।#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪০
_________________
‘ খুব বিপাকে পড়েছো তাই না মেয়ে?’
খুব অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে ছিল প্রিয়তা অপূর্বের মুখের দিকে। আর তখনই উপরের কথাটা বলে অপূর্ব প্রিয়তাকে। প্রিয়তা সত্যিই স্তব্ধ তার আড়ালে তার বুবু এতকিছু করে ফেললো অথচ সে কিছুই জানে না। তার জন্যই শেষে কিনা তার বুবু জেলে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ এবার কি তবে আব্রাহামের বিষয়টায় যাবো প্রিয়তা?’
প্রিয়তা নিরাশ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো অপূর্বের দিকে। সে কিছু বলার আগেই অপূর্ব বলে উঠল,
‘ তুমি হয়তো জানো না যবে থেকে আমি তোমার প্রতি আমার দুর্বলতা বুঝতে পেরেছি তবে থেকে আমি তোমার পিছনে আমার দুজন লোককে তোমার উপর নজর রাখার জন্য লাগিয়ে দিয়েছিলাম। তুমি কখন কোথায় যাও, কার সাথে যাও, কার সাথে কি কর, কার সাথে কি কথা বলো ইত্যাদি ইত্যাদি আমি সব আগে থেকেই জানতাম। তোমার সাথে তোমার আব্রাহাম স্যারের কবে থেকে পরিচয় উনি তোমাদের ভার্সিটির প্রফেসর হলেন কবে থেকে ইত্যাদি সবই আমি আগে থেকেই জানি। শুধু ওকে ধরতে একটু টাইম লেগেছে আমার। আমি কিন্তু তোমার আর আয়মানের বিষয়টাও জানি। এমনকি তুমি যে আয়মানের সামনে একদিন আমায় প্রিয় মানুষ বলে পরিচিয় করিয়েছিলে তাও আমি জানি। তুমি হয়তো জানো না তোমার এই আয়মানকে আমায় প্রিয় বলাটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন আব্রাহাম তো এই আয়মানের থেকেই জেনেছিল আমি আসলে তোমার কি হই?’ আর আমিও যে তোমায় ভা__ বলেও থেমে যা অপূর্ব। শব্দটা যেন আর বের করতেও কেমন লাগছে অপূর্বের। অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে আমিও যে তোমায় চাই এটাও আব্রাহাম জেনে যায় তাই তো এত কিছু। তুমি কি জানো আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি নামের মানুষটা আসলে সত্যি নয় ওর আসল নাম আহিল মাহামুদ। যে কোনো ভার্সিটির প্রফেসর নয়।’
অপূর্বের এবারের কথা শুনে প্রিয়তার চক্ষু যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম। কি আব্রাহাম স্যার আসলে আব্রাহাম স্যার নয়। অপূর্ব প্রিয়তার রিয়েকশন দেখলো খানিকক্ষন চুপ থেকে প্রিয়তার হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে খুব ঠান্ডা গলায় বলতে লাগলো,
‘ প্রায় বছর কয়েক আগে আমি তখন ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আমার জীবনে বন্ধুবান্ধবদের কখনোই কমতি ছিল না। তবে এই বন্ধুদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় একজন বন্ধু ছিল আহিল মাহামুদ। একসাথে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির বন্ধু ছিলাম আমরা। আকিবও চেনে ওকে। যাইহোক ভার্সিটিতে ও একটা মেয়েকে ভালোবাসতো টানা তিনবছর সেই ভালোবাসা ছিল ওর, কখনো মুখ ফোটে বলেনি মেয়েটাকে এমন কি আমাকেও প্রথমে বলতে চায় নি। পরে অবশ্য বলেছিল তাও অনেক সময় নিয়ে। ওদের ভালোবাসার কথা জানার পর আমিই ওকে বলেছিলাম ও জাতে মেয়েটাকে বলে ওর ভালোবাসার কথা। মেয়েটা আমাদের থেকে এক বছরের জুনিয়র ছিল। দেখতেও সুন্দরই ছিল। আহিলের সাথে বেশ মানাতো বলে আমার ধারনা। তো একদিন ওকে একদম জোরজবরদস্তি করে মেয়েটার কাছে পাঠিয়ে ছিলাম মেয়েটাকে যাতে ওর ভালোবাসার কথা বলে। ও সাহস করে সেদিন বলেও আর মেয়েটাও মেনে নেয়। মেয়েটাকে আহিল প্রচন্ড ভালোবাসতো। মেয়েটাও বোধহয় বাসতো। সবই ঠিক ছিল কিন্তু মেয়েটা একদিন,
বলতে গিয়েও থেমে যায় অপূর্ব দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো আপনাআপনি। অপূর্বকে চুপ হতে দেখে প্রিয়তা বললো,
‘ কিন্তু কি?’
