আবেগময় সম্পর্ক পর্ব ১৭

0
471

#আবেগময়_সম্পর্ক
#১৭তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

আশিক আর ঠিক থাকতে পারছিল না। বিশেষ করে পিহুর বিয়ের কথা শোনার পর থেকে সে নিজেকে সামলাতে পারছে না। অনেক ভেবে দীর্ঘ দিনের দূরত্ব ভাঙার পণ করল সে। আশিক নিজে থেকেই ফোন দিল পিহুকে। প্রথম দুই বার রিং হয়ে কে*টে যাওয়ার পর তৃতীয় বারের বেলায় ফোনটা রিসিভ করে পিহু।

পিহু ফোনটা রিসিভ করামাত্রই আশিক বলে, “তুমি কি সত্যিই বিয়ে করে নিচ্ছ পিহু?”

এতদিন পর আশিকের গলা শুনতে পেয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি আসে পিহুর মনে। তবে তার মনে বাসা বাধা অভিমানের পাহাড়ের স্তুপ তৈরি হয়েছিল। তাই সে সহসাই বলে, “হ্যাঁ। আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিয়ে করবো না তো কি করব আমি বলো? আজীবন তোমার আশায় বসে থাকব। একটা কথা বলো তো, আমার সাথে এই ঘটনাটা ঘটার পর একবারও কি তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করেছ? আমি শুধু আর শুধু মাত্র তোমার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐ অন্তর চৌধুরীর সাথে নাটক করেছিলাম। নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছি, ম*রতে ম*রতে বেঁচেছি। আর তুমি কিভাবে পারলে আমার সাথে এমন করতে?”

আশিক এর উত্তর এ কি বলবে সেটা বুঝতে পার ছিল না। সত্যিই তো, তার উচিৎ ছিল পিহুর সাথে একবার দেখা করা। অন্যদিকে আশিককে চুপ থাকতে দেখে পিহু বলে, “তুমি চুপ করে আছ কেন? আমার প্রশ্নের কোন উত্তর কি নেই তোমার কাছে?”

আশিক বলে, “আমি অপরাধবোধ থেকে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি। তোমার আপু, তোমার পরিবারের কেউ চায়নি আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখি আর তাই…”

পিহু তাচ্ছিল্য মিশ্রিত গলায় বলে, “এসব অযুহাত দিয়ে লাভ নেই৷ তুমি চাইলেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতে। কিন্তু তুমি সেটা করো নি। আর আমি কিনা এখনো তোমাকেই ভালোবাসি। চাইলেও ভুলতে পারছি না। যাইহোক, আমি তোমাকে আর একবার সুযোগ দিতে চাই। যদি তুমি আমাকে পেতে চাও, তাহলে আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসো, আর নাহয় পালিয়ে নিয়ে যাও আমাকে। যদি এমন না করো তাহলে আমাকে চির কালের মতো হারাতে হবে তোমায়। এখন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তোমার হাতে। তুমিই ভেবে দেখ কি করবে।”

আশিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পিহু কল রেখে দেয়। আশিক কিছু বলতে পারে না। সে শুধু হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। এমন সময় মেহুল আশিকের রুমের দরজার বাইরে থেকে বলে, “ভেতরে আসতে পারি?”

আশিক বলে, “হ্যাঁ ভাবি এসো।”

মেহুল ভেতরে এসে বলে, “আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সব কথা শুনেছি। তুমি পিহুর সাথেই তো ফোনে স্পিকার অন করে কথা বলছিলে। শোন একটা কথা আমি বলে দিতে চাই, পিহু তোমাকে যেসব সাজেশন দিল তার একটাও কাজ করবে না। আমার পরিবারে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে গেলে তারা সরাসরি না করে দিবে। কারণ একে তো তোমার জন্য আজ আমার বোনের এই অবস্থা হয়েছে, তার উপর তুমি এখনো বেকার। কিসের ভরসায় আমার বোনকে তোমার হাতে তুলে দেবে আমার মা-বাবা? আর পালিয়ে বিয়ে করার কথা একদমই ভাববে না। তুমি নিজে তো চলো নিজের ভাইয়ের টাকায়। আমার বোনের খেয়াল রাখার কোন মুরোদ আছে কি তোমার? না নেই। তাই ভালো হবে যদি তুমি পিহুকে ভুলে যাও। আমার এটুকুই বলার ছিল।”

মেহুল আর না দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়। আশিক দাঁড়িয়ে মেহুলের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। মেহুলের কথাগুলোই তার ঠিক মনে হয়। তাই আশিক সিদ্ধান্ত নেয় সে ভুলে যাবার চেষ্টা করবে পিহুকে। এটাতেই হয়তো সবার ভালো হবে।

