আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১৬

0
2335

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৬

আমি তোমার বিরহে রহিব,

বিলীন

তোমাতে করিব বাস,

দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনি,

দীর্ঘ বরস-মাস

যদি আর কারে ভালবাসো,

যদি আর ফিরে নাহি আসো

তবে তুমি যাহা চাও তাই,

যেন পাও,

আমি যত দুঃখ পাই গো…….

অন্তী এইটুকু গেয়েই থেমে গেলো…পেছন থেকে অথৈ এসে অন্তীর পাশে দাড়ালো,,

অন্তী অথৈ-এর দিকে একবার তাকিয়ে আবার আগের মতো দাড়িয়ে যায়।

-পরের লাইনটা বলবি না?

-কি হলো গা…ভালোই তো লাগছিলো,,,

-থাক বলতে হবে।পরের টা তো আমি জানি।শুধু আমি কেন আমরা সবাই জানি কিন্তু তুই জানিস না জানলেও মানিস না…!!

-আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাইই গো…আমারো……..

-তুই এখান থেকে যা আমার ভালো লাগছে না!

-অনেক দিন পর তোর গান শুনলামরে আপু।

-আজকে তূর্য ভাইয়া চলে যাচ্ছে।তাই তোর খুব মন খারাপ তাই না??ওহ্ তুই জানিস তো তূর্য ভাইয়া চলে যাচ্ছে??

অন্তী একবার অথৈ এর দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়।

-জানি!

-কি করে জানলি?তোকে তো কেউ কিছু বলে নি,,

-সকালে দেখলাম দীদমুনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো কাঁদতে কাঁদতে….যাওয়া আগে আমাকে গাল মন্দও করে গেলো!

-শুধু এইটুকুতেই বুঝে গেলি যে,,

-ওনি ফোন করেছিলেন আমাকে ভালো থাকতে বলে গেছে….বলে গেছে আমাকে না কি মুক্তি দিয়ে গেলেন!!

-ওহ্ তাহলে থাক ভালো!এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিস কেন??এটাই কি তোর ভালো থাকার নমুনা??

-অথৈ তুই এখান থেকে…..

-লিভ মি এলোন তাই তো??

-হুহ

-যাচ্ছি…..

অথৈ পেছন থেকে চলে যেতে অন্তী আবার ডাক দেয়,,

-তিয়াশ ভাইয়াকে ভুলে যা ফিপ্পি তোকেও কখনো মেনে নিবে না!

অথৈ অন্তীর দিকে মুখ বাকিয়ে জবাব দেয়,,

-আমি ঐ সব ফুপ্পি টুপ্পিকে জানি না।আমি শুধু জানি আমার ভালোবাসাকে।ফুপ্পি বলো আর শ্বাশুড়ি বলো সে যতো টুকু সন্মান পাওয়ার যোগ্য ততোটুকুই পাবে।

অথৈ এর মুখে এমন কথা শুনে অন্তী একটু অবাক হয়।

ভালোবাসা বোধয় এমনই হয়।হটাৎ করেই প্রচুন্ড সাহস দিয়ে দেয়,করে তোলে চঞ্চল নদীর মতো আবার কখনো করে দেয় শীতল বরফের মতো শীতল,আবার পাথরের মতো স্থীর,,,

অথৈ সেখান থেকে যেতে নিলে আবার পেছন ফিরে তাকায়।অন্তীর দিকে তাকিয়ে গড় গড় করে বলতে শুরু করে,,

-আমি আর তিয়াশ নেক্সট উইকে বিয়ে করছি।তূর্য ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে।ফুপ্পি যদি মেনে না নেয় তাহলেও আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।তুই সব চিনলি শুধু মানুষ চিনলি না

-মানে?

