আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ২২+২৩

0
3039

গল্প:আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২২;২৩

সম্পর্কের গুরত্ব মানুষের চেয়ে বেশি কেইবা বুঝে…তবে সমস্যা হলো কখনো কখনো এই মানুষই সম্পর্কগুলোকে এতোটাই জটিল করে ফেলে যে তখন সম্পর্ক গুলোকে পর্বত সমান ভার মনে হয়।মনে হয় এই সম্পর্ক হীন আনাড়ি জীবনই হয়তো মুক্তির এক মাত্র পথ

অন্তীর অবস্থাও হয়েছে ঠিক একই মতো।

এতোদিন সে অপেক্ষা করছিলো তূর্যর জন্য।কবে তূর্য ফিরবে আর কবে তার কাছে ক্ষমা চাইবে আর কবেই বা সব কিছু গুছিয়ে নেবে!!

অথচ এখন তাদের সম্পর্ক এতোটাই জটিল থেকে জটিলতর রূপ নিয়েছে যে তারা দুজনের কেউই চেয়েও সব কিছু আগের মতো করতে পারছে না।না পারছে হারানো সময়গুলোকে ফিরিয়ে আন্তে।

অন্তী যদি পারতো তাহলে সময়টা বদলে।ফেলতো।ফিরে যেতো সেই সুন্দর সাজানো গুছালো সম্পর্কে।যেখানে তূর্য নিজের বুক পেতে রেখতো আর অন্তী সুযোগ বুঝে লাফিয়ে পড়তো সেই উন্মুক্ত বুকে….আর তূর্য সে তো ব্যস্ত থাকতো প্রিয়তমাকে শক্ত করে হৃদয়ের মাঝে।

এদিকে তূর্য তূর্যর জায়গাই ঠিক।ঐদিকে অন্তী অন্তীর জায়গাই ঠিক। যে যার নিজ নিজ জায়গায় নিজের ভুল গুলো দেখতে পাচ্ছে না।মানুষ এমনই হয়।কেউ নিজের দোষ দেখতে পায় না।

সবাই অন্যের দোষ গুন নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করে। এদিকে ছোট্ট তিতির পড়ে গেছে এক অদ্ভুত চিন্তায়।তার ছোট্ট মাথায় এসবের কিছুই ঢুকছে।স্কুলে ঐ পঁচা আঙ্কেলের সাথে মাম্মামের ওমন ঝগড়া,আঙ্কেলটা আবার মাম্মামের হাতে ব্যাথ্যাও দিয়েছে।

এদিকে আবার আঙ্কেলের সাথে ঝগড়া করে এসে মাম্মামও সেই থেকে কেঁদেই যাচ্ছে!! এসবের অর্থ কি??

ছোট্ট তিতির বার বার একে ওকে প্রশ্ন করছে!!আবার মাম্মামকেও সরাসরি প্রশ্ন করেছে তবে কেউ তাকে কোনো উওর দিচ্ছে না। এদিকে তমসা বেগম ছেলে ফিরার খবর পেয়ে সরাসরি হোটেলে হানা দিয়েছে।যে করেই হোক ছেলেকে তার বাড়ি ফিরিয়ে আন্তেই হবে।

তমসা বেগম হোটেলে গিয়ে কেঁদে কেটে বান এনেছে।মায়ের কান্নার কাছে অবশেষে তূর্য পরাজিত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বলতে গেলে তূর্য নিজে থেকেই বাড়ি ফিরতে চেয়েছে।চেয়েছে অন্তীর কারণে।

তূর্যকে নিয়ে তমসা বেগম বাড়ি ফিরতেই তূর্যকে দেখে সবাই অবাক।সবচেয়ে বেশি অবাক তিয়াশ। তূর্য সবার সাথে কুশল বিনিময় করে তিয়াশের কাছে এগিয়ে যেতেই তিয়াশ তূর্যকে এড়িয়ে যায়।

তূর্য একটু অবাক হয়ে আবার তিয়াশের কাছে এগিয়ে যেতেই তিয়াশ তূর্যকে সোজা সাপটা জবাব দেয়…. আমি তোমার কাছে অনেক ঋৃণী।শুধু আমি কেন আমি, অথৈ,অন্তু,আর মামার গোটা পরিবার সবাই তোমার কাছে অনেক ঋৃণ করে বসে আছি।তুমি নিশ্চয়ই সেই ঋৃনের শোধ তুলতে এসেছো??