❤️
কয়েকটা দিন সুন্দরভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। আজ পিহুর গায়ে হলুদ। গোটা বাড়িতে এই নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে৷ খুশি নেই শুধু পিহুর মনে। কারণ আশিক এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পিহু তো নিজেই আশিককে সাজেশন দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আশিক কি করবে সেই ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট করে বলে নি। বাড়িতে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়েও আসে নি আর নাতো পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই হা হুতাশ করছে পিহু। এখন হয়তো আর কিছুই করার নেই৷ তাকে বিয়েটা করে নিতেই হবে।

পিহুর গায়ে হলুদ উপলক্ষে মেহুল, রায়ান, আমিনা আক্তারও এসেছে এই বাড়িতে। পিহুকে গায়ে হলুদের যায়গায় বসানো হয়েছে। একে একে সবাই তার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। সবার শেষে মেহুলও পিহুর গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিল। তারপর পিহুকে বলল, “আমরা যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি পিহু। আশা করি তুই এই বিয়েতে অনেক সুখী হবি। অতীর আকড়ে বাঁচার চেষ্টা করিস না। আমি জানি, তুই এখনো আশিককেই ভালোবাসিস। কিন্তু বিশ্বাস কর বোন আশিক তোর জন্য ঠিক না। তোর জন্য আমরা যেই পাত্র দেখে রেখেছি তার সাথেই তুই সবথেকে বেশি সুখী হবি দেখে নিস।”

পিহু উত্তরে কিছু বলল না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। গায়ে হলুদ শেষ হওয়ার পর পিহু মেহুলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,“আমি জানি আপি তুই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসিস। তাই আমার কথা অনেক বেশি চিন্তা করিস। আমিও তোকে ভালোবাসি। কিন্তু জানিস এই পৃথিবীতে সবথেকে ভালো আমি আশিককেই ভালোবাসি। তাই যদি আশিককে না পাই, তাহলে আমার বেঁচে থাকারও কোন মানে নেই।”

মেহুল প্রবল উৎকন্ঠা নিয়ে বলে ওঠে,“তুই কিন্তু একদম ভুলভাল কোন কিছু করার কথা ভাববি না।”

পিহু মলিন হেসে বলে, “ভয় নেই আমি আত্ন**হ**ত্যা করব না। এই বিয়েটাই আমার জন্য একটা আত্ন**হ**ত্যা।”

মেহুল বুঝতে পারল পিহু সত্যিই অনেক ভালোবাসে আশিককে। তবে মেহুল চায়না পিহুর সাথে আশিকের মিল হোক। তাই সে আর এই ব্যাপারটা ঘোলা করল না। শুধু বলল,“বিয়ের আগে শুধু এমন মনে হবে। বিয়ের পর দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন নিজের স্বামীকে ছাড়া আর কাউকে ভালো লাগবে না।”

~~~~~~~~
আশিক অনেক ভেবে বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিহুকে ভুলে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আজ সে পিহুকে নিয়ে পালিয়ে আসবে। এটাই এখন তার হাতে শেষ উপায়। আশিক অনেক ভেবে দেখল আগামীকাল পিহুর বিয়ে হবে। তাই আজকেই তাকে পিহুকে নিয়ে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ, আশিক সব বন্দোবস্ত করে রাখে। পিহুকেও ফোন করে বলে আজ পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে।

সেদিন রাতেই আশিক ছুটে যায় পিহুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে। পিহুও তৈরি ছিল পালিয়ে যাওয়ার জন্য। আশিক বাড়ির বাইরে এসে পিহুকে ফোন দিয়ে বলে, “আমি এসে গেছি। তুমি তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আসো।”

পিহু ঘর থেকে বের হতে যাবে এমন সময় মেহুল এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। মেহুল বলে, “কি ভেবেছিলি তোদের পরিকল্পনা আমি কিছু জানব না। দেখ পিহু আমি যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি। তাই তুই আর এই নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করিস না।”

পিহু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে অনেক অনুরোধ করে বলতে থাকে, “প্লিজ আপি আমাকে যেতে দে। আশিককে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।”

মেহুল পিহুর কোন কথা শোনে না। বরঞ্চ সে বাইরে এসে আশিককে বলে, “চলে যাও তুমি এখান থেকে। আমার বোন কোথাও যাবে না তোমার সাথে।”

আশিক এবার আর ফিরে যায়না। সে বলে , “তোমার কথা শুনে এতদিন আমি পিহুর থেকে দূরে ছিলাম কিন্তু আর নয়। এবার আমি পিহুকে আর ছেড়ে থাকতে চাই না।”

মেহুল আমিনা আক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে সব ঘটনা খুলে বললে আমিনা আক্তার আশিককে একটার পর একটা থা*প্পড় মা*রে। এবং বলেন, “তুই যদি আমাকে মা বলে মেনে থাকিস তাহলে এক্ষুনি চলে যা এখান থেকে। আর নাহলে আমার ম*রা মুখ দেখবি।”

নিজের মায়ের কথা রাখতে ভালোবাসাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় আশিক। অন্যদিকে পিহু বন্ধ ঘরে বসে কাঁদতে থাকে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here