রাত প্রায় দুটো। নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে মাতাল হয়ে সাজিন হাঁটছে। হাঁটছে বলতে ভুল হবে। রাস্তায় দোল খেতে খেতে হাঁটছে। হাতে তার বিয়ারের বোতল। পিছন পিছন সাজিনের দুই বন্ধু সাজিনকে ডাকছে তাতে সাজিনের কোনো হুস নেই। আচমকাই একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ব্রেক করলো। সাজিন মাথায় কিছুটা ব্যাথা পেয়ে নিচে পরে গেলো……..
সাজিনের দুই বন্ধু আশিক আর তিসান দৌড়ে এসে সাজিন কে ধরলো…….
“আগেই বলেছি এইভাবে রাস্তায় মদ খেয়ে চলাচল করা ঠিক না কিন্তু কে শুনে কার কথা”
আশিক রাগে বললো তখন তিসান বললো…..
“এত কথা না বলে ওকে উঠা।”
“যে গাড়িটা অ্যাকসিডেন্ট করেছে ওই গাড়িটা তো চলে গেছে। এখন তো কোনো গাড়িই আসছে না”
“তুই ওর সাথে বস আমি দেখছি কোনো গাড়ি পাই কি-না”
আশিক কে বসিয়ে রেখে তিসান মেইন রাস্তায় দৌড়ে চলে আসলো। ও গাড়ি খুঁজছে কিন্তু কেউ যেতে রাজি হচ্ছে না……
“মেম প্লিজ আমার বন্ধুর অবস্থা খুব খারাপ প্লিজ হেল্প মী। ”
“কি হয়েছে আপনার বন্ধুর?”
“অ্যাকসিডেন্ট করেছে প্লিজ হেল্প করুন। প্লিজ মেম”
“কোথায় হয়েছে অ্যাকসিডেন্ট?”
“মেম ওই সামনের মোড়ে। মেম আপনাকে সব বলছি প্লিজ আগে চলুন”
“হুম আপনি ড্রাইভারের সাথে গিয়ে বসুন”
তিসান ড্রাইভারের সাথে গিয়ে বসলো আর কোন রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে নিয়ে যাচ্ছে…….
“আজকাল মুভিতে তো দেখি এইরকম মিথ্যা কথা বলে নিরিবিলি রাস্তায় নিয়ে যায় আর রেপ করে। আমিও কি এই ফাঁদে পা দিয়েছি? লোকটির কথা শুনে তো সত্যিই মনে হচ্ছে কিন্তু যদি নাটক করে তখন কি হবে? লোকটি তো দেখছি নিরিবিলি রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে”
মনে মনে ভাবতে লাগলো সন্ধ্যা…….
“আমার কি সত্যিই ঠিক হয়েছে লোকটির কথা শুনে এইখানে আসা। নাহ যদি এমন কিছুই হয় তাহলে আমার আলফিন আছে গুতা দিয়ে রক্ত বের করে ফেলবো”
পার্স থেকে আলপিন বের করে রাখলো সন্ধ্যা……
“ভাই থামেন এই যে ওইখানে দেখুন ”
তিনাসের কথা শুনে সন্ধ্যাও তাকালো দেখলো সত্যিই কেউ পরে আছে…..
“মামা তুমিও যাও ওনার সাথে আর সাহায্য করো ওনাদের”
“ওকে মামনি”
সন্ধ্যার ড্রাইভার, আশিক ও তিসান সাজিনকে ধরে ধরে নিয়ে আসলো আর সন্ধ্যার পাশে বসিয়ে আশিক ড্রাইভারের সাথে বসলো। তিসান সাজিনের পাশেই বসে রইলো……
।।
।।
।।
।।
হসপিটালে……..
সন্ধ্যা সাজিন আর ওর ফ্রেন্ডের হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। আশিক আর তিসান সাজিনকে নিয়ে ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্টে চলে যায়…….
“মনে হচ্ছে ওনি খুব ড্রিঙ্কস করেছে। যারফলে নিজের ব্যালান্স ধরে রাখতে পারে নাই”
ডক্টরের কথা শুনে আশিক ও তিসান মাথা নিচু করে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানায়…..
“বুঝতে পারছি। আজকাল ছেলে মেয়েগুলো দিনদিন এইসব ছাইপাশ খেয়ে নিজেদের অনেক বড় মনে করে কিন্তু তারা জানে এইটা তাদের শরীলের জন্য কতটা ক্ষতিকারক। ”
আশিক তখন বললো…..
“মেম, আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি তার জন্য আমরা লজ্জিত। প্লিজ বলুন সাজিন কেমন আছে? ভালো হয়ে যাবে তো?”
“টেনশন করার কিছু নেই। পেশেন্ট সুস্থ্য আছে জাস্ট মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে। আজ রাত হসপিটাল থেকে আগামীকাল চলে যেতে পারবে”
“থ্যাংকস মেম। ”
ডক্টর চলে যায়। আশিক ও তিসান খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আশিক তো তিসানের গালে চুমু খেয়ে ফেলে। ঠিক তখন ওইখান দিয়ে এক নার্স যায়। আশিক তিসানের এমন কাণ্ড দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তিসান তখন বলে……
“শালা। দেখ আজ তোর জন্য ওই নার্স আমাদের গেঁ ভাবলো”
“গেঁ টে বাদ দে এখন আগে ভাব সাজিনের বাসায় কি বলবি। আন্টি কতবার ফোন দিয়েছে দেখছিস?”
