#আবেগময়_সম্পর্ক
#১২তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
আকাশ হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়ির সবাই তখন অসহায় দৃষ্টিতে আকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আকাশ সবার সামনে আশাহত গলায় বলে, “আমি রায়ানকে কোথাও খুঁজে পাইনি। পুলিশও কোন সন্ধান দিতে পারিনি।”
কথা বলতে বলতে একসময় আকাশের চোখে জল চলে আসে। তবে সে সবার অলক্ষ্যে সেই জল মুছে নেয়। আর কেউ না দেখলেও মেহুলের দৃষ্টি এড়ায় না। মেহুল আকাশের পাশে এসে তার কাধে হাত রেখে বলে, “আমি জানি তুমি রায়ানের প্রতি ভালোবাসা কখনো প্রকাশ না করলেও তুমি ওকে অনেক ভালোবাসো। আজ আমি রায়ানের ব্যাপারে অন্তরার ব্যাপারে সবকিছু জানতে পেরেছি। আমি জানি অন্তরা তোমাকে ঠকানোয় তোমার ওর প্রতি অনেক রাগ, রায়ান তোমার সন্তান নয় জন্যই হয়তোবা তুমি ওর সাথে সহজ ভাবে মিশতে পারো না। ওর প্রতি তোমার এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে, কিন্তু আমি জানি, রায়ানকে তুমি কম ভালোবাসো না। সব সম্পর্ক কি আর রক্তের হয়? কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের না হয়েও অনেক বেশি নিবিড় হয়। যা আবেগময় সম্পর্ক।”
আকাশ বলে, “তুমি চিন্তা করো না। রায়ানকে আমরা খুঁজে পাবোই। ওর কিছু হবে না।”
মেহুল বলে, “হ্যাঁ আমরা সবাই মিলে খুঁজব ওকে। প্রয়োজনে নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও ওকে ফিরিয়ে আনব।”
এমন সময় কারো হাত তালি দেওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। মেহুল, আকাশ ওরা সবাই সদর দরজার দিকে তাকায়। অন্তর চৌধুরী হাত তালি দিতে দিতে ভেতরে আসছে। অন্তর চৌধুরী সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল, “বাহ, কত সুন্দর ফ্যামিলি ড্রামা চলছে। দিল খুশ হো গেয়া। আমার ভাগ্নেকে অপহরণ করে এখন সবাই মিলে নাটক করছ।”
অন্তরের মুখে এমন কথা শুনে আকাশ রাগী গলায় বলে, “এসব কি বলছ তুমি? আমরা কেন রায়ানকে অপহরণ করব? ভুলে যেও না রায়ান আমার সন্তান।”
অন্তর চৌধুরী বাঁকা হেসে বলে, “কিচ্ছু ভুলিনি আমি দুলাভাই। রায়ান তোমার নিজের সন্তান নয়। সে অন্তরা আপু এবং তার বয়ফ্রেন্ডের সন্তান। এইজন্যই তো তোমাদের এত রাগ তার উপর। আমি শুধু এতদিন নিজের বোনের সম্মান রক্ষার্থে তোমাদের কারো বিপক্ষে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর আমি চুপ থাকবোনা। তোমরা এত নিচে নেমে গেছ যে ছোট বাচ্চাটার ক্ষতি করতে চাইছ।”
আশিক অন্তর চৌধুরীর সার্টের কলার ধরে বলে, “একদম বাজে কথা বলবে না। কি ভেবেছ তোমার অপকর্মের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। মেহুল ভাবিকে দিয়ে তুমি কি কি করাতে চাইছিলে সব আমরা জানি। তাই তুমি আর অন্তত এখানে এসে এত বড় মুখ করে কথা বলার যোগ্যতা রাখো না।”
অন্তর চৌধুরী এক ঝটকায় আশিককে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজের শার্টের কলার হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “আমি এত কিছু জানতে চাই না। তোমাদের এত বাজে কথা শোনার আমার টাইম নেই। আমার ভাগ্নেকে যেহেতু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমি চুপ করে বসে থাকবো না। আমি এখনই পুলিশকে ফোন করছি৷ পুলিশ এসে আকাশকে আগে থানায় ভড়ুক। তারপর এমনিই আমার ভাগ্নের সন্ধান পাওয়া যাবে।”
মেহুল আর চুপ থাকে না। অন্তর চৌধুরীর সামনে এসে তার সামনে আঙুল তুলে বলে, “একদম আমার হাজবেন্ডের কোন ক্ষতি করার কথা ভাববেন না। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
অন্তর চৌধুরী মেহুলের কানে ফিসফিস করে বলে, “তুমি বেশি পাওয়ার দেখিও না। ভুলে যেও না তোমার পরিবারকে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার।”
“আমি ভয় পাই না আপনাকে। আর আপনিও ভুলে যাবেন না, এখন এটাও আমার পরিবার। আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বরকে জেলে ঢোকানোর কথা বলছেন, আর আমি চুপ করে থাকবো। এমনটা ভাববেন না।”