তূর্য একটু অবাক হয়ে তিয়াশকে উওর দেয়.. -কিসের ঋৃন??ভাই কি বলছিস এইসব??

-যা সত্য তাই বলছি!!আমি একটা চাকুরির চেষ্টা করছি চাকুরীটা হয়ে গেলে আর তোমাকে টাকা দিতে হবে না। -কি??

-হুহ যাদের তুমি স্বীকারই করো না তাদের খরচ কেন দিবে তুমি?? -মানে???

তমসা বেগম দুই ভাইয়ের কথা বার্তা সেখানেই থামিয়ে দেন।তিয়াশও আর কথা বাড়ায় না।অথৈয়ের মুখে স্কুলের ঘটনাটা আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সম্পূর্ন শুনেছে।

তিয়াশ এই মূহূর্তে আর তূর্যর সাথে কথা বাড়ায় না।হন হনিয়ে বেরিয়ে যায়।

একেই তো সে তূর্যর উপর বড্ড অভিমান করে আছে তার উপর অন্তীর আর তিতিরের সাথে এমন অন্যায় বেচারা তিয়াশ কিছুতেই মানতে পারছে না।

তিয়াশের এমন ব্যবহারে তূর্য ভিষন ঘেটে আছে।যেই তিয়াশ ভাই বলতে অজ্ঞান সেই তিয়াশই এতো দিন পর ভাইকে দেখেও না দেখার ভান করছে।ব্যপ্যারটা তূর্যর বড্ড চোখে লাগে।

রাতে ডিনারটাও তিয়াশ নিজের ঘরে করেছে।তূর্য কোনো রকমে একটু খেয়ে সোজা তিয়াশের ঘরে যায়।তূর্যকে ঘরে আসতে দেখে অথৈ মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়।

অথৈয়ের এমন আচরনে তূর্য একটু মুচকি হাসি দেয়। -অথৈ তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস।আই মিন তোরা দুজনই অনেক বড় হয়ে গেছিস!!

অথৈকে কিছু বলতে না দিয়ে তিয়াশ নিজেই বলে উঠে -পরিস্থিতি মানুষকে বড় করে দেয়।যাই হোক তুমি হটাৎ আমার ঘরে??

-কেন আসতে পারি না??
-অবশ্যই….কিছু বলবে??

তূর্য তিয়াশের কথার উওর দিতে গিয়েও থেমে যায়।অথৈয়ের দিকে তাকায়। অথৈ আর সেখানে না দাড়িয়ে বেরিয়ে যায়….

তোমরা কথা বলো আমি আসছি,,, অথৈ বেরিয়ে যেতেই তূর্য তিয়াশকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।একটা সিগারেট ধরায়।

-কেমন আছিস??কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি?? -অসুবিধা!!একদমই না।

-বড্ড অভিমান করে আছিস তোরা আমার উপর তাই না?? -তুমি কি অভিমান না করার মতো কিছু করেছো???

-অতোটুকু একটা মেয়েকে ঐ অবস্থায় তুমি একা ফেলে কি করে পালিয়ে যেতে পাড়লে ভাই?তুমি নাকি ওকে ভালোবাসো এই তোমার ভালোবাসা?? -তুই কি অন্তীর কথা বলছিস??

-অন্তী ছাড়া আর কেই বা আছে যার কথা বলবো?? -ও ভালো আছে….দিব্যি সুন্দর ভাবে সংসার করছে…..ভালো তো আমি নাই।একটুও ভালো নেই…..হয়তো কখনো থাকবো ও না!!

-ভাই তোমাকে আর জাস্ট কিছু বলার নাই আমার…..!! তুমি তো কিছু জানো না।শুধু শুধু নিজের ভুল ধারনা নিয়ে পড়ে আছো!! -মানে কি??

