#আবেগময়_সম্পর্ক
#২০তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
আকাশ মেহুলকে সারপ্রাইজ দিল। মেহুলের জন্য একটি ঘর সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রেখেছে আকাশ। মেহুল আসতেই আকাশ বলল, “সরি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু তোমার জন্য একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ ছিল।”
মেহুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “তাহলে সবকিছু ঠিক আছে। আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
“ভয় পেওনা মেহুল। আমি কখনো তোমায় ছেড়ে যাবনা।”
আকাশ ঘরের দরজা বন্ধ কথা দেয়। মেহুল জিজ্ঞাসা করে, “দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
আকাশ মুচকি হেসে বলে, “বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে এসেছি আর হানিমুন করব না৷ সেটা ক হয়?”
মেহুল লজ্জা পেয়ে যায়। আকাশ ধীরে ধীরে মেহুলের কাছে আসে। মেহুলের কোমল ওষ্ঠদ্বয় নিজের দখলে করে নেয়। তারপর মেহুলকে নিজের কোলে তুলে নেয়। মেহুলকে বিছানায় শুইয়ে দেয়৷ তারপর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পায়।
❤️
সবাই মিলে আজ জাফলং ভ্রমণে এসেছে। সিলেটের একটি আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে এই জাফলং। যা পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়। মেহুল ও আকাশ রায়ানকে নিয়ে একদিকে আছে, পিহু ও আশিক অন্যদিকে।
ঘুরতে ঘুরতে কিছু একটা দেখে হতবাক হয়ে যায় আশিক। পিহুকে বলে, “তুমি ঐ মেয়েটাকে দেখছ?”
আশিকের কথা শুনে পিহু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ দেখছি তো। কিন্তু তুমি এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকাচ্ছ কেন? তোমার এক্স নাকি?”
আশিককে অনেক বেশি চমকিত লাগছিল। আশিক বলে ওঠে, “আমাকে ওনাকে ফলো করতে হবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে ওনার থেকে।”
পিহু কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে, “কে উনি? তুমি আমাকে স্পষ্ট করে বল।”
আশিক পিহুকে বলে, “তুমি এখানেই থাকো আমি আসছি। এখন বেশি কিছু বলার সময় নেই। শুধু এটুকুই জেনে রাখো উনি এমন একজন যার আগমনে আমাদের পুরো ফ্যামিলি পুনরায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে।”
পিহুর এবার অনেক বেশি ভয় লাগতে শুরু করে। সে জানে না যে কি এমন ব্যাপার আছে যার কারণে আশিককে এত চিন্তিত লাগছে। আর এই মেয়েটাই বা কে। আগে তো কখনো এই মেয়েটিকে দেখে নি পিহু।
আশিক মেয়েটির পিছু নেয়। কিন্তু মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার আগেই সে হারিয়ে যায়। আশিক হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “তোমাকে পেয়েও হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু আমি নিশ্চিত তোমাকে ঠিকই আবার খুঁজে পাব।”
পিহু আশিকের সামনে এসে বলে, “আমার মনে পড়েছে। ওনার ছবি তো আমি দেখেছি বাড়িতে। শোনো ওনাকে ফলো করার দরকার নেই। অতীত আর বর্তমান একসাথে এসে দাঁড়াক সেটা নিশ্চয়ই তুমি চাওনা।”
আশিক বলে, “যা হওয়ার তা হবেই। আমরা চাইলেও হয়তোবা কিছু আটকাতে পারবো না। কিন্তু আমি ওনার কাছে কিছু কথা অবশ্যই জানতে চাইব৷ সেসব জানার জন্য হলেও ওনাকে ফলো করতে হবে।”
পিহুর কোন কথা না শুনে আশিক দৌড় লাগায়। পিহু খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। পিহু বলতে থাকে, “এখানে ঘুরতে এসে আবার কোন নতুন সমস্যা হলো। আল্লাহ, তুমি দেখো যেন কোন বিপদ না হয়। আমি চাইনা আমার আপির জীবনে কোন ঝড় উঠুক। তুমি প্লিজ সবকিছু দেখে নিও।”
আশিক দৌড়াতে দৌড়াতে মেয়েটির পেছনে আসে। অনেক কষ্টে মেয়েটিকে খুঁজে পেয়েছে সে। আশিক জিজ্ঞাসা করে, “পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন অন্তরা ভাবি। সামনে আসতে ভয় পাচ্ছ কেন?”