অন্তর চৌধুরী এবার বলে, “আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। আমার ভাগ্নেকে আমার সামনে হাজির করো, নাহলে আমি যা বলেছি তাই করব।”
মেহুল কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহুলের ফোনে একটা ম্যাসেজ আছে। মেহুল সেই ম্যাসেজটা সিন করে। সেখানে লেখা, “যদি রায়ানকে ফেরত পেতে চাও তাহলে তাড়াতাড়ি নিচে দেওয়া ঠিকানায় চলে আসো। আর হ্যাঁ, একদম চালাকি করে পুলিশকে নিয়ে আসবে না। নিজে একা আসো, নাহলে রায়ানকে খ**তম করে দেওয়া হবে।”
ম্যাসেজটা দেখে ভয়ে মেহুলের অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। সে কি করবে সেটা বুঝতে পারছিল না। অবশেষে মেহুল সিদ্ধান্ত নেয় সে এই অপহরণ কারীদের পাঠানো ঠিকানাতেই যাবে আর সেখান থেকে রায়ানকে উদ্ধার করে আনবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মেহুল তাই অন্তর চৌধুরীর সামনে বলে, “আমাকে কিছুটা সময় দিন৷ আজ রাতের মধ্যে আমি রায়ানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আর যদি সেটা না পারি তাহলে আপনি যা করার করবেন।”
অন্তর চৌধুরী রাজি হয়ে যায় মেহুলের কথায়। সে বলে, “ঠিক আছে। আজকের রাতটা তোমাদের সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে যদি রায়ানকে ফিরিয়ে আনতে পারো ভালো। আর নাহলে পুলিশ এনে আমি এই আকাশকে গ্রেফতার করাবো। আমার পাওয়ার সম্পর্কে কিন্তু তোমাদের কারো কোন ধারণা নেই।”
মেহুল আর অপেক্ষা না করে একা বাড়ি থেকে বের হতে যায়। তখন আকাশ মেহুলের সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহুলকে বলে, “এত রাতে তুমি একা একা কোথায় যাচ্ছ? এভাবে একা যাওয়া নিরাপদ নয়। চলো আমিও যাবো তোমার সাথে।”
অন্তর চৌধুরী আকাশকে বাধা দিয়ে বলে, “আমাকে কি বোকা ভেবেছ তোমরা? আকাশকে আমার চোখের সামনে থেকে কোথাও যেতে দেব না। এখন তোমরা রায়ানকে খোঁজার নাম করে পালিয়ে যাবে তাই তো। এমনটা আমি হতে দিবো না।”
আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশিক বলে, “ঠিক আছে তুই থাক ভাইয়া। আমি ভাবির সাথে যাচ্ছি।”
মেহুল আপত্তি করে বলে, “কাউকে আমার সাথে যেতে হবে না। তোমরা কেউ চিন্তা করো না। আমি নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারব। রায়ানকেও আমি ফিরিয়ে আনব।”
কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না মেহুল। এক ছুটে বাড়ির বাইরে চলে গেল। আমিনা আক্তার বললেন, “এসব কি হচ্ছে আমাদের বাড়িতে। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। আমি কোথায় ভেবেছিলাম আমাদের সংসারে সুখ শান্তি আবার ফিরে আসবে। তা না উলটে আরো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সবকিছু হয়েছে ঐ অন্তরার জন্য। নিজে তো আমার সোনার সংসারটাকে জ্বা*লিয়ে দিয়ে গেছেই৷ যাওয়ার আগে নিজের বাচ্চাটাকে রেখে গেছে আমাদের জন্য নতুন নতুন বিপদ তৈরি করার জন্য।”
❤️
মেহুল রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে। একটা ট্যাক্সি দেখে থামতে বলে। ট্যাক্সিতে উঠে ড্রাইভারকে বলে, “তাড়াতাড়ি আমাকে *** ঠিকানায় নিয়ে চলুন।”
ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে। মেহুলের মনে তখন ঝড় বয়ে যেতে থাকে। মেহুল তখন চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, “আল্লাহ তুমি আমাকে শক্তি দাও। আমি যেন আজ রায়ানকে উদ্ধার করতে পারি। ছোট মাসুম বাচ্চাটার যে কোন দোষ নেই৷ ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়।”
এভাবে সারা রাস্তা প্রার্থনা করেই অতিবাহিত হয়। তারপর মেহুল তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। একটা পরিত্যক্ত গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়ায় মেহুল। কারণ তাকে এখানেই আসতে বলা হয়েছে।
আশেপাশে কাউকে না দেখে মেহুলের অস্বাভাবিক লাগে। সে আপনমনে বিড়বিড় করে বলে, “এখানেই তো আসতে বলা হয়েছিল আমায়। কিন্তু এখানে তো কাউকেই দেখছি না।”
এমন সময় কেউ একজন এসে মেহুলের মাথায় বন্দুক তাক করে। ভয়ে মেহুলের অন্তরাত্মা কেপে ওঠে।
#চলবে