অপূর্ব তাকায় প্রিয়তার চোখের দিকে দৃঢ়তা ভরা চাহনি নিয়ে বলে,
‘ হঠাৎ একদিন মেয়েটা আত্নহত্যা করে বসে। একদমই হুট করে। খুব আকস্মিক বিষয় ছিল মেয়েটা চিঠি দিয়ে লিখে যায় আমার জন্য নাকি মেয়েটা মারা গেছে, আমিই নাকি মেয়েটাকে বাধ্য করেছিলাম আত্মহত্যা করার জন্য। কিন্তু সত্যি বলতে আমিই কিছুই জানতামই না। ওদের রিলেশনের ভিড়ের মাঝে দু’ একবার কথা ছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো কনট্রেকই ছিল না। কিন্তু এই বিষয়টা আমি আহিলকে বোঝাতে পারি নি। রুহির লিখে যাওয়া চিঠিটাই বিশ্বাস করে নিলো গভীরভাবে। ও ভেবে নিয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষকে আমিই মেরেছি। কিন্তু সত্যি বলতে আমি এমনটা কিছুই করি নি। ছেলেটা রুহির ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ ছিল যে মেয়েটাকে মেরে আমার কি লাভ হবে এটাই বুঝতে চাইলো না। অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু মানতে চায় নি, শেষ গিয়ে ও দেশ ছেড়ে চলে যায়। তবে আমি সত্যিই ভাবি নি ও এইভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফিরে আসবে। হয়তো আমার ভালোবাসার হাতে আমার মৃত্যু হোক এটাই ওর প্রতিশোধ নেওয়ার মূল অস্ত্র মনে হলো। এতে হয়তো আমি ওর থেকে আঘাত বেশি পেতাম। তবে কি জানো, আমি এটা ভাবি নি তুমি সামান্য একটা ভিডিও দেখে এইভাবে আমায় খুন করতে চলে আসবে। তুমি হয়তো আমায় ভালোবাসো নি। না হলে বলো না তুমি এইভাবে আমায় আঘাত করতে পারতে নাকি,
বলেই বুকের গুলি লাগার জায়গাটায় হাত রাখলো অপূর্ব খুব কঠিন ভাবে আঘাত লেগেছে তার। অপূর্ব হাত নামালো আরো বললো,
‘ আর একটা কথা আমি তোমার বাবাকে মারি নি। ওনাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারি নি, তার আফসোস ছিল আমার,আমি বুঝতে পারি নি হসপিটালে তোমার বাবাকে একা রেখে এসে আমি ভুল করছি।’
প্রিয়তা সব শুনলো অপূর্বের কথা। ভিতরে ভিতরে চরম অপরাধী ফিল হচ্ছে নিজেকে। সে ভুল করেছে, চরম ভুল। অপূর্বকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছে। কিন্তু এটা তো সত্যি নয় যে সে সেদিন অপূর্বকে খুন করতে গিয়েছিল হুম এটা ঠিক সে রিভলবার নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু অপূর্বকে মারার জন্য নয় শুধুই নিজের প্রতিহিংসাটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে না পেরে নিয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা অপূর্ব তো এতকিছু জানে কিন্তু এটা জানলো না সে অপূর্বকে সেদিন গুলি করে নি। তার রিভলভার থেকে একটাও গুলি বের হয় নি সেদিন। প্রিয়তা অনেকক্ষন কান্নাভেজা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের মুখের দিকে। একবার কি ক্ষমা চাইবে অপূর্বের কাছে ক্ষমা করুক বা না করুক ক্ষমা চাইতে তো ক্ষতি নেই। প্রিয়তা তার চোখ মুছলো। খুব শীতল কণ্ঠে বলতে নিলো,
‘ অপ,,
আর কিছু বলার আগেই অপূর্ব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলে উঠল,
‘ একদম ক্ষমা চাওয়ার জন্য মুখ খুলবে না মেয়ে, তাহলে কিন্তু এক্ষুনি গুলির আঘাতে নিঃস্ব করে দিবো তোমায়।’
প্রিয়তা দমে গেল মুখ আঁটকে গেল ওখানেই। অপূর্ব তাকে বোধহয় আর সহ্য করতেই পারছে না। প্রিয়তা মাথা নুড়ে ফেললো। স্তব্ধ হয়ে বললো,
‘ মেরে ফেলুন অপূর্ব?’ আমি থাকলে বোধহয় আপনার ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হবে না।’
অপূর্ব হাসে। যেন মজার কথা বলেছে প্রিয়তা। অপূর্ব নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
‘ মারবো তো বটেই কারন সত্যি তুমি বেঁচে থাকলে আমার ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হবে না।’
অপূর্বের কথায় অসহায় দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়তা তাকালো অপূর্বের দিকে। পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে চুপ করে রইলো সে। হঠাৎই কি ভেবে যেন একটা প্রশ্ন করতে মন চাইলো প্রিয়তার। বেশ নিরাশা ভরা কন্ঠে বললো,
‘ আপনায় ক্ষমা ছাড়া একটা প্রশ্ন করবো অপূর্ব?’
