#আবেগময়_সম্পর্ক
#২৫তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
অন্তরার মৃত্যুর পর অতিবাহিত হয়েছে কয়েক মাস। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবন তার আপন গতিতেই চলতে থাকে। জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই সবাই এগিয়ে গেছে।
রায়ান প্রথম প্রথম নিজের মায়ের জন্য কান্না করলেও এখন সামলে নিয়েছে নিজেকে। আর কাঁদে না সে। আকাশও অন্তরার মৃত্যুর পর অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল তবে এখন সে স্বাভাবিক হয়েছে। মেহুল ও রায়ানকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
মেহুলও সংসারটা সামলে রাখার চেষ্টা করছে। এখন রোজার সময় চলছে। তাই মেহুল সকাল সকাল উঠল। সাথে আকাশকেও ডেকে দিল সেহরির জন্য। এর পর দুইজনে মিলে সেহরি করে নিল। আমিনা আক্তার, পিহু,আশিক ওরাও করে নিল সেহরি।
মেহুল কয়দিন থেকে একটা ব্যাপার খুব লক্ষ্য করছে। তার মাথা ব্যাথা করছে, বমি বমি ভাব, এবং নিজের পেটেও কিছু অনুভব করছে। মেহুল ক্লান্ত শরীর নিয়ে রায়ানের জন্য নুডলস তৈরি করছিল। একটু পরেই তার স্কুলে যাওয়ার টাইম হয়ে যাবে। আকাশও অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। হঠাৎ করেই নুডলস তৈরি করতে গিয়ে মেহুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
আমিনা আক্তার রান্নাঘরর এসে মেহুলকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে যান। তিনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকেন। আমিনা আক্তারের ডাক শুনে আকাশ, আশিক, পিহু সবাই চলে আসে। আকাশ মেহুলকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে নিজের কোলে তুলে নেয়। এরপর তাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। এবং বিছানায় শুইয়ে দেয়। পিহু কান্না করতে থাকে নিজের বোনের জন্য। এরমধ্যে ডাক্তারকে ডাকা হয়। ডাক্তার চলে আসে। ডাক্তার মেহুলের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বলেন,“ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খুশির খবর আছে মিস্টার আকাশ । আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছে। তাড়াতাড়ি মিষ্টি আনার ব্যবস্থা করুন।”
মেহুলের মা হওয়ার খবর শুনে সবাই খুব খুশি হয়ে যায়। পিহু চোখের জল মুছে বলে, “এটা তো দারুণ খবর। আমি একসাথে খালামনি আর ছোট চাচি হতে যাচ্ছি। আমার তো খুব ভালো লাগল কথাটা শুনে।”
আকাশ মেহুলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। ততক্ষণে মেহুলের জ্ঞানও ফিরে এসেছে। মেহুল নিজের মা হওয়ার কথা শুনে অনেক বেশি খুশি হয়৷ কারণ প্রত্যেক মেয়ের কাছে মা হতে পারা অনেক বড় একটি আনন্দের মুহুর্ত৷ একজন মা তার সন্তানকে নিজের থেকেও বেশি ভালো বাসে। তাই তো দশ মাস দশ দিন শত কষ্ট সহ্য করে সন্তানের জন্ম দেন। আকাশ মেহুলের হাতে হাত রেখে বলে, “শুনলে তুমি আমি…আমি আব্বা হতে চলেছি। আমার যে কি খুশি আর আনন্দ হচ্ছে এটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তুমি আমাকে অনেক খুশি দিয়েছ। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
মেহুল মৃদু হেসে বলে, “আমিও অনেক খুশি হয়েছি। আমাদের নতুন অতিথি আসতে চলেছে।”
_________________
৯ মাস পর,
মেহুল বিছানায় শুয়ে আছে। গত কয়েক দিন থেকে বেশ অসুস্থ বোধ করছে সে৷ ডাক্তার বলেছে সম্পূর্ণ রেস্ট নিতে তাই সেই কথা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করছে মেহুল।
পিহু সেমাই নিয়ে চলে এসেছে। মেহুলকে বলে, “আপি তুই এই সেমাই খেয়ে নে। সকাল থেকে তো কিছু খাসনি।”
মেহুল বলে, “আমার এখন কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না রে বোন। তুই এই সেমাই নিয়ে যা প্লিজ।”
পিহু মেহুলকে জোর করতে থাকে কিন্তু মেহুল খেতে চায় না। তারপর একটু পর মেহুল পিহুকে আবদার করে বলে,“আচ্ছা আমি খেয়ে নিবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে। তুই আমাকে একটা গান গাইয়ে শোনা। আমার গান শুনতে খুব ইচ্ছা করছে।”
