#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৫
_________________
বরের গাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়ে গাড়ির ভিতর আরোহীকে দেখে থমকে গেল আকিব। বুক ধড়ফড় করে উঠলো নিমিষেই। আকিব ভূত দেখার মতো চমকে উঠে ঠাস করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলো যা দেখে অয়ন বললো,
‘ কি হলো আকিব ভয় পেলে নাকি?’
আকিব শুঁকনো হাসলো তারপর অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভাই ও এখানে কি করছে?’
উত্তরে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো অপর্ব,
‘ কে কি করছে?’
‘ আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না ভাই?’
অপূর্ব হাসে। বলে,
‘ দেখো আকিব বিয়ে বাড়ি যাচ্ছো আরোহী না গেলে তোমার ভালো লাগবে বলো। অহনার সাথে আমার যোগাযোগ নেই না হলে ওকেও আনতাম। যতই হোক আমার পরে তোমাদেরই তো লাইন।’
অপূর্বের কথা শুনে কাশি উঠে গেল অয়নের। কাশতে কাশতেই বললো সে,
‘ লাইন ঠিক আছে তাই বলে তোমার বিয়েতে আনবো ভাগ্যিস তোমার সাথে অহনার যোগাযোগ নেই না হলে বাঁশ তো তুমি দিতা।’
এর মাঝে অপূর্বের বাবা বললো,
‘ কোন বাঁশের কথা হচ্ছে শুনি?’
চমকে উঠলো অয়ন। বললো,
‘ না কিছু না তোমরা গিয়ে ওই গাড়িতে বসো বাবা।’
অপূর্বের বাবা শুনলেন। অতঃপর গাড়ি নিয়ে ছুটলো তারা প্রিয়তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। টোটাল তিনটে গাড়ি যাচ্ছে এখান থেকে। খুব সাদামাটাভাবে সাজানো হয়েছে বরের গাড়ি। যাতে বোঝা না যায় তারা আসলে বিয়ে বাড়ি যাচ্ছে যতই হোক অপূর্ব কোনোভাবেই রিস্ক নিতে চায় না।’
আকিব গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ওর পাশে বসে আছে আরোহী। মিটিমিটি হাসছে সে। ফাইনালি মনে হয় তার আর আকিবের বিয়েটা হবে শীঘ্রই। বিয়েটা হয়ে গেলেই এই ভীতু আকিবকে একদম সাহসী আকিব বানিয়ে দিবে আরোহী এই ছেলেটা একটু বেশি ভিতু। আরোহী স্বল্প স্বরে বললো,
‘ শোনো?’
সঙ্গে সঙ্গে থমকে গিয়ে থরথর কন্ঠে বললো আকিব,
‘ একদম শোনা শুনি করবে না চুপচাপ বসে থাকো গাড়িতে অপূর্ব ভাই আছে।’
আরোহী বুঝেছে আকিব কাঁপছে তাই আর কথা না বারিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। যতই হোক গাড়ি চালাচ্ছে এই কাঁপাকাঁপির ঠ্যালায় কিছু করে বসলে তখন।’
আরোহী জানালার ধারে চুপচাপ বসে রইলো। আকাশে মেঘ করেছে, প্রকৃতি গেছে থমকে, গাছের পাতাগুলো নড়েচড়ে উঠছে খুব, পিচঢালা সরু রাস্তাগুলোকে আরোও বেশি মায়াবী লাগছে আজ। অপূর্ব প্রকৃতির রঙ দেখলো খানিকটা শীতল কন্ঠে বললো,
‘ আজও কি তবে বৃষ্টি নামবে?’
____
দুপুর দুটোর কাছাকাছি। আয়নার সামনে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বধূবেসে বসে আছে প্রিয়তা। বুকের ভিতর এক অদ্ভুত অনুভূতি সাথে অস্থিরতা কাজ করছে তার। বুবুটার জন্য মনটা বড়ই কাঁদছে প্রিয়তার। ঢাকার বুকে সকালের দিকে বৃষ্টির রেখা থাকলেও খুলনার বুকে আজ রোদ জমেছে। যদিও রোদের তীব্রতা অল্প তবে সুন্দর। প্রিয়তা আকাশ পানে তারপর স্বল্প আনন্দের সঙ্গে বললো,
‘ এবার তবে আমাদের সত্যি সত্যিই সংসারটা হবে অপূর্ব।’
হঠাৎই গাড়ির হন বাঝার আওয়াজ আসলো প্রিয়তা বুঝেছে অপূর্বরা এসে পড়েছে। প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো, জানালা দিয়ে এক ঝলক তাকিয়ে দেখলো অপূর্বদের গাড়ি। আজ অপূর্ব নীল রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়েছে,হাতে ঘড়ি, চুলগুলো বরাবরের মতই সুন্দর মতো গোছালো। প্রিয়তা এক পলক অপূর্বকে দেখেই চোখ সরিয়ে ফেললো। যদি অপূর্ব দেখে ফেলে তাকে। প্রিয়তা বুকে হাত বেঁধে জোরে নিশ্বাস ফেললো। এরই মাঝে তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো প্রিয়তা দেখলো অপূর্ব মেসেজ দিয়েছে লিখেছে,
‘ ওভাবে উঁকি ঝুঁকি মেরো না মেয়ে, তোমার বধূরূপের মায়াবী সাজ দেখে আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাবো।’
প্রিয়তা হাসলো বুকের ভিতর কেমন একটা করে উঠলো। এই অপূর্বকে একটুও ফাঁকি দেওয়া যায় না সেই দেখেই ফেললো তাকে।’
প্রিয়তার দরজায় নক পড়লো। সে বুঝেছে তাকে নিতেই কেউ এসেছে। প্রিয়তা হেঁটে গিয়ে দরজা খুললো, দরজা খুলতেই সামনে প্রেমাকে দেখে চোখ মুখে এক অবাকের ছোঁয়া ঘিরে ধরলো প্রিয়তাকে। মুখ থেকে অটোমেটিক বের হলো তার,
‘ বুবু তুই?’
