আড়ালে অন্তরালে পর্ব ১৭+১৮

0
438

#আড়ালে_অন্তরালে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বঃ১৭

মায়ার মুখে অমন বি স্ফো রি ত কথা শুনে ফাহিমের বুকটায় ধ্বক করে উঠল। মায়ার দিকে তাকিয়ে তার মনের অবস্থা বুঝতে চাইল। কিন্তু মায়ার দৃষ্টি যতটা তীক্ষ্ণ, ততটা শান্ত তার মোখিক আদল। ফাহিম ভয় পেলেও প্রকাশ করল না। হাত বাড়িয়ে যেই মায়ার হাতটা ধরতে যাবে অমনি মায়া কিছুটা দূরে সরে বলল – কেন এমন করেছিলেন আমার সাথে। এসব করার জন্য বুঝি আমাকেই পেলেন। আমার জীবনটাতো এমনিতেই ন`র`ক হয়ে আছে আর আপনি তাতে ঘি ঢালতে এসেছেন?

ফাহিম অনুভব করল এতক্ষণে অন্য কেউ হলে রাগে ফেটে পড়তো সে। সূর্যের মত রাগে জ্বা লি য়ে দিত সব। সে অনুভব করছে তার বিন্দুমাত্র রাগ হচ্ছে না বরং এই পুতুলটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। সব বলে দিয়ে পুতুলটার কাছে স্বচ্ছ হতে চাইছে সে।

বন্ধ চোখজোড়া খুলতেই দেখলো ঐ মায়াবী চোখের কোল বেয়ে দরদরিয়ে অশ্রুরা নেমে আসছে যেমনটা ঝর্ণার পানি নদীতে মিশে যায় পাহাড়ের কোল গলিয়ে।
ফাহিম ভাবতেও পারেনি সে এভাবে ধরা পড়ে যাবে মায়ার কাছে। তার যে এখনো অনেক কাজ বাকি।
আচমকা মায়াকে বুকে টেনে এক হাত দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে তার মুখখানা উপরে তুলে বলল – এসব ফালতু কথা কে বলে তোমায়?

মায়া নিজেক ছাড়িয়ে নিতে চাইছে খুব। হঠাৎ তার চেহারায় পরিবর্তন দেখে ফাহিমের বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটতে চলেছে।
মায়ার দিকে অসহায়, করুণ চাহনি দিয়ে ফাহিম আবার বলল – বলো তোমায় এসব উল্টো পাল্টা কে বলেছে?
মায়া নিজেকে শান্ত রেখে বলল – মানুষ এত কনফিডেন্স নিয়ে মিথ্যা বলতে পারে?
মায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল ফাহিমের ঐ আদুরে ঠোঁটজোড়া। আচমকা অমন কাজে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যেয়েও হারায়নি মায়া। মাদকতায় ভরা ফাহিমের ঐ চোখজোড়া দেখে মায়াও নিজের শক্তি হারাচ্ছে যেন। ফাহিম তাকে ছেড়ে দিল হঠাৎ। ভূমির পানে দৃষ্টি রেখে বলল – আমি তোমায় ভালবাসি এটা সত্যি, আমি ফাহিম এটাও সত্যি। তুমি ভুল জেনেছো। এখন তুমি বলো তোমায় এসব কে বলেছে?

মায়া খেয়াল করছে ফাহিমের কন্ঠস্বরের নিরুত্তাপ ভঙ্গির বদলে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছে গম্ভীর ভাবটা। ফোনটার কথা চেপে গিয়ে সেও মিথ্যে বলল – আমি কেউ একজনকে বলতে শুনেছি।
ফাহিমের চোখজোড়া চকচক করে উঠলো। সে মনে মনে বলল – তুমি জানোও না তুমি আমার কত উপকার করলে।
কন্ঠে কোমলতা এনে বলল – কে বলেছে? কি বলেছে?
মায়ার মনে পড়ল পরের মেসেজটার কথা, যেটা ও সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় এসেছিল। মেসেজটা পড়ে তার পা যেন থেমে গিয়েছিল। দুনিয়াটা যেন চরকির মত ঘুরপাক খাচ্ছিল তার। দু’বার পড়ল মেসেজটা, পড়েই বুঝতে পারল ফাহিম তার পরিচয় গোপন করেছে। মেসেজটা আবার মনে করল মায়া।
লেখা ছিল – আপনার ভাগ বুঝে নেয়ার আগে ওর বউ মায়াকে আমার চাই। ঐ মেয়ের জন্য এখনো প্রতিরাতে অপেক্ষা করি। মায়াকে ঐ মুরাদ বুকে নিয়ে ঘুমায় আর আমি তার বুক গুড়িয়ে দিমু। ওর সামনেই ওর বউয়ের সাথে কত আনন্দ করব। আর আপনি পাইবেন তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা।

