আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ৪৩

0
776

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৩
_________________

চুপচাপ কিছু কৌতূহল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয়তা। বাড়িতে তো কেউ একজন আছে এখন। প্রিয়তা প্রথম দিকে ছোট আব্বু এসেছে এটা ভেবে থাকলেও পরক্ষণেই কেন যেন মনে হলো ছোট আব্বু নয় অন্যকেউ আছে। এমনটা মনে হওয়ার একমাত্র কারন হলো ছোট আব্বুর রুমের দরজা বাহির থেকে আটকানো যেটা প্রিয়তা বাহিরে যাওয়ার আগে আঁটকে গিয়েছিল। সচারাচর চাচা বাড়ি ঢুকে সর্বপ্রথম নিজের রুমে যান। আজ নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম কিছু হবে না। প্রিয়তা কৌতূহলী এগিয়ে যেতে লাগলো উপরে, উপরের কর্নারের রুমটাই তার আর প্রেমার ছিল। প্রিয়তা আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো তার রুমে। হঠাৎই যেন চেনা কারো কন্ঠে গান ভেসে আসলো প্রিয়তার কানে কেউ গাইছে,

❝কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে!’
কাছে আসা আসি আর হবে না!’
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে!
ভালোবাসা বাসি আর হবে না!❞

প্রিয়তা যেন চরম ভাবে চমকালো অপূর্ব এখানে এসেছে। প্রিয়তা দৌড়ে ছুটে গেল তার রুমের ভিতর।’

.
পরনে মেরুন রঙের শার্ট, সাদা রঙের জিন্স, চুলগুলো এলেমেলো, হাতের ঘড়ি টেবিলে রাখা অবস্থায় বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে গান গাইছে অপূর্ব। প্রিয়তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না অপূর্ব এখানে এসেছে। প্রিয়তা কি বলবে বুঝতে পারছে না। যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে সে।’

অপূর্ব তার গান থামালো, কিছু একটা ফিল হলো তার। প্রিয়তা এসেছে তবে। অপূর্ব আর ঘুরে না তাকিয়েই খুব তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,

‘ ওভাবে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কিছু হয় নি মেয়ে, জলদি কাছে এসে পাশে বসো মাথা ধরেছে আমার।’

প্রিয়তা শুনলো, জবাবে কিছু না বলে চুপচাপ এগিয়ে যেতে লাগলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব এবার সোজা হয়ে শুলো তাকালো প্রিয়তার দিকে। বললো,

‘ এতক্ষণ সময় লাগে এখানে আসতে তুমি জানো আমি কতক্ষণ থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’

প্রিয়তা হেঁটে গিয়ে বসলো অপূর্বের পাশে। বললো,

‘ আপনি এখানে কিভাবে এলেন?’

‘ কিভাবে এসেছি মানে আমার যে গাড়ি আছে তুমি জানো না।’

প্রিয়তা থতমত খেল সে কি ভুল প্রশ্ন করলো। করলোই তো কথাটা ‘ আপনি এখানে কিভাবে এলেন?’– এটা না বলে তার বলার উচিত ছিল আপনি এখানে কি করছেন? প্রিয়তা নিজেকে সামলে আবারও প্রশ্ন করলো,

‘ তা নয় আপনি এখানে কি করছেন?’

‘ তোমার হাতের স্পর্শ নিতে এসেছি।’

‘ আপনার জ্বর আসলো কি করে?’

‘ কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম ছোট ভাই বার বার বললো ভাই আর ভিজিস না জ্বর আসবে কিন্তু আমি শুনিনি তাই জ্বর এসেছে।’

‘ ঔষধ খান নি?’

‘ না সকাল হওয়ার আগেই তোমার এখানে চলে এসেছি।’

‘ বাসার চাবি কোথায় পেলেন?’

