#আপনিময়_বিরহ (১০)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________
ক্যান্টিনের টেবিলে গোল হয়ে বসে আছে প্রিয়তা, তনিমা আর সাইমা। প্রথম দিন ক্লাসেই সাইমার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে প্রিয়তা আর তনিমার। তনিমা আর সাইমা ধুমছে গল্প করতেছে কিন্তু প্রিয়তার মন এখনো সকালের ঘটনায়। যে ছেলেটা তাকে ‘প্রিয়’ বলে ডাকলো সেই ছেলেটার নাম সাদাফ। সাদাফ হচ্ছে প্রিয়মের ফ্রেন্ড। এতো শতো কথা মাথার মধ্যে প্যাচ লাগায় দিচ্ছে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই ঠাস করে প্রিয়ম এসে তাদের টেবিলে বসে। সাইমা ভয়ে লাফায় উঠে। তারপর থু থু করে বলে,
‘আরে প্রিয়ম ভাই আপনি এখানে?’
প্রিয়ম শান্ত গলায় বললো, ‘আসতে কি বারণ নাকি?
‘না তা না। আপনি তো ফ্রেন্ডদের ছাড়া কোথাও যান না তো এখন একা একা ঘুরতেছেন যে!’
প্রিয়ম কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে আরেকটা কন্ঠ ভেসে আসে। সবাই সেদিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফসহ প্রিয়মের গ্যাঙ দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ম রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাফরা এগিয়ে এসে পাশাপাশি একটা টেবিলে বসে। তারপর প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কি রে দোস্ত একা একা ছোট আপুদের সাথে বসে আছিস! চিনিস মনে হয়। তা আমাদের সাথে পরিচয় করাবি না?’
প্রিয়ম রাগে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। কপালের নীল রগ স্পষ্ট। প্রিয়তা প্রিয়মের মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে যায় প্রিয়ম রেগে আছে। কিন্তু হঠাৎ রেগে গেলো কেন? রাগার মতো কি এমন হলো এখানে! প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়ম গম্ভীর কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শান্ত গলায় বললো,
‘তোরা যখন এসেছিস তখন নিজেরাই জিজ্ঞেস করে নে।’
সাদাফ হেঁসে বলে, ‘উহু। এগুলো তোর বাড়ির লোক তাই তুই পরিচয় করা।’
রাগটা যেন তরতর করে বাড়তে থাকলো। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে কোনো কথা না বলে হাতের আঙুলের সাহায্যে ইশারা করে বললো, ‘এটা প্রিয়তা, এটা….
প্রিয়মকে থামিয়ে দিয়ে সাদাফ বললো, ‘তোর টুনটুনি?’
বলেই একদফা হাসলো। প্রিয়ম তবুও কিছু বললো না। ঝামেলা করতে চাইছে না বিধায় চুপ করে আছে। সাদাফের কথা এড়িয়ে গিয়ে ফের বলতে শুরু করলো, ‘এটা তনিমা আর এটা সাইমা।’
সাদাফ হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিলো প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা সামান্য চমকে প্রিয়মের দিকে তাকায়। প্রিয়ম ততক্ষণে মাথা নিচু করে নিয়েছে। প্রিয়তা হাত এগোলো না। সাদাফ নিজে থেকেই বললো,
‘হেই প্রিয়..তা। আ’ম সাদাফ সায়মান।’
প্রিয়তা কিছু বললো না। লোকটা তাকে বার বার প্রিয় বলে কেন? এটা কি সেই চিঠি দেওয়া লোকটা? নাকি এমনি ডাকে! প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বাকি সবাইও পরিচয় দিয়ে দেয়। রিমা, নিতু, নোমান, সামি। সবার পরিচয় শেষে সাদাফ প্রিয়তার উদ্দেশ্যে বলে,
‘তোমাকে একটা কথা বলি?’
প্রিয়তা ঘাড় কাত করে বোঝায়, ‘হ্যা’। সাদাফ হেঁসে বলে, ‘আমি তোমাকে প্রিয় বলে ডাকলে কি তোমার কোনো সমস্যা আছে?’
এ পর্যায়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না প্রিয়ম। নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে কিছু বলতে না পেরে সামনে থাকা টেবিলে জোড়ে লা’থি দিয়ে বসে। রাগে চোখ মুখ ভয়ংকর হয়ে আছে। প্রিয়তা প্রিয়মের রাগ দেখে ভয়ে বুকে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ায়। শুধু যে প্রিয়তা তা না উপস্থিত সবাই জানে প্রিয়মের রাগ কতোটা! তাই সবাই ভয় পেয়ে যায়। শুধু সাদাফ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে। প্রিয়ম গটগট করে হেঁটে যায় প্রিয়তার সামনে। কিছু বলার আগেই জোড়ে হাত চেপে ধরে প্রিয়তার। তারপর টেনে নিয়ে ক্যান্টিনের বাহিরে চলে যায়। প্রিয়ম চলে যেতেই পিছন পিছন সাইমা আর তনিমা দৌড় দেয়। সাদাফ শব্দ করে হেঁসে দেয়। রিমা এগিয়ে এসে বলে,
‘কি সমস্যা তোর সাদাফ? তুই প্রিয়মের প্রিয় জিনিসটা কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছিস কেন? প্রিয়ম প্রিয়তাকে কতটা ভালোবাসে তা নিশ্চয় তোর অজানা নয়?’
সাদাফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। তারপর শক্ত গলায় বলে, ‘প্রিয়তা আমার মানে শুধু আমার।’
তারপর দুই পা এগিয়ে গিয়ে গান গাইতে শুরু করে, ‘তোমার কেনো জ্বলে রে বন্ধু তোমার কেনো জ্বলে!’
নিতু হতাশার শ্বাস ফেলে বলে, ‘এদের মধ্যে এমন যুদ্ধ কেন শুরু হলো!’
________________
প্রিয়ম প্রিয়তাকে নিয়ে কোথায় গেছে তা জানে না তনিমা। সাইমাকে দাড়াতে বলে ছুট লাগিয়েছে উদয়ের কাছে। কাজের সময় এই গোবরপড়া লোককে পাওয়া যায় না। উদয়কে বকতে বকতে দ্রুত আবার ক্যান্টিনের মধ্যে আসে। এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে রিমাদের কাছে জিজ্ঞেস করে,
‘উদয় ভাইকে দেখছেন আপনারা?’
নোমান ভ্রু কুঁচকে তনিমার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘আগে এটা খেয়ে শান্ত হও।’
সাথে সাথেই তনিমার এক রাম ঝাড়ি, ‘ধুর মিয়া। আপনি পড়ে আছেন শান্ত হওয়া নিয়ে? ওদিকে আপনার বন্ধু আমার বোনরে না জানি কাঁচা চিবাইয়া খাইতাছে!’
‘ওই মেয়ে ঠিক করে কথা বলো। আমরা কিন্তু তোমার সিনিয়র।’
তনিমা নিজেকে শান্ত করে নরম গলায় বলে, ‘সরি ভাইয়া। আসলে চিন্তায় রুঢ় বিহেভ করে ফেলছি। প্লিজ যদি জানেন উদয় ভাই কই আছে তাড়াতাড়ি বলে দিন। প্রিয়ম ভাইয়ের যা রাগ তাতে সে প্রিয়তার সাথে কি করবে কে জানে! মেয়েটা এমনিতেই অনেক ডিপ্রেশড এরপর উল্টা পাল্টা কিছু হলে নিজেকে সামলাতে পারবে না।’
সামি বলে, ‘আচ্ছা তুমি শান্ত হও আর আমাদের বিল্ডিং এ যাও। ওখানেই আমি উদয়কে দেখছি।’
তনিমা ‘থ্যাঙ্কস’ বলেই দৌড়। ছুট লাগিয়েছে মাস্টার্সের বিল্ডিংয়ের কাছে। ২ তালায় আসতেই দেখে সব ফাঁকা। সেখানে সিড়িতে বসে আছে উদয় আর রিনি। রিনিকে দেখে খারাপ লাগলেও তা আর পাত্তা দিলো না তনিমা। ছুটে আসে উদয়ের কাছে। উদয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তনিমা গড়গড় করে বললো,
‘প্রিয়ম ভাই রেগে প্রিয়তাকে নিয়ে কোথায় গেছে কিছু জানি না। আপনি তো জানেন প্রিয়ম ভাইয়ের রাগ কেমন! দ্রুত দেখেন প্রিয়ম ভাই কোথায়?’
