আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১৯

0
2354

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৯

ছেলেকে তো হারিয়েছি অনেক আগেই তাকে ফিরিয়ে আনার শেষ সুতোটাও কি এবার হারিয়ে ফেলবো আল্লাহ

এতোক্ষনে তিয়াশের ধ্যান ভাঙ্গে।তিয়াশ দ্রুত পায়ে ছুটে যায় অন্তীর কাছে।এদিকে যে যার মতো কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে……কেউ কেউ তো কানা ঘুষোও শুরু করে দিয়েছে।তাদের কথা মতো,,,

আজ বাদে কাল বউয়ের বাচ্চা হবে অথচ ছেলে তো একবার বউকে দেখতে ও এলো না,, তার উপর অনেকেই তো কাঁদতে কাঁদতে হেদিয়ে মরছে,,,

এই বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে….ছেলে তো বউ রেখে কোনো এক বিদেশী মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে,,, একদল মানুষ কোনো কাজে না লাগলেও কানা ঘুষো আর বিপদে পড়লে আগুনে ঘি ঢালতে পারে খুব ভালো ভাবেই…..

তবে দূর্ভাগ্য বশত বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই সেই এক দল মানুষের খাতায় নাম লিখাই আমাদেরই খুব কাছের আত্মীয় স্বজনরা। আত্মীয় শব্দটা তিন অক্ষরের হলেও তার অর্থটা বেশ বৃহৎ,,,

আত্মীয় হলো তারাই যদের সাথে আত্মার সম্পর্ক থাকে,, তবে বর্তমানে সম্পর্কগুলোর নাম একই থাকলেও অর্থগুলো পাল্টে গেছে,,,,

তিয়াশ আর অথৈ অন্তীকে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।দুজন মিলেই রওনা হয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

তমসা বেগম সাথে যেতে চাইলে তিয়াশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,,,

-না অন্তী তোমাদের কেউ হয় না অন্তীর বাচ্চা……

তমসা বেগম শুরু করে দেয় তার ভুবন জুড়ানো ভাষন,,

-বাচ্চাটা কি অন্তীর একার না কি ঐ বাচ্চা আমার ছেলের যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়??তখন!!আমিও হাসপাতালে যাবো…

এবার তিয়াশ যেন রাগে ফেটে পড়ে…..

-না অন্তী তোমাদের কেউ হয় না অন্তীর বাচ্চা।বেবিটা শুধু মাত্র অন্তীর অন্তীর একার।ওদের উপর তোমার বা তোমাদের কারো কোনো অধিকার নেই,,,

-কি বললি???

-যা বলেছি ঠিকই বলেছি।আর এখানে তোমাদের বলতে আমি তুমি আর তোমার আদর্শ ছেলেকে বুঝিয়েছি যে এই টুকু বাচ্চা মেয়েকে এসবের মধ্যে একা ফেলে পালিয়ে গেছে….!!

তিয়াশ এবার নিজের রাগকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলো না।রাগে যেন তার গোটা শরীর কাপছিলো।এদিকে অন্তী থেকে থেকে ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।

তিয়াশকে তারা দিয়ে অথৈ বলে উঠে,,

এসবের অনেক সময় পাবে তবে তার আগে আপুকে তো হাসপাতালে নিতে হবে!!

তিয়াশ এবার নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে অন্তী কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সঙ্গে অবশ্য অথৈ ও ছিলো তবে আরো অনেকেই আসতে চাইলেও তিয়াশ কারো কথাই শোনে নি। এদিকে তখন অন্তীর সাথে কথা বলার পর থেকেই তূর্যর কেমন যেন খুব অস্থীর লাগছিলো।বার বার অন্তীকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।

অন্তীর প্রতি কোমন একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছিলো তূর্য।যদিও এরকমটা আগে কখনো হয় নি তবুও। কথায় আছে বুকের পাজঁরে যখন টান লাগে তখন শরীরের সকল অঙ্গ পতঙ্গও কেঁপে উঠে।

অন্তীদের ঐ খানে সন্ধ্যে হলেও তূর্যর এখানে সকাল।ঠিক সকাল নয় ভোরের মতো। বেলা গড়িয়ে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে তূর্য এখনো একই ভাবে সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আচ্ছে।তবে তার চোখ কেন যেন ক্ষানিকের জন্যেও ক্লান্ত হচ্ছে না।

বার দুয়েক অফিস কলিক তাকে খাওয়ার জন্য ডেকে গেলেও তূর্যর কোনো হেলদোল নেই।তূর্যর বুকে এক অজানা ঝড় সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে।এলোমেলো করে দিচ্ছে তূর্যর ভেতরটাকে। তূর্যর অন্তর আত্মা তূর্যকে বলছে ফিরে যেতে।ফেরে যেতে তার প্রিয়সীর কাছে।

তবে শত চাওয়া পাওয়ার মাঝেও চন্দ্রবিন্দুতে কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়….. যেই কিন্তুর শেষ পরিনতি বোঝার মতো বোধ এখন আর তূর্যর নেই।

নিজের সাথে অনেক বোঝা পড়ার পর তূর্য অবশেষে সিদ্ধান্ত নেই প্রিয়সীর কাছে তাকে ফিরতেই হবে অতন্ত একবারের জন্য হলেও ফিরতেই হবে তাকে,,

এদিকে কয়েক ঘন্টা পার হয়ে গেছে অন্তীর লেবার পেইন উঠছে না।আবার জ্ঞান ও ফিরছে না।বার দুয়েক চোখ মেলে তাকালেও পরক্ষনে আবার নিতিয়ে পড়ছে।ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাকে সিজার করাতেই হবে। কিন্তু তমশা বেগম তাতেও নারাজ।

এতোটুকু মেয়ের পেট কেটে তাকে সারা জীবন অকেজো করে রাখবে না কি? ভবিষ্যতে তো আরো ছেলেপুলে হবে না কি!!তখন কি হবে?একবার সিজার মানেই তো সব গেলো!