অপূর্ব আবারও তাকালো প্রিয়তার দিকে অনেক ভেবে জবাব দিলো,
‘ কি প্রশ্ন?’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা থেমে থেমে বললো,
‘ এই রুহি কেন আত্মহত্যা করেছিল এটা আপনি পরে জানেন নি?’
প্রিয়তার প্রশ্ন শুনে বেশি না ভেবেই বললো অপূর্ব,
‘ রুহি কোনো আত্মহত্যা করে নি ওকে খুন করা হয়েছিল?__ কিন্তু পুরো বিষয়টাকে কেউ একজন আত্মহত্যা রূপে সাজিয়ে আমাদের দুই বন্ধুর মধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়েছিল।’
‘ এমনটা কে করেছে আপনি জানেন না?’
উত্তরে একঝলক প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ না জানি না।’
অপূর্বের এই কথাটা কেন যেন প্রিয়তার বিশ্বাস করতে মন চাইলো না। সে ফট করেই বলে উঠল,
‘ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি এই কথাটা মিথ্যে বলছেন অপূর্ব। আপনি সব জানেন।’
অপূর্ব হাসে। প্রাণ খোলা এক রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে,
‘ হুম হয়তো জানি।’
‘ কে ছিল?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। তার ফোনটা বেজে উঠল উঠলো। তানভীর ফোন করেছে। অপূর্ব ফোনটা রিসিভ করেই বললো,
‘ জেলে বন্দী করেছো তানভীর?’
উত্তরে তানভীরও বলে,
‘ জ্বী ভাই।”
তানভীরের কথা শুনে অপূর্বও বলে,
‘ ঠিক আছে আমি আসছি।’
বলেই ফোন কাটে অপূর্ব। তারপর প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে শাসানো গলায় বলে,
‘ শোনো মেয়ে, দরজা খুলে যাচ্ছি বলে ভেবো না তোমায় ছেড়ে দিয়েছি, তোমার ছাড় নেই। এই অপূর্বের পিছু তুমি এই জনমে আর ছাড়াতে পারবে না। আমাদের খুব শীঘ্রই দেখা হবে। আর যেদিন দেখা হবে সেদিনই তোমায় মারবো আমি এমন মরণ দিবো তোমায় যার যন্ত্রণা তুমি এ জনমে ভুলতে পারবে না। অপূর্বের হৃদয়ে আঘাত করার ফল ঠিক কতটা ভয়ংকর সেদিন বুঝতে পারবে তুমি। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকো।’
বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অপূর্ব। জেল খানায় যেতে হবে তাকে। দীর্ঘ দূরত্বের, দীর্ঘ দিনের পরিচিত সেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে হবে যে সাথে প্রতিশোধের আগুনটা আরো কতটা জ্বলবে বুঝতে হবে তো তাকে।’
অতঃপর অপূর্ব চলে গেল। আর প্রিয়তা ঠায় বসে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের যাওয়ার পানে। চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার। খুব অসহায়ত্বের সঙ্গে বললো,
‘ আমিও সেদিন আপনার হাতের মরণ নিতে প্রস্তুত হয়ে আসবো অপূর্ব। হয়তো আপনার হাতের মরণই আমার ভুলের বড় মাশুল।’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️