#আবেগময়_সম্পর্ক
#১৯তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
রায়ান ঘরে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। মেহুল তখন থেকে তাকে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রায়ান খেতে চাইছে না। মেহুল এক পর্যায়ে বলে, “এমন কেন করছ রায়ান? কি চাও তুমি?”
রায়ান নাক ফুলিয়ে বলে, “আমি ঘুরতে যেতে চাই। আমাদের স্কুল বন্ধ দিয়েছে, আমার সব বন্ধুরা বলছে তারা ঘুরতে যাবে তাদের বাবা-মায়ের সাথে। তুমি জানো নতুন মা আব্বু আমায় কোন দিন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়নি। আমারও ইচ্ছা করে আমার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাব। তুমি প্লিজ আব্বুকে বলো না যাতে আমরা ঘুরতে যাই।”
মেহুল কি বলবে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু রায়ানের কথা তার কাছে যুক্তি সংগত লাগছিল। সত্যিই তো ঘুরতে যাওয়া উচিৎ। তাই মেহুল বলে, “তুমি চিন্তা করো না রায়ান। আজ তোমার আব্বু অফিস থেকে ফিরলে আমি এখন তাকে বলব এই ব্যাপারে। রায়ান তারপর খুশি হয়ে খেয়ে নেয়।
রাতে আকাশ বাড়ি তে ফিরলে মেহুল আকাশকে রায়ানের ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছার ব্যাপারে বলে। আকাশ বলে,“তুমি ঠিক বলেছ। আমাদের ঘুরতে যাওয়া উচিৎ। আমি ভাবছি অফিস থেকে ছুটি নেব, তাছাড়া আশিক ও পিহুরও তো নতুন নতুন বিয়ে হলো। ওদেরও হানিমুনটা হয়ে যাবে। ওরা তোমাদের বাড়িতে গেছে ফিরনির জন্য। আগে ওরা ফিরুক তারপর আমরা সবাই মিলে সিলেটে যাব ঘুরতে। আমি সব ব্যবস্থা করে নিচ্ছি।”
মেহুল মনে মনে বলে, “ভাইয়ের হানিমুনের কথা ওনার মনে আছে কিন্তু এটা মনে নেই যে আমাদেরও নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। আমাদেরও হানিমুনের বাকি আছে।”
তবে আকাশের সামনে সে এসব কিছু বলে না। যদিও মেহুল কিছু বলে না। কিন্তু আকাশ বুঝতে পারে মেহুলের মনোভাব। তাই সে ভাবে, “আমি জানি তুমি কি চাও। চিন্তা করো না ওখানে গিয়ে তোমাকে আমি অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দেব। আমাদের হানিমুনটাও এবার হবে।”
আশিক ও পিহু ফিরে আসে। তখন আকাশ তাদের ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে বলে। তারাও ঘুরতে যেতে সম্মতি প্রকাশ করে। ঠিক হয় আগামী শুক্রবারই তারা সবাই সিলেটে এ যাবে ঘুরতে। গিয়ে সেখানকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করবে।
❤️
পিহু, আশিক, আকাশ, মেহুল, রায়ান সবাই তৈরি হয়ে গেছে সিলেটে যাওয়ার জন্য। আমিনা আক্তারকেও তারা নিজেদের সাথে আসতে বলেছিল কিন্তু তার জার্নি করতে সমস্যা হবে জন্য তিনি যেতে চাননি। এই দুই-তিন দিনের জন্য আমিনা আক্তারের ছোট বোন বাড়িতে এসে থাকবে তার সাথে। যার কারণে সবাই নিশ্চিন্তে ঘুরতে যেতে পারবে।
সব আয়োজন শেষে সবাই গাড়ি নিয়ে রওনা হয় সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে। এভাবে ৮ ঘন্টা গাড়িতে ভ্রমণের পর তারা সিলেটে পৌঁছে যায়। সিলেটে নেমে সেখানকার একটি মোটেলে ওঠে সবাই। আশিক,পিহুর জন্য আলাদা রুম এবং আকাশ, রায়ান ও মেহুলের জন্য আলাদা রুম বুক করা হয়।
রায়ান মোটেলের রুমে এসে জানালা দিয়ে বাইরে দেখে মেহুলকে বলে, “নতুন মা দেখো বাইরে কত সুন্দর চা বাগান। আমার তো খুব ভালো লাগছে।”
আকাশ রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “সিলেটে দেখার মতো এমন আরো অনেক সুন্দর যায়গা আছে। কাল আমরা জাফলং যাব। সিলেটের সবথেকে সুন্দর স্থান এই জাফলং। আমি শুনেছি যে সেখানে ঘুরতে যায় তারাই নাকি অনেক বেশি মুগ্ধ হয়।”
মেহুল খুশি হয়ে বলে, “সত্যিই আমরা জাফলং যাচ্ছি? আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল সেখানে যাবার। আমার কলেজ থেকে গতবছর সেখানে পিকনিকেও গেছিল। আমি অসুস্থ ছিলাম জন্য যেতে পারিনি। আফসোস।”
আকাশ বলে, “আর আফসোস করে লাভ নেই। কালই তোমার এই আফসোস দূর হবে।”
অন্যদিকে পিহু আর আশিকও নিজেদের রুমে বসে আছে। আশিক পিহুকে বলে, “আজ সিলেটে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। তাই আজ ঘুরতে যেতে পারলাম না। চিন্তা করো না কাল ঘুরতে যাব।”
পিহু বলে, “আমি মোটেই সেটা নিয়ে চিন্তা করসি না। আমি তো ভাবছি অন্য কথা।”
“কি ভাবছ?”
