আফিম বড্ড নেশালো পর্ব ১৫

0
476

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৫
লেখিকাঃমাহযাবীন

“কোনো এক রাতের আকাশের নিচে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোতে আপনার আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে উদ্দেশ্যহীন অনেকটা পথ চলতে চাই,আফিম।”
নাফিয়ার কথায় ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে আফিম বলে ওঠে,
-তবে আজ রাতটিই সে রাত হোক?
ঠোঁট হাসি টেনে সম্মতি দেয় নাফিয়া।

রাত ঠিক ১২ টা বেজে ১৫ মিনিটের মতো।রাস্তা সম্পূর্ণ জনমানব শূন্য তা বলা যাচ্ছে না।কারণ পথ চলার মাঝেই ১/২ জনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।সেই সাথে খালি ২/৩ টে রিকশেরও দেখা মিললো।কিন্তু তাও পরিবেশ টা নিস্তব্ধ।ঠান্ডা বাতাস খুব বেশি না হলেও স্বস্তি দিচ্ছে।আকাশটা চাঁদ বিহীন কেমন যেনো শূন্য শূন্য কিন্তু তারার মেলায় বেশ লাগছে।
নাফিয়া ও আফিম উভয়ই হাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছে।অনেকটা সময় নিরাবতা চলার পর নাফিয়া নিরাবতা ভেঙে বলে ওঠে,
-আজ থেকে ঠিক ১০ মাস আগে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।
একটু বিস্ময় নিয়ে ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে আফিম বলে ওঠে,
-মনে রেখেছো দেখছি!
-রাখতেই হতো।যে কান্ড ঘটিয়ে ছিলেন!
-আর তুমি কি করেছিলে?
এক ব্রু উঁচু করে বলে ওঠে আফিম।
ঠোঁটে একটি চোরা হাসি টেনে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি করেছিলাম?
উত্তরে কিছু না বলে রাগী চোখে নাফিয়ার দিকে তাকায় আফিম।এমন রাগী চাহনিতে নাফিয়ার চোরা হাসি বিলীন হয়ে গেলো।সে নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে বলে ওঠে,
-আপনিই বাধ্য করেছিলেন।ওমন বাজে কথার উত্তরে যেকোনো মেয়ে ওমনটাই করতো।
-মাঝ রাতে ঝড়ের মধ্যে নিস্তব্ধ রাস্তায় একা একটি বোরকা পরিহিত কোনো ভালো পরিবারের মেয়ে থাকে?
-জানি মাঝরাতে বোরকা পরে পতিতারা রাস্তায় ঘোরে।আসলে সেদিন টিউশনি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরার পথে মনে পরলো বাসায় কিছু বাজার দরকার তাই বাসার পথ ছেড়ে বাজারের পথ ধরলাম।বাজার বাসা থেকে দূরেই ছিলো।৯ টায় বাজার শেষে যখন ফিরবো তখন ঘটলো আরেক বিপত্তি।জুতো ছিড়ে গিয়েছিলো।বাজার থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলেই জামা-কাপর সহ জুতোর দোকান আছে।তাই জুতো কিনবার জন্যে সেখানে যাই।আমার আবার সহজে কিছু পছন্দ হয় না।তাই পুরো শোরুম খুঁজে খুঁজে অবশেষে মোটামুটি পছন্দের একটা জুতো কিনলাম।এগুলো করতেই ১০ টা বেজে গেলো।তারপর বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে শোরুম দিয়ে বেরোতেই খেয়াল করলাম ঝড়ের পূর্বাভাস।চটজলদি রিকশার খোঁজে লেগে পরেছিলাম।কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময় সদাসর্বদাই রিকশার খোঁজ মেলে না আর মিললেও তখন ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা হয়ে যায়।সেদিন ও এমন হচ্ছিল।১/২ টো যা পেলাম তার ভাড়া শুনে আর উঠলাম না।রিকশার খোঁজে সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েও রিকশা পেলাম না।অবশেষে হাঁটা ছাড়া উপায়ও ছিলো না।এমন সময় নিজেই নিজেকে কঠিন কিছু গালি দিয়েছিলাম,কেনো সেই ১/২টো রিকশার মাঝে কোনোটায় উঠে যাইনি!
নাফিয়ার কথার উত্তরে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার ওমন কিপ্টামির জন্যেই তোমার সাথে আমার ওভাবে দেখা হয়।তাই দোষ সব তোমার।ঐ কাজের পানিশমেন্ট এখন অব্দি পাওনি তুমি।অনেক ছাড় দিয়ে দিয়েছি।এখন পানিশমেন্ট দেওয়ার পালা।
ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আজ আমাদের বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হলো,আফিম।আর এই দিনে আপনি আমায় শাস্তি দিতে চাইছেন?
-চাইছি।এখন এই মুহূর্তে আমার যে গালে চর দিয়েছিলে সে গালে গুনে গুনে ১০০ টি চুমু দিবে।
বিস্মিত চোখে আফিমের দিকে তাকিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এমন রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে?
-ইয়াহ!
-অসম্ভব।
-ভেবে বলছো?
-একদম।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-ঠিক আছে।আমি আগামী কালই আমার পিএ এরিন কে নিয়ে ৭ দিনের জন্যে বিজনেস ট্যুরে যাবো।