অন্তরা আশিকের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে, “মোটেও পালিয়ে বেড়াচ্ছি না। এখনো আমার ফেরার সঠিক সময় হয়নি তাই ফিরছি না। যখন সঠিক সময় হবে তখন ঠিকই ফিরবো।”
আশিক বলে, “তোমার মধ্যে অনেক রহস্য আছে। যা তুমি লুকিয়ে রাখতে চাইছ।”
“কোন রহস্য নেই। রায়ান আমার সন্তান, এখন যদি আমি ওর অধিকার নিয়ে সামনে আসি তাহলে কি সেটা ভালো হবে বলো? তোমার ভাই নতুন সংসার পেতেছে। আমি চাইনা তার সংসারে কোন ঝামেলা আসুক। তাই তো আমি দূরেই রয়েছি। মেহুল মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি অনেক ভালো মেয়েটা। রায়ানের সাথেও ওর ভালো সম্পর্ক। তাই আমি ভাবছি অতীত হয়েই লুকিয়ে থাকব। সবার কাছে নিরুদ্দেশ হয়েই নাহয় থাকি।”
আশিক বলে, “তার মানে তুমি এখানে আছ? কিন্তু কেন প্লিজ আমাকে সবকিছু খুলে বলো।”
অন্তরা নিজের সব কথা খুলে বলে, “আমার ভাই অন্তর চৌধুরী এতদিন আমাকে বন্দি করে রেখেছিল সবার আড়ালে। কারণটা সম্পত্তিগত। সে ভেবেছিল আব্বু তার অর্ধেক সম্পত্তি আমার নামে লিখে রেখেছে। তাই আমাকে লুকিয়ে রেখে সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন জানতে পারল আসল সত্য যে, সম্পত্তি আমার নয় আমার সন্তানের তখন সে নতুন চাল চালে। অন্তর চৌধুরী তখন আমায় মে*রে ফেলার চেষ্টা করে, আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় কিন্তু আমি পালিয়ে আসি। তবে অন্তর চৌধুরী ভেবেছিল আমি মা*রা গেছি। এরপর আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করলাম। জানতে পারলাম আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তাই নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। গোপনে থেকেই তোমাকে সাহায্য করলাম। অন্তর চৌধুরী ধরা পড়েছে, মানে আমার সন্তান বিপদমুক্ত। ব্যাস আমার দায়িত্ব শেষ।”
আশিক বলে, “তাহলে তুমি সত্যি ফিরবে না? কেন মিছিমিছি সাফার করবে তুমি? ঐ অন্তর চৌধুরী তো তোমার নামে মিথ্যা রটিয়েছিল। কিন্তু এডিট করা ছবি পাঠিয়ে সবার সামনে তোমাকে খারাপ বানিয়েছে। কিন্তু আসল সত্য তো হলো, রায়ান তোমার আর ভাইয়ার সন্তান।”
অন্তরা নিজের চোখের জল মুছে বলে,“আমি জানি সবটা। আমিই সেদিন মাথা গরম করে ফেলছিলাম। অন্তর আমার ভাই হয়ে আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতে পারিনি। সেইদিন যখন ঐ ছবিগুলো দেখে আকাশ আমায় জিজ্ঞাসাবাদ করছিল, আমার চরিত্র নিয়ে মিথ্যাচার করছিল তখন আমি রাগের মাথায় বলে দেই হ্যাঁ আকাশ এই বাচ্চাটা তোমার না। ব্যাস, সেটাই ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল। তারপর থেকে আমার জীবন বদলে যায়। এরপর যেদিন রায়ানের জন্ম হলো সেদিন অন্তর তার ভাড়া করা লোক হাসপাতালে পাঠালো। তারা আমায় তুলে নিয়ে গেল৷ আমি কত মিনতি করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না। আমাকে এতগুলো বছর বন্দি করে রাখল। আবার আমাকে দিয়ে জোর করে একটা মিথ্যা চিঠিও লিখিয়ে নিল। যার কারণে সবাই আমাকে ভুল বুঝল। আমার দূর্ভাগ্য যে যখন আমি অন্তরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলাম ততদিনে আকাশের দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমি চেয়েও আর ফিরতে পারলাম না। আমার জীবন তো ধ্বংসই হয়ে গেছে। আরেকটা মেয়ের জীবন কেন নষ্ট করব আমি?”
আশিক বলে, “তুমি অনেক ভালো অন্তরা ভাবি। কিন্তু নিজের সন্তানের থেকে এভাবে দূরে থেকে কি তুমি ভালো থাকবে?”
অন্তরা বলে, “না আমি রায়ানকে ছেড়ে থাকতে পারব না। তাই আমি নতুন একটা নাটক সাজিয়েছি। যাতে করে আকাশ ও মেহুলের সম্পর্ক টিকে থাকবে কিন্তু রায়ানকে আমি নিজের কাছে নিতে পারব।”
আশিক জিজ্ঞাস করে, “কি প্ল্যান?”
“সেটা আগামী কাল দেখতে পারবে। কাল রায়ানের ছয় বছর পূর্ণ হবে, মানে ওর জন্মদিন। আর কালই আমি ওকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেব।”
❤️
মেহুল ও রায়ান একসাথে ঘুরছে। রায়ান মেহুলকে নিজের কোলে নিয়ে ঘুরছে। আকাশ মেহুলকে বলে, “তুমি আর কতক্ষণ ওকে কোলে নিয়ে থাকবে? আমার কোলে দাও।”
মেহুল বলে, “তুমি বাচ্চা সামলাতে পারো নাকি?”
“না তুমিই তো পারো শুধু। রায়ানকে এত ভালোবাসো যে নিজের কাছ ছাড়া করতেও চাওনা। দেখে বোঝাই যায় না যে তোমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক নেই।”
“রক্তের সম্পর্কই সব হয়না মিস্টার আকাশ। রায়ানকে আমি জন্ম দেইনি তো কি হয়েছে ও আমাকে মা বলে ডেকেছে। ওর প্রতি আমার একটা টান আছে।”
“ও যদি কোনদিন তোমার থেকে দূরে চলে যায় তো?”
“এটা হতে পারে না। আমি রায়ানকে দূরে যেতে দেবো না।”
#চলবে