মেসেজের প্রতিটা কথা না বলে মায়া সাজিয়ে বলল নিজের মত। সে বলল – আমি কোন এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি এটা বলতে যে মুরাদের বউ মায়াকে সে কারো হাতে তুলে দিবে। আরো কি বলল তা শুনতে পাইনি।

ফাহিম চোখ বন্ধ করে বলল – তোমায় আমি বিশ্বাস করি মায়া। মনে রেখ স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে আমার করে পাটিয়েছে। অন্য কেউ তোমার দিকে হাত বাড়ালে তা গুঁ’ড়ি’য়ে দেয়ার মত ক্ষমতা ঐ সৃষ্টিকর্তা আমায় দিয়েছেন। এখন এটা বলো কাকে বলতে শুনেছ?
মায়ার উত্তর যেন প্রস্তুত করা ছিল। চট করে সে বলল – আমি তার পিছনটা দেখতে পেয়েছি।

ফাহিম মনে মনে বলল – বেঈমানটা কি তাহলে এখানেই আছে? সে কি আমার কোন আপনজন?

হঠাৎ মায়া বলল – বন্ধুবেশে শত্রু সেজে পিছনে আঘাত করা বন্ধুকেও চেনা যায় কিন্তু মুখোশে ঢেকে নিজেকে আপনজনের রূপ দিলে তাকে চেনা বড় দায় মিস্টার বহুরূপী। এখন বলুন আপনার প্রকৃত নাম কি?
ফাহিম নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে বলল – আমি ফাহিম, তোমার বর। তোমার জীবনসঙ্গী। তোমায় একটা গল্প বলি মায়া।
ফাহিমের জোর প্রচেষ্টা এই মেয়েটার কাছে নিজেকে মেলে ধরা। এই এক রত্তি মেয়েটাকে ছাড়া সে এখন নিঃশ্বাসও নিতে পারেনা।
নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে এক এক করে। মায়াও মুগ্ধ শ্রোতার মত প্রতিটি হরফ শুনেছে।
ফাহিম এগিয়ে এসে মায়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল – আমায় ছেড়ে কখনো যেওনা মায়া। আমায় অবিশ্বাস করো না। সারা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমাকে ছেড়ে যেওনা। একটুই আকুতি করছি মায়া। আমি কাউকে আঁকড়ে বাঁ চ তে চাই। আমার বোনটা একটু আদর পেতে চায় মায়া। আমার বাবা চায় কেউ একজন তাকে মায়ের মত করে আগলে রাখুক। মায়া, আমি প্রতিশোধপরায়ণ নয় আমি শুধু প্রতিবাদ করছি। ও মায়া, আমার ছোট্ট বোনটার দোষ ছিলো না। মায়া, তার খু নিকে আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিতে দিবনা। এখন বলো আমি অপরাধ করছি? ঐ সাদমান, জামশেদ আর তামান্না রহমানকে আমি কি করে শান্তি দেই যখন তারা আমাদের শান্তি কেঁড়ে নিয়েছে, আমার বোনকে কেঁড়ে নিয়েছে?
সাদমানের নাম শুনে থমকে গিয়েছিল মায়া। নিজেকে সামলে সে বলল – আমার ভয় হচ্ছে, খুব ভয় হচ্ছে।
ফাহিম তাকে বুকে আগলে বলল – আমি আছিনা পাগলি। আগলে রাখব এভাবে।

____

সাদমানকে ছেড়ে দিয়েছিলো মুরাদ, বাকিদেরও ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাদমানের প্রতিশোধ স্পৃহা গভীরতর হয়ে উঠলো। বিশ্রী এক পরিকল্পনা করে নিল জামশেদের সাথে।
হাসতে হাসতে বলল – লা শ নিয়ে তো বেশ দাঙ্গা করাই যায়, কি বলো?

