেমন হাতির মতো চেহারা। তাতে আমি যদি একটা থা*প্প*ড় দেই উল্টে আমিই ব্যাথা পাবো।
গন্ডার কোথাকার।
তুলতুল মনে মনে বকা দিচ্ছে সায়ানকে।
“কিছু বলেছি আমি।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে। কেঁপে ওঠে তুলতুল।
” শশশুনেছি তো।
শুকনো ঢোক গিলে বলে তুলতুল।
“শুনলে হবে? পা টিপে দে।
তুলতুল কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় সায়ানের দিকে।
” দুবার বলতে হলে কিন্তু হাতও চলবে।
মেঘের মতো গর্জন তুলে বলে সায়ান। তুলতুল তারাহুরো করে সায়ানের পাশে বসে পায়ে হাত দেয়। সায়ানের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি দেখা যায়।
“বেডা মানুষ বলতেই আস্ত এক ঝামেলার বস্তা।
🥀
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার?
তন্ময় চোখ পাকিয়ে তাকায় সুমুর দিকে। তাতে সুমু একটুও ভয় পায় না। উল্টে ভেংচি কাটে।
” কথায়, কথায় ধমকাবেন না। এতে আমি ভয় পাই না।
পায়ের ওপর পা তুলে বসে হাতের আঙুল দেখতে দেখতে বলে সুমু।
“ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে?
সুমুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে তন্ময়।
” আজিব তো
আপনি কি আমার বিয়াই লাগেন যে ফাজলামো করবো?
ভালোবাসি আপনাকে। মনটা দিয়ে দিয়েছি। এখন ফেরত চাইছি। ব্যাস এইটুকুই।
তন্ময়ের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকায় সুমু। তন্ময় ফোঁস করে শ্বাস টেনে ধাপ করে বসে পড়ে সুমুর পাশে। দুই হাতে মাথার চুল টেনে নিজেকে একটু শান্ত করে।
“লিসেন
তোমাকে আমার ভালো লাগে না। দুই বছর তো হলো পেছনে পড়ে আছো। এতোদিন কি মন নিতে পারছো?
তোমাকে আমার ভালোই লাগে না। ভালো লাগার মতো একটা গুণও নেই তোমার। গুড ফর নাথিং।
তন্ময় খুব শান্ত গলায় বলে। সুমু টলমল চোখে তাকায় তন্ময়ের দিকে। এতো সহজে বলে দিলে ভালো লাগে না?
” এভাবে তাকালেই কি ভালো লাগা হয়ে যাবে? এভাবে তাকানোর কি হলো?
তুমি যদি নিজেকে না সামলাও তাহলে তনুর বিয়েটা ভেঙে দিতে বাধ্য হবো আমি৷
সুমু হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে নেয়।
“মুক্তি দিলাম আপনাকে।
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে সুমু। তন্ময়ও হাসে। সুমুর গাল টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলায়।
” আমার থেকে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো তুমি।
সুমু চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“আসতে পারেন।
তন্ময় উঠে দাঁড়ায়।
” আমার বোনু কিন্তু খুব টেলেন্ট। তোমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলবে তোমার মনের অবস্থা। আমি চাইছি না ও কিছু জানুক। ও জানলে যেভাবেই হোক তোমাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেবে।
“কথা দিলাম জানবে না।
তন্ময় আর পেছনে না তাকিয়েই বেরিয়ে যায়। সুমু দুই হাতে মুখ ঠেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
চলবে