-মানে জেনে কি করবে বলো??সময়গুলো কি ফিরে পাবে যা তোমরা নষ্ট করেছো?সব সম্পর্কেই ভুলবোঝাবুঝি থাকবে….মান অভিমান থাকবে তবে ভালোবাসার চেয়ে সেই মান অভিমানকে গুরুত্ব বেশি দিয়ে ফেলেছো তোমরা!!তাই তোমরা কেউ ভালো নেই!না তুমি না অন্তু না তোমাদের তিতির!!

-তিয়াশ আমি কিছু বুঝতে পারছি না।তিতির আই মিন ঐ পিচ্চিটা… কে ও???

-তিতির একটাই পরিচয় তিতিরপাখি শুধু অন্তীর মেয়ে তবে সমাজের চোখে তো বাবার নামের সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিতেই হবে তাই না!!শুধু মাত্র সমাজের কাছে ওর বৈধতার প্রমান দেওয়ার জন্য ওকে ওর বাবার নামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাছাড়া ওর উপর তোমার বা এই পরিবার কারোর কোনো অধীরকার নেই! -হোয়াট???

-ওর বাবার নাম তূর্য….!!তূর্য মাহমুদ!!
কথাটা শোনার পর তূর্য স্থির চোখে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে….

তোমাদের মান অভিমান ভুল বোঝাবুঝি সব কিছুর শাস্তি পেলো ঐ ছোট্ট পিচ্চিটা।আমি মন থেকে বিশ্বাস করি ও অন্তীর শুধু মাত্র অন্তীর সন্তান।তবে দিন শেষে ও তোমারই ওরস জাত তাই আমি চাইনি বাচ্চাটা বাবা থাকা সত্তেও বাবা ছাড়া বড় হোক!!বাকিটা তোমরা বুঝে নাও…..তবে মনে রেখো কোনো সমস্যা সম্পর্কে সম্পূর্ন জেনেই তার সমাধান খুজো……
প্রায় ঘন্টাখানিক হলো তূর্য অন্তীদের বাড়িতে এসেছে।এসেছে বললে ভুল হবে আসতে বাধ্য হয়েছে।তিয়াশের কাছে সব জানার পর না এসে কি পারে সে!!

তিতিরের স্কুল থেকে আসার পর থেকেই অন্তী কেমন একটা থম থমে হয়ে ছিলো বলতে গেলে একা বন্ধ ঘরে বসে বসে বেশ কান্না কাটিও করেছে।তূর্যর এমন ব্যবহার অন্তী কিছুতেই মানতে পারছে না।

সে না হয় সেদিন রাগ করে সাগরের কথা বলেছিলো তাই বলে তূর্য তাকে এতোটা ভুল বুঝবে।আর সেই রাতের কথা!!সেই রাতের কথাই বা কি করে ভুলে গেলো সে??এমন হাজার অভিযোগ অন্তীর মনে ডাল পালা মেলছে,,,,, আবার সেই বেলার পর থেকে অন্তী কারোর সাথেই তেমন কথাও বলেনি।এমনকি তিতিরের সাথে ও নয়।

অন্তীর এমন ব্যবহারের কারন খুজতে গিয়ে কেউই তেমন কুল কিনারা খুজে পাচ্ছে না।।মেয়েটা দুপুরে কিছু খায় নি এমন কি রাতেও কিছু খায় নি।

তিতিরকেও খাওয়াতে আসে না।অন্তী যেন নিজেকে একটা ঘরে বন্দী করে রেখেছিলো। সারাদিন বাদে হটাৎ করেই অন্তী সকাল সকাল বেরিয়ে যায়।বাড়িতে বলে যায় সে কোনো এক বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছে….

তিতিরকে নিয়েই যাচ্ছে সে।যদিও এর আগে কখনো অন্তী তিতিরকে নিয়ে কোনো ফ্রেন্ডের বাসায় যায়নি। তবুও বাড়ির কেউই তাকে কিছু বলেনি।কি বলবে মেয়ে তো বড় হয়েছে…..