‘ চাবি লাগে নি তো তোমার চাচা ছিল তো।’

অপূর্বের এবারের কথা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো,

‘ আপনার সাথে ছোট আব্বুরও দেখা হয়েছে।’

‘ হুম।’

উত্তরে কিছু বলতে পারলো না প্রিয়তা। অপূর্ব কত ইজিলি কথাগুলোর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে উঠল অপূর্ব,

‘ শোনো মেয়ে, এখানে তোমার ভাবনা দেখতে আসি নি আমি দ্রুত মাথা টিপে দেও আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।’

অপূর্বের কথার জবাবে প্রিয়তার খুব করে বলতে মন চাইলো,

‘ এত অধিকার দেখাচ্ছেন কেন? শুনে রাখুন আমি আপনার বিয়ে করা বউ নই।’

প্রিয়তার মনে মনে বলা কথাটাও যেন বুঝলো অপূর্ব। ফট করে বললো,

‘ হতে কতক্ষণ।’

প্রিয়তা খানিকটা চমকে উঠলো। বললো,

‘ কি বললেন?”

‘ কিছু বলি নি। কুইকলি কপালে হাত রাখো তোমার হাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে।’

প্রিয়তার হাসতে মন চাইলো কিন্তু তাও হাসলো না। নিজের হাতটা আলতোভাবে এগিয়ে দিল অপূর্বের দিকে, ছুঁয়ে ছিল কপাল। প্রিয়তার হাতের স্পর্শ লাগতেই অপূর্ব তার চোখ বন্ধ করে নিলো। তবে মনে মনে আওড়ালো,

‘ তোমার হাতের একটু স্পর্শ পেতে আমি দীর্ঘক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে বাহানা করতে পারি।’

অপূর্বের কপালে হাত রাখতেই বিষম খেল প্রিয়তা। অসম্ভব জ্বর হয়েছে অপূর্বের। প্রিয়তা কিছুক্ষন মাথা টিপে দিয়ে বললো,

‘ আমি কাপড় ভিজিয়ে আনছি আপনার মাথা মুছে দিতে হবে।’

অপূর্ব তক্ষৎনাত বারন করলো। আদেশের স্বরে বললো,

‘ ওসবের দরকার নেই তুমি পাশে বসে থাকলেই হবে।’

‘ কেন বুঝচ্ছেন না আপনার জ্বরটা অনেক।’

প্রিয়তার কথায় অপূর্ব রেগে গেল। ধমক দিয়ে বললো,

‘ বেশি বকো না তো ভালো লাগছে না।’

প্রিয়তা থেমে গেল। এই ছেলেটা তার কথা একদমই শুনবে না।’

সময় গড়ালো ঘড়ির কাটা একটা ছেড়ে দুটোয় গড়ালো। প্রিয়তা বসেই রইলো অপূর্বের পাশে আর অপূর্ব চোখ বুঝে ঘুমিয়ে পড়লো।’

আচমকা দরজায় নক পড়লো। এতে খানিকটা চমকে উঠলো প্রিয়তা। বললো,

‘ কে?’

প্রিয়তার কথা শেষ হতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো কেউ,

‘ ভাবি আমি। আসবো রুমে?’

প্রিয়তা যেন আরো অবাক হলো তাকে ভাবি ডাকে কে। প্রিয়তা কিছু বলার আগেই অপূর্ব চট করে বলে উঠল,

‘ না আসবি না তোকে আসতে বলেছি আমি।’

অয়ন তাও আসলো। এক গাল হাসি দিয়ে বললো,

‘ তুই বারন করলেই আমায় শুনতে হবে নাকি।’

‘ অবশ্যই শুনতে হবে ভুলে যাস না আমি তোর কি হই।’

‘ হুম ভুলি নি। তুমিও মনে রাখো আমি তোমার কি হই।’

এদিকে অপূর্ব আর অয়নের কথোপকথনের কিছু বুঝতে না পেরে শুধু হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো প্রিয়তা। যা দেখে অয়ন বললো,

‘ কি ভাবি কিছু বুঝচ্ছো না তো আসলে আমি হলাম তোমার হবু বর মানে মিস্টার তাহসান আহমেদ অপূর্বের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ অয়ন। তোমার একমাত্র দেবর।’

অয়নের কথা শুনে প্রিয়তার চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম কি বলছে এই ছেলে। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো অপূর্বের বাবা মা। অপূর্বের মা তো বলে উঠলেন,

‘ কই দেখি আমার বড় বউমার মুখটা কেমন।’

প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো। লজ্জায় কেমন যেন মাথা নিচু করে ফেললো সে। এই অপূর্বটা এমন কেন হুটহাট এমন সব কান্ড করে বসে যে প্রিয়তা ঘাবড়ে যায়।’