-সমস্যাগুলোকে বুকে ভেতর চেপে না রেখে উন্মুক্ত করে দিতে হয় তাহলেই সমাধান পাওয়া যায়!! -অবশ্য এখন এসব বলে লাভ নেই আসছি আমি।

অথৈ এইটুকু বলেই পেছন ফিরে হাটা ধরে….. এদিকে জিনিয়া ব্যাগ পত্র গুছিয়ে তৈরী হয়ে বসে আছে দুপুর দুইটাই তাদের ফ্লাইট বেলা একটা পার হতে চললো অথচ তূর্যর দেখা নেই……

জিনিয়া তো রাগে ফুসছে।

তূর্য সেই সকাল ন টায় বেরিয়ে গেছে।কোনো এক বন্ধুর সাথে নাকি দেখা করতে যাবে।যাওয়ার সময় সবার কাছ থেকে রীতিমত বিদায়ও নিয়ে গেছে।জিনিয়াও তূর্যর সাথে যেতে চাইলে সে জিনিয়াকে জানায় বন্ধুর সাথে দেখা করে দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে পরবে।জিনিয়াও তূর্যর কথায় রাজি হয়ে যায়।

কিন্তু এখন এতো সময় পেরিয়ে যেতে দেখে জিনিয়াও আর অপেক্ষা করতে পারে না।তার ধারনা তূর্য তাকে না নিয়েই এয়ারপোর্টে চলে গেছে।

জিনিয়া তো রাগে ফোস ফোস করতে করতে এয়ার পোর্টের দিকে রওনা হয়ে যায়।এদিকে তমসা বেগম আর অন্তীর দাদী তো কেঁদে কেটে একাকার….

ছেলেটাকে যাওয়ার আগে শেষবারের মতোও দেখতে পেলো না তারা….

কি কপাল তাদের।সব হয়েছে ঐ এক মেয়ের জন্য…অন্তী,,,, তন্ময় অন্তী আর তিয়াশের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।

অন্তী বিছানায় বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
তন্ময়ের ভাষ্য মতে জিনিয়া তূর্যকে অনেক ভাবেই নিজের কাছে টানার চেষ্টা করেছে।এমন তাদের মা তমশা বেগমকে দিয়েও কল কাঠি নেড়েছে কিন্তু কিছুতেই যখন কিছু লাভ হয়নি তখন প্রভা আর জিনিয়া মিলে তোমাকে ব্যবহার করে ঐ ছবিগুলো দিয়ে তূর্যকে ফাসানোর প্লান করে।কারন ওরা খুব ভালো করেই জানতো জিনিয়া কে নিয়ে তোমাদের মাঝে আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো।আর আমার বন্ধু যে কিনা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ওকে দিয়ে প্রভা এই সব করিয়েছে।শুধু প্রভা কেন এ সব কিছুতে আমি ও জড়িয়ে আছি।আমি জানি আমি খুব বড় অন্যায় করেছি আমাকে প্লিজ তোরা ক্ষমা করে দে।

অন্তু প্লিজ!!!আমি সত্যিই চাই না তুই আর তূর্য আলাদা হয়ে যা।কখনোই চাই না

তন্ময় কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাটু গেছে বসে পড়ে এদিকে অন্তী তো কেঁদেই চলেছে….

অথৈ ঠিক কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে…
-আপু আমি তোকে বলেছিলাম সমস্যাগুলো চাপিয়ে রাখতে নেই।তুই তাই করেছিস।যদি তুই একবার ছবিগুলোর ব্যপারে তূর্য ভাইয়া বা আমাদের কারো সাথে শেয়ার করতিস তাহলে এমন কিছুই হতো না।।

তিয়াশ অথৈকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়।
-কি হতো কি হতো না সেসব নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই।এখন ভাইয়াকে আটকাতে হবে।ভাইয়ার দুইটাই ফ্লাইট আমরা চাইলেই ভাইয়াকে আটকাতে পারবো।সব তো এখনো শেষ হয় নি তাই না।

