আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৫

0
715

#আবেগময়_সম্পর্ক
#৫ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল তার মায়ের হাতে আমিনা আক্তারের দেওয়া শপিং ব্যাগ গুলা তুলে দিয়ে বলে, “নাও এগুলো আমার শাশুড়ি দিয়েছেন তোমাদের’কে।”

সিতারা বেগম ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বলে, “যাক তাহলে তোর শশুর বাড়ির সব লোক ভালোই আছে। আমাদের আর কোন চিন্তা রইল না। গুছিয়ে সংসার কর৷ সৃষ্টিকর্তা তোর মঙ্গল করুক।”

“আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে সবকিছু ঠিকই আছে আম্মু। কিন্তু তুমি ভেবে দেখেছ যদি আকাশের প্রথম স্ত্রী কখনো ফিরে আসে তারপর কি হতে পারে? আমি তখন কি করবো? আমার কি আদৌ স্থান হবে ঐ বাড়িতে?”

সিতারা বেগম আতংকিত হয়ে পড়েন। আমতা আমতা করে বলেন, “এত চিন্তা করিস না। অন্তর চৌধুরী আমাদের আশ্বাস দিয়েছে তার বোনের ফেরার আর কোন চান্স নাকি নেই।”

“এই একই কথা উনি আমাকেও বলেছেন। আমার শাশুড়িও এই কথা বলেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ওনারা এই বিষয়ে এত সিউর কিভাবে হতে পারছেন। তাহলে কি ওনারা কি লুকাতে চাইছেন আমাদের কাছে? কি রহস্য লুকিয়ে আছে এসবের মাঝে?”

“সে যেই রহস্য থাক তুই এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে যাস না মেহুল। বিয়ে যখন হয়ে গেছে মন দিয়ে সংসার টাই কর। সেটা তোর কাজে লাগবে।”

“তুমি যাই বলো তার তাই বলো, আমাকে সব কিছু জানতে হবে। আমি বুঝতে পারছি আমার অজানা রয়েছে অনেক বড় সত্য। আর এই সব কিছুর মূলে রয়েছে রায়ানের মা অন্তরা। যাকে ঘিরে সব প্রশ্ন জালের মতো ছড়িয়ে আছে।”

❤️
মেহুল দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে স্বভাব বশতই ভাতঘুম দেয়। ঘুম থেকে উঠে রায়ানকে নিয়ে একটু বাইরে ঘুরতে যায়। পিহুও যায় তাদের সাথে। সবাই মিলে একটি পার্কে ঘুরতে আসে।

রায়ান একটি দোলনায় বসে মেহুলকে বলে, “আমায় একটু দোল দাও না নতুন মা। আমার দোলনায় চড়তে খুব ভালো লাগে।”

মেহুল রায়ানকে দোলনায় দোল দিতে থাকে। পিহুর সেরকম ভালো লাগছিল না এখানে। তাই সে ফোন টিপতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ কারো গলা কানে আসতে সে চোখ তুলে তাকায়। কেউ একজন বলছিল, “তোমরা এখানে!”

পিহু সামনে তাকিয়ে খুব সুদর্শন একজন যুবককে। তাকে দেখেই পিহুর ভালো লেগে যায়। সে আনমনেই বলে ওঠে, “দারুণ। এমন কাউকেই তো আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে চাই।”

মেহুলও দোলনায় দোলানো থামিয়ে দিয়ে সামনে তাকায়। অন্তরকে দেখে মুখটা গম্ভীর করে নেয়৷ কেন জানি এই লোকটাকে একদম সহ্য হচ্ছে না মেহুলের। হয়তো এই লোকের জন্যই বিয়েটা করতে হচ্ছে জন্য।

মেহুল অন্তরকে দেখে তার সাথে কথা বলতে বিন্দু মাত্র আগ্রহী ছিল। কিন্তু অন্তরই আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে। রায়ান অন্তরকে দেখে তার কাছে ছুটে চলে যায়। অন্তর রায়ানকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, “তোমরা এখানে কি করছ রায়ান?”

“আমি নতুন মা আর পিহু আন্টির সাথে এখানে এসেছি। এখানকার দোলনায় দোল খেতে অনেক মজা লাগছে। তুমি আমায় দোল দিতে পারবে?”

অন্তর রায়ানকে কোল থেকে নামিয়ে দোলনায় নিয়ে গিয়ে দোল দিতে থাকে৷ পিহু মেহুলের পাশে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করে, “আপি ইনি কি রায়ানের মামা? মানে আব্বুর অফিসের বস।”

“হুম।”

“ওহ, দারুণ দেখতে তো।”

মেহুল বাঁকা চোখে পিহুর দিকে তাকায়। মেয়েটার মতিগতি তার ভালো লাগে না। অথচ এই বয়সটাই আবেগের। পিহু সবেমাত্র ১৮ তে পা দিয়েছে। তাই তার মধ্যে এমন আবেগ কাজ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মেহুল বড় বোন হিসেবে ছোট বোনের এমন কথা তো আর এমনি সহ্য করবে না৷ তাই সে বলে ওঠে, “দেখতে সুন্দর তো কি হয়েছে? ছেলে দেখলেই তোর এত আবেগ উতলে ওঠে কেন? এসব না করে পড়াশোনায় মন দে। সামনে না তোর এইচএসসি পরীক্ষা।”

পিহু অভিমানী সুরে বলে, “উফ, আপি। তুইও না, আমি তো শুধু জিজ্ঞাসা করলাম দেখতে সুন্দর নাকি৷ এটা নিয়ে তুই কত কিছু ভেবে নিলি। এসব বাদ দে চল আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। দুলাভাই নাকি বিকেলে আসতে চেয়েছে। বাড়িতে এসে তোকে না দেখলে ব্যাপারটা তো ভালো দেখাবে না তাইনা?”