খানিকক্ষণ বাদেই টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, সমাজকর্মী এবং স্হানীয় নেতা সাদমান আশরাফকে নৃ শং সভাবে খুন করেছে মুরাদ নামে র হ স্য ময়ী এক যুবক। জানা যায় চাঁ দা দাবি করে সাদমানকে বারবার হু ম কি দিয়ে আসছে ঐ যুবক। সে শুধু খু ন করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং লা শ টাকে গায়েব করে দিয়েছে। এই প্রতিবাদে দলের কর্মীরা রাস্তা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদের দাবি মুরাদ নামের ঐ যুবককে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হোক। গোপন তথ্যমতে জানা যায় মুরাদ নামের ঐ যুবকের নিজস্ব গ্যাং রয়েছে যাদের দিয়ে সে স্হানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাঁদাবাজি চালায়। তথ্যমতে সে একজন সিরিয়াল কি লা রও। এই পর্যন্ত সে শাফায়াত, সেলিম নামের আরো দুই রা জ নৈ তিক কর্মীকে খু ন করে তাদের নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া সে আরো খু ন করেছে বলে জানা যায়। ছদ্মনামে ঘুরে বেড়ানো এই যুবকের প্রকৃত নাম তানভীর মির্জা বলে জানা গিয়েছে। মুখোশের আড়ালে থাকা যুবকের ছবি ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে পৌঁছে গিয়েছে।

হো হো করে হেসে ওঠে সাদমান এবং জামশেদ। সাদমান বলে – আমার সাথে খেলার সুফল।
জামশেদও তাল মিলিয়ে বলে – আজ পার্টি হোক।

এদিকে খবরটা দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো রিহান। তড়িঘড়ি করে কল লাগালো মুরাদের নাম্বারে।

চলবে……

#আড়ালে_অন্তরালে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বঃ১৮

কলটা রিসিভ করে ফোনটা কানে লাগাতেই রিহানের অস্হির কন্ঠটা শুনতে পেল মুরাদ। তার হাসফাঁ স করার কারণ জানতে চেয়ে মুরাদ বলল – কি হয়েছে রিহান?
মুরাদকে কথাটা কিভাবে জানাবে, কোথা থেকে শুরু করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আচমকা ঝড়ের মত বিপদের আগমনটা ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে তা ভেবে রিহানের স্বর রুদ্ধ হচ্ছে। মুরাদ এবার রসিকতার ছলে বলল – তুমি আজকাল কি বেশি বেশি মুভি দেখছো নাকি? কথা বলার মাঝে এত ব্রেক কষলে হয়?
রিহান মনে মনে ভাবছে খবরটা শুনলে মুরাদের কি অবস্থা হবে?
এবার সে আর ভণিতা করল না। ভূমিকা ছাড়াই রিহান বলল – বস, আপনার নামে টেলিভিশনে সংবাদ হচ্ছে। আপনার বিরুদ্ধে খু ন, লা-শ গুম এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আপনার সকল তথ্য পুলিশের কাছে কেউ পৌঁছে দিছে ইভেন আপনার ছবিও। যেকোন সময় এরেস্ট ওয়ারেন্ট আসতে পারে।

আচমকা এমন খবরে নির্বাক মুরাদ। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যে। মুরাদ ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তার প্রতিপক্ষ এত ঘৃণ্য খেলায় নামতে পারে। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে কলটা ডিসকানেক্ট করে ভাবতে লাগলো তার পরিচয় কে পুলিশকে দিল, তার ছবি পুলিশের হাতে কিভাবে গেল। সেতো সর্বক্ষণ মুখোশের আড়ালেই ছিল।
বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মায়া জিজ্ঞেস করলো – কোথাও যাচ্ছেন?
মায়া খেয়াল করলো তার স্বামীর ঐ চাঁদমুখে কালো মেঘেরা ভিড় করেছে।
মুরাদ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল – বলোনা মায়া তুমি কার কাছে শুনেছ, কাকে ফোনে কথা বলতে শুনেছ?
মায়া ভাবছে সে কি ফোনের কথা বলে দিবে? মায়ার চুপ করে থাকাটা সহ্য হলোনা মুরাদের। আবার জিজ্ঞেস করলো – ও মায়া, বলোনা। তাহলে আমি সেজ জ্যেঠার সাথে আলোচনা করতাম।