আর এখন তো সে শুধু মেয়ে নয়।এক বাচ্চার মা।মায়েদের বড় হতে হয়, অনেক কিছু জানতে হয় বুঝতে হয়।মানিয়ে নিতে হয় এমন হাজারো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সাথে অন্তীর মা অবশ্য অন্তীর কাছে দু একবার জানতে চেয়েছিলো সে কখন ফিরবে।অন্তী উওরে শুধু বলেছিলো…..

সময় হলেই ফিরবো।ততোদিন তুমি ভালো থেকো।সবার খেয়াল রেখো,, ব্যস এইটুকু বলেই অন্তী বেরিয়ে যায়।রাতে তিয়াশের কথাগুলো শোনার পর থেকে একরকম তূর্যর ঘুমই হারাম হয়ে যায়।

সারা রাত অনেক সাধনার পর ভোর হতে হতেই তূর্য বেরিয়ে যায় অন্তীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তবে অন্তী বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তূর্য এসে হাজির হয় এ বাড়িতে।

এবার অন্তীর মা আর দাদী অন্তীর ওমন ব্যবহারের করন বুঝতে পারে। এদিকে বেলা গড়িয়ে যায়। অন্তীর ফিরার নামই নেই।অন্তীর ফোনটাও সুইচড অফ।তূর্য চুপচাপ বসে ছিলো।তূর্যর সাথে কেউই কথা বলছে না।এমন কি মামী,অর্না কেউই না।

সবার এমন ব্যবহারে তূর্যর খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। অন্যায় তো সে করেছেই।এতোগুলো দিন মিথ্যে ধারনা নিয়ে অন্তীকে কষ্ট দিয়েছে।শুধু অন্তীকে কেন ঐ ছোট্ট পুচকে মেয়ে..যার ব্যপ্যারে সে কিছুই জানতো না।মেয়েটার জন্ম,একটু একটু করে বেড়ে ওঠা কিছুই তূর্য দেখতে পেলো না।একবারের জন্য মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারলো না।

কথাগুলো মনে পড়তেই তূর্যর চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। তূর্য নিজের ভুল বুঝতে পরেছে।সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে….বলতে গেলে সবাই তূর্যকে মাফ করলেও যে আসল মানুষ তার কোনো হুদিশ নেই।

বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে অথচ অন্তীর ফিরার নাম নেই।অন্তী তো শুধু মা কে বলে গেছে সে নাকি কোনো এক বন্ধুর বাড়ি গেছে…… অন্তীর মা ও তূর্যকে এইটুকুই জানায়। এদিকে তূর্যর অন্তীর বন্ধু বান্ধব সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই।এদিকে অথৈ,তিয়াশ দুজনকেই খবর পাঠিয়ে দিয়েছে।

তূর্য বেশ বুঝতে পেরেছে অন্তী হয়তো জানতো তূর্য আসবে তাই সে ইচ্ছে করে কোথাও চলে গেছে যাতে তূর্য তার নাগাল না পায়,,, তিয়াশ একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয়…. তোমার অন্তু তোমাকে তোমার ব্যবহারই ফিরিয়ে দিলো।একদিন তুমি এইভাবে নিঃশব্দে হারিয়ে গিয়েছিলে আজ অন্তীও হারিয়ে গেলো নিঃশব্দে

তূর্য কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। তিয়াশ তো ভুল কিছু বলেনি!!সত্যিই তো কবে মিটবে এই ভুলবুঝাবুঝি।আদও কি মিটবে….

