আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ৪

0
819

#আবেগময়_সম্পর্ক
#৪র্থ_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল আজ তৈরি হচ্ছে তার বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য। আজ অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে তাকে। কেন তার বাবা-মা তাকে এভাবে সবকিছু লুকিয়ে বিয়ে দিল। মেহুল বসে বসে এসবই ভাবছিল এমন সময় আকাশের আগমন ঘটে। আকাশ মেহুলকে সাজতে দেখে বলে, “আপনি এভাবে সাজছেন কেন? আজ কি কোথাও যাবেন?”

মেহুল অবাক হয়ে বলে, “কেন জানেন না আজ তো আমাদের ফিরনিতে যেতে হবে আমার বাবার বাড়ি। আপনার তো জানার কথা।”

“ও হ্যাঁ, তাইতো। আসলে অনেক কাজের চাপ তো তাই ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি কখন যাবেন বলুন। আমি আপনাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসব।”

“নামিয়ে দিয়ে চলে আসবেন এটা আবার কেমন কথা? আপনাকেও তো থাকতে হবে ওখানে আমার সাথে।”

আকাশ আর কিছু বলে না। তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়৷ মেহুল ভাবে আকাশ হয়তো কোন কারণে তার বাবার বাড়িতে যেতে চায়না। মেহুলের খুব একটা আগ্রহ নেই এই ব্যাপার নিয়ে। তার তো শুধু নিজের বাবা মায়ের থেকে উত্তর চাই।

আমিনা আক্তারের আগমন ঘটে। তিনি মেহুলকে জিজ্ঞাসা করেন, “আকাশ এসেছে?”

“জি, উনি তো একটু আগেই ওয়াশরুমে গেছেন।”

আমিনা আক্তার মেহুলের হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ তুলে দিয়ে বলেন, “এগুলো নাও। তোমাদের পরিবারের সবার জন্য আমাদের বাড়ির তরফ থেকে উপহার আছে এখানে। সবাইকে কিন্তু দেবে এগুলো। আজ যদি আকাশের বাবা বেঁচে থাকতেন খুব খুশি হতেন। তিনি তো চেয়েছিলেন আকাশের জীবন যাতে আবার স্বাভাবিক হয়। কিন্তু একটা ঝড়ে আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে গেল।”

মেহুল এই ব্যাপারে কিছু জানতে চাইবে তার আগেই আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। মেহুলকে তাড়া দিয়ে বলে, “যেতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলুন। আমাকে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আবার অফিসে যেতে হবে।”

আকাশের কথা শুনে আমিনা আক্তার বলেন, “নিজের বউকে কেউ আপনি বলে নাকি আকাশ? এটা কেমন কথা। তুই মেহুলকে তুমি করে বলবি। আর মেহুল তুমিও কিন্তু তুমি করে বলবে আমার ছেলেকে।”

মেহুল সম্মতি জানালেও আকাশ বলে, “একটু তো সময় লাগবেই। তবে চেষ্টা করব এখন থেকে তুমি করে বলার।”

মেহুল ও আকাশ বের হতে যাবে এমন সময় রায়ান চলে আসে। রায়ান মেহুল ও আকাশকে বের হতে দেখে বলে, “আব্বু, নতুন মা তোমরা কি কোথায় যাচ্ছ? আমাকেও নিয়ে চলো না।”

আমিনা আক্তার রায়ানকে ধমক দিয়ে বলেন, “তোকে কোথাও যেতে হবে না। তুই বাড়িতে থাক। তুই ওদের সাথে গিয়ে কি করবি।”

মেহুল বলে, “যাক না ও আমাদের সাথে। কোন অসুবিধা নেই।”

“তুমি বুঝতে পারছ না৷ ওকে নিয়ে গেলে তোমার অনেক সমস্যা করবে। এই ছেলে উঠতে বসতে জ্বালাবে তোমাকে। তুমি একা যাও ঘুরে এসো সেটাই ভালো হবে তোমার জন্য।”

“আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি রায়ানকে সামলে নিতে পারব।”

“ঠিক আছে। তুমি যদি সামলাতে পারো তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই৷ যাও তাহলে। সাবধানে যেও।”

মেহুল, আকাশ ও রায়ান রওনা দেয় মেহুলের বাবার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। গাড়িতে করে ঘন্টাখানের যাত্রার পর তারা পৌঁছে যায় মীরপুরে মেহুলের বাড়িতে।

মেহুলের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় আকাশ। মেহুল ও রায়ান নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। আকাশ গাড়ি থেকে নামে না। মেহুল বলে, “তুমি নামছ না কেন গাড়ি থেকে? তুমি ভেতরে আসবে না?”