মায়া অনেকটা জোর দিয়ে বলল – কাউকে কিছু বলবেন না। আপনি এটা কারো সাথেই আলোচনা করবেন না।
মুরাদ ভ্রু কুঁচকে বলল – মায়া তুমি জানোনা জ্যেঠা আমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, আমি তার শুভাশিষ। তিনিই আমাকে সমাধান দিতে পারেন।
কথাটা বলেই মুরাদ ছুটে গেল, মায়া পিছু ডাকল কিন্তু মুরাদ থামলো না।

মায়া নিজেকে বলল – এজন্যই ফোনের কথাটা বলতে সাহস পাইনি, আপনি আমাকেই অবিশ্বাস করতেন আমি জানি। এতটুকু আপনাকে চিনেছি। কেন বুঝতে পারছেন না এখন কাউকেই বিশ্বাস করা উচিত না।

খানিক বাদে ফিরে এল মুরাদ। অস্হির পায়চারি করছে সে। ইমতিয়াজের কথা মনে পড়ল। ফোনটা হাতে নিয়ে লিস্ট থেকে তার নামে টাচ করতেই দেখলো কলিং হচ্ছে। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো না। এবার নিজেকে শান্ত করে মায়ার পাশে বসে বলল – জ্যেঠাকে পাইনি। ঘরে নেই উনি।
মায়া সাহস সঞ্চার করে বলল – কি হয়েছে আমাকে কি বলা যাবে?
মায়ার দিকে তাকিয়ে মুরাদ বলল – আমায় ছাড়া বাঁচতে পারবে না মায়া? আমি না থাকলে তুমিও কি এ বাড়ি ছাড়বে?
মায়া কিছু বলল না কিন্তু ফের প্রশ্ন করল – কি হয়েছে?
মুরাদ এগিয়ে এসে মায়াকে বুকে জড়িয়ে বলল – তোমায় ছাড়া কি করে থাকব? তোমায় ছাড়া যে ওপারেও ভালো থাকব না।
মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে বলল – আপনাকে একটা জিনিস দেয়ার আছে। এক মিনিট।
মুরাদ চেয়ে রইল মায়ার গতিপানে। মেয়েটা ছুটে গিয়ে আলমারির নিচ থেকে কিছু একটা বের করে এনে মুরাদের হাতে দিল। ছোট্ট বাটন ফোনটা এপিঠ ওপিঠ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল – কি এটা?

মায়া বলল – অন করে দেখেন?
ফোনটা আনলক করতে করতে মুরাদ বলল – কার ফোন?
মায়া বলল – জানিনা, পেয়েছি। আপনি মেসেজ আর কল লগটা দেখেন।
মুরাদ মেসেজ অপশনের ইনবক্স ওপেন করতেই বিস্ফোরিত চোখে দেখতে থাকল মেসেজগুলো। মেসেজের সেন্ড অপশনে কিছু পেলোনা সে। ফোনটা কার তাও বুঝতে পারলো না। তার একটাই চিন্তা হচ্ছে তাকে মোটামুটি বিভিন্ন অভিযোগে ফাঁ-সি-য়ে দেয়া হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে সে গ্রেফতার হতে পারে।
মায়ার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি রেখে বলল – আমার অপেক্ষায় থেকো মায়া। আমি ফিরব। কিছুদিন বাদেই ফিরব। আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার কোন অপরাধও নেই। তাই আমাকে কেউ আ ট কে রাখতেও পারবে না। কিন্তু তোমায় নিয়ে আমার যত ভয়। তোমায় আমি কার কাছে রেখে যাব। বিশ্বাসঘাতকের ধর্মই হলো দূর্বলতায় আঘাত করা। মায়া তুমি আমার সেই দূর্বলতা যার দিকে কেউ তাকালেও আমি কা বু হয়ে যাই।
নিজের পরিকল্পনার ছক একে একে সাজিয়ে নিল মুরাদ। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। বাদ বাকি কাজটায় রিহান আর ইমতিয়াজকে দায়িত্ব দিয়ে যাবে। মুহূর্তে মন পড়ল প্রশ্ন যদি আসে বিশ্বাসের তাহলে ফোনটা দেখার পর সকল ভরসাই শুন্য।
হঠাৎ মনে হানা দিলো – যদি সব প্রমাণের পরেও ক্ষমতার জোরে তাকে আ ট কে রাখা হয়? আজ তার প্রয়োজনে কেউ নেই তার পাশে। বোনের খু নি কে শাস্তি দেয়া হলোনা।

