#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৮
_________________
অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আকিব অপূর্বের মুখের দিকে। কি বলছে তার অপূর্ব ভাই প্রিয়তা তাকে মারে নি মানে?’ আকিব কয়েক কদম এগিয়ে গেল অপূর্বের দিকে। তারপর বললো,
‘ আপনি এসব কি বলছেন ভাই? প্রিয়তা তো আমাদের সামনে বসেই আপনায় গুলির করলো। তাহলে?’
উত্তরে বেশি না ভেবেই জবাব দিলো অপূর্ব,
‘ প্রিয়তা গুলি চালাই নি আকিব।’
আকিব বড্ড অবাক হলো অপূর্বের কথা শুনে। অবাক হয়েই বললো,
‘ আমি আপনার কথা কিছু বুঝচ্ছি না ভাই।’
এবার অপূর্ব কিছু ভাবতে ভাবতে বললো,
দুদিন আগে যে মুহূর্তে প্রিয়তা অপূর্বকে বুক বরাবর রিভলবার রেখেছিল সেদিন আসলে প্রিয়তা গুলি করে নি বরং দূর থেকে সেই ফাঁকা বিল্ডিংটার ওপর থেকে কেউ একজন গুলি করেছিল। লোকটা যখন গুলি করেছিল উদ্দেশ্য ছিল একদম অপূর্বের বুক বরাবর গুলি করার কিন্তু সেই মুহূর্তে একটা কাক আচমকা সামনে আসায় নিশানা ঘুরে যায় আর অপূর্ব বুকের থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে গুলি লাগে। অপূর্ব যখন প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ছিল তখনই সে বিষয়টা খেয়াল করে, অপূর্ব জানতো প্রিয়তা তার বুকে গুলি করতে পারবে না। কারন সে জানে তার ভালোবাসা ঠুনকো ছিল না।’
পর পর কথাগুলো বলেই আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,
‘ বুঝলে আকিব অনেক সময় চোখের সামনে যা ঘটে তা আসলে সত্যি হয় না।’
আকিব বুঝলো অপূর্বের কথা। অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ একটা প্রশ্ন করবো ভাই?’
উত্তরে অপূর্বও বলে,
‘ হুম করো।’
অপূর্বের কথা শুনে সব দ্বিধা সরিয়ে রেখেই বললো আকিব,
‘ আপনি কি সত্যিই প্রিয়তার বাবাকে মেরেছিলেন ভাই?’
আকিবের এবারের কথা শুনে অপূর্ব অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ না, আমি প্রিয়তার বাবাকে মারি নি।’
‘ তাহলে ওই ভিডিওটা কিসের ছিল?’
ফ্লাসবেক___
৩ বছর আগে তারিখ ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০। গভীর রাত। অপূর্ব তখন নিউ নিউ রাজনীতিতে ঢুকেছে। কোনো এক কাজে সেদিন খুলনা এসেছিল সে। তো কাজ সেরে খুলনা ছেড়ে বাড়ি ফেরার পথে একাই ছিল অপূর্ব গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই ল্যামপোস্টের সামনে একটা লোককে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে অপূর্ব গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে যায়। লোকটাকে অপূর্ব চিনতো, কারন কয়েকবার মিটিংয়ের উছিলায় তাদের দেখা হয়েছিল। অপূর্ব তাকে স্যার বলে ডাকতো। অপূর্ব এগিয়ে গেল। বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ এসব কি করে হলো স্যার?’
উত্তরে প্রিয়তার বাবা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না। শুধু বললো,
‘ আমার পেটের চাকুটা বের করে দেও অপূর্ব?’
