আফিম বড্ড নেশালো পর্ব ১২

0
454

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১২
লেখিকাঃমাহযাবীন

এক হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আফিম।নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে সে বলে ওঠে,
-Will you be my addiction Miss. Sheikh?
উত্তরে নাফিয়া শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-উহু।

রাত ঠিক ১০ টা বাজে।আফিমের কথা রাখতেই নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে আজই আফিমদের বাড়িতে চলে আসে নাফিয়া।ঠিক সন্ধ্যে ৭ টায় এ বাড়িতে এসে পৌঁছায় সে।দাদী ও সানিয়া বেগম উভয়ের সাথে দেখা হলেও আফিমের দেখা পায় না সে।তার দুচোখ জোড়া আফিমকেই খুঁজে বেরাচ্ছিলো কিন্তু চোখের তৃষ্ণা মিটলো কই?
দাদী ঘুমিয়ে যাওয়ায় নিজ কক্ষে এসে গোসল টা সেরে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায় নাফিয়া।মন টা তার ভালো নেই।আফিমকে একটি বারের জন্য হলেও আজ দেখতে চায় সে।আকাশ পানে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে সে বলে ওঠে,
-কাল তো খুব বলেছিলো,”I wanna see you tomorrow at home” আর এখন নিজেরই খবর নেই।
ঠিক এই সময়ই নাফিয়ার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়।ওমনি ধুক করে ওঠে নাফিয়ার হৃদয়।হয়তো আফিম এসেছে এই ভেবে ধুকপুক করা হৃদয় নিয়ে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে যায় সে।এক বুক আশা নিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপাশে একজন গৃহ পরিচারিকা দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নাফিয়ার।ব্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকাতেই মেয়েটি বলে,
-আফিম স্যার আপনাকে ছাঁদে যেতে বলেছেন,ম্যাম।
বিগড়ে যাওয়া মেজাজ আবারও ভালো হয়ে যায় নাফিয়ার।সে কোনোমতে ওরনা পেঁচিয়ে ছাঁদের দিকে এক প্রকার দৌড়ে অগ্রসর হয়।ঠোঁটে তার আলতো হাসি।