“না, আমি বিকেলে আসব। এখন অফিসে জরুরি কাজ আছে। প্লিজ আপনি সবকিছু সামলে নিয়েন।”

“সামলে নাহয় নেব কিন্তু তুমি আমাকে তুমি করে বলার প্রাকটিস করো। আমরা যেহেতু স্বামী স্ত্রী তাই তুমি করেই বলা উচিৎ।”

“ওহ সরি। মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। এবার থেকে মাথায় রাখব। টেক কেয়ার। বাই।”

আকাশ চলে যায় নিজের অফিসের দিকে। মেহুল রায়ানকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। মেহুলকে দেখামাত্রই তার ছোট বোন পিহু ছুটে আসে। মেহুলের থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট পিহু। দুই বোন পিঠাপিঠি হওয়ায় তাদের মধ্যে অনেক বেশি ভাব। পিহু মেহুলকে অভিযোগের সুরে বলে, “বিয়ে করে আমাকে ভুলে গেলি আপি। একবার ফোন করে খোঁজও নিলি না। জানিস আমি কত মিস করেছি তোকে।”

মেহুল পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমি কি করব বল। তুইও তো ফোন করিস নি।”

পিহুর নজর যায় রায়ানের দিকে। পিহু মেহুলকে বলে, “এই ছেলেটা কে?”

“কেন তুই জানিস না? উনি তো আকাশের প্রথম স্ত্রীর ছেলে।”

পিহু রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমিও তোর মতো বিয়ের দিনই জানতে পেরেছি যে দুলাভাইয়ের আগেও বিয়ে হয়েছিল। তবে আব্বু-আম্মু নাকি আগে থেকে এই বিষয়ে জানত। আমাদের বলার প্রয়োজনই মনে করল না। অন্ততপক্ষে তোকে তো বলা উচিৎ ছিল।”

এসবের মাঝে মেহুলের মা সিতারা বেগম চলে আসেন। মেহুলকে দেখে তিনি বলেন, “তুই কেন এসেছিস এই বাড়িতে?”

মেহুল নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। তার মা তাকে এভাবে বলবে সেটা কখনো কল্পনাই করে নি মেহুল। পিহু সিতারা বেগমের সামনে গিয়ে বলে, “এভাবে কেন বলছ তুমি আম্মু? আপি কি দোষ করেছে?”

সিতারা বেগম বলেন, “ঠিকই বলছি আমি। ও তো এখন বড়লোক বাড়ির বউ। আমাদের খোঁজ নেওয়ার আর সময় আছে ওর। বিয়ে হয়ে গেছে থেকে একবারও খোঁজ নিয়েছে।”

মেহুল পিহুকে বলে, “পিহু তুই রায়ানকে নিয়ে ভেতরে যা। আমার আম্মুর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

পিহু রায়ানকে নিয়ে ভেতরে যায়। মেহুল নিজের মাকে বলে, “আম্মু তুমি কেন আমার সাথে এমন করলে? তোমরা তো আগে থেকে জানতে আকাশের আগের পক্ষের একজন স্ত্রী আছে, আবার তার একটা ছেলেও আছে। সব জেনেও কেন আমাকে বিয়ে দিলে?”

সিতারা বেগম অসহায় মুখ করেন। ক্ষীন কন্ঠে বলেন, “কি করবো বল আমরা যে নিরূপায় ছিলাম। তুই তো জানিস, তোর বাবা অফিস থেকে অনেক ঋণ নিয়েছিল। সেইসব ঋণই শোধ করা অসম্ভব ছিল আমাদের জন্য। তার উপর গতমাসে তোর বাবার যখন হার্ট অ্যাটাক হলো তখন তার চিকিৎসার জন্য অনেক বেশি টাকার দরকার ছিল। সেই সময় আমি কোন উপায় না পেয়ে তোর বাবার অফিসের বস অন্তর চৌধুরীর সাথে দেখা করি৷ তার কাছে টাকা চাইলে বলেন তোর বাবার আগেই অনেক লোন আছে। এখন আর লোন দেওয়া সম্ভব না। তোর বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য আমি অনেক মিনতি করি। অনেক বোঝানোর পর তিনি মত দেন। কিন্তু শর্ত দেন তার কথা শুনতে হবে। তাহলে তিনি সব ঋণ মওকুফ করবেন। আমি রাজি হয়ে যাই। তারপর দুই সপ্তাহ আগে অন্তর চৌধুরী তোর জন্য নিজের বোনের স্বামীর সম্মন্ধ নিয়ে আসেন। সেই সময় বলেন, আমাদের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে। আমাদের অনেক বেশি লোন ছিল, যা শোধ করার জন্য আমাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে পথে বসতে হতো। তাই আমি আর তোর বাবা বাধ্য হয়ে শর্ত মেনে নেই। আর তোকে বলি নি যাতে তুই বিয়েতে অমত না করিস।”

মেহুলের মুখ শুকনো হয়ে যায়। তার মনে হতে থাকে তাকে নিয়ে ব্যবসা হয়েছে। সিতারা বেগম জিজ্ঞাসা করেন, “তুই সুখী আছিস তো মেহুল?”

“নিজের রক্তের সম্পর্কের মা-বাবার থেকে প্রতারিত হয়ে এক নতুন সংসারে সবার সাথে আবেগময় সম্পর্কে জড়িয়ে ভালোই আছি আমি।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here