#আমার তুমি ২
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা
তখনই তন্ময় রুমে ঢুকে। সুমুকে কাঁদতে দেখে খানিকটা অবাক হয়। ভ্রু কুচকে একবার বাবার দিকে তো আরেকবার সুমুর দিকে তাকায়।
“বাবা কি হয়েছে?
তন্ময় জিজ্ঞেস করে। তন্ময়কে দেখে সুমু চোখ মুছে। পাপন উঠে দাঁড়ায়।
” কথা বলো সুমুর সাথে।
বলেই বেরিয়ে যায় পাপন।
“তুমি বাবাকে কি বলেছো? করেছি কি? কোনো তো ভূল করি নি। তাহলে কি বললা? আর কাঁদছো কেনো?
তন্ময় খাটে বসে বলে। সুমুর আবার কান্না পায়। ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। তন্ময় হতদম্ভ হয়ে যায়।
” আরে আরে কি মুসকিল কাঁদছো কেনো? বলবে তো?
সুমুর দিকে একটু এগিয়ে বলে তন্ময়।
“আপনি আমাকে পছন্দ করেন না? ডিভোর্স দিয়ে দিতে চান?
সুমু কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে। তন্ময় বড়বড় চোখ করে তাকায়। হঠাৎ এর মাথায় এসব কি করে ঢুকলো ভাবছে। ভ্রু কুচকে সুমুকে দেখতে থাকে তন্ময়। তন্ময় উওর দিচ্ছে না দেখে মেজাজ গরম হয়ে যায় সুমুর।
” অন্য মেয়ে আপনাকে দেখা করতে বলে। নিকনিক করা না? আমি কিন্তু দুর্বল না। একদম খু*ন করে দেবো।
তন্ময়ের কলার চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে সুমু। তন্ময় ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। সুমুর দুই হাত ধরে কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
“বিয়া আমার ফ্রেন্ড। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। তো আমিও সেখানে এপ্লাই করতে যাচ্ছি। তো তাই ওর থেকে হেল্প নিচ্ছি। মোটা মাথায় ঢুকেছে?
সুমুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে তন্ময়। সুমুর কান্না থেমে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে। তন্ময় উঠে যায়।
” মাথা ফাঁপা না কি তোমার? বিয়ে করেছি ভালোবাসার জন্য। ডিভোর্স আবার কি?
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় তন্ময়। সুমু চোখের পানি মুছে মুচকি হাসে।
“ভালোও তো বাসেন না।
🥀
সায়ান সুমুকে বলে বিকেলে তুলতুলকে নিয়ে বের হতে। ওখান থেকেই তুলতুলকে নিয়ে ভেগে যাবে সায়ান। সুমুর বুক কাঁপে। একদিকে ভাইয়ের ভালোবাসা। অন্য দিকে সংসার,স্বামী, শশুড় শাশুড়ী। কি করবে বুঝতে পারে না সুমু? অনেকটা সময় নিয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় ভাইয়ের তালেই তাল মেলাবে। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুলতুলের পায়ে ব্যাথা এই অবস্থায় কি করে বের হবে তুলতুলকে নিয়ে? আর বাড়িতেই বা কি বলবে? দুপুর পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে পার করে দেয়। এদিকে সায়ান কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই।
আছিয়া রাতের জন্য তরকারি কাটছে। নাজমা খাচ্ছে।
সুমু আছিয়ার পাশে গিয়ে বসে।
“মা একটু পার্লারে যেতে চাচ্ছি। তো তুলতুলকে নিয়ে যাই?
আছিয়া ভাবনায় পড়ে যায়। মেয়েটা বের হতে চাচ্ছে নিজে থেকে তাকে তো না করা যাবে না। আর তুলতুলেরও পা ব্যাথা।
” ও মা যায় না। রিকশা করেই তো যাবো। তুলতুলের কষ্ট হবে না।
আছিয়া আর না করতে পারো না। সুমু খুশি হয়ে যায়। তনুর বন্ধুর বার্থডে। ও সেখানে গেছে।
সুমু তুলতুলকে ওর ফোন টা নিতে দেয় না। এতে তুলতুল অবশ্য কিছু বলে না। কারণ যাবে আর আসবে এতে ফোন লাগবেও না।
সুমুর হাত পা কাঁপছে। বাড়িতে কি বলবে ও? তন্ময় কি সহজে ছেড়ে দেবে সুমুকে?
রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে সুমু আর তুলতুল। তুলতুল বাড়িতে পড়া থ্রি পিছ পড়েই এসেছে। বাড়ি থেকে খুব বেশি দুরে না পার্লার।
সুমু হাসফাস করছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। তন্ময়ের মুখোমুখি কি করে হবে? যদি তন্ময় ডিভোর্স দিয়ে দেয়? তুলতুল সুমুর এই উত্তেজনা টের পাচ্ছে। সুমু যে ভীষণ টেনশনে আছে ভালোই বুঝতে পারছে।
তুলতুল সুমুর হাতের ওপর নিজের হাত রাখে।
“সুমু কি হয়েছে তোমার? এতো টেনশন কেনো করছো? দাভাই বকেছে? কতো বড় সাহস ওর। একবার বাড়ি ফিরুক আমি বকে দেবো। আমি মিষ্টি ভাবিকে বকা না? কান টেনে ছিড়ে দিতে বলবো আম্মুকে। আচ্ছা সুমু শোনো না। আজকে কিন্তু আমরা চটপটি খাবো। ইসস কতো দিন খায় না। ওই দিন না তিয়াস ভাইয়া খায়িয়েছিলো। আহহা এখনো জিভে লেগে আছে।
জানো সুমু কি হয়েছে? তিয়াস ভাইয়া খালি আমাকে কল করে। গান শোনাতো চায়। আর এদিকে তোমার গুন্ডা ভাই আমাকে সাফ সাফ বলে দিয়েছে। আমার যত খালাতো মামাতো ফুপাতো পাড়াতো ভাই আছে কারো সাথেই যেনো কথা না বলি। এমনকি ওনার ভাইদের সাথেও যেনো কথা না বলি। কি সাংঘাতিক বলো?
আমি শুধু ভাবি
তোমার মতো এতো কিউট একটা মেয়ের ওই রকম গুন্ডা মার্কা ভাই কি করে হলো? নিশ্চয় হাসপাতালে থেকে কুড়িয়ো এনেছিলে? তাই হবে।
আহহা তুলবেই যখন ভালো একটা তুলতে পারলে না?
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল। সুমু জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। সব গুলিয়ে গেছে। কিছু বলতে চাই ছিলো তুলতুলকে কিন্তু এখন ভুলে গেছে। মেয়েটা এতো কথা বলে।
” ও সুমু শোনো
তুমি কিন্তু
বাকি টুকু শেষ করাটা আগেই চোখ পড়ে খানিকটা দুরে জিপ গাড়ির দিকে। গাড়ির ওপর বসে আছে সায়ান। সাদা শার্ট কালো জিন্স শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা। ঠোঁটের কোণে সিগারেট চোখে কালো সানগ্লাস। তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে হিমু আর হাসিব। আর পেছনে নিলয় সহ কিছু ছেলে।
“এই সুমু তোমার ভাই এরকম গুন্ডা মার্কা পার্ট নিয়ে বসে আছে কেনো? দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাউকে হালুম করে গি*লতে বসে আছে।
তুলতুল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে।
রিকশা সায়ানদের জিপ গাড়ির সামনে থামে। সুমু তুলতুলের দিকে তাকায়।
” এই সুমু এখানে কেনো থামলো? জলদি চলো এখান থেকে। তোমার ভাইকে দেখলে আমার হাঁটু কাঁপে। পারফেক্ট গুন্ডা কি না? আমি খালি ভাবছি?
কোন মেয়ের কপাল পুড়বে এই লোকটাকে বিয়ে করে? দোয়া করি যেনো কোনো দিন বিয়েই না হয়।
তুলতুল সুমুর কানে ফিসফিস করে বলে। সুমু তুলতুলের দুই হাত শক্ত করে ধরে।
“আমি তোমার খারাপ চায় না তুলতুল। আমার ভাই খুব ভালো। তোমাকে খুব ভালো রাখবে।
সুমুর চোখে পানি টলমল করছে।
” আরে ইয়ার কাঁদছো কেনো? ভাইকে নিয়ে খারাপ বলছি বলে? ওকে বাবা সরি
তোমার ভাই খুব ভালো।
তুলতুল হেসে বলে।
তখনই সায়ান এসে তুলতুলের হাত ধরে।
“নেমে আয়।
গম্ভীর গলায় বলে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। একবার হাতের দিকে তো আরেকবার সায়ানের মুখের দিকে তাকায়।
” নামতে বলছি।
ধমক দিয়ে বলে সায়ান। সাথে সাথে তুলতুল এক লাফে নেমে পড়ে। সাথে সাথে পায়ে একটু ব্যাথা পায়। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
“ভাইয়া
সুমু সায়ানের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকায়। হাসিব এসে সুমুর হাত ধরে নামায়।
” আমি যাচ্ছি। হাসিব সুমুকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি চলে যাস।
যাচ্ছি মানে? তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়। সায়ান তুলতুলকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে চলে যায়।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন আমায়। সুমু আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তো। সুমু ধরো আমায়। আমি কোথাও যেতে চায় না।
তুলতুল চিৎকার করতে করতে বলে।
সুমু কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে।
সায়ান তুলতুলকে গাড়িতে ছুঁড়ে ফেলে নিজেও বসে পড়ে। নিলয় গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে দেয়।
” সুমু কাঁদছিস কেনো?
হাসিব সুমুর পাশে বসে বলে।
“আমি তন্ময়কে কি জবাব দেবো?
কাঁদতে কাঁদতে বলে সুমু।
” কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো।
চলবে