বাঙালি নারী আর যাই পারুক,নিজের পুরুষের আশেপাশেও অন্য কোনো নারীকে সহ্য করতে পারে না।নাফিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ভিন্ন নয়।আফিমের কথায় মুহূর্তেই রেগে গেলো সে।রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
-খবরদার!এ কাজ করলে আপনার রক্ষা নেই।
-করবো যদি এ পানিশমেন্টটি স্বীকার না করো তবে।(বেপরোয়া সুরে কথাটি বলে ওঠে আফিম)
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে নাফিয়া একটু একটু করে আফিমের অনেকটা কাছে চলে আসে।আলতো করে আফিমের গালে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আফিম নিজের চোখ জোড়া বুজে নেয়।নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন বেশ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।সেই সাথে লজ্জাও লাগছে তার কিন্তু যত যাই হোক নিজের বরকে তো অন্য নারীর সাথে দেখা সম্ভব নয়।
গুনে গুনে আফিমের পুরো গাল জুড়ে তেরোটি চুমু দিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আর কতো,আফিম?
-৮৭ টি।
-আর পারবো না।
-ঠিক আছে।এরিনের….
কথাটি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রাগে নাফিয়া উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।মজাটি যে অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে তা বুঝতে পেরে আফিম নাফিয়ার পেছন পেছন গিয়ে হাত ধরে এক টানে নাফিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।অতঃপর বলে ওঠে,
-কোথায় যাচ্ছো?
-যেখানে ইচ্ছে সেখানে।আপনি যান না এরিনের কাছে!
-সত্যি যাবো?
-হ্যা।
-ঠিক আছে।
বলেই নাফিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আফিম।রাস্তা ফাঁকা হওয়ার পুরো ফায়দা লুটছে সে।নাফিয়া রাগে নিজেকে আফিমের বাহু বন্ধন হতে ছাড়াতে চেষ্টা করে তবে ব্যর্থ হয়।আফিম বলে ওঠে,
-কি গন্ধ!বাঁচা যাচ্ছে না।
আফিমের কথায় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা থামিয়ে বলে ওঠে,
-কোনো গন্ধই তো নেই!
-কোনো কিছু পোড়ার ভীষণ গন্ধ পাচ্ছি।
নাফিয়ার আর বুঝতে বাকি রয় না আফিম কি বুঝাচ্ছাতে চাইছে।নাফিয়া আবারও নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে।নাফিয়ার কাজে আফিমের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।সে ঠোঁটে হাসি নিয়েই জড়িয়ে ধরে রাখে নাফিয়াকে।
কিছুটা সময় পাড় হতেই নাফিয়ার রাগ অনেকটা শান্ত হয়ে যায়।সে চুপটি করে আবদ্ধ হয়ে আছে আফিমের বাহুডোরে।
নাফিয়ার রাগ কমেছে বুঝতে পেরে আফিম বলে ওঠে,
-চলো সামনে এগোনো যাক।
উত্তরে কিছু বলে না নাফিয়া।আফিমের বাহুডোর হতে ছাড়া পেতেই সে হাঁটতে আরম্ভ করে।সাথে আফিমও।কিছুটা পথ চলতেই একটি মুদি দোকান খোলা পায় আফিম।এতো রাতে সচরাচর কোনো দোকানই খোলা থাকে না।কিন্তু মাঝে মাঝে এক-দুটি এমন খোলা পাওয়া যায়।
আফিম কিছু একটা ভেবে সে দোকানে প্রবেশ করে।নাফিয়া আফিমকে সেই দোকানে যেতে দেখে দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে।১/২ মিনিটের মাঝেই হাতে একটি কোণ আইসক্রিম নিয়ে ফিরে আসে আফিম।
আইসক্রিম দেখেই নাফিয়ার রাগ উধাও।আফিম আইসক্রিমটি তার দিকে এগিয়ে দিতেই সে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আইসক্রিমটি নিয়ে নেয় সে।