তার উপর সিজার করা বাচ্চা কাচ্চা নাকি ভালো হয় না!! এইসব পুরানো বুলি আওরাতে ব্যস্ত তিনি।এদিকে তিয়াশ ব্যস্ত অন্তী নামে ছোট্ট বোনটা কে বাঁচাতে। মায়ের মুখে মস্ত বড় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তিয়াশই অন্তীর লিগার গার্ডিয়ান হিসেবে হসপিটালের অফিসিয়াল পেপার সাবমিট করে। এদিকে আবার নতুন বিপদ…..

অন্তীর অনেক ব্লাড লস হয়েছে।আবার পিচ্চি মানুষ হওয়াই শরীরে ব্লাডের যথেষ্ট ঘার্তি রেয়ে গেছে। অন্তীর ব্লাড গ্রুপের সাথে কারো ব্লাড গ্রুপই মিলছে না।ব্লাগ অ্যারেন্জ না হওয়া পর্যুন্ত অপ্যারেশন ও স্টার্ট হবে না।

অবশেষে অনেক খোজা খুজির পর ব্লাড ডোনার নিজে এসেই হাজির। ব্লাড ডোনার আর অন্য কেউ নয় সয়ং প্রভা।

প্রভাকে দেখে প্রথমে তিয়াশ অথৈ আর তমসা বেগম তিন জনই অবাক হয়। যে মেয়ে অন্তীকে একে বারে সহ্য করতে পারতো না।অন্তীর নামে দিনে দুবার গাল মন্দ করতো,অন্তীকে সরানোর জন্য আবার বোনের সঙ্গ দিয়ে এতো কান্ড করালো তার মধ্যে হটাৎ এতো পরিবর্তন।

তবে প্রভা কোনো দিকে গ্রাহ্য না করে নিঃশব্দে সোজা ডাক্তারের কাছে চলে যায়।অন্তীর প্রয়োজন মতো রক্ত দিয়ে আবার নিঃশব্দে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। একেই তো প্রভা কারো সাথে নিজে যেচে কথা বলে নি তার উপর শ্বাশুড়ি মা কথা বলতে আসলেও তাকে এড়িয়ে গেছে।

কোনো কথার উওর না দিয়েই গট গট করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় সে। প্রভা ভাবির মধ্যে এতো পরিবর্তন কিছুতেই মানতে পারছিলো না তিয়াশ।এপাশ ওপাশ পাইচারি করতেই চোখ যায় করিডোরের এক পাশে গুটি শুটি হয়ে দাড়িয়ে থাকা তন্ময়ের দিকে।

তিয়াশ তন্ময়ের কাছে এগিয়ে যেতেই তন্ময় একরকম চমকে যায়। তার ধারনা অন্তীর এই দশার জন্য সেই দায়ী।তাই তার ভেতরের অপরাধ বোধ তাকে এই অব্দি টেনে এনেছে।

তিয়াশ বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে আবার নতুন সত্য আবিষ্কার করে।ঠিক সত্য নয় একটা রহস্য… প্রভা ভাবির এতো উদার হওয়ার রহস্য….

তন্ময়ই একরকম জোড় করেই প্রভাকে এই অব্দি টেনে এনেছে।অন্তীর ব্লাড ডোনার না পাওয়াই প্রভাকে এখানে এনে জোড় করেই ব্লাড ডুনেট করিয়েছে সে। তাছাড়া এই মুহূর্তে কোনো উপায় ছিলো না তাদের।

এবার তিয়াশের কাছে প্রভার এতো উদার হওয়ার ব্যপারটা পরিষ্কার হলো। এদিকে অথৈ বার চারেক তূর্যর নাম্বারে ডায়েল করেই যাচ্ছে।প্রথমবার ফোনটা লাগলেও পরের বারগুলোতে নোট রিচেবেলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

গোটা রাস্তা অন্তীর যতো বারই জ্ঞান ফিরেছে ততোবারই আধো বুলিতে তূর্যর নাম নিয়েই গেছে সে। তূর্যকে ফোন করে বার বার হতাশ হওয়া অথৈ আশা ছেড়ে দিলেও চেষ্টা ছাড়ছে না।যেখানে বোনের জীবন নিয়ে প্রশ্ন সেখানে এতো সহজে হাল ছাড়লে কি চলে?? না!কখনোই না।

অথৈ আবার তূর্যকে ফোন করতে যাবে তখনই তিয়াশ এসে অথৈ-এর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। -অনেক তো হলো এবার অন্তত ক্লান্ত হও!

-মানে
-কি লাভ বার বার ফোন করে??

-আপু চায় তূর্য ভাইয়াকে আর তাছাড়া সে তো বাচ্চাটার বাবা তারও জানার অধিকার আছে!! -অধিকার মাই ফুট!!অধিকার এমনি এমনি জন্মায় না অধিকার অর্জন করে নিতে হয়!আজ থেকে অন্তীর জীবনে তূর্য নামের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।

-কি বলছো এসব!!
-অন্তীরা একাই বাঁচতে পারে……তাদের বাঁচার জন্য এমন ভালোবাসার প্রযোজন পরে না!!

তিয়াশ এইটুকু বলে পেছন ফিরে তাকাতেই…. অপ্যারেশন রুম থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে তিয়াশের সামনে দাড়ায়। -মি.তিয়াশ…..মিসেস অন্তী মাহমুদের বাড়ির লোক তো আপনিই তাই না????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here