#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৪
_________________
‘ বলছিলাম কি ভাই বিয়েটা তো এখনো হয় নি। তুই যদি এখনই ভাবির এত কাছাকাছি থাকিস লোকজন দেখলে কি ভাব্বে বল তো।’
অয়নের কথায় চমকে উঠলো প্রিয়তা। অপূর্বকে ছাড়তে চাইলো তক্ষৎনাত তবে অপূর্ব প্রিয়তার হাত ছাড়লো না। উল্টো অয়নের দিয়ে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
‘ তুই এখানে কি করছিস?’
অয়ন অপূর্বের কথা শুনে হতাশ হলো সে ভেবেছিল তার হুট করে বলা কথায় হয়তো তার ভাই খানিকটা লজ্জা পাবে কিন্তু তা আর পেল কই। অয়ন হতাশার সুর টেনে বললো,
‘ ভাই, আমি তোর ছোট ভাই হই একটু তো লজ্জা করা উচিত ছিল।’
অয়নের কথায় প্রিয়তা লাল, নীল, বেগুনি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অপূর্বের কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। অপূর্ব অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ বাজে না বকে কি জন্যে ছাঁদে এসেছিস সেটা বল?’
অয়ন জোরে এক নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর বললো,
‘ বাবা ডাকছে ভাই বাড়ি যাবি না।’
উত্তরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো অপূর্ব,
‘ তুই যা আমি আসছি।’
‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস।’
বলেই চলে গেল অয়ন।’
অয়ন যেতেই প্রিয়তাকে ছাড়লো অপূর্ব। প্রিয়তাও ছিটকেও দু’কদম দূরে সরে গেল। তারপর বললো,
‘ আগে ছাড়লেন না কেন? আপনার ভাই কি ভাবলো বলুন তো?’
‘ যা ভাবার ওকে ভাবতে দেও তাছাড়া আমি যদি তখন তোমায় ছাড়তাম তাহলে ও ভাবতো আমি ঘাবড়ে গেছি আর বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইয়ের সামনে ঘাবড়ে যাওয়াটা কেমন দেখায় বুঝো না।’
প্রিয়তা কিছু বলে না চুপ করে রয়। এ লোক বড্ড পাগল। অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ তুুমি ঢাকা যাবে না?’
‘ হুম যাবো।’
‘ তবে আমাদের সাথেই চলো,
‘ না আজ যাবো না কাল বা পরশু যাবো।’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব আর জোর করে নি। শুধু বলে,
‘ ঠিক আছে।’
অপূর্ব চলে যেতে নেয়। অপূর্বের যাওয়ার পানে প্রিয়তা তাকিয়ে থেকে বলে,
‘ আমাকে আপনার সঙ্গে রাখতে এখন কি আর ভয় হবে না অপূর্ব?’
অপূর্ব বুঝলো কিসের পিটে পরে কথাটা বলেছে প্রিয়তা। অপূর্ব মৃদু স্বরে পিছন না ঘুরেই বললো,
‘ আমি তোমার জন্য আমার অতি প্রিয় রাজনীতি ছাড়তেও রাজি মেয়ে, শুধু একটু সময় লাগবে।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চললো অপূর্ব এখন তার অনেক কাজ।’
প্রিয়তা শুধুই দেখেই গেল অপূর্বের যাওয়াটা মুখ ফুটে আর কিছু বলতে পারলো না। ছেলেটা কি খুব খারাপ লাগা নিয়ে কথাটা বলেছে?’
