গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব: ৪
-ও ফুপি গো তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেল্লো!তূর্য ভাইয়া ছাড়ো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে….!!
তখন অন্তী কথাগুলো শেষ করার আগেই তূর্য হুট করেই অন্তীর গলা চেপে ধরে। যদি সে পারতো তো এখনই অন্তীকে মেরে ফেলতো পরক্ষনে অবশ্য আবার বাঁচিয়ে তুলতো!তবুও তাতে কষ্টটা হয়তো একটু কমতো!
তূর্য অন্তীর গলা ছেড়ে দিয়ে সজোড়ে ধাক্কা মারে অন্তীকে।অন্তী দেয়ালে গিয়ে ঠোকর খায়।
-যদি পারতাম এক্ষুনি তোকে…
-মেরে ফেলতে তাই তো??তাতে তো আমারই ভালো হতো আমাকে আর এই বন্দিনী দশায় থাকতে হবে না।ছোট বেলা থেকেই তো তাই করছো অন্তু এটা করিস না,অন্তু এর সাথে কথা বলিস না,ওর সাথে মিশিস না…উফ সারা জীবন তোমার এই না না শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত।তুমি বোধয় তোমার মেমসাহেব কে ও এতো না না করতে না যতোটা আমাকে করো!
কথাগুলো বলে অন্তী তূর্যর দিকে তাকায়। তূর্য মাথা নিচু করে রেখেছে।
হটাৎ করেই তূর্যর মুখে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে…. এবার অন্তী ভয় পাচ্ছে তূর্যর এই হাসিকে সে খুব ভয় পাচ্ছে…
-তোর খুব মুক্তির সাধ তাই না???
-না মানে…
-মুক্তি মানে কি জানিস একা থাকা।একা থাকলে যা ইচ্ছে করা যায় কেউ কিছু বলতে পারে না।আজকের জন্য তুই ও মুক্ত….
কথাটা বলেই তূর্য অন্তীকে কোলে তুলে নেয়….
-এবাবা এটা কি করছে….
-তোকে মুক্তি দিচ্ছি।কাল ভোর পর্যন্ত তুই মুক্ত কথাটা বলেই তূর্য অন্তীকে বারান্দায় দাড় করিয়ে দেয়।
-এখানে?
-তুই এখানেই থাকবি।একা একা স্বাধীনভাবে।
-মানে কি??
তূর্য আর কথা বারায় না অন্তীকে বারান্দায় রেখে ধাম করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।এদিকে বেচাঁরি অন্তী তো চিৎকার করেই যাচ্ছে….
-তূর্য ভাইয়া আমার মুক্তি চাই না আমি তোমার সাথেই থাকবো।প্লিজ আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
-(….)[ভেতর থেকে তূর্যর কোনো সাড়া নেই]
-এই যে শুনুন না প্লিজ দরজাটা খুলুন!!
তূর্য দুম করে বারান্দার লাইটটা অফ করে দেয়।এদিকে বারান্দাটা সম্পূর্ন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে অন্তী আরো জোড়ে কেঁদে উঠে।
-তূর্য ভাইয়া আমি অন্ধকার খুব ভয় পাই তুমি তো জানো।প্লিজ দরজাটা খোলো!
-চুপ করবি?আর একবার যদি তোর মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় তাহলে কিন্তু…..আশা করি সেদিনের কথা তুই ভুলিসনি!!
অন্তী এবার চুপ হয়ে যায়।
[সেবার অন্তী তার বড় খালামুনির বাড়িতে বেড়াতে যায়।অন্তী তখন মোটামুটি ছোট।সবে মাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছে।আর তূর্য কলেজে পড়ছে।অন্তীর খালার বাসায় তূর্য আর তিয়াশ দুজকেই নিয়ে যায় অন্তীর বাবা।তিয়াশ আর অন্তী প্রায় সমবয়সী।
তূর্য মোটামুটি ছেলেবেলা থেকেই মামা মামীর কাছেই বড় হয়েছে।অন্তীর বাবার খুব ইচ্ছে ছিলো একটা ছেলের বাবা হবে।সেই সখ মেটাতেই তূর্যকে নিজের কাছে রেখেছিলো।এদিকে তূর্যর বাবার ও তখন ব্যবসার খুব খারাপ অবস্থা তিন ছেলের দায়িত্ব সামলাতে পারছিলেন না।সে সুবাধে তূর্যকে নিজের ছেলের চেয়ে কম কখনো ভাবে নি অন্তীর বাবা।
অন্তীর বড় খালার বাসার পাশেই একটা বিশাল নদী আছে।অন্তীর বরাবরই পানির প্রতি একটা বিশেষ টান।
তার উপর সাগর ভাইয়া অন্তীকে বলেছে সে তাকে নদীতে নিয়ে যাবে গোসল করাতে।অন্তীকে আর আটকায়কে!!
সাগর অন্তীর বড় খালার ছেলে। সাগরও অবশ্য তূর্যের চেয়ে বয়সে ছোট তবুও।
অন্তী ভর দুপুর বেলা সাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সাগরের হাত ধরে বেরিয়ে যায় নদীর উদ্দেশ্যে।অবশ্য তাদের সাথে তিয়াশ ও ছিলো।ছিলো না শুধু তূর্য।কারন তূর্য তখন তার মামার সাথে গ্রাম ঘুরতে ব্যস্ত।
পানিতে তিনজন বেশ মাতামাতি করছিলো হটাৎ করেই কারো একজনের হুংকারে অন্তী কেপে উঠে পাড়ে তূর্য এসে দাড়িয়ে আছে।
অন্তী মাথা নিচু করে পানি থেকে উঠে আসে। তখন অন্তীকে টেনে হিচঁরে বাড়িতে নিয়ে যায়।বেশি কিছু বলে না! তবে সেদিন মাঝরাতে অন্তীর ঘুম ভাঙ্গে ঠান্ডা পানির ঝাপটা।অন্তী চোখ খুলে তাকায়। দেখে তূর্য হাটু গেড়ে অন্তীর সামনে বসে আছে..