____

দরজায় কারো খটখট শব্দ শুনে দরজা খুলে রায়হান বলল – কি রে আবার এলি যে? বাবা এখনো আসেনি তো।

তানভীর ভেতরে গেল। বলল – তোর সাথে কথা আছে রায়হান ভাই।
রায়হান তানভীরকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। বসতে দিয়ে বলল – এবার বল, কি বলবি।
তানভীর বসল। মুখে হাসি টেনে বলল – সত্যি করে একটা কথা বলবি?
রায়হান ইতস্ততভাবে বলল – হেয়ালি করিস না বল।
তানভীর ছোট্ট একটা বাটন সেট বের করে তার সামনে ধরল। ছোট্ট করে বলল – এটা কার ফোন, রায়হান ভাই?
ফোনটা পরখ করে রায়হান বলল – কোন জাদুঘর থেকে এনেছিস? বাবা ছাড়াতো এ ফোন কেউ চালায় না। বুড়োটা এখনো সেকেলে রয়ে গেছে আর ছোট ছেলেটাকে বানিয়েছে ল ম্প ট।
ধনুকে মধু মাখিয়ে তীর ছুড়লেও তা যেমন বিদ্ধ করে বুকটায় ঠিক তেমনি রায়হানের কথাটাও তানভীরকে বিদ্ধ করল।
কথা না বাড়িয়ে তানভীর বলল – একটা উপকার করবি রায়হান ভাই?
রায়হান বলল – আমারও একটা উপকার করতে হবে।
তানভীর বলল – সময় হলে তোর উপকার করব।
রায়হান হেসে বলল – আরে বল বল। কি করতে হবে।
তানভীর চোখজোড়া বন্ধ করে বলল – আমি যদি না ফিরি আমার মায়াকে তোর বাবার হাত থেকে বাঁচাস। সিরাজ উদ দৌলার পতনে মীর জাফর ছিল ইংরেজের সহযোগী আর আমার যুদ্ধে তোর বাবা আমার প্রতিপক্ষ।
রায়হানের ভাবান্তর হলো না। নীরবে চাপা নিশ্বাসটা ফেলে সে বলল – টিভিতে নিউজটা দেখেছি আমি। পরবর্তী আপডেট অনুসারে তোর নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। খুব সম্ভবত তোর ঠিকানা অনুযায়ী আজ রাতেই তোকে তুলে নিবে, বাবাকে কারো সাথে বলতে শুনেছি। তুই আত্মসমর্পণ করে নিস।
তানভীর হেসে বলল – বীর কখনো মাথা নত করেনা, আমি ফিরব আমি জানি। আমাকে কেউ আড়ালে থেকে সাহায্য করছে। এই দেখ।
নিজের ফোনের মেসেজটা রায়হানকে দেখিয়ে বলল।
রায়হান চমকে উঠে বলল – আরিব্বাস, তোর কাছে তো পুরা প্রাণভোমরা রে। কে সে? কে এই শুভাকাঙ্ক্ষী?
তানভীর হেসে বলল – নিরুপমা। লেডি গোয়েন্দা। শখের বশে কাজ করে। সাদমানের ডান হাত ছিল।
রায়হান বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছাল। তানভীর হো হো করে হেসে বলল – সাদমানের ঠিকানাটাই পেয়ে গেছি, বর্তমানে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। সে জানেও না সে যমের দুয়ারে আসছে। আর তোর বাবা আজ আর আসবে না। নিরুপমা জানিয়েছে – জ্যেঠু তার জিম্মায় আছে।

চলবে…….

টাইপোগ্রাফি: রত্নাপা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here