!!
রান্নার জন্যে ২ জন সেফ(chef) আছে।সেই সাথে ঘরের অন্যান্য কাজের জন্যেও গৃহপরিচারিকা আছে ২ জন।তাই জন্যে ঘরের বউ হওয়ার পরও নাফিয়ার তেমন কোনো কাজ থাকে না।সে আগের মতোই দাদীর সাথে থাকে।দাদীর এবং সানিয়া বেগমের খেয়াল রাখা ও তাদের সাথে গল্পে সারাটি দিন কাটে তার।
সখ করেই মাঝে মাঝে নিজে রান্না করে নাফিয়া।আজও তার ইচ্ছে হলো সবার জন্যে বিশেষ কিছু রান্না করার।আফিম ঝাল খুব পছন্দ করে সেই সাথে সবসময় রিচ ফুড বেশি খাওয়া পরায় আজ নাফিয়া ভিন্ন কিছু বলতে ঝাল করে আলু ভর্তা করার পরিকল্পনা করে।সেই সাথে ডিম ভাজা ও ডাল না হলে তো চলবেই না।সানিয়া বেগম এবং দাদী আবার রাতে রুটি খান।তাই জন্য নাফিয়া রুটি,পাঁচ মিশালি সবজি ও গাজরের হালুয়া তৈরি করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রান্না শুরু করে সে।অনেকটা রান্না প্রায় শেষ এমন সময় হটাৎই সে তার শরীরের একটি অঙ্গে ব্যথা অনুভব করে।ধীরে ধীরে ব্যথাটি বাড়ছে।এমন ব্যথা সে আগেও ক’বার অনুভব করেছে কিন্তু তেমন একটা গায় লাগায়নি।কিন্তু আজকাল ব্যথাটা বেশি হচ্ছে সেই সাথে অঙ্গে কিছু পরিবর্তনও লক্ষ্য করছে সে।

চলবে

[গল্প ধীরে ধীরে তার মূল বিষয়টির দিকে এগোচ্ছে☺️।বৌভাত,হানিমুন এসব কাহিনি লিখে গল্প ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের মতো বড় করার ইচ্ছে হয়নি।এসব কাহিনি মোটামুটি আপনারা সবাই জানেন তাই হয়তো ওগুলো লিখলে আপনাদের পড়তে ভালো লাগতো না।]

[জানি পার্ট ছোট হয়েছে।দুঃখিত☹️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here