পিহু তখন একটু কেশে নিয়ে গান গাইতে শুরু করে,
“কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি, তুমি আমারই
শুধু আমারই
রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না
জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর
নিশানা তির, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘরদোর
জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর
নিশানা তির, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘরদোর
মেঘ আসে এলোকেশে
ছুঁয়ে দিলেই সব চুপ
সেই মেঘবালিকার গল্প হোক
শহরজুড়ে বৃষ্টি হোক
রোদ্দুর হোক আজ শুধুই তার ডাকনাম
পাতাভরা শব্দ টুকরোরা
কালবৈশাখীর মতো মুখচোরা
সব ভিজে যাক, শুধু বেঁচে থাক অভিমান
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
বেঁধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই
শুধু আমারই”
পিহুর গান শেষ হতে না হতেই মেহুলের খাওয়া শেষ হয়ে যায়। পিহু বলে, “এই তো ভালো মেয়ের মতো সব খেয়ে নিলি।”
এমন সময় রায়ান দৌড়ে এসে মেহুলের পাশে বসে। আচমকা মেহুলকে জড়িয়ে ধরে। তখন পিহু বলে,“কি করছ রায়ান? আপি তো অসুস্থ তাকে এভাবে ধরছ কেন?”
মেহুল বলে, “তুই কিছু বলিস না ওকে। ও তো ছোট মানুষ।”
রায়ান তখন বলে,“জানো আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে তার ভাই হওয়ার পর তার মা তাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না। আচ্ছা নতুন মা, তোমার বাচ্চা হওয়ার পর কি তুমিও আমায় ভালোবাসবে না?”
মেহুল আলতো করে রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমি সব সময় তোমাকে এভাবেই ভালোবাসব রায়ান। তুমি কোন চিন্তা করো না।”
রায়ান খুশি হয়ে যায়। এমন সময় আচমকা মেহুলের পেটে ব্যাথা শুরু হয়। সে পেট ধরে ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে। পিহু বলে,“আপি কি হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন?”
মেহুল বলে, “আমার পেটে খুব ব্যাথা হচ্ছে রে বোন পিহু। আমি সহ্য করতে পারছি না এই ব্যাথা।”
পিহু বাড়ির সবাই কে ব্যাপারটা জানায়। আকাশ বাইরে থাকায় আশিক এম্বুলেন্স ডেকে আনে। মেহুল কে তড়ি ঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আকাশের কাছেও খবর পৌঁছে যায়। সে ছুটে আসে হাসপাতালে।
ডাক্তার সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে, “রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ। আমাদের সিজারই করতে থাকে। সেইজন্য আপনাদের সই য়ের প্রয়োজন।”
আকাশ বন্ড সই করে। এরপর মেহুলের সিজার শুরু হয়। কক্ষের বাইরে সবাই পায়চারি করতে থাকে। আমিনা আক্তার সমানে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকেন। আকাশেরও খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়। একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে আসেন। ডাক্তারকে দেখে সবাই জিঘাংসু দৃষ্টিতে তাকায়। ডাক্তার শান্তভাবে এগিয়ে এসে বলে, “খুশির খবর আছে। ওনার ছেলে হয়েছে। কংগ্রাচুলেশনস।”
সবাই খুব খুশি হয়ে যায়। ডাক্তার বলে মা এবং বাচ্চা দুজনেই ভালো আছে। বাচ্চাকে এনে আকাশের কোলে দেওয়া হয়। আকাশ বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলে, “আমার ছেলে।”
সব কিছু ভালো ভাবেই যাচ্ছিল। মেহুলের ছেলেও বড় হতে থাকে। তবে মেহুলের নিজের ছেলে হওয়ার পর সে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে রায়ানকেও যথেষ্ট সময় দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট বাচ্চাকে রেখে রায়ানের আর আগের মতো যত্ন নিতে পারে না। এই নিয়ে রায়ানের মন খারাপ হয়ে যায়।
মেহুলের ছেলের নাম রাখা হয়…
#চলবে
(মেহুলের ছেলের জন্য ‘ম’ দিয়ে কিছু সুন্দর নাম সাজেস্ট করুন তো প্লিজ।)