এই ভুলবোঝাবুঝির সূচনা ঘটেছিলো সেই দিন থেকে যেইদিন তূর্যকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো মিথ্যে অপবাদে।সেদিন অন্তী তূর্যকে বিশ্বাস করেনি অবিশ্বাস করে দূরে ঠেলে দিয়েছিলো।

তারপর অবশ্য তূর্য নির্দোষ প্রমান হওয়ার পর অন্তী তূর্যর কাছে তবে

তূর্য সেইদিন অভিমান করে অন্তীকে ক্ষমা করতে পারে নি।

বুক ভরা অভিমান নিয়েই তূর্য ঢাকা শহরে ফিরে যায়।তূর্যর ধারনা ছিলো অন্তী হয়তো তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে কিন্তু প্রথম দিকে অন্তী তূর্যকে বার কয়েক ফোন এস এম এস করলেও একটা সময় যোগাযোগ অফ করে দেয়।

এই ঘটনার মাস চারেক পর তূর্য কি মনে করে একদিন রাতে অন্তীকে ফোন করে।কিন্তু সেদিন অন্তীর লাইন বিজি দেখায়।

সন্দেহ,আর ভুলবুঝাবুঝির শুরুটা সেখান থেকেই।

এরপর তূর্য প্রায় দিনই অন্তীর লাইন বিজি পায়।একদিন তূর্য বাড়ির ল্যান্ড লাইনে ফোন দেয়।ছোট্ট অথৈকে লোভ দেখিয়ে জানতে চায় অন্তী কার সাথে কথা বলছে…..

ছোট্ট অথৈ চকোলেট পাওয়ার লোভে তূর্যকে গড় গড় করে বলে দেয়,,,

অতী বু সাগর ভাইয়ার সাথে কথা বলছে…..রোজই বলে

ব্যাস তূর্য মোটামুটি ধারনা হয়ে যায় অন্তী হয়তো তাকে ফেলে সাগরের সাথে রিলেশনশিপে জড়িয়েছে।ব্যপারটা তূর্যকে বেশ ভোগালেও সে নিশ্চুপ থাকে।

কারন এটা তো শুধু তার সন্দেহই ছিলো।আর সাগর যে অন্তী প্রথম থেকেই পছন্দ করতো তা তূর্যর অজানা নয়।তবে অন্তী তাকে বরাবরই এড়িয়ে চলতো…..

এখন হটাৎ সাগরের সাথে এমন ফোনালাপ কিছুতেই মানতে পারছে না তূর্য

এরপরই হটাৎই একদিন তূর্য কাউকে কিছু না জানিয়ে অন্তীদের বাড়ি চলে আসে।এসেই প্রথমে যা বুঝতে পারে তা হলো বাড়িটা হয়তো ফাঁকা।চারদিকে কোনো শব্দ নেই।

তূর্য বেরিয়ে যেতেই ভেতর থেকে কারো হাসা হাসির শব্দ আসছিলো।তূর্য সেই শব্দ অনুসরন করে উপরে যেতেই চোখ দুটো কপালে উঠে যায়।

সাগর অন্তীকে মেঝেতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।অন্তীও দিব্যি সাগরের চোখে চোখ রেখে দাড়িয়ে আছে…….

ব্যাস তূর্যর আর কিছুই জানার ছিলো না সেদিন।কিছু বোঝারও ছিলো না।সেদিন তূর্য সবচেয়ে বেশি অভিমান করেছিলো।সেদিন অবশ্য তূর্যর অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসে নি।তূর্য সাগরকে অন্তীর ব্যাপ্যারে জিঙ্গেস করলে সাগর সরাসরি তূর্যকে বলে দেয় অন্তী এখন তাকে ভালোবাসে….অন্তীর জীবনে তূর্যর আর কোনো জায়গা নেই।

তখন অবশ্য অন্তীকেও তূর্য সাগরের ব্যপারে জানতে চেয়েছিলো।অন্তীও এক গাল হেসে সাগরের কথায় সায় দিয়েছিলো।ব্যাস!!!

সম্পর্কের ফাটলটা এখান থেকেই শুরু
সেদিন অন্তীর হাসি আর সাগরের কথায় সায় দেওয়া কোনো কিছুর কোনো অর্থই তূর্যর জানা নেই।যদি সাগরের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই থেকে থাকে তাহলে সেদিন কেন অন্তী হ্যা বলেছিলো???