উত্তরে হাল্কা হেঁসে বললো প্রেমা,
‘ হুম আমি বোনটার বিয়ে আর আমি আসবো না।’
প্রিয়তা দৌড়ে গিয়ে বুবুকে জড়িয়ে ধরলো। বললো,
‘ আমি খুব খুশি হয়েছি বুবু।’
‘ জানি তো আমি আসলে তুই খুশি হবি তাই তো অপূর্ব আমায় নিয়ে এলো।’
‘ তুই কি একেবারে এসে পড়েছিস?’
‘ না শুধু আজকের জন্য আসলাম। তবে তুই চিন্তা করিস না কেসটা কোটে উঠলে হয়তো পাঁচ দশ বছরের জেল খেটে ঠিক ফিরে আসবো।’
প্রিয়তা তার বুবুর মুখের দিকে তাকালো পাঁচ দশ বছর যেন পাঁচ ছয়দিনের ব্যাপার। প্রিয়তার চাহনি দেখে হাল্কা হাসলো প্রেমা। বললো,
‘ আরে বেশি চাপ নিস না আমি ভালো আছি। আর অপূর্ব বলেছে কোটের রায় বের হলে সাজা কমিয়ে ঠিক দ্রুত আমায় নিয়ে আসবে। তবে আজ তোকে একটা কথা দিতে হবে,
প্রেমার কথা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো,
‘ কি?’
‘ তুই কি জানিস তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস?’
প্রিয়তা যেন আরো অবাক হলো পরক্ষণেই খুশি হয়ে বললো,
‘ সত্যি,
‘ হুম তবে শুনে রাখ জন্মের পর আমি যতদিন না জেল থেকে ফিরে আসছি ততদিন তার দায় দায়িত্ব সব কিন্তু তোদেরই নিতে হবে।’
বোনটা কত নিষ্ঠুরভাবে কথাগুলো বলছে তার কি কষ্ট হচ্ছে না। প্রিয়তা আবার জড়িয়ে ধরে প্রেমাকে বলে,
‘ তুই এত সহজভাবে সবটা মেনে নিচ্ছিস কিভাবে বুবু?’
প্রিয়তার কথা শুনে শুধু হাল্কা হেঁসে বলে প্রেমা,
‘ পাগলী বোন আমার।’
বিয়ের আসরে বসে আছে অপূর্ব। কেমন কেমন লাগছে তার শেষ পর্যন্ত সবটা ঠিকঠাকভাবে হবে তো। কিছুক্ষনের মাঝেই কাজী আসলো, সাথে মেয়েকেও নিয়ে আসা হলো।’
অপূর্ব একঝলক দেখলো প্রিয়তাকে যদিও মাথায় বিশাল ঘোমটা দেওয়ার কারণে তার মুখটা ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। তাও অপূর্ব মুচকি হাসলো।’
অতঃপর কবুল বলার মাধ্যমে প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। তেমন কোনো ঝাঁক ঝমক ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেল অপূর্ব আর প্রিয়তার। অপূর্ব মনে মনে বললো,
‘ এবার তাহলে সত্যি সত্যিই তুমি পুরোপুরি আমার হলে প্রিয়তা।’
.
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে সবাই প্রিয়তাকে বিদায় দেওয়া হবে এখন প্রিয়তার চাচাসহ বাড়ির আশেপাশের অল্প কিছু লোকজন ছিল বিয়েতেও তারাই ছিল। প্রিয়তা তার বুবুকে ধরে কাঁদছে আর প্রেমা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।’
অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে এদের থেকে খানিকটা দূরে। কারন তার ফোনে একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা তানভীর পাঠিয়েছে যার জন্য একটু সাইডে যেতে হয়েছে অপূর্বকে। অপূর্ব মেসেজটা দেখবে এরই মাঝে তার ফোনটা বেজে উঠল আননোন নাম্বার থেকে কলটা এসেছে। অপূর্ব কলটা ধরলো ফোন তুললেই অপরপাশ থেকে বলে উঠল কেউ,
‘ কনগ্রেচুলেশন অপূর্ব ভাই। আপনার বিবাহিত জীবন খুব সুখে না খুব দুঃখের হোক।’
অপূর্ব যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। বললো,
‘ আহিল তুই?’