অন্তী কিছুটা মনের জোড় নিয়ে উঠে দাড়ায়।
তিয়াশের সাথে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পরে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

প্রায় একটা বেজে চল্লিশে তিয়াশ আর অন্তী এয়ারপোর্টে এসে পৌছে যায়।দুজনই এয়ারপোর্টের ভেতরে যেতেই দেখে এয়ারপোর্ট চত্তরের মাঝখানে মেঝেতে কোনো একটা মেয়ে বসে বসে কাঁদছে আর তাকে ঘিরে বেস কিছু লোকজন দাড়িয়ে আছে।

অন্তী একটু এগিয়ে যেতেই দেখে মেয়েটি আর কেউ নয় জিনিয়া।অন্তী তিয়াশ দুজনেই জিনিয়ার কাছে এগিয়ে যায়। তিয়াশ জিনিয়ার কাছে গিয়ে জিনিয়াকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়,,,

-ভাইয়া কোথায়,
-কি হলো বলো ভাইয়া কোথায়??

-এই মেয়ে বলো ভাইয়া কোথায়??(বেশ জোড়ে ধমক দিয়ে)
এবার জিনিয়া যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে…

-আমি কি করে জানবো তোমার ভাইয়া কোথায়?সে আমাকে চিট করেছে।ঠকিয়েছে আমাকে।আমাকে বলেছে আমরা নাকি দুইটার ফ্লাইটে ইউকে তে ফিরে যাচ্ছি অথচ…..

এইটুকু কথা জিনিয়া একনাগাড়ে বলে থেমে যায়।বেশ লম্বা একটা দম নিয়ে নাক টানে,,, অন্তী অবাক হয়ে জিনিয়াকে প্রশ্ন করে,,, -অথচ কি???

জিনিয়া অন্তীর দিকে একটা কাগজ ছুড়ে মারে,, -সে আমার ফিরে যাওয়ার টিকিট ঠিকই কেটেছে অথচ নিজেরটা কাটেনি!

-মানে….(অন্তী তিয়াশ দুজন একসাথে)

-মানে তূর্য আমাকে চিট করেছে…..দুপুর দুইটার ফ্লাইটে শুধু আমার জন্য ছিট বুক করা অথচ প্যাছেন্জার লিস্টে তূর্যর নাম নেই।ও ইউকেতে ফিরছে না।আমার সাথে শুধু শুধু নাটক করেছে……!!

তিয়াশ মুচকি হেসে জিনিয়াকে জবাব দেয়
-আমি আমার ভাইয়ের থেকে এমন কিছুই আশা করেছিলাম।বাই দ্যা ওয়ে হ্যাপি জার্নি ডিয়ার।আর শুনো তোমাকে যেন আর কখনো আমার ভাইয়ের আশে পাশে না দেখি বুঝলে।যাও তোমার ফ্লাইটের দেরী হয়ে যাচ্ছে ওহ্ তুমি যা করেছো তার অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে আরেক দিন না হয় মিটিয়ে নিবো আপাতোতো তুমি যেতে পারো!

জিনিয়া রাগে কটমট করতে করতে তিয়াশকে বলে,, -আই হেইট ইউ আই হেইট ইওর ব্রাদ্যার এন্ড অলসো ইউর ফ্যামিলি।আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করবো না কোনো দিনও না।

এইটুকু বলেই জিনিয়া ব্যাগে হাতে নিয়ে গটগট করে ইমেগ্রেশনের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে অন্তী সেখানেই স্থীর হয়ে দাড়িয়ে আছে।

তূর্য তো বিদেশ যাচ্ছে না।তাহলে কোথায় সে?? আর সকাল সকাল সবাইকে না জানিয়ে কোথায়ই বা হারিয়ে গেলো????

হটাৎই অন্তীর মাথা ঘুরে উঠে চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসে….অন্তী আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না ঐ খানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।

ততোক্ষনে তন্ময় আর অথৈও সেখানে চলে এসেছে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here