“আসলে আমি আপির সাথে স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারছি না। এই নিয়েই ভাবছি।”
আশিক বলে, “দেখ তোমার মেহুল আপি যা করেছে সেটার জন্য তোমার আর আমার রাগ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই জন্য তো সম্পর্ক নষ্ট করতে পারব না। তাই আমাদের উচিৎ অতীত ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করা। হয়তো আগের মতো তোমার আর তোমার বড় বোনের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ফিরে আসবে না। কিন্তু তাই বলে একেবারে কথা বলা বন্ধ বা সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। মনে রেখো হাদিসে কিন্তু আছে, সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। আর তাই তোমার উচিৎ সবকিছু স্বাভাবিক রাখা।”
পিহু মাথা নাড়ায়। আশিক পিহুকে কাছে টেনে নেয়। এমন সময় তাদের দরজায় কেউ নক করে। আশিক বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে একজন ওয়েটারকে দেখতে পায়। ওয়েটার রাতের খাবার দিয়ে চলে যায়। পিহু ও আশিক একসাথে খেতে বসে। তাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়। তখনই মেহুল তাদের রুমে আসে ছুটতে ছুটতে। রুমে এসে বলে, “আশিক তোমার ভাইয়া অনেক আগে বাইরে গেছে। এখনো ফেরেনি, আমি কল করছি ফোনও বন্ধ। আমার এখন সত্যিই খুব টেনশন হচ্ছে।”
আশিক বলে, “তুমি চিন্তা করো না। রায়ান কোথায়?”
“রায়ান ঘুমিয়েছে।”
“আচ্ছা তুমি একটা কাজ করো রায়ানের পাশে থাকো আমি আশেপাশে খুঁজছি ভাইয়াকে।”
মেহুল রুমে এসে বসে। কিন্তু সে নিশ্চিন্তে থাকতে পার ছিল না। পিহু এসে মেহুলের কাছে বসে বলে, “তুই চিন্তা করিস না আপি। আকাশ ভাইয়া চলে আসবে। আশা করছি তুই এখন ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনাটা একটু হলেও উপ ভোগ করছিস।”
পিহুর কথা শুনে মেহুল বলে, “এমন কথা বলিস না পিহু। আকাশের কিছু হয়ে গেলে আমি ঠিক থাকতে পারব না।”
পিহু বলে, “সেটা তো তোর আমার আর আশিকের মাঝে আসার আগে মনে রাখা উচিৎ ছিল মেহুল আপি। তুই আমাকে আর আশিককে আলাদা করার চেষ্টা করেছিলি না। এখন দেখ তোর স্বামীই তোর থেকে আলাদা হয়ে গেল।”
“তার মানে তুই আছিস এসবের পেছনে? কেন করছিস তুই এমন বোন?”
পিহু উত্তরে কিছু বলে না। এমন সময় আশিক তাকে ফোন করে। মেহুল ফোনটা রিসিভ করামাত্রই আশিক বলে, “যদি ভাইয়াকে জীবিত দেখতে চাও তাহলে এখনই টি গার্ডেনের কাছে যে ছোট হাউজটা আছে সেখানে চলে আসো। আর কিন্তু বেশি সময় নেই ভাইয়ার হাতে।”
মেহুল বলে, “না আশিক তুমি প্লিজ এমন কিছু করো না। আকাশ তো তোমার নিজের ভাই। তুমি কেন তার ক্ষতি করতে চাইছ?”
“তুমিও তো নিজের ছোট বোনের ক্ষতি করতে চাই ছিলা নতুন ভাবি।”
আশিক ফোন কে’টে দেয়। পিহু মেহুলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে, “তুই যা তাড়াতাড়ি আপি। দেখ নিজের স্বামীকে শেষ দেখা দেখতে পারিস কি না। হা হা হা।”
মেহুল আর বিন্দুমাত্র সময় অপেক্ষা করে না। মেহুল তখনই দৌড়ে ছুটে যায় টি গার্ডেন এর কাছে যে ছোট হাউজ টা আছে সেখানে। সেখানে গিয়ে মেহুল যা দেখে তাতে করে অবাক না হয়ে পারে না।
#চলবে