-তূর্য ভাইয়া তুমি এখন?
-বারন করেছিলাম আমি?
-কি?
-সাগরের সাথে….
-সরি!
-সরি??
-হুহ…
-আমার কথা শুনতে তোর খুব খারাপ লাগে তাই না??
-হ্যা মানে না!!
-ওকে !!
সেবারও তূর্য অন্তীকে অন্ধকার বারান্দায় রেখে এসেছিলো।অন্তী ভয়ে চিৎকার করলে তূর্য অন্তীর হাত মুখ বেধে রেখে দিয়েছিলো।অবশ্য তূর্যও সেদিন অন্তীর সাথে ছিলো)
কিন্তু আজ অন্তী একা, এতো অন্ধকারের মাঝে একা সে।অন্তীর সাথে কেউ নেই।তূর্যও নেই।
সকাল বেলা অন্তীর ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে দরজাটা খোলা।অন্তী সারা রাত ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে যায়।
অন্তী ঘরে এসে দেখে তূর্য বিছানায় উবু হয়ে ঘুমোচ্ছে।
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই অন্তীর রাগে গা জ্বলতে থাকে।অন্তী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচে চলে আসে।
ফুপ্পির কাছে যাবে সে।ফুপ্পিকে বলবে তূর্য ভাইয়া কাল রাতে আবার ঐ রকমটা করেছে।আগের বারের বেলায় সকালে অন্তী কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় করেছিলো।
তমসা বেগম এসব শুনে তূর্যকে যা তা বলে বকে দিয়েছিলো।সবাই তো অবাক এতো বড় ছেলেকে মা এভাবে বকে!!
অন্তী মুখ গোমড়া করে ফুপ্পির ঘরে চলে যায়
-ফুপ্পি শুনো
তমসা বেগম রাগে কটমট করতে করতে অন্তীর দিকে তাকায়
-ঐ যে ঐ যে এলো বড় লোকের বেটি,তার তো দেখি ১০ টার আগে ঘুম ভাঙ্গে না।
এবার অন্তী চুপ হয়ে যায়।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো ফুপ্পি আর আগের মতো নেই অনেকটা বদলে গেছে।
অন্তী মাথা নিচু করে জবাব দেয়
-ফুপ্পি এখন তো আট টা বাজে ১০ টা কোই বাজলো?
-ওই যে এলো লাট সাহেবে কন্যা। তুই বাবা কোন জমিদার যে তোকে আটটা পর্যন্ত ঘুমাইতে হবে??শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সেবা যন্ত তো করবি না শুধু তোর গোটা পরিবার মিলে আমার ছেলেটাকে শুষে খাবি!!
-না না ফুপ্পি!!
-চুপ যা রান্না ঘরে চা টা করে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আয় আর হ্যা আমাকেও দিয়ে যাস….
অন্তী আর কথা বারায় না সোজা রান্না ঘরে চলে যায়। তমসা বেগমের ব্যবহার আর কারো কানে না গেলেও তিয়াসের কানে ঠিকিই যায়।
তিয়াসের তো রিতিমতো ইচ্ছে করছিলো মাকে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে।
মা হুট করে কেন যে এতো পাল্টে গেলো
এই টুকু পিচ্চি মেয়েকে রান্না করতে বলছে অথচ বাড়ির বড় বউ সে কি না কোনো দিনও ৯ টা ১০ টার আগে ঘুম থেকেই উঠে না
তিয়াশ একটা লম্বা দম নিয়ে রান্না ঘরের হাটা ধরে।উদ্দেশ্য অন্তীকে সাহায্য করা।তমসা বেগম তো আগেই কাজের লোকদের রান্না ঘর থেকে ভাগিয়ে দিয়ে এসেছে।
তার না কি ছেলের বউয়ের হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করছে।
অন্তী আর তিয়াশ মিলে কোনো রকমে চা আর সামান্য কিছু ব্রেক ফাস্ট বানিয়ে ফেলে।
অন্তীর শরীরটা কেমন যেন খারাপ করছিলো। সারা রাত বারান্দায় মেঝেতে শুয়ে এই অবস্থা। তিয়াস অন্তীর হাতে একটা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়।
কফিটা তূর্যকে দিয়ে সে যেন রেস্ট করে।আর মায়ের জন্য ব্রেক ফ্যাস্ট তিয়াস নিজেই নিয়ে যাবে….
অন্তী কফির মগটা নিয়ে ঘরে ঢুকবে তখনই তার কানে আসে তূর্যর গলা। তূর্য কাউকে খুব জোড়ে জেড়ে বকছে….
তোমারে লিভ ইন করতে কি আমি বলছিলাম?তুমি বিপদে পড়ছিলা বলেই তো আমার ফ্লাটে তোমারে আশ্রয় দিয়েছিলাম।আমাদের মধ্যে যা কিছু হইছে তাতে আমাদের দুইজনেরি সম্মতিতে হইছে।আমরা দুজনই লিভ ইন করছি সো তুমি সব দোষ আমারে একা দিতে পারো না..