আহিল হাসে। বলে,
‘ হুস আহিল নই আমি আব্রাহাম। আহিলকে তো সেই কবেই মেরে দিয়েছিস আমি হলাম আব্রাহাম।’
‘ তুই কোথায় আছিস?’
আব্রাহাম হাসে। বলে,
‘ তুই কি ভেবেছিলি আমাকে সারাজীবন ওই কারাগারে বন্দী করে রাখবি আব্রাহামকে বন্দী করা এত সহজ নাকি। বাই দা বে তুই তো বিয়ে করেছিস তা নিজের বউকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবি তো।’
অপূর্ব হতভম্ব হয়ে তক্ষৎনাত পিছন ঘুরে তাকালো না প্রিয়তা তার সামনেই আছে। অপূর্বের হতভম্বটা যেন বুঝলো আব্রাহাম। বললো,
‘ কি রে ভয় পেয়ে গেলি নাকি?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। জোরে নিশ্বাস ফেলে বলে,
‘ এমন কেন করছিস?’
আব্রাহাম হাসে। বলে,
‘ তুই জানিস না আমি এমনটা কেন করছি?’
‘ আমি রুহিকে মারি নি আহিল।’
‘ তাহলে কে মেরেছে তার নামটা বল?’
অপূর্ব চুপ হয়ে যায়। দুজনের মধ্যে নীরবতা চলে কিছুক্ষনের। এরই মাঝে অপূর্বের ডাক পড়ে এক্ষুনি প্রিয়তাকে নিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। অপূর্বের ডাকটা আব্রাহাম শুনলো হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ তোকে ডাকছে অপূর্ব দ্রুত যা না হলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করে যাবি। তোর হাতে সময় কিন্তু খুব কম।’
অপূর্বের খটকা লাগলো আব্রাহামের কথায় সে পিছন ঘুরে আশপাশে তাকালো তাদের থেকে এক বাড়ি ছেড়ে দ্বিতীয় বাড়ির বেলকনির ধারে গুলি হাতে কেউ আছে। অপূর্বের মোবাইল হাতেই দৌড়ে যেতে লাগলো এরই মাঝে আব্রাহাম বলতে লাগলো,
‘ থ্রি, টু,
আব্রাহামের কথায় অপূর্ব হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ এ্যা না….
কিন্তু আব্রাহাম শুনলো না দূর থেকে গুলির তাক করা হলো গুলিটা আব্রাহামের ওয়ান বলার সঙ্গে সঙ্গে ছুটলো প্রিয়তার দিকে। অপূর্ব দৌড়ে যেতে লাগলো প্রিয়তা বলে চিৎকার দিলো দ্রুত। কিন্তু! কিন্তু তার আগেই সব শেষ। কারন গুলিটা পুরো লেগেছে প্রিয়তার বুক বরাবর। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশ গেল থমকে আশেপাশের সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। প্রিয়তা লুটিয়ে পড়লো নিচে। তবে দৃষ্টি তার অপূর্বের দৌড়ে আসার দিকে। হুট করে কি হলো সবটাই যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেল।’
অপূর্ব দৌড়ে গিয়ে প্রিয়তার মাথাটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
‘ তোমার কিছু হবে না?’
উত্তরে শুধু আর্তনাদ ভরা কন্ঠে এতটুকুই বলে প্রিয়তা,
‘ আমাদের বোধহয় আর সংসার করা হলো না অপূর্ব?’
বলতে বলতে অপূর্বের বুকের চোখ বুঝে ফেললো প্রিয়তা। আর অপূর্ব হতভম্ব হয়ে প্রিয়তাকে কোলে তুলে আকিবকে বললো,
‘ আকিব গাড়ি স্ট্যার্ট দেও না তোমায় কিছু করতে হবে না যা করার আমি একাই করবো।’
বলেই দ্রুত প্রিয়তাকে নিয়ে ছুটলো অপূর্ব। বাকি সবাই যেতে চাইলেও অপূর্ব কাউকে সঙ্গে নিলো না।’
অপূর্ব গাড়ি ছোটার কতক্ষণের মাঝেই একে একে সবাই ছুটলো অপূর্বের পিছু পিছু।’
আর অন্যদিকে,
ঢাকার উঁচু এক বিল্ডিং এর ছাঁদে দাঁড়িয়ে প্রশান্তির হাসি হাসলো আব্রাহাম। সাথে বললো,
‘ এবার বুঝবি অপূর্ব প্রিয়জন হারানোর ক্ষতটা ঠিক কতটুকু!’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে এতটা লেট হওয়ার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। অনেক অপেক্ষা করাচ্ছি তোমাদের। এই উপন্যাসে আর এক পার্ট আছে হয়তো তারপর আর অপেক্ষা করাবো না।☹️☹️]
#TanjiL_Mim♥️