মেহুলের মনে পড়ে আকাশের আসার সময় হয়ে গেছে। তাই সে রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলে, “নেমে এসো রায়ান। আমাদের ফিরতে হবে।”

অন্তর বলে, “আচ্ছা চলুন, আমি আপনাদের পৌঁছে দিয়ে আসছি।”

“তার কোন দরকার হবে না। আমরা একাই চলে যেতে পারবো। ধন্যবাদ।”

মেহুলের শক্ত জবাব। যা শুনে অন্তর কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। পিহু অন্তরের সাথে যাওয়ার এই সুযোগ মিস করতে চাইছিল না। তাই সে বলল, “এভাবে বলছিস কেন আপি? উনি যখন আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসতে চাচ্ছেন তাহলে সমস্যা কোথায়ম আমাদেরই তো ভালো, তাড়াতাড়ি যেতে পারব। তাছাড়া উনি তো আমাদের অচেনা কেউ নন, উনি তো রায়ানের মামা। তাই রায়ানকে তো উনি নিজের সাথে নিতে চাইতেই পারেন।”

মেহুল আর কিছু বলতে যাবে তখন রায়ানও পিহুর তালে তাল মিলিয়ে বলে, “হ্যাঁ নতুন মা, চলো না আমরা যাই মামার সাথে। মামার না অনেক বড় গাড়ি আছে। আমরা এক্ষুনি পৌঁছে যাব। তাইনা মামা?”

অন্তর রায়ানের গাল টিপে বলে, “হুম একদম।”

মেহুল আর আপত্তি করতে পারল না। তাই অগত্যা বাধ্য হয়ে অন্তরের গাড়িতে করে যেতে রাজি হলো। অন্তর ড্রাইভিং সিটে বসলো। তার সাথে বসেছে রায়ান। পিহু ও মেহুল পিছনে বসল। অন্তর গাড়ি চালানো শুরু করল। পিহু লুকিং গ্লাসে ড্যাবড্যাব করে অন্তরের দিকেই তাকিয়ে ছিল। মেহুলের নজরে আসে ব্যাপারটা। মেহুল পিহুকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলে, “নিজের চোখকে সামলা নাহলে আমি আমার হাত দুটো সামলাতে পারব না।”

পিহু নিজের চোখ নামিয়ে নিল। অন্তরও লক্ষ্য করেছে পিহু তার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছু একটা ভেবে মৃদু হাসে সে। তার মনে যে কি চলছিল সেটা একমাত্র অন্তরই বলতে পারবে।

মেহুলদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় অন্তর। এরপর বলে, “আপনাদের গন্তব্যে এসে গেছি। এখন নামুন।”

মেহুল তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নামে, পিহুও ধীরেসুস্থে নেমে যায়। রায়ানকে অন্তর নিজে নামিয়ে দেয়। অন্তর বলে, “আচ্ছা তাহলে আপনারা থাকুন আমি যাচ্ছি।”

পিহু বলে, “আরে যাবেন মানে কি? বাড়ির গেইট থেকে এভাবে অতিথি ফিরে যেতে আছে নাকি? চলুন আমাদের বাড়িতে চলুন।”

“আজ না। আজ আমার অনেক জরুরি একটা মিটিং আছে। অন্য কোনদিন নাহয় আসব।”

পিহু আর কিছু বলতে পারে না। কারণ মেহুল তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল। পিহু মনে মনে বিড়বিড় করে বলে, “আপি নিজে তো ভালো হ্যান্ডসাম একটা বড়, বর ঘরের বউ হয়েছে। এখন তো আমার পালা! আর আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। এরকম বোন থাকলে সারাজীবন সিঙ্গেলই থাকতে হবে। ধুর।”

অন্তর গাড়ি নিয়ে চলে যেতে নিবে এমন সময় আকাশের আগমন ঘটে। আকাশ এসে অন্তরকে দেখে যে খুশি হয় নি সেটা তার গম্ভীর মুখ দেখেই স্পষ্ট। অন্তর আকাশকে দেখে মুচকি হেসে বলে, “কেমন আছেন দুলভাই? নতুন সংসার, নতুন বউ ভালোই আছেন নিশ্চয়ই।”

আকাশ অকপটে বলে, “তোমার বোনের থেকে অন্তত নতুন সংসারে ভালোই আছি।”

অন্তর নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। আকাশ রাসভারী গলায় মেহুলকে বলে, “ভেতরে চলো।”

আকাশের কথায় সবাই বাড়িতে প্রবেশ করে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here