প্রিয়ম রেগে প্রিয়তাকে নিয়ে গেছে শুনেই কলিজা শুকিয়ে আসে উদয়ের। কিছু না বলে তনিমার হাত ধরে নিচে আসে। পেছন থেকে রিনি অনেকবার ডাকলেও তা পাত্তা দেয় না উদয়। আসতে আসতে তনিমাকে পুরো ঘটনা বলতে বললে সে তা বলে। উদয়ের বুঝতে বাকি নেই প্রিয়ম কতোটা রেগে আছে! দ্রুত তনিমাকে নিয়ে পার্কিং এ এসে দেখে শুধু ওর বাইকটা আছে গাড়ি নেই। তনিমাকে বাইকে বসিয়ে যেখানে যেখানে যেতে পারে সব জায়গায় খুঁজে। বাড়িতেও একবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছে কোনো লাভ হয়নি।
প্রিয়ম প্রিয়তাকে নিয়ে শহর ছেড়ে অনেকটা দুর চলে এসেছে। পুরোটা সময় ভয়ে কিছু বলতে পারেনি প্রিয়তা। প্রিয়ম রাগে গাড়ির সাথে হাতে কয়েকবার আঘাত করছে। হাত কেটে রক্ত পড়তেছে তবুও প্রিয়মের কোনো হেলদুল নেই। প্রিয়তা এতক্ষণ ভয়ে চুপ থাকলেও কি করবে না করবে ভেবে আমতা আমতা করে বললো,
‘ভা-ভাইয়া আপনার হাত থেকে র-রক্ত পড়তেছে। প্লিজ কিছু দিয়ে হাতটা বেঁধে নিন।’
প্রিয়ম ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তার দিকে। ভয়ে ঢোক গিলে প্রিয়তা। প্রিয়ম ছুটে এসে নিজের সাথে চেপে ধরে তাকে। প্রিয়তা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়৷ কোনোরকমে বলে, ‘কি করছেন ভাইয়া?’
‘হাতের রক্তক্ষরণ তোর চোখে পড়তেছে আর আমার মন যে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তা কখনো বুঝার চেষ্টা করেছিস?’
বলেই ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। প্রিয়তা আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। সে কি করলো? সে তো কিছু করেনি। ভয়ে আর কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। নিজের মতো সামনে তাকাতেই দেখে তারা শহর ছেড়ে অনেকটা দুর গ্রামের দিকে চলে এসেছে। পিচঢালা রাস্তার ওপারে সবুজের সমোরোহ। প্রিয়তা ভয় ভীতি এক নিমিষেই ভুলে খানিকটা এগিয়ে যায়। মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে দৃশ্য। প্রিয়ম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তার দিকে। একবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে ফোন বের করে। আসার সময়ই ফোন অফ করে দিয়েছিলো সে। তাই অন করে নেয় প্রথমে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের পথে প্রায়। প্রিয়ম উদয়ের ফোনে কল দেয়। সাথে সাথেই রিসিভ হয়। হন্তদন্ত হয়ে উদয় জিজ্ঞেস করে,
‘প্রিয়ম প্রিয়তা কোথায়? তোরা ঠিক আছিস তো? রেগে কোথায় চলে গেলি? সব জায়গায় খুঁজে আমি হয়রান।’
প্রিয়ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘এতো চিন্তা করিস না। তোর বোন ঠিক আছে।’
‘আর তুই?’
প্রিয়তা প্রিয়মের কথা শুনে উল্টো ফিরে তাকায়। উদয়ের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়ম প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলে, ‘আমি! ঠিক আছি কি না তা ভাবার মতো কেউ নাই। বাই দ্যা ওয়ে মামনি আর আঙ্কেলকে বল চিন্তা না করতে আমরা আসতেছি। হয়তো রাত হতে পারে। অনেক দুর চলে আসছি।’
উদয় চিন্তিত স্বরে বলে, ‘ঠিক আছে। সাবধানে আয়।’
প্রিয়ম কল কেটে দেয়। প্রিয়তা প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমরা কি বাড়ি ফিরবো এখন?’
‘হুম।’
প্রিয়তা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভয়ে ভয়ে বলে, ‘আপনার হাত থেকে অনেকটা রক্ত পড়তেছে এখনো প্লিজ বেঁধে নিন না।’
প্রিয়ম আর কথা বাড়ায় না। হাতও বাঁধে না। গাড়িতে বসে পড়ে। প্রিয়তা নিজের কপাল চাপড়ে গাড়িতে উঠে। এতো জিদ কেন এই ছেলের? যে হাতে প্রিয়ম ব্যাথা পেয়েছে প্রিয়তা রাগে সেই হাত চেপে ধরে৷ প্রিয়ম অস্ফুটে স্বরে আর্তনাদ করে উঠে। মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নেয়। প্রিয়তা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘এখন আর্তনাদ করেন কেন? রাগ দেখানোর সময়, জিদ করার সময় মনে থাকে না!’