অপূর্বও শোনে সাথে তাই করে। সেদিন প্রিয়তার বাবা আর্তনাদ ছিল খুব। অপূর্ব সেই আর্তনাদ ভরা চেহারা নিয়েই প্রিয়তার বাবাকে নিয়ে গিয়েছিল হসপিটাল। ভেবেছিল বাঁচাতে পারবে কিন্তু পারে নি হসপিটালে বসে অপূর্বের ফোন আসে তার মা অসু্স্থ হয়ে পড়ে তাকে লাগবে। অপূর্ব বাধ্য হয়ে সেদিন প্রিয়তার বাবাকে হসপিটালে রেখে চলে আসে আর তারই সুযোগ নিয়ে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর প্রিয়তার বাবাকে দ্বিতীয় বারের মতো আবারও আঘাত করে পুরোপুরি মেরে ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। এই কাজগুলো সবই মুখার্জি মশাইয়ের কথায় করা হয়েছিল অপূর্ব ভেবেছিল কিছু করবে কিন্তু পরে আর করা হয় নি। সময়ের সাথে সাথে ধামা চাপা পড়ে সব। লাইটপোস্টের ওপর একটা সিসি ক্যামেরা ছিল সেখানে অপূর্ব আর যারা খুন করেছিল তাদের সবার ভিডিও ফুটেজ ছিল যেটা পরে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষে গিয়ে সেই ভিডিওই অপূর্বের শত্রু হলো।’
পর পর কথাগুলো আকিবের সামনে বলে খুব আফসোসের সঙ্গে বললো অপূর্ব,
‘ আমি যদি সেদিন তাকে হসপিটালে না রেখে আসতাম একটু মায়া দেখিয়ে ওখানে থাকতাম তাহলে আজ উনি হয়তো বেঁচে থাকতো আকিব। আর প্রেমা প্রিয়তার জীবনটাও অন্যরকম হতো।
যখন আমি প্রিয়তার মুখে ওর বাবার খুন হওয়ার কথা শুনেছিলাম আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল কেন যেন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়েছিল। বার বার মনে হয়েছিল প্রিয়তা এসব জানলে আমায় ক্ষমা করবে না। বার বার আঙুল তুলে বলবে, আপনি সেদিন কেন হসপিটালে থাকলেন না অপূর্ব কিন্তু আমি কি করে বুঝাতাম আমার মাও যে।’
অপূর্ব থেমে যায় আর কিছু বলতে পারছে না বুকে খানিকটা ব্যাথা অনুভব করে সে। অপর্বের অবস্থাটা বুঝতে পেরে আকিব ধরে ঠিক মতো শুয়ে দেয় অপূর্বকে বলে,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?’
‘ হুম আমি ঠিক আছি।’
‘ সবই বুঝলাম ভাই কিন্তু এসব কথা প্রিয়তাকে বললো কে? আর আপনায়ও মারলো বা কে?’ তার কি লাভ হলো আপনার আর প্রিয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে?’
উত্তরে অপূর্ব অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ আমি সব জানি কে এসব করেছে কেন করেছে এবার সময় এসেছে আকিব সব রহস্যের দরজা খোলার।’
আকিব আবারও অবাক হলো। চমকানো গলায় বললো,
‘ ঠিক বুঝলাম না ভাই?’
‘ তোমার ফোনটা দেও,
আকিব দিল। অপূর্ব মোবাইল নিয়েই কারো একটা নাম্বারে কল করলো।’
___
ঢাকার কোতোয়ালি থানার সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি। গাড়ি থেকে নামলো একজন পুরুষ মানুষ, পরনে তার পুলিশের ইউনিফর্ম, ঝাকড়া চুল মাথায়, হাতে ঘড়ি, পারফেক্ট বডিফিগার। পুরোই হিরোদের মতো এডিটিউড নিয়ে থানার ভিতর পা রাখলেন তিনি। আশেপাশের সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বান্দরবন শহর ছেড়ে ঢাকায় নিউ নিউ বদলি হয়ে এসেছে মোঃ তানভীর আহমেদ ইফতি। কঠোর এবং ন্যায়ের পথে চলা সৎ পুলিশ অফিসার তিনি। বেশ নাম ডাক আছে তার। তানভীর এখানে জয়েন হয়েছে আজ দু’দিন হলো। বেশ সম্মানের সাথেই দুদিন কেটেছে তার। হঠাৎই তানভীরের ফোনটা বাজলো তানভীরও বেশি না ভেবে ফোনটা তুললো। বললো,
‘ হ্যালো,
—-
নিজের রুমে বসে কাঁদছিল প্রিয়তা। সে যে ভুল করেছে তা প্রিয়তা জানে। প্রিয়তা সেদিন নিজেও স্তব্ধ ছিল। প্রিয়তা অপূর্বকে মারার জন্য গেলেও অপূর্বকে মারে নি যেটা সে প্রথমে বুঝতে পারে নি কিন্তু পরে পেরেছিল। প্রিয়তা বুঝতে পেরেছিল সেদিন গুলিটা আসলে সে চালায় নি অন্যকেউ চালিয়ে ছিল। প্রিয়তা অপূর্বের থেকে আগে সব সত্যিটা জানার উদ্দেশ্য নিয়েই গিয়েছিল রিভলবারটা তো এমনি বের করেছিল সে। কিন্তু অপূর্ব কিছু বলার আগেই কেউ তাকে গুলি করে দেয়। প্রিয়তা জানে এই কথা গুলো অপূর্বকে বললে অপূর্ব হয়তো বুঝবে না বা বিশ্বাসও করবে না। কারন সব তো সবার চোখের সামনে দিয়েই ঘটেছিল। প্রিয়তা আর্তনাদ ভরা চেহারা নিয়ে বললো,
‘ আপনি আমায় কখনো ক্ষমা করবেন না আমি জানি অপূর্ব। আমিই ভুল করেছি প্রতিশোধের আগুনে নিজের বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছিল অপূর্ব। এ ভুলের কি ক্ষমা আছে অপূর্ব জানি নেই।’
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই দরজায় নক করলো কেউ। প্রিয়তা খানিকটা চমকে উঠলো এতে, দ্রুত নিজের চোখ মুখ মুছে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। দরজা খুলতেই আচমকা দুটো লোক প্রিয়তার মুখে রুমাল চেপে ধরলো আর প্রিয়তা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারালো।’
….
