আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ২০

0
2398

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২০

সময় মানুষের জন্য অপেক্ষা না করলেও মানুষকে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় সঠিক সময়ের জন্য।

যদি মানুষ সময়কে থামিয়ে রাখতে পারতো তাহলে হয়তো মানুষকে দুঃখের পাঠ কখনোই পড়তে হতো না। কিন্তু আফসোস সময়ের চাবিকাঠি কারো হাতেই নেই।সে নিজের গতিতে বয়েই চলেছে।কখনো ভালো তো কখনো খারাপ।

এদিকে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে অন্তী পাড় করে ফেলেছে তার বিবাহিত জীবনের পাঁচটি বছর।আজ তাদের পঁঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। দিনটা অন্য মেয়েদের কাছে যেমন স্পেশাল হয় অন্তীর কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

অন্তীর জীবনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায়ের শুরু হয়েছিলো এই দিনটার মাধ্যমে। তবে সব ভালো খারাপের মধ্যে দিয়েই সবাইকে ঘুরে দাড়াতে হয়।অন্তীও সেই চেষ্টায় করছে।

অন্তী এখন মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে।আপাতোতো সে তৃতীয় বছরের স্টুডেন্ট,,, অন্তী তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ করে এক রকম ছুটে ছুটেই বাড়ি আসছিলো।ক্লাসে আজ একটু বেশিই দেরী হয়ে গিয়েছে….

বাড়িতে একজন তার জন্য অপেক্ষা করছে।সময়ের একটু এদিক ওদিক হলেঔ অন্তীকে একে বারে নাজে হাল করে ছাড়বে। অন্তী তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে দরজার বেল বাজাতেই অর্না(অন্তীর একেবারে ছোট বোন) দরজা খুলে অন্তীর সামনে দাড়ায়।চুল টুল একে বারে এলো মেলো হয়ে আছে।গালের বা পাঁশটায় দুই আঙ্গুলের আঁচরের দাগ।

অন্তী অর্নার গালে হাত বুলিয়ে জিঙ্গেস করে -অনা তোর গালে কি হয়েছে?? অর্না কাঁদো কাঁদো মুখে অন্তীকে উওর দেয়….

-আপু তোর আসতে দেরী হচ্ছিলো বলে আমি একটু ওর কাছে গেলাম ভাবলাম হয়তো রাগ টাগ করছে।আমি গিয়ে দেখলাম ও দুই গাল ফুলিয়ে বসে আছে।তারপর আমি ওকে একটু খেলতে ডাকলাম ওওও এলো না।আমি ওকে একটু মজা করেই বললাম না খেললে ওর সব আইসক্রিম খেয়ে নিবো তারপরই ও বাঘের মতো আমার দিকে এগিয়ে এসে এভাবে আঁচরে দিলো!!

কথাটা বলেই অর্না আবার কেঁদে দেয়,,, অন্তী মুচকি হেসে অর্নাকে কাছে টেনে নেয়,,, -তোর কি দরকার ছিলো ওকে রাগানোর,,, -আমি আবার রাগালাম কোই তোর মেয়ের তো রাগ সবসময় নাকের ডগায়ই থাকে কিছু বললেই দুম করে রাগগুলো নাক থেকে মাথায় চলে যায়… -হাহাহা

-এক দম বাপ কা ব্যেটি…..তূর্য ভাইয়াও তো এমনই ছিলো একটুতেই রেগে…. অর্না কথাটা বলেই জ্বিবে কামড় দেয়।কি বলতে কি বলে ফেললো সে….ধূর।

অন্তী আর কথা না বাড়িয়ে অর্নাকে নিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে….. (অন্তীর মেয়ে তিতির।চার বছর বয়স।সেদিন অনেক কমপ্লিকেশনের মাঝেই তিতিরের জন্ম হয়।আল্লাহ না চাইলে হয়তো সেটা সম্ভব ছিলো না।তবে আল্লাহ মাঝে মাঝে মানুষকে নিজের হাতেই অনেক কিছু দেন।অন্তীকেও দিয়েছে।বেঁচে থাকার একটা নতুন মানে।

সব খারাপের সাথেই কিছু কিছু ভালো থাকে যা খারাপ গুলো থেকে পাওয়া খারাপ লাগাগুলোকে আড়াল করে দেয়।অন্তীর জীবনে তিতিরও অন্তীর জীবনে তেমনই একজন।

এদিকে অর্না সবে সপ্তম শ্রেনীতে উঠেছে।সেই সুবাধে অর্না আর তিতিরকে বাড়িতে সমানই ধরে হয়।আবার এই বাড়িতে সবচেয়ে লড়াকু ও দুজনই।সবসময় দুজন কিছু না কিছু নিয়ে লেগেই থাকে।আবার দিন শেষে দুজনের কেউই কাউকে ছাড়া একমূর্হতও থাকতে পারে না)

অন্তী অর্নাকে সাথে নিয়ে ঘরের ভেতরে যেতেই দেখে তিতির বারান্দার রকিং চেয়ারটাই বসে দোল খাচ্ছে। অন্তীকে ঘরের আসতে দেখেই তিতির মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। -ছোত খালামুনি তুমি মাম্মামকে বলে দাও মাম্মাম কি ভুলে গেছে যে আজকে তার তিতির পাখির ইস্কুল ইউনিফম নিতে যাওয়ার কথা ছিলো….হুহ….