প্রিয়ম হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে প্রিয়তা শক্ত করে চেপে ধরে। তাতে আরো ব্যাথা পায় প্রিয়ম। হাতের ব্যাথায় টনটন করে উঠে৷ প্রিয়তা নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল নিয়ে সযত্নে হাত বেঁধে দেয়। প্রিয়ম কিছু বলে না। মেয়েটা যে নিজের অজান্তেই তার ওপর অধিকার খাটাচ্ছে এটা হয়তো মেয়েটা নিজেও জানে না। প্রিয়ম চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রিয়তা নিজের মতো গাল ফুলিয়ে গাড়ির বাইরে তাকায়। যেতে অনেকটা সময় লাগবে ভেবে চোখ বন্ধ করে নেয়। প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগার সাথে সাথেই কেঁপে উঠে। প্রকৃতি দেখতে দেখতে অনেকটা সময় চলে যায়। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না। সন্ধ্যা পেড়িয়ে তখন রাত। বাতাসে ঘুমের মধ্যেও প্রিয়তা কেঁপে উঠতেছে দেখে গাড়ি রাস্তার ধারে থামায়। আস্তে করে প্রিয়তার সিটবেল্ট খুলে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নেয়। আরামের জায়গা পেয়ে প্রিয়তা আরো শান্তিতে ঘুমায়। প্রিয়ম প্রশান্তির হাসি হাসে।
____________
বাড়ি পৌছাঁতে পৌঁছাতে রাত ৯ টা পার হয়ে যায়। প্রিয়তা তখনো ঘুমে। ডাকবে নাকি নিজে নিয়ে যাবে বুঝে উঠতে পারে না। প্রথমে কোলে করে নিতে চাইলেও পরে অনেককিছু ভেবে প্রিয়তাকে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। তার বুকে মাথা রেখে পুরো রাস্তা প্রিয়তা এসেছে এটা না হয় সে আর তার প্রশান্তিতে ভরে যাওয়া বুকটাই জানুক। প্রিয়তাকে আস্তে করে ডেকে তুলে। প্রিয়তা লাফিয়ে উঠে। দ্রুত বলে,
‘হ্যাঁ? চলে এসেছি?’
প্রিয়তার কথার উত্তরে প্রিয়ম শুধু মাথা নাড়ায়। তারপর গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়। প্রিয়তাও হাই তুলতে তুলতে বেড়িয়ে আসে। বাড়ির কলিংবেল বাজাতেই ছুটে এসে দরজা খুলে দেন তাঁরা বেগম। মেয়েকে সামনে দেখেই তিনি জড়িয়ে ধরেন। প্রিয়তা মুচকি হেঁসে মা’কে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়ম কোনো কথা না বলে লিভিং রুমে এসে বসে। তাহেরা বেগম কড়া কন্ঠে বলে,
‘এতো রাত পর্যন্ত মেয়েটাকে নিয়ে তুমি কোথায় ছিলে প্রিয়ম?’
প্রিয়ম নিজের মায়ের মুখের দিকে তাকায়। তাহেরা বেগমের বুক ছলাৎ করে উঠে। এ কি অবস্থা তার ছেলের? চোখে মুখে মলিনতার ছাপ, ক্লান্তির ছাপ। প্রিয়ম মাথা এলিয়ে দেয় সোফায়। প্রিয়তাও ততক্ষণে বাড়িতে ঢুকে গেছে। প্রিয়তা বসতেই সিমি এসে প্রিয়মের হাত ধরে আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,
‘এ কি! তোমার হাতে কি হয়ছে প্রিয়ম ভাই? এটা এমন লাল হয়ে আছে কেনো? দেখি!’
‘দেখি’ বলতে বলতেই হাতের বাঁধন খুলে দেয় সিমি৷ প্রিয়ম কিছু বলার সুযোগই পায় না। তনিমা প্রিয়তার পাশে বসে। তাহেরা বেগম ছেলের হাত দেখে দ্রুত তার পাশে বসে পড়ে। ব্যস্ত স্বরে বলে, ‘আব্বা তোমার হাতে কি হয়ছে? এতোটা কাটলো কি করে?’
তাঁরা বেগম এগিয়ে আসে প্রিয়মের দিকে। প্রিয়ম মুচকি হেঁসে বলে, ‘ঠিক আছি আম্মু। চিন্তা করো না।’
তাহেরা বেগমকে কিছু বলতে না দিয়েই সিমি বললো, ‘ঠিক আছো বললেই হলো? কতোটা কেটে গেছে! অনেক কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়। দাঁড়াও আমি ওষুধ লাাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।’
‘আরে দরকার নাই। ঠিক আছি বললাম তো আমি। আর তুই এখানে কেন?’
তাহেরা বেগম বললেন, ‘আমার সাথে আসছে। তোর কোনো সমস্যা?’
প্রিয়ম আর কিছু বলে না। তাঁরা বেগম দ্রুত ফাস্ট এইড বক্স এনে দেয়। সিমি তা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই ব্যাান্ডেজ করতে শুরু করলো। প্রিয়ম আর কিছু বললো না। প্রিয়তা সিমির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে, ‘দরদ দেখো! যেনো ওইটা ওর জামাই। ঢঙ দেখলে দেয়ালে মাথা ঠুকে দিতে মন চায়। যত্তসব!’
তনিমা পাশে থাকায় প্রিয়তার বিড়বিড় গুলো স্পষ্ট শুনতে পায়। ফিক করে হেঁসে দেয়। সবাই তনিমার দিকে তাকায়।
চলবে…