!!
ছাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আফিম।পরনে সাদা একটি শার্ট এবং ব্লু জিন্স প্যান্ট।বাতাসে তার শার্টসহ চুলগুলো নড়ছে আর সে নিস্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে।
আকাশে আজও চাঁদ নেই তবে আজ তারা আছে।কালো আকাশ টায় ঝলমলে তারাগুলো দেখতে বেশ লাগছে আফিমের।
ছাঁদে এসে আফিমের পেছন দিকটা চোখে পরে নাফিয়ার।আফিমের উপস্থিতিই তার মাঝে ভালো লাগা তৈরিতে সক্ষম।সাদা শার্টে আফিমকে পেছন থেকেই দেখতে খুব ভালো লাগছে তার।না জানি সামনে দিয়ে দেখতে কতোটা সুন্দর লাগছে ছেলেটিকে!
নাফিয়া ধীর পায়ে আফিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে তাকায় আফিম।নাফিয়াকে দেখে দৃষ্টি স্থির রাখে সে নাফিয়ার দিকে।আবারও এই গাঢ় খয়েরী রঙের চোখে ঘায়েল হলো নাফিয়া।দু’জনই একে-অপরের চোখের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত হয়ে পরে।আফিম ধীর পায়ে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।এবার আর নাফিয়া পিছিয়ে যায় না বরং আফিমের চোখে চোখ রেখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে।আফিম,নাফিয়ার কাছে এসে দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নাফিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-You won’t get leave anymore.[তুমি আর ছুটি পাবে না]
আফিমের বলা কথাটি শুনা মাত্রই নাফিয়ার মনে একরাশ ভালোলাগা এসে জায়গা করে নেয়।তবে কি আফিম চায়,সে সর্বদাই আফিমের বাড়িতে থাকুক?ঠিক এই মুহূর্তেই নাফিয়ার মনে পরে তার মা-বাবা তার জন্য ছেলে পছন্দ করেছে।ভালোলাগা গুলো মুহূর্তেই মধ্যেই বিলীন হয়ে গেলো।নাফিয়া আফিমের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আগামী মাসে হয়তো আমায় এই চাকরিটি ছাড়তে হবে।
কথাটি শোনা মাত্রই আফিমের চেহারায় স্বাভাবিকভাবটা পরিবর্তন হয়ে রাগান্বিতভাব প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে।আফিম নাফিয়ার কোমর আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে ওঠে,
-এন্ড ইউ থিংক আই উইল এলাউ ইউ টু ডু দিস?[আর তোমার মনে হয় আমি তোমাকে এমনটা করতে দিবো?]
উত্তরে নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-বাবা-মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে পছন্দ করেছে।
সাথে সাথেই আফিম নাফিয়ার কোমর হতে নিজের হাত সরিয়ে নেয়।এক-দু পা পিছিয়ে গিয়ে এক দৃষ্টিতে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ায় আফিম।আফিম যে ভীষণ রেগে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইলো না নাফিয়ার।আফিম আর কিছু না বলেই স্থান ত্যাগ করার জন্য অগ্রসর হতেই নাফিয়া আফিমের হাত ধরে ফেলে।ভীষণ খারাপ লাগায় নাফিয়ার চোখজোড়া কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসছে।সে আফিমের হাত ধরেই বলে ওঠে,
-বিয়েতে আমার মত নেই।
নাফিয়ার দিকে ফিরে তাকায় আফিম।নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-না এ বিয়ে করতে চাইছি আর না এ চাকরি ছাড়তে চাইছি।
নাফিয়ার কথায় আফিমের চেহারায় যে রাগান্বিতভাব টা প্রকাশ পেয়েছিলো তা দূরীভূত হয়ে গেলো।সে নাফিয়ার দিকে ফিরে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেনো চাইছো না?
উত্তরে চুপ থাকে নাফিয়া।তার চোখ দুটো যেনো আফিমকে না বলা অনেক কথাই বলে দিচ্ছে। আফিম কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে কাছে এসে একহাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে এবং অন্য হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে বলে ওঠে,
-উইল ইউ বি মাই অ্যাডিকশন[addiction] মিস.শেখ?
এই মুহূর্তে আফিম তাকে এ কথাটি বলে বসবে তা ভাবনাতিত ছিলো নাফিয়ার।যতটা না সে অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি,অতিরিক্ত খুশিতে তার হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে।এতো এতো সুখানুভূতি নাফিয়ার হৃদয়ের পুরোটা জায়গা দখলে নেওয়ার পরেও চোখের অশ্রু কণা হয়েও বেড়িয়ে এলো কিছু।ডান চোখের পাশ দিয়ে একটি অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো নাফিয়ার।সে ভাঙা কন্ঠে আফিমকে বলে ওঠলো,
-উহু!
নাফিয়ার কথাটি যেনো আফিমের কানেই এলো না।সে তো ব্যস্ত নাফিয়ার চোখের গভীরতায় ডুব দিতে।নাফিয়ার ঠোঁট “উহু” বললেও তার চোখজোড়া তীব্রভাবে অসম্মতি জানাচ্ছে।কিছুটা সময় নিয়ে সে বলে ওঠে,
-আমি আপনার আসক্তি নই বরং আপনাতে আসক্ত হতে চাই,আফিম।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যতটা হলে একটি দিনও আপনিহীনা থাকতে পারবো না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অন্য কোনো নেশা আমায় কাবু করতে পারবে না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে প্রতিটি দিন এর আসক্তি বৃদ্ধি পাবে কিন্তু কিঞ্চিৎ পরিমাণও কমবে না।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে নাফিয়ার মাঝে নাফিয়া কম আফিমকেই বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে।বৈধভাবে আপনার হতে চাই,আফিম।আপনার মিস.শেখ থেকে মিসেস.আফিম ইবনান হতে চাই।
এতোটা সময় খুব মনোযোগ দিয়ে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখেই নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দ নিজের মাঝে অনুভব করছিলো আফিম।নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে নাফিয়ার চোখও যেনো অনেক কথাই বলে দিলো আফিমকে।অনুভূতির যে গভীরতায় এই মুহূর্তে দু’জন আছে সেখানে পুরো পৃথিবীটাই অনুপস্থিত।এরা দু’জনই যেনো দুজনের পৃথিবী।বাকি কিছু এই মুহূর্তে তাদের মাথায় নেই।এ এক অন্য রকম ঘোরের মাঝেই বিরাজ করছে তারা।
আফিম নাফিয়ার দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিয়ে কপালে এক গভীর চুমু এঁকে দেয়।অতঃপর নাফিয়ার চোখজোড়ায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দু’গালেও ঠোঁট ছোঁয়ায়।প্রতিটি স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে নাফিয়া।সে এই মুহূর্তে এ পৃথিবীতে নেই বরং আফিম নামক এক নেশাময় ঘোরে বিলীন হয়ে আছে।আফিম নিজের ওষ্ঠদ্বয় নাফিয়ার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে নিতে গিয়েও থেমে যায়।নাফিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
-ইউ উইল বি মিসেস.আফিম ইবনান ভেরি সুন।
নাফিয়ার দিকে তাকিয়েই কথাটি বলে আফিম।নাফিয়া তো সেই কখন থেকে চোখ বুজে আছে।আফিমের কথা কানে আসতেই চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে তার।নাফিয়ার ঠোঁটের হাসিটি দেখে আর দেরি করে না আফিম,নাফিয়াকে ছেড়ে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।কারণ সে জানে এখানে আর একটু সময় থাকলে এমন কিছু হয়ে যেতে পারে যা হওয়া উচিৎ নয়।