____
দুপুরের কড়া রোদে ঘিরে আছে চারপাশ। হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে প্রিয়তা অপূর্বের যাওয়ার আজ দু’দিন পর ঢাকার বুকে পা রেখেছে প্রিয়তা। কাল আসার ইচ্ছে থাকলেও আসে নি বুবুর কাছে গিয়েছিল বিয়ের বিষয়ে সবই বলেছে সেও ভীষণ খুশি হয়েছে। শেষমেশ তবে প্রিয়তা হবে অপূর্বের। তাও কেন যেন ভয় হয় প্রিয়তার। অতঃপর বেশি ভাবলো না প্রিয়তা এগিয়ে গেল তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে। বেশিদিন থাকবে না প্রিয়তা, প্রিয়তা ভেবে নিয়েছে যতদিন না তার বিয়ে হবে ততদিন সে খুলনাতেই থাকবে এখানে এসেছে শুধু নিজের জিনিসপত্রগুলো নিতে। প্রিয়তা বাড়ির সামনের কালো গেটটা খুলে ভিতরে ঢুকলো সবকিছু কেমন যেন নির্জন বাড়িতে কেউ নেই নাকি। প্রিয়তা সেই প্রথমদিনের মতো বাড়ির আশপাশটা দেখলো তবে এবার আর কলিংবেল টাপলো না সোজা হেঁটে গেল নিজের রুমের উদ্দেশ্যে। নিজের রুমের তালাটা খুলবে এরই মাঝে পিছন থেকে ডাকলো কেউ। বললো,
‘ প্রিয়তা,
প্রিয়তা থেমে গেল হাতের চাবিটা হাতে রেখেই পিছন ঘুরে তাকালো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়মান। আজ অনেকদিন পর আয়মানকে দেখলো প্রিয়তা। হাল্কা হাসলো। বললো,
‘ জ্বী বলুন,
আয়মান এগিয়ে আসলো। বললো,
‘ তুমি ঠিক আছো তো?’
‘ হুম ঠিক কেন থাকবো না।’
‘ সেদিন রাতে হুট করে এসেই খুলনায় পারি জমালে তাই আর কি।’
‘ ওহ না আমি ঠিক আছি।’
উত্তরে আয়মান কিছু বললো না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। যা দেখে প্রিয়তা বললো,
‘ আপনি কি আমায় কিছু বললেন আয়মান?’
আয়মান চমকালো। বললো,
‘ হুম কিছু বলার ছিল।’
‘ জ্বী বলুন!’
‘ আমি চলে যাচ্ছি ভেবেছি আর আসবো না এই দেশে।’
প্রিয়তা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ আর আসবেন না কেন?’
‘ এমনি এই দেশ আমায় আঘাত করবে তাই আর কি,
‘ আমি আপনার কথার অর্থ বুঝচ্ছি না আয়মান।’
‘ থাক না কিছু কথার অর্থ নাই বা বুঝলে।’
‘ আপনি কি কোনো কারনে কষ্ট পেয়েছেন এই দেশ থেকে।’
‘ কিছুটা তেমনটাই। যাইহোক ভালো থেকো বুঝলে গ্র্যান্ডমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি আর কতকাল একা একা থাকবে এই দেশে।’
প্রিয়তা এবার যেন আরো অবাক হলো গ্র্যান্ডমাও থাকবে না।’
‘ আপনারা কবে যাবেন? ‘
‘ কালই,
‘ কালকেই চলে যাবেন?’
‘ হুম কাল রাতে আমাদের ফ্লাইট।’
‘ যাক ভালো হয়েছে ভালো থাকবেন।’
‘ হুম তুমিও ভালো থেকো। আমার অজান্তে কোনো ভুল হয়ে গেলে আমায় ক্ষমা করো।’
উত্তরে শুধু হাল্কা হাসে প্রিয়তা। তারপর চলে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে গ্র্যান্ডমার সাথে কথা বলে সেও চলে যাবে কাল। বিষয়টায় বড্ড খারাপ লাগলো প্রিয়তার ভেবেছিল বিয়ের পর মাঝে মধ্যে গ্র্যান্ডমার সাথে এসে এসে দেখা করবে। কিন্তু এখন, তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে গ্র্যান্ডমাকেও আর একা একা এত বড় বাড়িতে থাকতে হবে না। মাঝে মাঝে কিছু খারাপ লাগাও ভালোর জন্যই হয়।’
অন্যদিকে প্রিয়তার হাঁটার পানে তাকিয়ে থেকে বললো আয়মান,
‘ কিছু কিছু গল্প না হয় অসমাপ্তই থাকুক
হাল্কা বৃষ্টির ঝড়ে কাঁদার ভিড়েই না হয় ঠাই মিলুক।’
কি আর ক্ষতি হবে তাতে।’
____
দু’সপ্তাহ পর।’