স্তব্ধতায় ভরপুর রহিম মির্জাদের বাড়ি। সবার মুখ শুঁকনো আজ কতগুলো দিন গেল বাড়ি ছেলে আর বাড়ি ফেরে না। বাড়ির উঠানে স্তব্ধ হয়েই বসে আছে সবাই শুধু প্রেমা নেই, এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো পুলিশ, বাড়িতে পুলিশ দেখায় রহিমের বাবা এগিয়ে গেলেন। বললেন,
‘ কি হয়েছে অফিসার?’
‘ আমরা প্রেমা মির্জাকে এরেস্ট করতে এসেছি।’
বাড়ি শুদ্ধ সবাই যেন চমকালো। প্রেমাকে কেন পুুলিশে ধরে নিয়ে যাবে। রহিমের বাবা বেশ হতাশ হয়ে বললেন,
‘ আমার বউমাকে কেন এরেস্ট করবেন অফিসার তার কি দোষ?’
উত্তরে অফিসার কিছু বলবে এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো প্রেমা। খুবই সাদামাটা আর অগোছালো অবস্থায়। প্রেমা এগিয়ে এসে বললো,
‘ আমায় নিয়ে চলুন অফিসার আমি আপনাদের সাথে যেতে প্রস্তুত।’
প্রেমার কথাগুলো যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেল। প্রেমার শাশুড়ী দৌড়ে এসে বললো প্রেমাকে,
‘ তোমার কি মাথার ঠিক আছে বউমা কিসব বলছো তুমি?’
শাশুড়ী মায়ের কথা শুনে প্রেমা ছলছল চোখে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ পারলে আমায় ক্ষমা করবেন মা এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না।’
বলেই প্রেমা এগিয়ে যায় অফিসারদের দিকে। একজন লেডি পুলিশ হাতে হেনকাপ পড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলো প্রেমাকে আর প্রেমাও এগিয়ে গেল বাহিরের দিকে। রহিম মির্জা হতাশ হয়ে পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আমার বউমা করেছে কি অফিসার? আমার ছেলের তদন্ত করার ছিল আপনাদের আমার বউমাকে কেন ধরছেন তাহলে?’
উত্তরে পুলিশ বললো,
‘ খাবারের ভিতর বিষ মিশিয়ে নিজের স্বামীকে নিজেই খুন করেছে এই প্রেমা মির্জা। তাই খুন করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হলো। আপনার ছেলের মৃত্যুর রহস্য করতে গিয়েই এই তথ্য পেয়েছি আমরা।’
সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবেশ যেন হয়ে গেল আরো স্তব্ধ। কি রহিমকে শেষে কিনা প্রেমা নিজেই মেরেছে। কিন্তু কেন?’ প্রশ্নটা রয়েই গেল জানা আর হলো কারন যে জানাবে সেই তো পুলিশের সাথে চলে গেল।’
অতঃপর অফিস বেরিয়ে গেলেন সঙ্গে নিয়ে গেল প্রেমাকে। প্রেমা এটা জানতো এমনটা হবেই তাই তো পুলিশ দেখেই বেরিয়ে এসেছে সে। সবাই নির্বিকার হয়ে বাড়ি থেকে বের হলো প্রেমা এমন কেন করলো?’
প্রেমা পুলিশের গাড়িতে উঠতে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে কাউকে দেখে অবাক চোখে তাকালো কারন প্রেমা একা নয় আজ সঙ্গে গ্রেফতার আরও একজন হয়েছে আর সে হলো প্রেমার চাঁচি। তবে কারনটা ভিন্ন।’
প্রেমা বেশি ভাবলো না উঠে বসলো গাড়িতে চাঁচির পাশ দিয়ে তার হাতেও হেনকাপ পড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। পিছন থেকে বাড়ির সবাই আবারও বেশ অবাক হলো এমন অদ্ভুত ঘটনা দেখে প্রেমার চাঁচিকে কেন পুলিশে ধরেছে কি করেছে উনি। তবে কি রহিমের হত্যার পিছনে এরও হাত আছে।’
সবার মাথায় যেন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এসব কি ঘটছে আজ?’
___
ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের পড়াচ্ছিল আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি। চোখে চশমা, গায়ে পেস্ট কালার শার্ট, কালো প্যান্ট, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বোল্ড করা, মাথা সিল্কি চুল। আব্রাহাম তার চশমাটা ঠিক কে বোর্ডে কিছু লিখছিল এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো অফিসার তানভীর আহমেদ ইফতি। সাথে আরো কিছু পুলিশ। তানভীর আব্রাহামের দিকে গুলি তাক করে বলে উঠল,
‘ আপনার খেল খতম। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিস্টার আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি ওরোফে আহিল মাহামুদ।’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️