তূর্য এখন একটা গোলক ধাঁধায় জড়িয়ে গেছে।বড্ড ভুল করে ফেলেছে সে।যদি সে অন্তীর সাথে সামনা সামনি বসে একবার তাদের মান অভিমান, জল্পনা কল্পনা নিয়ে কথা বলতো তাহলে হয়তো এই দিনটা কখনোই আসতো না।

যে সম্পর্কের পরদে পরদে ভুল বুঝাবুঝি মান অভিমান থাকে সেই সম্পর্ক বয়ে বেড়ানো আসলেই কঠিন।সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের বোঝা আরো ভাড়ি হতে থাকে একটা সময় সেই সম্পর্ক বিষের অনুভূতি দেয়।।।

অবশেষে তূর্য বেরিয়ে পড়ে অন্তীর খোজে।তিয়াশ আর অথৈয়ের কাছে অন্তীর কিছু বন্ধু বান্ধবের ব্যপ্যারে জেনে তাদের ঠিকানা নিয়ে তূর্য একাই বেরিয়ে যায়।

যেকোনো কিছুর মূল্যে তার অন্তী আর তিতিরকে চাই।অনেক।হয়েছে মান অভিমান।এসবে পড়ে তাদের জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলেছে তারা দুজনই।

প্রায় রাত দুইটার দিকে কি মনে করে অন্তী একবার ফোনটা সুইচড অন করে।উদ্দেশ্য মাকে ফোনে একবার জানিয়ে দিবে সে আর তিতির যেখানেই আছে ভালো আছে।সময় মতো তাড়া দুজনই ফিরে যাবে।অনেক তামাশা হয়েছে এবার আর তূর্যর কাছে সে ফিরবে না।অন্ত তূর্য চলে না যাওয়া পর্যন্ত অন্তী বাড়ি ফিরবে না।যে বাবা নিজের সন্তানকে অস্বীকার করে তার কাছে আর কোনো ফিরাফিরি নেই

কথাগুলো নিজের মনে মনে গুছিয়ে নিয়ে অন্তী মাকে ফোন করতে যাবে তখনই অন্তীর ফোনে একটা মেসেজ আসে।তিয়াশ মেসেজ পাঠিয়েছে…..

অন্তু তূর্য ভাইয়ার খুব বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।অবস্থা খুব ক্রিটিকাল।বাঁচবে না মরবে তার কোনো ঠিক নেই।ভাইয়ার জীবনের শেষ ইচ্ছে সে মৃত্যুর আগে একবার হলেও তার এক মাত্র মেয়ে আর তার ভালো বাসাকে একবার দেখবে,একটু ছোঁবে।অন্তত একবার চোখের দেখা দেখাতে হলেও তুই প্লিজ ফিরে আয়।একজন মৃত্যুর পথ যাত্রী মনে করে তার জীবনের শেষ ইচ্ছেটা তুই পুরন কর

মেসেজটা দেখে অন্তী স্পিচলেছ হয়ে গেছে। গোটা মেসেজটাতে একবার চোখ বুলানোর পরপরই আরেকটা মেসেজ আসে…. তোকে অনেকবার ফোনে ট্রই করেছি তোর ফোন অফ।তাই বাধ্য হয়ে মেসেজ করলাম।অন্তী যা করবি ভেবে করবি…..

তারপর নিচে একটা ঠিকানা দেওয়া….

তিয়াশের কথা মতো এটা একটা নার্সিং হোমের ঠিকানা……. এবার অন্তী প্রচুন্ড জোড়ে কোঁদে উঠে…..

ইচ্ছে করছে এখনই এক ছুটে তূর্যর কাছে চলে যেতে।কিন্তু একেই সে শহর থেকে এতো দূরে তার উপর এতো রাতে বাচ্চা নিয়ে একা সে যেতেও পারবে না। অন্তী এবার যেন সকল কূল কিনারা হারিয়ে ফেলেছে।সে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে….

এখন এক মাত্র আল্লাহয় তাকে পথা দেখাতে পারে।এক মাত্র তিনিই পারেন তূর্যকে বাঁচিয়ে রাখতে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here