!!
সকাল হতেই অতিরিক্ত রকমের মন ভালো নাফিয়ার।ঠোঁটের হাসি যেনো এক মুহূর্তের জন্যেও উপস্থিতি হারায়নি।প্রতিটি কাজ বেশ উৎসাহের সাথে করছে সে।মন ভালো হওয়ায় পক পক ও কম করছে না সে।নাফিয়ার এই পরিবর্তিত আচারণ প্রত্যেকের নজরে পরছে।সার্ভেন্টস রা তো সবাই এক প্রকার কানাঘুঁষা করা শুরু করে দিয়েছে।সানিয়া বেগম এবং দাদীও বিষয়টি বেশ কিছুক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছেন।অতঃপর সানিয়া বেগম জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
-কি ব্যাপার নাফিয়া,তোমায় খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
-এ শুধু খুশি নয় বৌমা,এই খুশিতে একটু লজ্জা লজ্জা ভাবও আছে।বিয়ে ঠিক হলো নাকি?(দাদী)
ডাইনিং টেবিলেই বসে ছিলো সবাই সকালের নাস্তা করবার জন্যে।দাদীর প্রশ্নটি করার সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় আফিম।নাফিয়ার কিছু বলার আগেই আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
-ভুল বলোনি দাদী।হতেই পারে গত রাতে ছাঁদে বসে মিস.শেখ এর বিয়ে ঠিক হয়েছে।[নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে চোখ মারে আফিম]
আফিম চোখ মারতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় নাফিয়া।আফিম আসতেই নাফিয়ার চেহারা লজ্জায় লাল হওয়াটা লক্ষ্য করেন সানিয়া বেগম।সেই সাথে আফিমের এমন উদ্ভট কথা!বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তার কাছে।
দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-কি সব বলছো!রাতে তাও আবার ছাঁদে বসে কারো বিয়ে ঠিক হয়?
-মিস.শেখ আপনি বলুন,হয় না?
এ কোন বিপাকে ফেললো আফিম তাকে?এ প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে!নাফিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে দাদী বলে ওঠেন,
-তুমি খাও তো,সকাল সকাল এই ছেলের মাথার তার ছিড়ে গিয়েছে।

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here