আজ অপূর্ব আর প্রিয়তার বিয়ে খুব অল্প আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন করা হবে ওদের। তেমন কোনো লোকজন থাকবে না শুধু পরিবারের অল্প কিছু লোকজন।’
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। আজ সে বহুত খুশি পরিশেষে তার বড় ভাইটা বিয়ে করবে। অপূর্বের বিয়েটা হয়ে গেলে মাস খানেক পরই সে অহনার কথা বাড়িতে বলবে তারপর সেও ভেবেই লজ্জায় লাল নীল হলুদ কমলা হয়ে যাচ্ছে অয়ন। অয়ন আজ একটা সুন্দর গ্রীন কালার পাঞ্জাবি পড়েছে। ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। অয়ন ঘড়ি দেখলো ন’টা বাজে ১০টার ভিতরই তাড়া খুলনার উদ্দেশ্যে বের হবে। কিন্তু তার ভাইটার এখনও খবর নেই কোথায় গেছে কে জানে?’ এমন সময় হতভম্ব হয়ে একটা কালো পাঞ্জাবি পড়ে রুমে ঢুকলো আকিব। উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
‘ অপূর্ব ভাই আপনি তৈরি তো।’
উত্তরে অপূর্বের বদলে অয়ন বললো,
‘ তোমার অপূর্ব ভাই বাড়ি নেই আকিব।’
‘ বাড়ি নেই মানে কোথায় গেছে?’
‘ সেটা তো তোমার অপূর্ব ভাইই জানে।’
.
ঢাকার শহর থেকে একটু দূরে একটা সুন্দর জায়গা। যার নাম মসজিদ। এক শান্তি প্রিয় জায়গা আতরের মিষ্টি সুভাস বইছে পুরো মসজিদ জুড়ে। অপূর্ব মসজিদে এসেছে সেই ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে এখনো এখানে বসে আছে। তার মনটা বড় উতলা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। মসজিদের ইমাম সাহেব বিষয়টা লক্ষ্য করেছেন অনেক আগে থেকেই। অপর্বকে তিনি চেনেন প্রায় সময় এখানে আসে ছেলেটা। ইমাম সাহেব এগিয়ে গেলেন তারপর অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ কি হয়েছে অপূর্ব? আজ তোমায় বড় অস্থির লাগছে।’
উত্তরে অপূর্ব বললো,
‘ আজ কেন যেন খুব খারাপ লাগছে হুজুর কেন এমনটা লাগছে বুঝচ্ছি না মনে হচ্ছে আমার অতি প্রিয় কোনো জিনিস আমায় ছেড়ে চলে যাবে।’
অপূর্বের কথা শুনে ইমাম সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,
‘ জীবন মানেই তো ছেড়ে যাওয়া। আজ আছি কাল নেই এটাই দুনিয়ার নিয়ম। আমাদের সবাইকেই একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রিয়জনদের কাঁদিয়েই না হয়। তাই কষ্ট পেও না অপূর্ব কেউ ছেড়ে গেলে ব্যাথাটা খুব কম নেও। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে সবসময়। আর পুরুষ মানুষদের এমনিতেই সবসময় শক্ত থাকতে হয়।’
অপূর্ব মন দিয়ে শুনলো হুজুরের কথা। তারপর বললো,
‘ ঠিক বলেছেন হুজুর। জীবনে সবসময়ই শক্ত থাকতে হয়। শক্ত থাকলেও জীবনটা হয়তো সুখের হয়।’
উত্তরের শুধু মুচকি হাসে হুজুর তবে কিছু বলে না।’
____
সোফার সামনে সেজেগুজে বসে আছে অপূর্বের বাবা, ভাই, আকিব, চাচা সঙ্গে অপূর্বের দুজন চাচাতো ভাই এরা সবাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে ওদিকে অপূর্বের খবর নেই। হঠাৎই অপূর্বের বাবা বলে উঠল,
‘ আকিব তোমার অপূর্ব ভাইকে ফোন লাগাও বলো সে কি আসবে নাকি আমরা তাকে ছেড়েই চলে যাবো।’
উত্তরে আকিব কিছু বলার আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো অপূর্ব,
‘ হুম চলে যাও। জামাইর কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে সে বরিশালের পিরোজপুরের ধানক্ষেতে ঘুরতে গেছে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️