“ওই চল বলি আমরা একসাথে গ্রুপ স্টাডি করছি”
“শালা পড়ালেখা কবে করছি আমরা যে গ্রুপ স্টাডি করবো। তোর মনে হয় আন্টি আমাদের কথা ট্রাস্ট করবে।”
“তাও ঠিক। আমরা তো পরীক্ষার আগের রাতের স্টুডেন্ট। আন্টি তো বুঝে যাবে”
গালে হাত দিয়ে বললো আশিক……
“আইডিয়া।”
“কি?”
“শুন আমরা এখন আন্টিকে বলবো আমরা মুভি দেখছি তাই ফোন সাইলেন্ট ছিল ধরতে পারি নাই। সাজিন আজ রাতে আর বাসায় ফিরবে না”
“তখন যদি আন্টি সাজিনের সাথে কথা বলতে চায় তখন কি করবি?”
“তুই আছিস না। আমাদের নকল করার গলা। তুই তো সবার গলা নকল করতে পারিস। তুই কথা বলবি”
“ওকে দোস্ত।”
আশিক তিসান বাসায় কি বলবে প্ল্যান করতে লাগলো………
।।
।।
।।
।।
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নিয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
সন্ধ্যা চা বানাচ্ছে আর গান গাইছে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং…….
“মাম্মী মনে হয় চলে আসছে”
সন্ধ্যা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে ওর আম্মুকে দেখে বললো…..
“আজ এত দেরি হলো কেনো মাম্মী। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি”
“ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিল। তুমি এখনও ঘুমাও নি?”
“নাহ। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
“আমি খুব টায়ার্ড সন্ধ্যা। যদি পারো আমার জন্য এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসো মাথাটা খুব ধরেছে”
সন্ধ্যার আম্মু নিজের রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। সন্ধ্যা গিয়ে ওর আম্মুর জন্য কড়া করে কফি বানালো। সন্ধ্যা জানে ওর আম্মুর মাথা ব্যাথা করলে এই ধরনের কফি খায়…….
পরের দিন সকালে……..
সন্ধ্যা বেলকনির জানালা খুলে মিউজিক বাজিয়ে ড্যান্স করছে । তখন সন্ধ্যার গায়ে জানালা থেকে একটা ফুল আসে। সন্ধ্যা ফুলটা হাতে নিয়ে দেখে সূর্যমুখী ফুল। সন্ধ্যা জানে এইটা কার কাজ তাই মিউজিক অফ করে হাতে হকি স্টিক নিয়ে বাহিরে বের হলো……
“আজ একটা এপার ওপার করবো। প্রতিদিন ফুল ছুড়ে মারে ভদ্রতার বলে কি কিছু নেই। সব কি জলে ভাসিয়ে দিয়েছে নাকি, আজ ওর একদিন নাকি আমার একদিন”
সন্ধ্যা রাগে গজগজ করতে করতে যে রাস্তা দিয়ে ফুল ছুড়ে মারা হয়েছে সেই রাস্তায় যাচ্ছে……
“এইভাবে লাল টমেটো হয়ে যেও না গো মন চায় খেয়ে ফেলি”
সন্ধ্যা কথাটা শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“ওই তোর লজ্জা নাই একটুও। তোকে কতবার বলেছে এই ফুল ছুড়াছুড়ি একদম করবি না তবুও তুই কথা শুনিস না”
“দোস্ত, তুই তো জানিস তোকে ফুল ছুড়ে না মারলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। তুই কি বুঝতে পারিস না আমার কথা?”
“আজ তোকে এই হকি স্টিক দিয়ে মারবো”
কথাটা বলেই কয়েকটা বারী বাড়লো সন্ধ্যা সৌরভকে……
“এই লাগছে ছাড় বলছি”
“তাহলে বল আর করবি?”
“হুম করবো”
“তাহলে আরো মার খা তুই”
সন্ধ্যা সৌরভ কে মারছে তখন সন্ধ্যার ফোন বেজে উঠলো। সন্ধ্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো……
“তোর কপাল ভালো। আজ কম মার খাইছিস। সাজিকে ধন্যবাদ দিতে একদম ভুলবি না”
“যাক অবশেষে বউটা ফোন দিয়ে আমার প্রাণ রক্ষা করলো”
সন্ধ্যা সৌরভের কথা শুনে হাসি দিয়ে সৌরভকে আস্তে একটা চড় মেরে বললো……
“তোর সাথে আমার বোনের বিয়ে কে দিচ্ছে রে বউ বলছিস যা ভাগ এখন”
সৌরভ মুখ ভেংচি কেটে বললো…..
“তোদের দুই বোনেই আমার বউ হবি। জানিস না মাছের সাথে কাটা যেমন ফ্রী থাকে, মুরগির সাথে হাড্ডি যেমন ফ্রী থাকে ঠিক তেমন ভাবেই বউয়ের সাথে শালী ফ্রী থাকে”
সন্ধ্যা আরেকটা চড় মারতে যাবে তার আগেই সৌরভ দৌড়ে চলে গেলো……….
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আপনাদের রেসপন্স পেলে পরের পর্ব দিবো?।
আধো_আলো_ছায়া?পর্ব_১
#ফারজানা_আফরোজ❤️