একে একে বাড়ির সবার আগমন দেখে অপূর্ব যেন হতাশ হলো। সে এদের আসতে বলেছিল কিন্তু এর মানে তো এই নয় যে দল বেঁধে সবাই প্রিয়তার রুমে ঢুকে পড়বে নিচেও তো বসা যায় নাকি।’
___

নিচে ড্রয়িং রুমের সোফাতে গোল হয়ে একদিকে বসে আছে অপূর্ব, অয়ন আর ওদের বাবা মা অন্যদিকে বসে আছে প্রিয়তা আর প্রিয়তার চাচা। মূল কথা হলো এখানে প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ের কথা বার্তাই বলতে এসেছে তারা। প্রিয়তার চাচা এগুলো আগে থেকেই জানতেন এমন কি অপূর্বের বাবা মাও যে আজ আসবে তাও তিনি জানতেন শুধু প্রিয়তাকে কিছু বলেন নি। অপূর্ব বারন করেছিল কি না।’

অতঃপর সবার কথাবার্তা শেষ করে ঠিক করা হলো দু’সপ্তাহ পর প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ে দেওয়া হবে। আর বিয়ে দিয়েই তাদের বউমাকে তারা নিয়ে যাবেন। প্রিয়তার চাচারও কোনো আপত্তি নেই এতে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ওনার মনে হচ্ছে প্রিয়তার চাঁচিটা বাড়ি নেই বেশ হয়েছে না হলে ঠিক এই বিয়েতে কোনো ঘাপলা বাজাতো। বউটা জেলে আছে এতে প্রিয়তার চাচার কোনো আফসোস নেই। কারন সে বিশ্বাস করে ভুল করলে তার মাশুলও দিতে হয়। আর প্রিয়তার চাঁচি তো ভুল করে নি মেয়ে পাচারের মতো যগন্যতম অপরাধ করেছে শাস্তি তো পেতেই হবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো প্রিয়তার চাচা।’

____

বাড়ির ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। বিয়েটা চাইলে আজই করে ফেলতে পারতো তারা কিন্তু অপূর্ব রাজি হয় নি আর প্রিয়তাও কিছু বলে নি। বুবু টা কাছে নেই এই সময় সে বিয়ে কি করে করতে পারে। প্রিয়তা ভেবেছিল অপূর্ব বোধহয় কিছু জানে না যে সে সেদিন গুলিটা করে নি। কিন্তু আজ বুঝলো এই অপূর্ব সব জানে। প্রিয়তা আনমনে হাসলো। ছেলেটা চরম বদমাশ।’

‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো তুমি?’

হঠাৎই অপূর্বের কন্ঠস্বর শুনে পিছন ঘুরে তাকালো প্রিয়তা। একপলক অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ কিছু না।’

‘ আমাকে কি বোকা মনে হয় তোমার?’

প্রিয়তা খানিকটা বিস্মিত চেহারা নিয়ে বললো,

‘ আমি আপনার বোকা বলেছি নাকি।’

‘ তা বলো নি,

‘ তাহলে আচ্ছা আপনি শুরু থেকেই সবটা জানতেন তাই না।’

‘ কোন সবটার কথা বলছো তুমি?’

‘ আবারও না জানার ভান করছেন।’

অপূর্ব হাসলো। কি নিষ্পাপ সেই হাসি। ছেলেটা জ্বরের ঘোরেও মারাত্মক সুন্দর হাসে। প্রিয়তা অপূর্বের হাসি দেখে অপূর্বের মতো করে বললো,

‘ ওভাবে হাসবেন না তো আমারও কষ্ট হয়।’

প্রিয়তার কথা শুনে আচমকা অপূর্বের কি যেন হলো প্রিয়তার হাত ধরে নিজের দিকে টানলো। খানিকটা কাছাকাছি হলো দুজন। প্রিয়তা যেন থমকে গেল এতে এই প্রথম যেন সজ্ঞানে অপূর্বের কাছাকাছি গেল প্রিয়তা। প্রিয়তা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো অপূর্ব,

‘ কেন বুঝতে পারো না মেয়ে তোমায় এমন ছোট ছোট কষ্ট দিতেই আমার বেশ লাগে।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here