অর্না একটু নাক টেনে তিতিরকে বলে…. -আমি তিতি-র সাথে কথা বলবো না।আমি খুব রাগ করেছি।হুহ,,, অন্তীর সাথে সাথে মনে পড়ে…

তিতিররে জিদে অন্তী তিতিরকে একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে।আপাতোতো অথৈ তিতিরের স্কুলেই টিচার হিসেবে কাজ করছে।সেই সুবাধে পুচকে তিতিরের ভর্তিতে কোনো সমস্যা হয় নি।

অন্তী তিতিরের কাছে গিয়ে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে…. -মাম্মামের সব মনে দেখো আমি এটা কি এনেছি… কথাটা বলেই তিতিরের দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়,,, তিতির খুশি হয়ে ব্যাগটার দিকে হাত বাড়াতেই অন্তী হাত সড়িয়ে নেয়।

-ছোট খালামুনিকে সরি বলো!!বলো বলো…. খালামুনি ব্যাথ্যা পেয়েছে দেখো দেখো…. তিতিরকে আঙ্গুল দিয়ে অর্নার গাল দেখিয়ে….

তিতির সাথে সাথে অর্নার কোলে লাফিয়ে উঠে অর্নার গালে গুনে গুনে পাঁচটা চুমু একে দেয়,,, -নেও খালামুনি তোমাকে তুতু দিয়ে দিয়েছি।সব তিক হয়ে যাবে.. হুহ,,,

সাথে সাথে অর্নাও হেসে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে! ।।এদিকে, এয়ারপোর্টের ইমেগ্রেশন ক্রস করে বাহিরে বেরিয়ে আসে তূর্য।গুনে গুনে পাঁচবছরের কাছাকাছি সময় সে এদেশ থেকে দূরে সরে আছে।বলতে গেলে নিজের পরিবার পরিজন সব কিছুর থেকে দূরে সরে আছে সে।দূরে বললে ভুল হবে সব কিছুকে ত্যাগ করে ঐ অচেনা শহরে পা রেখেছিলো সে আজ আবার এই চেনা শহরে ফিরতে হচ্ছে তাকে।

তবে এই শহরে আবার ফিরে এলেও পরিবারের কাছে ফিরবে কি না সে নিয়ে যথেষ্ট দিধা দন্দে আছে সে যদিও নাইট সিফটের ফ্লাইট ছিলো তাই তূর্য সরাসরি বাড়ি না গেয়ে একটা হোটেলে উঠে।মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কনফারেন্সে তাকে অ্যাটেন্ড হতেই হবে একেবারে বাধ্য বলেই তূর্য এই চেনা শহরে আবার পা রাখলো।।

আজ তিতিরের প্রথম দিন স্কুলে.. অদ্ভুত ভাবে আজই স্কুলে এক বিশেষ প্রোগ্রাম আছে..অন্তী তিতিরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে অথৈয়ের সাথে কথা বলে নিজে রওনা হয়ে যায় ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে….

ক্লাস শেষ করেই আবার ফিরে আসবে….অন্তী অবশ্য এরকম অনুষ্ঠানে থাকতে চায় নি কিন্তু তিতিরের জিদের সামনে অন্তীও দাড়াতে পারে না।

এদিকে এসে থেকেও এক বারের জন্যও দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি তূর্য।অতীত যে বড় সর্বনাশা চাইলেও কি তাকে মুছে ফেলা যায়।তূর্যর এক মন বলছে অন্তীকে একবার দূর থেকে হলেও দেখে আসতে।হয়তো তার কাছে যাওয়া যাবে না হয়তো তাকে ছুয়ে দেখা যাবে না তবুও একবার চোখে দেখা তো দেখা যাবে…….

অন্তত দৃষ্টির পিপাসা তো মিটবে….!! কিন্তু তূর্য চাইলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।অন্তীকে অন্য কারো সাথে দেখার মতো ক্ষমতা তার নেই।

যদি সাগড় অন্তীর সাথে দেখা না করতে দেয়? কিংবা অন্তী নিজে থেকেই আড়ালে থেকে যায়??তখন??

এই মূহূর্তগুলোর সম্মুখীন হওয়ার সাধ্য তূর্যর নেই।তাই এমন দোটানা…..। সকালে তূর্য কফি হাতে দাড়াতেই তূর্যর ক্লাস ফ্রেন্ড হাজির। কনফারেন্সে তাকেও ইনভাইট করা হয়েছে…

তূর্য বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখে বেশ খুশি হয়। -অনেক দিনপর তোর সাথে দেখা -হুহ প্রায় তিন বছরের মতো।

-হম্ম।লন্ডনে একটা সেমিনারে দেখা হয়েছিলো।অবশ্য ফোনে তো যোগাযোগ আছেই -তা ঠিক

-তো আজ কি করছিস সারা দিন??সেমিনার কনফারেন্স তো বিকেলে,,
-কিছুই না নাথিং আপাতোতো বসেই আছি!
-তাহলে চল
-কোথায়?
-আমার বউয়ের ছোট্ট স্কুলটাতে,,,
-কিসের স্কুল??

-ভুলে গেলি ওর শখ মেটানোর জন্য একটা কিডস স্কুল খুলে দিয়েছিলাম আজকে অবশ্য ছোট্ট স্কুলটা অনেক বড় হয়ে গেছে তবুও…..বাই দ্যা ওয়ে আজকে স্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী স্বাভাবিকভাবেই আমাকে যেতে হবে…ভাবলাম তুইও চো একবার,গেস্ট হিসেবে ফ্যংশানটা অ্যাটেন্ড করলে তোর ও ভালো লাগবে….

আফটার অল ইউ লাভ্স কিডস্,,
তূর্য হেসে বলে,,,
-কিডস্??
-হুম্ম

-চল যাওয়াই যায়…..গেলে অবশ্য মন্দ হয় না!!
-হুম্ম তাহলে রেডি হও ম্যান!!
-ওনলি 5 মিনিস!!!
-ওকে ডান!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here